১৯৮৬ পশ্চিমবঙ্গ। হৈ হৈ করে চলছে মানবতাবাদী বামফ্রন্ট সরকার। শস্য শ্যামলা ধরিত্রী। অভাব অনটন , শোক , জরা, ব্যাধি বিবর্জিত এক স্বর্গ।
সেখানে বাসিন্দারা সকলেই মেধাবী, সূক্ষ্মভাবে অনুভবনশীল, সংস্কারি ও বৈপ্লবিক। সেখানে না আছে অতিরিক্ত তাপ, না শৈত্যপ্রবাহের জ্বালা , না আছে শোক, বা ক্লান্তি, শ্রম বা অনুতাপ, না ভয়। এবং যা কিছুই ঘৃণ্য এবং অশুভ, তা কেউ সেই স্বর্গে খুঁজে পাননা। আনন্দদায়ক সুবাস সব জায়গায় পাওয়া যায়। হাওয়া মৃদু ও মনোরম। বাসিন্দারা উজ্জ্বল দেহস্বরূপ।
প্রসঙ্গত, ৭৭ সালে বৈপ্লবিক সরকার শাসনভার গ্রহণ করার ঠিক পরেই ৭৮ সালে নিদারুন বন্যায় ভেসে যায় বাংলা। প্রচুর মৃত্যু এবং প্রচুর সম্পত্তির ক্ষতি হয়। তখন কেন্দ্রে জনতা সরকার – বিপ্লবীদের বন্ধু সরকার।
স্বভাবতই যথেষ্ট ত্রাণ সাহায্য প্রাপ্তি হয়।
৪৭-৭৭ এই ত্রিশ বছর বিপ্লবী নেতৃবর্গ না পেতেন যথাযথ খাদ্য না বস্ত্র বা স্থায়ী বাসস্থান। বনে বাদাড়ে্ ভ্রমণ করে , সামান্য তণ্ডুল সিদ্ধ ও হেলেঞ্চা শাক ভাজা দিয়ে কোনোক্রমে ক্ষুন্নিবৃত্তি করতেন।
একটা সামান্য বিড়ি দু’টান মেরে নিভিয়ে কানে গুঁজে রাখতেন। গায়ে কখনো জামা উঠত আবার কখনো বা শাশ্বত দিগম্বর রূপ ধারণ করে টুঁই টুঁই করে dialectic বান্টু দুলিয়ে মানুষের সেবা করতেন।
বন্যার ফলে এই সাহারার হাহাকার গুহ্যে ধারণ করা বামপন্থীদের রাতারাতি ব্যক্তিগত বিপ্লব ঘটে গেল। তাঁদের প্রত্যেকের সব ভাঙা চালের ঘর রাতারাতি দু’তলা তিনতলা হয়ে উঠলো বিশ্বকর্মার জাদুবলে।
যাঁদের পরিধান বস্ত্র বলতে ছিল স্রেফ লাল পতাকা প্রিন্টেড জাঙ্গিয়া তাঁদের পরনে উঠলো ফিলফিলে পাঞ্জাবি।
এই দুর্যোগের ঠিক আগে পর্যন্ত কলকাতার প্রভূত বৈপ্লবিক নেতাদের ব্যবহারযোগ্য সামান্য ছাতা অবধি ছিল না। বৈশাখের নিদারুন তাপপ্রবাহে মাথায় গণশক্তি পত্রিকা আড়াল করে মানুষের কাছে বিপ্লবের বার্তা দিতে যেতেন তাঁরা।
সামান্য ১০ পয়সা দিয়ে ট্রামে ওঠার ক্ষমতা ছিল না তাঁদের অনেকেরই। আমূল পরিবর্তন হলো তাঁদের সকলের। রাতারাতি কেনা হলো বিদেশী শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত গাড়ি।
এরপর স্রেফ দুদুর ওপরের মালাই খাওয়ার সুযোগ এলো পুনর্বার , ৮৬ সালে। কিঞ্চিৎ বৃষ্টিপাত হলো বাংলার কয়েকটি জায়গায়। দিল্লিতে তখন রাজীব। সে তো অত সহজে ক্যাশ ঢিলে করবে না।
৮৬ সালে বেদম ক্রাউডফান্ডিং হয়েছিল। সেটাই খাতায় কলমে রেড ভলেন্টিয়ারদের স্বর্ণালী পথচলার সূত্রপাত।
ব্যাঙ্গচিত্র ছাপলো আনন্দবাজার।
আমরা স্মরণ করি শ্রদ্ধায় , ভালোবাসায়।
হরি ওম।
✍ প্রীতম চট্টোপাধ্যায়।।