দু’দিন ছাড়াই টর্নেডো (tornado)। এসব কবে শুনেছে বা দেখেছে বঙ্গবাসী? হয়নি তা নয়। কখনওসখনও হয়েছে। লন্ডভন্ডও করেছে এলাকা। আবার ডোবাতেও এমন হঠাৎ ঘূর্ণি দেখা গিয়েছে। কিন্তু ইয়াসের (Yaas) পর থেকে রোজ রোজ যখন তখন টর্নেডো। এসব তো সুদূর আমেরিকায় হয়। তাও হররোজ নয়। বাংলায় এ কী কাণ্ড। যখন তখন তৈরি হচ্ছে টর্নেডো, তৈরি হচ্ছে আতঙ্কও। কিন্তু এর কারণ কী? কেন এমন ঘটনা রোজ রোজ হচ্ছে?
পরিবেশ বিশেষজ্ঞ সুজীব কর বলেন, ‘এটা গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের (Global Warming) ফল। না হলে এই সময়ে এত গরম হয় না। বৃষ্টি হলেও গরম ভালোরকম থাকছে। বৃষ্টি যেখানে হচ্ছে না সেখানকার মাটি ভালো মতো গরম থাকছে। এবার সারফেস গরম, আর নিম্নচাপের জেরে আসা আর্দ্র হাওয়া ঠান্ডা। দুয়ের মধ্যে সংঘর্ষ হচ্ছে। এটাকে আমরা স্কোয়াল লাইন বলি। তার ফলে এই ঘূর্ণির তৈরি হচ্ছে। আগে এসব এত হত না। এখন মাটি এত গরম থাকছে যে সিস্টেম তৈরি হলেই দুয়ের সংঘর্ষে ঘন ঘন টর্নেডো পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। এর জেরে বাজ পড়ার সম্ভাবনাও বেশি তৈরি হয় কিন্তু এখন রোজ রোজ টর্নেডো হচ্ছে যা আতঙ্ক ছড়িয়ে দিচ্ছে। এটা গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের ফল। চারিদিকে জলবায়ু পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে ফলে এমন অদ্ভুত ঘটনার বারবার সাক্ষী হতে হচ্ছে।’
আজ শুক্রবার হলদিয়ায় (Holdia) মাঝনদীতে টর্নেডো হয়। হলদিয়া বন্দরের অদূরে হুগলি নদীতে নয়াচর সংলগ্ন এলাকায় শুক্রবার বিকালে নাগাদ টর্নেডোর দেখা মেলে। তবে বৃহস্পতিবারের মতোই হলদিয়ার স্থলভূমিতে আসার আগেই তা দুর্বল হয়। এদিন বন্দরের টাগ জেটি থেকে বন্দরের কর্মীরা হঠাৎ ঘন মেঘলা আকাশ থেকে বিশাল কালো শুঁড় নেমে আসতে দেখেন। তার প্রভাবে জল ফুলে ওঠে বেশ কয়েক ফিট। ওই সময় টর্নেডোর পাশ দিয়ে বন্দরগামী তেলের জাহাজ আসছিল। তবে তার কোনও প্রভাব তেমন পড়েনি। টর্নেডো আসছে খবর শুনে বন্দরের কর্মীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। হলদিয়া বাসি টর্নেডো দেখার জন্যই নদীর উপকূলে ভিড় জমায়।
বৃহস্পতিবারও সাগরদ্বীপের কাছে হুগলি নদীর উপর টর্নেডো তৈরি হয়েছিল। নদীর উপর ফানেলের মতো ঘূর্ণি দেখা যায়। মুহূর্তে সেখানকার উল্লম্ব হয়ে উপরের দিকে ওঠে। তারপর গতি নিয়ে তা পাড়ের দিকে এগিয়ে আসতে থাকে। আধঘণ্টা জলের উপর ছিল ওই লোকাল টর্নেডো। স্বাভাবিক ভাবেই আতঙ্ক ছড়ায় এলাকায়। তারপর নদীতেই মিলিয়ে যায় সেটি। স্থলভাগে না আসায় আতঙ্ক মুক্ত হন মানুষ।
এমনই এক স্থানীয় টর্নেডো এসেছিল ২৬ মে, যা ইয়াসের জেরে তৈরি হওয়া সিস্টেমকে হাত করে তছনছ করেছিল দক্ষিণবঙ্গের একাধিক অঞ্চল। ২৬ মে উত্তর ২৪ পরগনার হালিশহর এবং হুগলির চূঁচুড়ায় বিকেল সাড়ে চারটা নাগাদ আচমকা টর্নেডো হয়। এর ফলে এই দুই এলাকার মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নবান্ন থেকে সাংবাদিক সম্মেলন করার সময় এই প্রসঙ্গ উল্লেখ করেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “হালিশহর ও চূঁচুড়ায় টর্নেডোর মতো ঘটনা ঘটেছে। এর ফলে দুটো জায়গায় প্রায় ৪০ টি করে বাড়ির ক্ষতি হয়েছে। বেশ কিছু দোকানের ক্ষতি হয়েছে। প্রকৃতির সঙ্গে আমরা পারবো না। তবে ক্ষয় ক্ষতি হলে রাজ্য সরকার বিপন্নদের পাশে আছে।” এদিকে এই প্রসঙ্গে আলিপুর আবহাওয়া দফতরের সহ অধিকর্তা সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, ‘সাইক্লোনের সঙ্গে সেমি সাইক্লোন বা এই জাতীয় টর্নেডো তৈরী হয়।’