অমর্ত্য সেন । পন্ডিত । বিদগ্ধ । শ্রদ্ধেয় । পূজনীয় । কিন্তু প্রশ্ন করা যাবে না । এমন তো নন । বরং প্রশ্ন করে, তার উত্তর খুঁজেই তো তিনি জগৎ বিখ্যাত ।
তাই সিলেকটিভ “সুশীল সমাজ” এবং আনন্দবাজার রেগে গেলেও প্রশ্ন গুলো করতে ভীষণ ইচ্ছে হল ।
অমর্ত্য সেন সাংবাদিকদের কাছে বলেছেন – কাজের কাজ না করেই কৃতিত্ব দাবি কম বুদ্ধির লক্ষণ । সংশয়ে ভুগতে থাকা সরকার অতিমারি প্রতিরোধে নজর দেওয়ার তুলনায় যেটুকু কাজ হয়েছে, তার কৃতিত্ব দাবি করতেই বেশি ব্যস্ত ছিল কেন্দ্রীয় সরকার ।
অমর্ত্য সেন বলেছেন সুতরাং ধ্রুব সত্য । সিলেকটিভ সুশীল সমাজ এবং আনন্দবাজার মনে করতেই পারেন । সে অধিকার তাঁদের আছে । কিন্তু অমর্ত্য সেন যে বিষয়ে যে মন্তব্য করেছেন তার প্রত্যুত্তরও আছে । তা দেওয়াও যায় । কিন্তু এই লেখার পরিসরে সেই বৃত্তে আজ যাব না । লেখা ভারী করব না ।
বরং কিছু প্রশ্ন থাকবে জগৎ বিখ্যাত এই বাঙালি অর্থনীতিবিদের কাছে । সকলেই জানেন ২০১৪ এ নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চলে আসার পর থেকে ক্রমাগত কেন্দ্র বিরোধী কথা বলে গেছেন অমর্ত্য সেন । তাঁর নিজস্ব চিন্তা চেতনা এবং নালন্দার স্মৃতির প্রেক্ষিতে তিনি তাঁর কথা বলবেন সেটাই স্বাভাবিক ।
তিনি কথা বলবেন, আমরা শুনব । কিন্তু পাশাপাশি আমরা প্রশ্নটাও করব একজন বাঙালী হিসেবে তিনি বাংলায় ঘটে চলা ঘটনাবলী নিয়ে এত উদাসীন কেন ? নির্বিকার থাকেন কেন ?
একটা সামান্য পঞ্চায়েত নির্বাচনে ৭২ টি মানুষের প্রাণ চলে যায় । অথচ সব শুনে দেখেও তিনি নির্বিকার থাকেন । কেন ? কি কারণে ?
এই বাংলায় একটা নির্বাচন মানেই ভয়াবহ সন্ত্রাস হবে, শাসক বিরোধী রাজনীতি মানেই প্রাণ নাশ হবে । গণতন্ত্রের পরিসর ক্রমশ সঙ্কুচিত হবে, হতেই থাকবে । তিনি সব দেখেও নীরব থাকবেন, কেন ? কি কারণে ?
এই বাংলায় যখন শিক্ষিত বাঙালির জন্য সরকারি চাকরির দরজা বন্ধ হয়, যখন সাড়ে ৫ লক্ষ সরকারি পদ অবলুপ্ত হয় খেলা, মেলা উৎসবে টাকা যোগাতে তখন তিনি নীরব থাকেন কেন ?
সরকারি প্রকল্পের কোটি কোটি টাকা যখন এ রাজ্যে শাসক দল লুঠ করে নিয়ে যায় সেই সংবাদ কি তিনি বিচলিত হন না ? যখন হন না তখন সেটা কি কারণে ? ভীষণ জানতে ইচ্ছে করে ।
এই রাজ্যে যখন একজন পার্ট টাইম শিক্ষক স্কুলে সারা মাস চাকরি করেও ২২০০ টাকা মাইনে পান, একজন ভোকেশনাল শিক্ষক সারা মাস শিক্ষকতা করে ১৮০০ টাকা মাইনে পান, এবং উভয়ের মোট সংখ্যা যখন এ রাজ্যে প্রায় ২৪ হাজার তখন সেই সংবাদ কি তার নজর এড়িয়ে যায় ? যদি না যায় তাহলে তিনি নীরব থাকেন কেন ?
এ রাজ্যে বছরের পর বছর শিক্ষিত ছেলে মেয়েরা যখন রাজপথে চাকরির দাবীতে থালা হাতে বসে থাকেন তখন কি সেটা an essay on Entitlement and deprivation এ স্থান পেতে পারে না ?
নাকি এ বাংলায় ক্রমাগত ঘটে চলা ঘটনাবলী নজরে আসেনা বাঙালি নোবেল লরিয়েটের ।
এই নজরে না যাওয়াটাও কি বেশী বুদ্ধির লক্ষণ নয় ? প্রশ্নটা করতে ইচ্ছে করে সেই মানুষটিকে যিনি বিশ্ব বন্দিত হয়েছেন মানুষের দারিদ্র নিয়ে কাজ করে । ওয়েলফেয়ার ইকোনমিকসের তত্বে “জীবনের মৌলিক অধিকার কেড়ে নেওয়া এই বাঙালির” কি কোন স্পেস নেই ?
জানতে ভীষণ ইচ্ছে করে কারণ আমি কম বুদ্ধি নিয়ে বাঁচা অনেক বাঙালিরই মধ্যে একজন । যার মাথায় কিছুতেই ঢোকেনা একটি ব্যাখ্যা । একজন কোটিপতি বাঙালি ভারত রত্ন হওয়ার সুবাদে চার বছরে ২১ বার এয়ার ইন্ডিয়ায় বিনা ভাড়ায় ভ্রমণ করেন কোন মূল্যবোধে ? যেখানে ভারত রত্ন হয়েও সচিন তেন্ডুলকর কিম্বা লতা মঙ্গেশকর সেই সুযোগ নেন না ভারতে ।
সিলেকটিভ বাঙালি সুশীল সমাজ কিম্বা আনন্দবাজার এ সব প্রশ্ন তুলবে না কারণ তাদের মধ্যে এই বেশী বুদ্ধির লক্ষণ প্রবল । আমরা তুললাম কারণ আমরা হয়তো স্কিৎজোফ্রেনিয়াতে আক্রান্ত, যারা বেশি বুদ্ধিমানের কাছে প্রশ্ন রাখার অভ্যাসটা কিছুতেই ছাড়তে পারিনা ।
বড়ই অবুঝ আমরা ।।
সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় ( ৯৮৩০৪২৬০৭৮ )