ভারত বিখ্যাত দুন স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন নৈহাটির এই বঙ্গসন্তান
রাজীব গান্ধী, মণিশঙ্কর আইয়ার, এম জে আকবর, কুলদীপ সিং ব্রার, নবীন পট্টনায়ক….. এদের মধ্যে মিল কোথায় বলুন তো ? কেউ প্রধানমন্ত্রী কেউ মুখ্যমন্ত্রী কেউ সাংবাদিক কেউ বা আবার জাঁদরেল সেনানায়ক! তাহলেও মিল একজায়গায় ….. এনারা সবাই দুন স্কুলের পড়ুয়া। সমাজের সর্বস্তরে এখানকার ছাত্ররা নেতৃত্ব দেবে এটাই স্বপ্ন ছিলো এই স্কুলের প্রতিষ্ঠাতার, বাস্তবে আজ সেটাই হয়েছে। এই দুন স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা কিন্তু ছিলেন এক বঙ্গসন্তান। দুঃখের কথা তিনি এই সাফল্য দেখে যেতে পারেননি আর আমরা বাঙালিরা তাকে মনেও রাখিনি |
১৮৭০ সালে জন্ম এই মানুষটির জন্ম নৈহাটিতে। বাবা দুর্গামোহন ছিলেন ঢাকা বিক্রমপুরের বিখ্যাত দাশ পরিবারের মানুষ। দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন ও সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সুধীরঞ্জন দাস ছিলেন এনার জ্ঞাতিভ্রাতা। সেকালের সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান তাই লেখাপড়া সবটাই বিলেতে। ব্যারিস্টার হয়ে দেশে ফেরেন ১৮৯৪ সালে। বাবা দুর্গামোহন ছিলেন ব্রাহ্ম সমাজের একজন কর্ণধার, বাড়িতে প্রায়ই এসব নিয়ে আসর বসতো। সেইসব আলোচনায় ভাগ নিয়ে উনি বুঝতে পারলেন এ দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার প্রভূত উন্নতিসাধন প্রয়োজন।
দীর্ঘদিন ইংল্যান্ডে পড়াশোনার করার সুবাদে ব্রিটিশ পাবলিক স্কুলগুলোর সিলেবাস ও লেখাপড়ার ধাঁচের সাথে তিনি ছিলেন সম্পূর্ণ ভাবে পরিচিত। এদেশেও তিনি সেইরকম শিক্ষা ব্যবস্থার প্রচলন করতে চাইলেন। তফাৎ থাকবে শুধু ইংরাজি শিক্ষার পাশাপাশি ভারতীয় সংস্কৃতি ও সমান গুরুত্ব পাবে। লক্ষ্য, পরবর্তী কালে যাতে এখানকার ছাত্ররা সমাজের সর্বক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিতে পারে, গ্রহণ করতে পারে ভবিষ্যৎ ভারতের প্রশাসনের দায়-দায়িত্ব ।
১৯২২ সালে তিনি অভিন্ন বাংলার এডভোকেট জেনারেল পদে নিযুক্ত হন আর তখনই তার মাথায় একটা বোর্ডিং স্কুল খোলার ভাবনা আসে। এ ব্যাপারে তার পাশে দাঁড়ান সমাজের অনেক বিশিষ্ট ব্যাক্তিবর্গ। গান্ধীজী উৎসাহ না দেখালেও নেহেরুজী বাড়িয়ে দেন সাহায্যের হাত। ১৯২৭ সালে তিনি বড়লাট লর্ড আরউইনের একজিকিউটিভ কাউন্সিলের সদস্য মনোনীত হন। তখনই স্কুলের জন্য দেরাদুনে মিলিটারি একাডেমীর পাশে জমি অধিগ্রহণ করা হয়।
পরের বছর গরমে তিনি পাবলিক স্কুল পরিচালনা হাতে কলমে শেখার জন্য ইংল্যান্ড যান। তিনমাস ওখানকার বিভিন্ন নামী পাবলিক স্কুলে ঘুরে লাভ করেন প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা। দেশে ফিরে হঠাৎই অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং ১৯২৮ সালে মাত্র ৫৮ বছর বয়সে কলকাতায় দেহরক্ষা করেন। মৃত্যুর পর তাঁর অসমাপ্ত কাজ শেষ করতে উঠেপড়ে লাগেন তার দুই সহোদর বোন সরলা ও অবলা। সবার ঐকান্তিক চেষ্টায় শেষমেশ ১৯৩৫ সালে দেরাদুনে চালু হয় ভারতের প্রথম পাবলিক স্কুল, যা আজও এদেশের গর্ব। সরলা রায় পরে কলকাতায় গোখেল মেমোরিয়াল গার্লস স্কুল স্থাপন করেন। অবলার পরিচয় নিশ্চয়ই দিতে হবেনা ? জগদ্বিখ্যাত বৈজ্ঞানিক আচার্য জগদীশচন্দ্র বসুর স্ত্রী। ভবিষ্যৎ ভারতের স্বপ্ন দেখা মানুষটি ছিলেন শ্রদ্বেয় সতীশ রঞ্জন দাস।