মুকুলের প্রত্যাবর্তন, ব্যাঙ্গ-কৌতুকে দিনভর মাতোয়ারা নেটদুনিয়া

লাল পুলওভার। মাথায় উলের টুপি। ছোট্ট মুকুল বলছে, “আমি বাড়ি যাব!“ ‘সোনার কেল্লা’-র সেই নির্দোষ আবেদনের ছবি ফিরে এল শুক্রবারের সামাজিক মাধ্যমে।

শ্রাবন্তীর চার নম্বর বিয়ে, রত্না-শোভন-বৈশাখীর ত্রিকোণ, নুসরৎ-নিখিল— এই মুহূর্তে সব প্রায় অতীত। নিউটাউনে আত্মগোপনকারী দুই বন্দুকবাজের রোমহর্ষক কাহিনীর চর্বিতচর্বনও করতে যেন আগ্রহী নয় আবালবৃদ্ধবনিতা। আর সেসবে বাঙালি যেন উজার করে দিয়েছে নিজ নিজ উদ্ভাবনী সৃজনশীলতা। ধামাচাপা পড়ে গেছে নুসরতের বেবি বাম্প আর যশ-এর বিবৃতি।

প্রাক্তন সাংবাদিক সুজিত রায় সত্যজিৎ রায়ের ‘সোনার কেল্লা’-র ছবি ভাগ করে লিখেছেন, “না আমার মস্তিষ্কপ্রসূত নয়। ধার করেই নিলাম এক গল্পকার বোনের থেকে। অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক মনে হল তাই….।“ সিনেমার আর একটি দৃশ্য ধার করে সাংবাদিক সৌগত মন্ডল। ছবিতে মুকুলের কাঁধে হাত রেখে কামু মুখার্জি প্রশ্ন করছেন, মুকুল তুমি ফিরলে কেন? মুকুলের উত্তর, “ওরা দুষ্টু লোক“।

ওই ভাবের রাশ ধরেই বিশিষ্ট পরিচালক অনীক দত্ত
লিখেছেন, “ফ্যাসিস্ট থেকে ফ্যাসিস্ট বিরোধী ? গ্রেটার টু লেসার এভিল? দুষ্টু লোক ভ্যানিশ?! ম্যাজিক!“ বড় হরফে অদিতি ভট্টাচার্য লিখেছেন,
“তাহলে এটাই বোঝা গেলো.. আজও মুকুলের সোনার কেল্লা প্রিয় সূনার বঙ্গাল না।“

অভিনেত্রী শ্রীলেখা মিত্র ফেসবুকেই প্রাপ্ত কল্পিত চিঠি শেয়ার করেছেন— “বিজেপিতে আমি এতদিন যোগদান করিনি। বিজেপির সাথে লিভ-ইন এ ছিলাম। তাই বিজেপি ছাড়ার কোনো প্রশ্ন ওঠে না।
ইতি মুকুল রায়।“ বলাই বাহুল্য, এই কৌতূকের উৎস
নুসরৎ। এতে খুশি হয়ে যাঁরা প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে আছে অভিনেত্রী-মডেল-নৃত্যশিল্পী সোনালি চৌধুরীও।

একটি সংবাদ চ্যানেলের সাংবাদিক রক্তিম ঘোষ লিখেছেন, “খারাপ লাগছে কৌশানির জন্য। একরত্তি মেয়েটা বুঝতে পারেনি, কৃষ্ণনগর তাপস পালেরও ছিল!“ প্রসঙ্গত, বিধানসভা ভোটে কৌশানি মুখার্জি কৃষ্ণনগর উত্তর কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী ছিলেন। হেরে যান মুকুল রায়ের কাছে। আর প্রয়াত নায়ক তাপস পাল ছিলেন তৃণমূলের কৃষ্ণনগরের জনপ্রতিনিধি।

একটি নামী দৈনিকের বরিষ্ঠ সাংবাদিক জাগরী বন্দ্যোপাধ্যায় নদীর রঙবেরঙের স্রোতের প্রেক্ষাপটে লিখেছেন, “ওরে ও ননদী আর দুমুঠো চাল ফেলে দে হাঁড়িতে“। প্রতিক্রিয়ায় দমদম কিশোর ভারতী স্কুলের শিক্ষিকা অপরাজিতা সাহা লিখেছেন, “ঠাকুর জামাই এলো বাড়িতে“। রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট অর্ণব নাগ তিনটি হাস্যমুখ (স্মাইলি)-সহ লিখেছেন, “মুকুল এলো বাড়িতে“। জবাবে একটি সংবাদ সংস্থার অ্যাসোসিয়েট এডিটর পল্লবী মজুমদার লিখেছেন, এমন সময় মিনসে দেখি সাবান ঘষে দাড়িতে!”

কৌতুকের জোয়ারে গা ভাসাতে দ্বিধা নেই বুঝি কারোরই। একটি নামী দৈনিকের প্রাক্তন সাংবাদিক, ঋষি অরবিন্দ-বিষয়ক গবেষক, অদুনা বেঙ্গল চেম্বার অফ কমার্সের অন্যতম পরামর্শদাতা ডঃ নির্মাল্য মুখোপাধ্যায় লিখেছেন, “পদ্মের মুকুল হল জোড়াফুল/ দেড়ে -হোঁদল কেঁদে আকুল। ।“

আবার একটি নামী দৈনিকের নবীন সাংবাথিক মেহবুব কাদের চৌধুরী স্মরণ করেছেন বিখ্যাত সেই গানটি— “শুধু যাওয়া আসা, শুধু স্রোতে ভাসা,
শুধু আলো-আঁধারে কাঁদা-হাসা ॥
শুধু দেখা পাওয়া, শুধু ছুঁয়ে যাওয়া,
শুধু দূরে যেতে যেতে কেঁদে চাওয়া,
শুধু নব দুরাশায় আগে চ’লে যায়–”।

মান্না দে-র চিরকালীন গানের প্যারোডি হিসাবে পরিবেশিত হয়েছিল“ডেলো পাহাড়ের আড্ডাটা আজ আর নেই“। সেটি এবং একত্রে মমতা-মুকুল-কুণালের হাস্যময় অন্তরঙ্গ ছবি পেশ করেছেন অ্যানথ্রোপলোজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার জৈবরসায়ন বিভাগের প্রাক্তন প্রধান ডঃ কল্যাণ কুমার ভট্টাচার্য।

সাংবাদিক দেবোময় ঘোষ লিখেছেন, “এ ট্রান্সফার মার্কেট শুরু হয়ে গেছে। রাজনীতিতেও। দলগুলি ভাল খেলোয়াড়ের পিছনে ছুটছে। রাজনৈতিক দলগুলিও। দলবদলের ভরা বাজার।“

দক্ষিণ কলকাতার মৌসুমী সেনগুপ্ত লিখেছেন, “যাওয়াটা গট্ আপ্ ছিলো নাকি অভিমান? ফেরাটা প্রত্যাশিত“। পোস্ট করার পর এক ঘন্টা বাদে, বেলা ৩টে ৪০-এ ৩১টা মন্তব্য। তার মধ্যে কিছু কার্টুন, কিছু ছড়া।

একনিষ্ঠ বামপন্থী সোনালি দাশশর্মা চারটি হাস্যমুখ-সহ লিখেছেন, “এবার মুকুল দাদাও বলবে
নো ভোট টু বিজেপি।“

কলকাতা পুরসভার প্রাক্তন ডিরেক্টর জেনারেল দীপঙ্কর সিনহা লিখেছেন, “কখন গ্রেটার হয় কখন লেসার, কখন স্পিনার হয়, কখন পেসার।
গোলোকধাঁধারে ভাই, তায় চিচিঙফাঁক
এগিয়ে বাংলা ঘোরে বনবনবনবন
ছন্দে ছন্দে কতো দল বদলায় দল বদলায়।“

বিশ্বভারতীর প্রাক্তনী লিলজ সেন লিখেছেন, “না হারলে ধরতেই পারতেন না কে আদর্শ আর কে মিরজাফর। হারটা সত্যিই উপভোগযোগ্য।“

সঞ্জীব মুখার্জি লিখেছেন, “ঝান্ডা ধরার লোক পাবেন তো“। বিজেপি-র একনিষ্ঠ কর্মী কাবেরি চট্টোপাধ্যায় লিখেছেন, “এসেও কোনো লাভ হয়নি, গেলেও কোনো ক্ষতি হবে না।“ বেলা ১টায় এই পোষ্টের পর তিন ঘন্টায় লাইক, মন্তব্য ও শেয়ারের সংখ্যা যথাক্রমে ৪৮০, ১০৮ ও ৮।

অশোক সেনগুপ্ত

http://bengali.hindusthansamachar.in/NewsDetail?q=50a39b855e589b523cdf6f6db8f492a2

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.