সাম্প্রদায়িক অশান্তিতে ইন্ধন জোগানোর অভিযোগে ভারতে আইনি রক্ষাকবচ হারাল মাইক্রোব্লগিং সাইট টুইটার। নয়া ডিজিটাল নজরদারি বিধি নিয়ে এমনিতেই কেন্দ্রের সঙ্গে টানাপড়েন চলছিল তাদের। তার উপর উত্তরপ্রদেশে ঘটে যাওয়া এক প্রবীণ ব্যক্তিকে নিগ্রহের ঘটনাকে সাম্প্রদায়িক রূপ দেওয়ার অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধে। সেই নিয়ে মঙ্গলবার রাতেই যোগীরাজ্যে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে।। তার প্রেক্ষিতেই তাদের আইনি রক্ষাকবচ তুলে নেওয়া হয়েছে বলে দিল্লি সূত্রে খবর, যাতে অপরাধ ধারায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের এবং সেই মতো পদক্ষেপ করা যায়।
কেন্দ্রীয় তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রকের একটি সূত্র জানিয়েছে, সরকারি বিধি লঙ্ঘন করায় মধ্যস্থতাকারী হিসেবে রক্ষাকবচ হারিয়েছে টুইটার। এ বার থেকে যে কোনও ধারায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা যাবে। পদক্ষেপ করা যাবে অপরাধ আইনে।
নেটমাধ্যমে প্রকাশিত যাবতীয় লেখালেখি এবং ভিডিয়োর উৎস কেন্দ্রকে জানাতে হবে বলে টুইটার, ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ এবং ইউটিউবের মতো সংস্থাগুলিকে নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্র। একই সঙ্গে ভারতে বিশেষ আধিকারিক নিয়োগ করতে বলা হয়েছে তাদের, যাঁর হাতে আপত্তিকর পোস্টের উপর নজরদারি এবং তা সরানোর দায়িত্ব থাকবে। সেই নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে টানাপড়েন চলছিল বেশ কিছু দিম ধরেই। তার মধ্যেই টুইটারের বিরুদ্ধে এই পদক্ষেপ।
Advertisement
Advertisement
কেন্দ্রীয় বিধিনিষেধ বাক স্বাধীনতার পরিপন্থী বলে এর আগে সাফ জানিয়েছিলেন টুইটার কর্তৃপক্ষ। তার পরেও ভারতে এক জন অন্তর্বর্তীকালীন আধিকারিক নিয়োগ করা হয়েছে বলে মঙ্গলবারই জানায় তারা। যদিও সরকারের দাবি, গত মাসে চালু হওয়া নয়া বিধিনিষেধ অন্য সংস্থাগুলি মেনে নিলেও, একমাত্র টুইটারই বেঁকে বসেছে।
তবে মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে উত্তরপ্রদেশে দায়ের হওয়া যে মামলার কথা বলা হচ্ছে, তা নিয়েও বিতর্ক মাথাচাড়া দিয়েছে। সম্প্রতি একদল দুষ্কৃতীর হাতে আক্রান্ত হন সুফি আবদুল সামাদ নামের এক প্রৌঢ়। সেই ঘটনার ভিডিয়ো নেটমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। অভিযোগ ওঠে, মাদুলি এবং কবচ বিক্রির করার দায়ে ওই প্রৌঢ়কে ‘বন্দে মাতরম’ এবং ‘জয় শ্রী রাম’ বলতে বাধ্য করা করে দুষ্কৃতীরা। এমনকি তাঁর দাড়িও কেটে নেওয়া হয়।
এই ঘটনায় গত কয়েক দিন ধরেই সরগরম নেটমাধ্যম। বিষয়টির তীব্র নিন্দা করেছেন বিশিষ্ট জনেরা। সংবাদমাধ্যমেও উত্তরপ্রদেশের শাসনব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কিন্তু ইচ্ছাকৃত ভাবে এই ঘটনাকে সাম্প্রদায়িক রূপ দেওয়া হচ্ছে বলে পাল্টা অভিযোগ করেছে উত্তরপ্রদেশ পুলিশ। তাদের দাবি, ভুল বুঝিয়ে কবচ বিক্রির জন্য ওই প্রৌঢ়ের উপর রেগেছিলেন অনেকে। এটা কোনও সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনা নয়। বরং হিন্দু-মুসলিম, দু’পক্ষের ছ’জন মিলে হামলা চালান।
উত্তরপ্রদেশের পুলিশের অভিযোগ, এই ঘটনাকে সাম্প্রদায়িক রূপ দেওয়ার জন্য দায়ী টুইটার কর্তৃপক্ষই। যদিও লিখিত বিবৃতিতে সেই অভিযোগ খারিজ করে দেয় টুইটার, যা ১৪ জুন উত্তরপ্রদেশ পুলিশ সকলের সামনে তুলেও ধরে। কিন্তু তাদের দাবি, সতর্ক করা সত্ত্বেও ওই ঘটনায় সাম্প্রদায়িক মন্তব্যগুলি মোছেনি টুইটার। নিগ্রহের ওই ভিডিয়োটিকে বিকৃত বলে সতর্কবার্তাও দেয়নি, তাই তাদের বিরুদ্ধে অপরাধমূলক ব্যবস্থা নেওয়াই উচিত। সেই মতো টুইটারের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক অশান্তিতে ইন্ধন জোগানোর মামলা দায়ের করে তারা।