হর্ষ মন্দার, জুলিও রিবেইরো, জওহর সরকার এবং আরও অনেকে: এখানে অবসরপ্রাপ্ত আমলাদের সম্পূর্ণ তালিকা রইলো, যাঁদের হরদীপ সিং পুরী অভিহিত করেছেন ‘ পুঁথিগত শিক্ষায় শিক্ষিত মূর্খ (পড়ে লিখে মুরখ্’) হিসাবে
কেন্দ্রীয় আবাসন ও নগর বিষয়ক মন্ত্রী হরদীপ সিং পুরী সোমবার ৬০ জন প্রাক্তন আমলাদের কঠোরভাবে সমালোচনা করার পাশাপাশি তাদের ‘পড়ে লিখে মুরখ্’ অর্থাৎ ‘শিক্ষিত মুর্খ’ বলে অভিহিত করেছেন, কারন তাঁরা কেন্দ্রীয় ভিস্তা পুনর্নির্মাণ প্রকল্পটি বন্ধ করার আহ্বান জানিয়ে একটি খোলা চিঠির অনুমোদন চেয়েছিলেন। চিঠিতে স্বাক্ষরকারী প্রাক্তন আমলাদের তালিকায় রয়েছেন হর্ষ মন্দার, অজয় কুমার, জুলিও রিবেইরো, জওহর সরকার সহ আরও ৫৫ জন প্রাক্তন আমলা।
গতকাল কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হরদীপ সিং পুরী’ যে খোলা চিঠিটি নস্যাৎ করেছিলেন তা প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ২০২০ সালের মে মাসে। এই চিঠি প্রেরকের তালিকায় ৬০ জন প্রাক্তন আইএসএ এবং আইপিএস অফিসার ছাড়াও রয়েছেন পরিবেশ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ২জন প্রাক্তন সচিব। তাঁরা মোদী সরকারের ‘সেন্ট্রাল ভিস্তা প্রজেক্ট’ বানচাল করতে চাওয়ায় কারণ হিসেবে দেখিয়েছেন এই প্রকল্পের মধ্যেই রয়েছে অনেক ‘বড় ধরনের ত্রুটি’ এবং এছাড়াও পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে প্রয়োজন প্রায় ২০,০০০ কোটির মতো এক মোটা অংকের টাকা।
এই প্রাক্তন আমলারা অভিযোগ জানিয়েছেন যে মোদী সরকার এই কেন্দ্রীয় ভিস্তা প্রকল্পের অনুমোদন করেছেন কারণ তাঁর মনের মধ্যে একটি কুসংস্কারের জন্ম হয়েছে যে বর্তমান সংসদ ভবনটি ভীষণ ‘অশুভ’।
চিঠিতে আমলারা বলেছিলেন, “প্রকল্পের পেছনে দেওয়া যুক্তির মধ্যেই নিহিত আছে অনেক বড় গলদ। পরিবেশগত ও প্রযুক্তিগত ব্যাপারটি ঠিকমতো বিচার করলে এই প্রকল্পের অগ্ৰগন্যতার বিষয়টি এবং পূর্বের সমীক্ষা অনুযায়ী প্রকল্পের প্রয়োজনীয়তার দিকটি সবার সামনে স্পষ্ট হয়ে যাবে। যদি প্রকাশিত প্রতিবেদনেগুলো বিশ্বাস করা হয়, তাহলে দেখা যাবে যে বর্তমান সংসদ ভবন পুনঃনির্মাণের পুরো বিষয়টি দাঁড়িয়ে আছে শুধুমাত্র একটি অন্ধবিশ্বাসের উপর। এই নির্দিষ্ট সরকার এবং তাঁর মন্ত্রণালয়ের মনে হয়েছে যে বর্তমান সংসদ ভবনটি তাঁদের জন্য “আনলাকি অর্থাৎ অশুভ”।
এই বিতর্কে অন্য মাত্রা যোগ করেছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর একটি বক্তব্য। তিনি এই বক্তব্যে প্রাক্তন আমলাদের শিক্ষার দিকে সরাসরি আঙুল তুলে তাদের শিক্ষিত বোকা বলেছেন। তাঁর মত অনুযায়ী কয়েক দশকের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন অবসরপ্রাপ্ত এই আমলাদের উচিৎ ছিল প্রকাশিত প্রতিবেদনের উপর বিশ্বাস না করে প্রকৃত সত্যের সন্ধান করা। তিনি আরও বলেন, “এঁরা শুধু শিক্ষিত বোকা নয়, এঁরা হলেন দেশের কলঙ্ক”। সাথে এটাও যোগ করেন যে, “আমি এমন একটা চিঠিতে স্বাক্ষর করবো না যেখানে কুসংস্কারকে বিশ্বাস করার কথা বলা হয়।”
টাইমস অফ ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে সেন্ট্রাল ভিস্তা প্রকল্পের বিরুদ্ধে প্রাক্তন আমলাদের স্বাক্ষরিত চিঠির কথা প্রকাশিত হলেও, সেখানে স্বাক্ষরকারীদের তালিকা প্রকাশ করা হয়নি। ১৭ই মে,২০২১, যেদিন ‘টাইমস অফ ইন্ডিয়া’র রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছিল সেই একই দিনে ‘দ্য হিন্দু’তে এই চিঠি সম্পর্কিত আরেকটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ‘দ্য হিন্দু’তে প্রকাশিত নিবন্ধটিতে মোদী সরকারের এই উচ্চাভিলাষী সেন্ট্রাল ভিস্তা প্রকল্পের বিরুদ্ধে এবং প্রকল্প বন্ধ করার জন্য সরব হওয়া সেই ৬০জন আমলার খোলা চিঠিটির পাশাপাশি স্বাক্ষরকারীদের নামের তালিকাও প্রকাশিত হয়েছে।
এখানে স্বাক্ষরকারীদের সম্পূর্ণ তালিকা রইলো যাঁরা কেন্দ্রীয় ভিস্তা প্রকল্প বন্ধ করতে কেন্দ্রীয় সরকারকে অনুরোধ করে এই খোলা চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন—
অনিতা অগ্নিহোত্রি, ভি.এস. আইলাওয়াদি, শফী আলম, কে.সেলিম আলী, এস.পি অ্যামব্রোস, ভ্যাপালা বালচন্দ্রন, গোপালান বালাগোপাল, চন্দ্রশেখর বালাকৃষ্ণান, শরদ বিহার, অরবিন্দ বেহেরা, মধু ভাদুড়ি, সুন্দর বুড়া, তিশ্যারক্ষিত চ্যাটার্জী, আন্না দানি, বীভা পুরী দাস, পি. আর.দাশগুপ্তা, এম.জি. দেবসাহায়াম, সুশীল দুবে, কে.পি. ফ্যাবিয়ান, আরিফ গৌরী, গৌরীশঙ্কর ঘোষ, সুরেশ কে.গোয়েল, মীনা গুপ্ত, রবি বীরা গুপ্ত, কমল জসওয়াল, কে. জন কোশী, অজয় কুমার, সুধীর কুমার, পি.কে. লাহিড়ী, সুবোধ লাল, হর্ষ মন্দার, অমিতাভ মাথুর, অদিতি মেহতা, সোনালিনী মীরচন্দানি, অবিনাশ মোহননে, দেব মুখার্জি, নাগালসামি, পি.জি.জে. নমপুথিরি, অমিতাভ পান্ডে, অলোক পেট্রি, আর.পূর্নলিংগাম, সি. বাবু রাজীব, জুলিও রিবেইরো, অরুণা রায়, দীপক সানান, এস. সত্যভামা, এ. সেলভরাজ, অভিজিৎ সেনগুপ্ত, আফতাব শেঠ, অশোক কুমার শর্মা, নবরেখা শর্মা, রাজু শর্মা, তিরোলোচন সিং, জওহর সরকার, নরেন্দ্র সিসোদিয়া, পারভীন তালহা, থ্যাঙ্কসী থেক্কেকেরা, পি.এস.এস টমাস এবং হিন্ডাল তায়েবজি।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হরদীপ সিং পুরী কেন্দ্রীয় ভিস্তা প্রকল্পের বিরোধিতা করার জন্য প্রাক্তন আমলাদের বিরুদ্ধে বোমা ফাটিয়েছেন।
৩১ শে মে, গৃহায়ন ও নগর বিষয়ক মন্ত্রী হরদীপ সিং পুরী সেন্ট্রাল ভিস্তা প্রকল্পের নিয়ে একটি সংবাদিক সম্মেলন করেছিলেন। সম্মেলনের শেষের দিকে, মন্ত্রী উক্ত বিবৃতি সম্পর্কে নিজের আপত্তির কথা প্রকাশ করেন। তিনি জানান যে গতবছর প্রাক্তন আমলাদের একটি ‘খোলা চিঠি’ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
কেন্দ্রীয় ভিস্তা প্রকল্প নিয়ে যারা প্রশ্ন উত্থাপন করছেন তাঁদের তিনি অন্তত একবার সংসদ ভবনে গিয়ে সেখানে জায়গার ঠিক কতটা অভাব এবং সেখানে বসে থাকা কতটা কঠিন তা দেখে আসার আহ্বান জানান। তিনি আরও বলেন, “সংসদ কম লোকের জন্য তৈরি করা হয়েছিল। আমরা ভারতের জনগণের জন্য একটি বৃহত্তর সংসদ ভবন তৈরি করছি”। সাথে এটাও বলেন যে, “আমি মনে করি এই ব্যক্তিদের মধ্যে কয়েকজনের এইধরনের চিঠিতে স্বাক্ষর করার আগে নিজেদের মাথা পরীক্ষা করানো উচিত”।
পুরী বলেন, তাঁরা দাবি করছেন যে এটা একটি খোলা চিঠি ছিল, তবে কেন আগে তাঁকে কখনও এই চিঠি সম্পর্কে কিছু জানানো হয়নি। এই চিঠির বিষয়বস্তু সম্পর্কে তিনি গত ৩১শে মে জানতে পারেন। তিনি সম্প্রতি এইধরনের সংবেদনশীল বিষয়ে উস্কানি দেওয়া নিউজ পোর্টালগুলির বিরুদ্ধে অভিযোগের সুরে বলেন যে “তাদের কী এজেন্ডা আছে তা আমার জানা নেই, তবে তাদের উচিৎ প্রকৃত ঘটনার সত্যতা বিচার করা”।
এই ‘বিদ্বান’ শ্রেণী (বুদ্ধিমান, শিক্ষিত গোষ্ঠী) প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি জানান যে, এই বাদানুবাদের মূল কারণ হিসাবে এঁনারা বলতে চাইছেন যে নতুন সেন্ট্রাল ভিস্তা প্রকল্পটি আসলে দেশের মানুষদের বঞ্চিত করে সস্তার বিনোদনের জন্য তৈরী করা হচ্ছে। একবার “সেন্ট্রাল ভিস্তা অ্যাভিনিউ পুনর্নির্মাণ শেষ হলে সেখানে অনেক জায়গা থাকবে, এমনকি বিনোদন এবং মাম্মি, ড্যাডি ও পাপ্পুর জন্য সেখানে আইসক্রিমেরও ব্যবস্থা থাকবে”, তিনি জানিয়েছেন ।