প্রবাদপ্রতিম, প্রয়াত আরএসএস কার্যকর্তা দত্তপন্থ ঠেংড়ীজী বাইরের সংগঠন থেকে আসা কাউকে প্রথমেই বেশি গুরুত্ব দেবার পক্ষপাতী ছিলেন না। ২০১৯-২০ সালে দত্তপন্থের জন্মশতবর্ষ পালনের মধ্যেও আশ্চর্যজনকভাবে আমরা তা ভুলে গেলাম। ‘পূজার ছলে’ পরেও কী ঠেংড়ীজীকে ভুলে থাকবো? এটি কোটি টাকার প্রশ্ন।
যারা অন্য মজদুর সংগঠন থেকে সেই সময় ভারতীয় মজদুর সঙ্ঘ বা BMS-এ যোগদান করেছিলেন, তাদের সম্পর্কে ঠেংড়ীজী বলেছিলেন, তারা শারীরিকভাবে BMS-এর জন্য কাজ করলেও, যতদিন না তারা BMS-এর কর্মসূচী বা কর্মপদ্ধতির সঙ্গে সঠিকভাবে পরিচিত না হবেন এবং মানসিকভাবে মেনে নিতে না পারবেন, ততদিন তাদের সম্পূর্ণ সদস্য বলে ধরে নেওয়া যাবে না। আগের সংগঠনের মতাদর্শকে পুরোপুরি বর্জন করে BMS-এর মতাদর্শকে মনেপ্রাণে গ্রহণ করতে হবে, তবেই তারা যথার্থ সদস্য হতে পারবেন।
দত্তপন্থের বক্তব্যের মূল কথাটি কিন্তু সব সংগঠনের জন্য, সব দলের জন্যই শাশ্বত সত্য। সম্ভাবনাময় দলে অনেক নেতাই সুবিধা পাওয়ার লোভে আসেন, চুরি করে বাঁচার জন্য আসেন, পারিবারিক মৌরুসিপাট্টা চালিয়ে যাবার জন্য আসেন। অনেকে মতাদর্শ গ্রহণ না করে উপযুক্ত সুযোগের লোভে দীর্ঘদিন নিষ্ক্রিয় হয়ে, আলস্য নিয়ে পড়ে থাকেন সম্ভাবনাময় নতুন দলে; আবার পুরনো দলেও নিয়মিত যোগসাজশ রেখে যান। আদর্শের কারণে দলে আসা এক জিনিস; কিন্তু নেতামন্ত্রী হবার জন্য, নিজের পূর্ব অপরাধ ঢাকা দেবার জন্য, নতুন দলে আসা মানুষ সেই দলের প্রকৃত শক্তি হতে পারেন না। তাদের দ্রুতলয়ে -নেতৃত্বের মাথায় বসিয়ে দেওয়াও যুক্তিসঙ্গত নয়, সংগঠনের পক্ষে আদৌ তা স্বাস্থ্যকর নয়। তাদের কিছু সংখ্যক অনুগামী-সমর্থকের কাজই হল, দলের সঙ্গে না চলে, দলের মধ্যে উপদল তৈরি করে তাদের নেতার টিআরপি বাড়ানো। সেটা বুঝতে না পেরে দলের মধ্যে থাকা পুরনো কর্মীরা গোষ্ঠীতন্ত্রে সার-জল দিয়ে ফেলেন। সংগঠন না বুঝে তাদের মাথায় তোলেন, পায়ে অহরহ ফুল দেন। আর পুনরায় তাদের নেতা দল বদল করলে মুষড়ে পড়েন, অথবা নেতার সঙ্গে অন্য দলে চলে যান।
প্রশ্ন হল এমন কর্মীদের বোঝানো যাবে কীভাবে? দল বা সংগঠন বাড়াতে হলে কে প্রকৃত সদস্য তা বিচারে যদি খামতি থেকে যায়, দল মুখ থুবড়ে পড়বেই। দলে কোনো ব্যক্তির শারীরিক উপস্থিতিই বড় কথা নয়। দলীয় কাঠামো ও নির্দেশ মেনে চলার মানসিক অবস্থা তার রয়েছে কিনা, সংগঠনের দর্শনের সঙ্গে তার নিজের দর্শন মেলাতে পেরেছেন কিনা, সেটাও বাইরে থেকে পর্যবেক্ষণ করতে হবে৷ দলবদলুদের সঙ্গে নতুন দলের খাপ খাচ্ছে কিনা, সম্পূর্ণ ও অমোচ্য মেলবন্ধন আছে কিনা, এটি দেখাও দলীয় কার্যকর্তার দায়িত্ব। দরকার হলে দলে এই বিষয়ক উচ্চ পর্যায়ের মেরুদণ্ডযুক্ত গোয়েন্দা কমিটি বহাল থাকুক, যারা অলক্ষ্যে কাজ করবেন, তাদের কাছে সব সমর্থন কিংবা অভিযোগ জমা পড়বে। দলে উঁচু পদ পেতে হলে, সেই কমিটির অভিমত যাচাই করে নিক দল। তা না হলে দল বা সংগঠন কখনই শক্তিশালী হতে পারবে না। রাজনীতিক সিদ্ধান্ত যারা নেবেন, তাদের মনস্তাত্ত্বিক শিক্ষার পাঠও থাকতে হবে। দলীয় শিক্ষার নিয়মিত ব্যবস্থা হয়েছে কী? আগামী দিনে হবার সম্ভাবনা রয়েছে কী?