লকেট চ্যাটার্জি পান্ডুযায় আজ প্রাণ হাতে বাড়ি ফিরলেন । অপরাধ ? পান্ডুয়া গ্রামীণ হাসপাতালে যে ডাক্তার নিগৃহীত হয়েছেন তাঁর পাশে দাঁড়াতে গিয়েছিলেন সেখানকার সংসদ । গাড়ি ঘিরে ধরে লেঠেল বাহিনী মারমুখী হল । পুলিশ কোনক্রমে গাড়ি ঘুরিয়ে নেওয়ার সুযোগ দিল ড্রাইভারকে । তখনও ইঁট, রড, লাঠি নিয়ে মারমুখী তৃণমূল গুন্ডারা ।
ঠিক সেই সময়ে লকেটকে ফোন করেছিলাম অন্য একটি বিষয়ে তাঁর বক্তব্য নেওয়ার জন্য । তাঁর মুখেই শুনলাম তাঁর ঠিক সেই মুহূর্তের অভিজ্ঞতা । পরে অনুরোধ করতে তাঁর সঙ্গী পাঠালেন সেই মুহূর্তের ক্যামেরা বন্দী ভিডিওটি ।
মনে হল এটি সমস্ত সংবাদ মাধ্যমে জানানো দরকার । একে একে ফোন করলাম এ বি পি সহ প্রায় প্রতিটি চ্যানেলকে । যাঁরা চাইলেন পাঠিয়েও দিলাম ভিডিওটা । ঘটনা হল রিপাবলিক বাংলা আর সি এন ছাড়া কেউ সম্প্রচার করলনা সেই দৃশ্য । প্রশ্ন হল একজন নির্বাচিত সাংসদের ওপর হওয়া এই আক্রমণের দৃশ্য টেলিকাস্ট করতে এদের এত দ্বিধা কেন ? কিসের জন্য ?
আজ যদি এই ঘটনা শাসক দলের কোন যুবরাজের ওপর হত নিশ্চিত ভাবে বলতে পারি একটা ঘণ্টা খানেক, একটা ক্রস ফায়ার, একটা জনতার দরবার নিয়ে সঞ্চালকরা গলার শিরা তুলে ফাটিয়ে দিতেন সন্ধ্যেটা । হলনা কারণ শাসকতো আক্রান্ত নয় । অতএব….
আজ উল্টে কি দেখলাম আমরা ?
সকালে টি ভি খুলতেই দেখলাম এক পরিচিত প্রতিবেদক প্রচণ্ড উত্তেজিত হয়ে চেঁচাচ্ছেন –
আর কিছুক্ষণ বাদেই এখানে অর্থাৎ বাজ পড়ে মারা যাওয়া পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে আসবেন সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় । আর কিছুক্ষণ এর মধ্যেই আসছেন তিনি । অমুক জায়গায় হেলিকপ্টার করে আসবেন….. অমুক জায়গা থেকে গাড়িতে করে এসে এখানে নামবেন…..তারপর দেখ….আমি ক্যামেরা ম্যানকে বলছি দেখাতে এই গ্রামের এই মাটির পথ ধরে ধরে হেঁটে আসবেন তিনি বাকি এই পথটা ………….।
থর থর করে উত্তেজনায় কাঁপছেন প্রতিবেদক । গ্রামের কার্পেট বেছানো টালির ঘরের দাওয়ায় দাঁড়িয়ে ।
কিছু বুঝলেন ? সংবাদ মাধ্যমের এই বিচিত্র গতিপথ ?
যুবরাজকে প্রমোট করার কক্ষপথ থেকে এরা কিছুতেই বিচ্যুত হবেন না । কিছুতেই না । পি কে র সেট করা টার্গেট দলের কর্মীরা যতটা না মানতে বাধ্য তার থেকেও দায় বোধ হয় এঁদের অনেক বেশী । তাই এলাকার মহিলা সাংসদ নিগ্রহের মুখে পড়লেও সেটা কিছুতেই সংবাদ হয় না । সংবাদ হয় শুধু যুবরাজের একটা “বিলাসবহুল প্রমোশনাল ভ্রমণ” । কি মানব দরদী এই তরুণ নেতা গলা উঠিয়ে নামিয়ে প্রাণপন সেটা ফুটিয়ে তোলা ।
কেন বলছি “বিলাসবহুল” ?
আজ কলকাতা থেকে হুগলির সামান্য পথ আসতে ফিরতে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়-এর হেলিকপ্টার লেগেছে । বাকিটা পথ বুলেট প্রুফ একাধিক গাড়িকে নিয়ে ভ্রমণ । আগের দিন কলকাতা থেকে বহরমপুরও গেছেন হেলিকপ্টারে । কলকাতা থেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে একাধিক দামী গাড়ি । দুদিনের হেলিকপ্টার ভাড়া, প্রায় ৩০ টি গাড়ির কনভয়, রাজসিক সিকিওরিটি এরেঞ্জমেন্ট এবং অন্যান্য সব কিছুর ব্যবস্থাপনা পুরোটা করতে হল রাজ্য সরকারকে । নবান্নর এক সিনিয়র আমলার খবর এর জন্য রাজ্য কোষাগার থেকে বেরিয়ে গেল প্রায় পৌনে দু কোটি টাকা ।
বলুন তো খুব প্রয়োজন ছিল এই প্রমোশনাল বিলাসিতার ভ্রমণ ? তাও আবার সরকারি খরচে ? প্রশ্নগুলো জনস্বার্থে করতে পারবে সংবাদ মাধ্যম ? করার দম আছে সুমন দে কিম্বা মৌপিয়া নন্দী দের ? যাঁরা সন্ধ্যেবেলা নিয়ম করে মানুষের জন্য কাঁদেন টি ভি র আলো বাহারী সেটে বসে ।
সামনে পেলে একান্তে আমার “অত্যন্ত প্রিয়” দুই সাংবাদিককে প্রশ্নটা করেই বসব । উত্তর কি দিলেন জানাব এই দেওয়ালেই । কথা দিলাম ।
সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় (৯৮৩০৪২৬০৭৮)