ডাক্তার বিধানচন্দ্র রায়। চিকিৎসক হিসেবে তাঁকে নিয়ে কাহিনীর শেষ নেই। আবার রাজনীতিক হিসেবেও তিনি কম ছিলেন না। সুরসিক বিধানচন্দ্র রায় চিকিৎসক করেছেন এ দেশের ভিভিআইপি থেকে সাধারণ গরীব মানুষের। তাঁর জীবনের অনেক কিছুই অজানা। সাহিত্যিক শংকর অবশ্য রীতিমতো গবেষণা করে অনেক তথ্য জানিয়েছেন ইদানীংকালে। সেই সব কাহিনী শুনলে অবাক হতেই হবে।
• ডাক্তার বিধানচন্দ্র রায়ের ডাক নাম ছিল ভজন।
• ডাক্তারি পড়বার বিশেষ ইচ্ছে বিধানচন্দ্রের ছিল না, শিবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং এবং কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে ফর্মের জন্য আবেদন করেছিলেন। ডাক্তারির ফর্মটা আগে আসায় ওইটাই আবেদন করলেন। পূরণ করে পাঠিয়ে দিলেন। পরে শিবপুরের ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ফর্ম আসায় আর আবেদন করেননি।
• ছাত্রাবস্থায় থাকতেন কলেজ স্ট্রিট ওয়াই এম সি এ-তে। অর্থাভাব প্রবল, মাস্টারমশায়রা ছাত্রকে অবসর সময়ে ধনী রোগীদের বাড়িতে মেল নার্স হবার সুযোগ করে দিতেন। রোগীর বাড়িতে বারো ঘণ্টার ডিউটিতে পারিশ্রমিক মিলত আট টাকা।
• কলকাতার সব চেয়ে বিখ্যাত ট্যাক্সি ড্রাইভারের নাম সম্ভবত বিধানচন্দ্র রায়। চিকিৎসক হিসেবে প্র্যাকটিস জমাবার প্রথম পর্বে তিনি কলকাতায় পার্ট টাইম ট্যাক্সি ড্রাইভার ছিলেন।
• তিনি কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের এমবি পরীক্ষায় ফেল করেছিলেন। পরে মাত্র ১২০০ টাকা সম্বল করে বিলেত গিয়ে দু’বছরে মেডিসিন ও সার্জারির চূড়ান্ত সম্মান এম আর সি পি এবং এফ আর সি এস প্রায় একই সঙ্গে অর্জন করেছিলেন।
• বিধানচন্দ্র যখন লাখ টাকার প্র্যাকটিস ছেড়ে দিয়ে তিনি মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব নিলেন তখন হাওড়া-কলকাতার দেওয়ালে দেওয়ালে কুৎসিত ভাষায় লেখা হয়– ‘বাংলার কুলনারী হও সাবধান, বাংলার মসনদে নলিনী বিধান।’ ডাক্তার রায়ের নিকট-বন্ধু ছিলেন নলিনীরঞ্জন সরকার।
• রটানো হয়েছিল, বিধানচন্দ্র রায় বড় ডাক্তার, কিন্তু মদ্যপ এবং জেলে যেতে ভয় পেতেন ইংরেজ আমলে।
• বিলেত যাবার আগে কলকাতায় বিধানবাবুর ফি ছিল দু’টাকা। শোনা যায়, উপার্জন বৃদ্ধির প্রচেষ্টায় তিনি বাড়িতে রক্ত ইত্যাদি পরীক্ষার জন্য প্যাথলজিকাল ল্যাবরেটরি স্থাপন করেন।
• প্রথমে তাঁর ঠিকানা ৬৭/১ হ্যারিসন রোড, পরে দিলখুশ কেবিনের কাছে, ৮৪ হ্যারিসন রোড। সেখানে ছিলেন ১৯১৬ পর্যন্ত, এর পর আসেন ওয়েলিংটন স্ট্রিটের বাড়িতে।
• পেশায় বিপুল সাফল্য পান। মাত্র সাড়ে আট বছরের প্র্যাকটিসে কলকাতায় প্রাসাদোপম বাড়ি এবং গাড়ির মালিক হন।
• তাঁর রোগীর তালিকায় তখনকার সব বিখ্যাত মানুষই ছিলেন। এর মধ্যে স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও আছেন। মতিলাল নেহরু, গান্ধীজী, জওহরলাল নেহরু, কমলা নেহরু, বল্লভভাই পটেল, ইন্দিরা গান্ধী-সহ কে না তাঁর চিকিৎসা পরামর্শ নিতেন।
• তাঁর জীবন ছিল একেবারে অন্যরকম। ভোর পাঁচটায় উঠে গীতা ও ব্রহ্মস্তোত্র পড়ে, স্নান সেরে, সাড়ে ৬টায় ব্রেকফাস্ট খেয়ে, দু ঘণ্টা ধরে বিনামূল্যে ১৬ জন রোগী দেখে রাইটার্স বিল্ডিংস-এ আসতেন সবার আগে। কলকাতা পুরসভার মেয়র পদও সামলেছেন বিধানচন্দ্র।