করোনার সুযোগ নিয়ে ব্যাপক হারে হিন্দুদের ধর্মান্তরিত করে চলেছে খ্রিস্টান মিশনারিরা।মানুষের অসহায়তার সুযোগ নিয়ে হিন্দুদের স্বধর্মচ্যুত করা হচ্ছে।
মার্জিত পোশাক,মার্জিত মৌখিক ভাষা,মার্জিত ব্যবহারিক আচার-আচরণের অপরিচিত ব্যক্তি বা কতিপয় ব্যক্তি অযাচিত ভাবে আপনার বিপদে সাহায্য করার প্রস্তাব নিয়ে এলেন।আমি-আপনি প্রথমে মানসিক দোলাচলে দুলে একটু ‘তা-না-না’ করে নেব।তাঁরাও তখনকার মতো পিছিয়ে গেলেন।বুঝেও গেলেন যে,শিকার অর্ধেক টোপ গিলেছে!ইতিমধ্যে তাঁদের সাথে হয়ত আপনার দু-এক বার চলতি পথে দেখা হয়ে গেল।আন্তরিকতার বিগলিত হয়ে তাঁরা আপনার সার্বিক বিষয়ে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা জানালেন!অবশ্যই আপনাকে দেখিয়ে দেখিয়ে এবং শুনিয়ে শুনিয়ে!আমি-আপনি-আমরা বিশ্বাস করতে শুরু করলাম যে, “না,মানুষগুলো সত্যি-ই ভাল!আমাদের মঙ্গলের জন্য কতই-না চিন্তিত!’তাঁরাও দেখলেন শিকার বিশ্বাস করে ফেলেছে!এর পর আমাদের গরীব-মধ্যবিত্ত মন তাঁদের আর না-বলতে পারবে না।পুনরায় তাঁরা এলেন সাহায্য বা উপহার নিয়ে।এবার আর আমরা ‘তা-না-না’ করতে পারলাম না।আমরা গদগদ চিত্তে,প্রফুল্ল-বদনে সাহায্য-উপহার গ্রহণ করে নিজেদের ধন্য করলাম!
তারপর সুযোগ ও সময় মতো আগন্তুক সাহায্যকারিরা বললেন,'আপনি তো মশাই ঈশ্বরের সন্তান!তাহলে আপনি ওই রকম ভাবে প্রার্থনা করছেন কেন!আমাদের মতো এই ভাবে করুন।তাতে স্বর্গস্ত পিতা আপনার প্রতি দয়াশীল হবেন।'আপনি-আমি ভুলে গেলাম যে আমরা "অমৃতস্য পুত্রাঃ--আমরা অমৃতের সন্তান।" সৃষ্টির সময়কাল থেকেই আমরা তাই।
ধীরে ধীরে 'ঈশ্বরের সন্তান" আপনাকে বলতে শুরু করলেন,'বিশ্বে খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীরা খুব বিপদে আছেন।আপনাদের সাহায্য একান্তই দরকার।আপনিও খ্রিস্ট ধর্ম নিয়ে এগিয়ে আসুন।আমাদের কৃতজ্ঞ মন উপকারের বিনিময়ে নিজ ধর্ম বিসর্জন দিয়ে খ্রিস্টান হয়ে গেলাম!ভুলে গেলাম যে হিন্দু ধর্ম সুপ্রাচীন।বিপুল তার ঐশ্বর্য।কোনো ব্যক্তি প্রচারিত-সংকীর্ণমনা নয় হিন্দু ধর্ম।ভুলে গেলাম যখন ইউরোপ-আমেরিকা পোশাক পরতেই শেখেনি,তখন আমাদের বেদ-উপনিষদ-গীতা সংকলিত হয়ে গিয়েছে।গণিত-জ্যোতির্বিজ্ঞান-পদার্থ বিজ্ঞানের অনেক কিছুই সনাতন ভারত,হিন্দুভারত আবিষ্কার করে ফেলেছে।
"ঈশ্বরের সন্তানরা" যখন আপনাকে বলছেন 'খ্রিস্টানরা খুব বিপদে আছে।আপনার সাহায্য দরকার',তখন তাঁদের প্রশ্ন করুন,'তোমরা তো ঈশ্বরের সন্তান।শক্তিমান পিতা আপনাদের বিপদে রক্ষা করছেন না কেন!ঈশ্বরের সন্তান হয়ে এত নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন কেন!'
এই অযাচিত মুখোশধারী সাহায্যকারীরা হলেন খ্রিস্টান মিশনারিজের প্রতিনিধি।যাঁদের কাজই হল তৃতীয় বিশ্বের দরিদ্র দেশ ও উন্নয়নশীল দেশের মানুষদের ছলে-বলে-কৌশলে স্বধর্মচ্যূত করে খ্রিস্টান বানানো।ভারতে এঁদের প্রথম আগমন ঘটে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সময়ে।বিশ্বের নানা দেশে এরা নিরন্তর সক্রিয় ভাবে কিন্তু নীরবে কাজ করে চলেছে।মাদার টেরেসা ছিলেন এদেরই আদর্শস্থানীয় প্রতিনিধি।খ্রিস্ট ধর্মে ধর্মান্তরিত না-করে মাদার টেরেসা কোনো আর্ত-পীড়িতকে সাহায্য করতেন না।কেউ যদি পারেন তাহলে উদাহরণ দিয়ে সাহায্য করবেন যে,'মাদার টেরেসা অ-খ্রিস্টান পীড়িতকে সাহায্য করেছেন!'বছরের পর বছর ধরে এই মিশনারিজরা কোটি কোটি নিরীহ মানুষকে স্বধর্মচ্যুত করে চলেছে।এই করোনাকালে এর ব্যতিক্রম হচ্ছে না।কোনো মিশনারিজ বলছেন যীশু আপনাকে করোনা থেকে রক্ষা করবেন।তিনি আপনাদের স্বাস্থ্য-রক্ষক!ভাবুন একবার!
অতি সম্প্রতি ‘নিউজ ভারতী’ নামে একটি ইংরাজি সংবাদ পোর্টালে এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।তাতে ভারতে খ্রিস্টান মিশনারিদের কার্যকলাপের বিষদ বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে।’NGO MISSION INDIA’ একটি অলাভজনক ও নিরপেক্ষ সংগঠন ধর্মান্তরকরণ সম্পর্কে সমীক্ষা চালিয়েছে।প্রতিবেদনে সমীক্ষালব্ধ ফলাফল উদ্ধৃত করা হয়েছে। তা থেকে জানা যাচ্ছে যে,ভারতীয়দের ধর্মান্তর প্রক্রিয়া অতি দ্রূত ঘটানো হচ্ছে।করোনা অতিমারী তাদের সুবর্ণ সুযোগ এনে দিয়েছে।গত দেড় বছরে লকডাউন-জনিত কারণে অনেকেই জীবিকা হারিয়েছেন।কেউ কেউ নতুন পেশা নিয়েছেন।অনেক ছোট ছোট শিল্পোদ্যোগ বন্ধ হয়ে গিয়েছে।তাতেও প্রচুর মানুষ কাজ হারিয়ে অনাহারে বা অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছেন।এই সকল পীড়িত-দরিদ্র মানুষদের অসহায়তার সুযোগ নিয়ে ধর্মান্তর করে চলেছে মিশনারিরা।অযাচিত ভাবে পীড়িতদের খাদ্য-পানীয়-বস্ত্র-ওষুধ দেওয়া হচ্ছে সেবার নামে।তাঁদের বিশ্বাস অর্জনের পরই মিশনারিরা নিজস্ব নখ-দন্ত বের করছে।প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে,অতিমারী-কালে ১.৩ বিলিয়ন আর্তদের কাছে খ্রিস্টের নাম পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।আরও উল্লেখিত যে, মিশনারিরা লক্ষ্য স্থির করেছে যে,প্রতিটি ভারতীয়কে খ্রিস্টে ধর্মান্তরিত করা তাদের নৈতিক অধিকার।এবং ভারতে তারা খ্রিস্টের “প্রেমভূমি’-তে রূপান্তরিত করতে চায়।তারা বলছেন যে,”আমরা খ্রিস্টের দৈববানী পেয়েছি।ভারতকে “তাঁর” আলোয় আলোকিত করার মহান দায়িত্ব তিনি আমাদের উপর আরোপ করেছেন।ভারতের ৪০০ মিলিয়ন মানুষের প্রভু যীশু হৃদয়ের দুয়ার খুলে অপেক্ষা করছেন।করোনা মহামারী সেই অতীব সুবর্ণ সুযোগ এনে দিয়েছে।
“বাইবেল ভবন খ্রিস্টান ফেলোশিপ”-এর প্রবীন খ্রিস্টান ধর্ম যাজক আইজ্যাক শ এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “লকডাউন কালে আমাদের অনলাইন পরিষেবা চালু হয়।এতে মানুষের স্বতস্ফূর্ত অংশগ্রহণে আমরা অভিভূত।ছোট পরিসরের চার্চ,যেখানে রবিবাসরীয় প্রার্থনার ১০০ জনও আসতেন না।এখন সেখানে অনলাইনে ৭০০ মানুষ ‘ভিজিট’ করছেন!” তিনি আরও জানান যে,”আমাদের বাইবেল ভবনে চার বছর আগেই অনলাইন প্রার্থনা চালু করা হয়েছিল।করোনা-কালে আমাদের ‘ভিউয়ার’ সংখ্যা ৩০০ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।” তিনি দাবী করে বলেন,”এটা নিঃসন্দেহে প্রভু যীশুর আশীর্বাদ সকলের উপর বর্ষিত হয়েছে।আমাদের সেবা কাজের জন্যই মানুষ আসছেন।”
আইজ্যাক খোলাখুলিই জানান, “লকডাউন-প্রোটোকল মেনে চার্চ বন্ধ রাখা হয় নি।বাইবেল বিশ্বাসীরা জানেন যে প্রভু যীশু সকল খ্রিস্ট-ভক্তদের স্বাস্থ্য রক্ষা করেন।”
প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে যে,’চিলড্রেন’স বাইবেল ক্লাব’ গঠন করে মিশনারিরা শিশুদের খ্রিস্টমুখী করার কাজে নিয়োজিত রয়েছে।এবং এক বছর যাবৎ এই শিশুদের পর্যবেক্ষণে রাখার পর ‘খ্রিস্ট কমিউনিটি’-র সাথে যুক্ত করা হয়।
আরও দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হল যে,মিশনারিরা আগামিতে ভারতে খ্রিস্টান এবং অখ্রিস্টান–এই দুই ভাগ করতে চাইছে।এ-বিষয়ে ‘ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েসন’-এর সভাপতি জন রোজ অস্টিন জয়লাল এক সাক্ষাৎকারে খোলামেলা ভাবেই জানিয়েছেন।অভিযোগ উঠেছে যে,জন সাহেব তাঁর পদমর্যাদা ও পেশার অব্যবহার করছেন।তিনি তাঁর সংস্পর্শে আসা জুনিয়র ডাক্তারদের উপর প্রভাব খাটিয়ে ধর্ম ত্যাগে বাধ্য করেন।
খ্রিস্টানদের আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘হ্যাগাই ইন্টারন্যাশনাল’-এ ভাষণকালে জয়লাল স্পষ্টই বলেছেন,’প্রত্যেক হিন্দুকে খ্রিস্টান করার সুযোগ কেউ হারাবেন না।ভারতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ভেঙে পড়ার মুখে।’ডাক্তার জয়লাল আরও জানান যে,’ভারতের হিন্দুত্ববাদী জাতীয় সরকার আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানকে ধ্বংস করতে চায়।করোনা আতিমারীতে লকডাউনের মানুষ নানা সমস্যায় জর্জরিত।অথচ সরকার তাঁদের কোনো দায়িত্ব নিচ্ছে না।সেক্ষেত্রে চার্চগুলি পীড়িত মানুষদের পাশে দাঁড়িয়ে সাহায্য করে চলেছে।তারা ভারতকে এক জাতি,এক ধর্ম,এক ভাষা ও এক চিকিৎসা পদ্ধতি চালু করতে চলেছে।এই ভাষা হবে সংস্কৃত।সকলের মনে হিন্দুত্ব ভাবধারার উন্মেষ ঘটানো হবে।” জয়লাল উপস্থিত সকলে আহ্বান করে বলেন,”এসব রোধ করার জন্য প্রয়োজন ভারতীয় সুপ্রীম কোর্টের দৃষ্টি আকর্ষণ করা।প্রয়োজন সংঘবদ্ধ ভাবে অনশন ধর্মঘট,উপবাস ধর্মঘট এবং ধারাবাহিক লড়াই চালিয়ে যাওয়া।”
জয়লাল বলেন যে,”আধ্যাত্মিক ভাবে রোগ নিরাময়ের মতো খ্রিস্টান ডাক্তারগণ স্পর্শের মাধ্যমেও রোগীকে সারিয়ে তুলতে পারেন।ধর্ম নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠান,মিশনারি প্রতিষ্ঠান ও ভারতীয় মেডিক্যাল কলেজগুলিতে বেশি বেশি সংখ্যক খ্রিস্টান ডাক্তার প্রয়োজন।আমি পেশাগত ভাবে একজন শল্য চিকিৎসক।যা আমাকে সুযোগ এনে দিয়েছে যীশু প্রদর্শিত ‘স্পর্শ চিকিৎসা”পদ্ধতি প্রয়োগের ক্ষেত্রে।আমার পেশার কারণেই আমি স্নাতক ও ইন্টার্ন ডাক্তারদের সহজেই প্রভাবিত করতে পারি।হিন্দুরা বহু দেববাদে বিশ্বাসী।এ-কারণেই তাঁদের স্বল্প আয়াসেই খ্রিস্টমুখী করা সহজ।সকল খ্রিস্টানের উচিৎ ভারতীয় জনগণকে খ্রিস্টধর্মে নিয়ে আসা”।
ডাঃ জয়লাল তাঁর পেশা ও পদমর্যাদার নিয়ননীতি বিরুদ্ধে গিয়ে ভারতে খ্রিস্টধর্মের কট্টর প্রচারকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন।তিনি তাঁর বিভিন্ন ভাষণে পরিচ্ছন্ন ভাবেই আহ্বান জানিয়ে চলেছেন যে,যে-কোনো প্রকারেরই হোক ভারতের সকলকে খ্রিস্টধর্মে ধর্মান্তরিত করতে হবে।তিনি বলেছেন,”ভারতে খ্রিস্টান এবং অ-খ্রিস্টান এই দুই শ্রেনির মানুষ থাকবেন।ভারতের হিন্দু-জাতীয়তাবাদী সরকার অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসা পদ্ধতিকে পশ্চিমী চিকিৎসা বলে থাকে।তারা ভারত থেকে এই পদ্ধতি তুলে দিতে চায়।এতে করে ২০৩০ সাল নাগাদ ভারতে অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসা থাকবে না।ভারতে খ্রিস্টানদের পক্ষে নিরাপদ দেশ নয়।”
তিনি আরও বলেন, “ভারতীয়রা বহুবাদে বিশ্বাসী বলেই তাঁদের মধ্যে পরস্পরের প্রতি বিশ্বাস-সহানুভূতি কম।চারজন ভারতীয় একসাথে একদিকে তখনই চলে,যখন পঞ্চম ভারতীয়র মৃতদেহ কাঁধে নিয়ে তাঁরা শ্মশানে যান।আর এটাই আমাদের কাছে লৌহদৃঢ় সৌভাগ্য তাঁদেরকে খ্রিস্ট ধর্মে আনার ক্ষেত্রে।”
করোনাকালের প্রথম বছরেই শুধুমাত্র অরুণাচল প্রদেশে ৬০০ জন খ্রিস্ট ধর্ম প্রচারক করোনায় মারা যান। ৯০০টি প্রচারক পরিবার করোনায় আক্রান্ত হয়।এই তথ্য থেকেই উপলব্ধি হয় যে খ্রিস্ট-যাজকরা ওই রাজ্যে কতটা সক্রিয়! 'ওয়ার্ল্ড বাইবেল কলেজ'-র ডিরেক্টর পল রেনগননাথন জানিয়েছেন চেন্নাইয়ে ৫০০ জন যাজক ওই সময়কালে করোনায় মারা গিয়েছেন।
করোনার দুঃসময়ের সুযোগ নিয়ে এক লক্ষ হিন্দুকে তাঁরা খ্রিস্টান করেছে।৫০ হাজার গ্রামবাসীর মনে প্রভাব বিস্তার করেছে।যাঁদের দু-এক দিনের মধ্যেই খ্রিস্টান করা হবে।১০০০টি নতুন স্থানে চার্চ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।মিশনারিদের শিকারের প্রথম লক্ষ্যই থাকে আর্থিক ভাবে দুর্বল ও দুর্গম এলাকার প্রতি।যেখানে সহজেই স্বধর্ম ও স্বদেশ বিরোধী কাজ মানুষের মনে গেঁথে দেওয়া যায়। দু-বেলা দু’মুঠো খাবারের বিনিময়ে এই দরিদ্র মানুষদের খ্রিস্টান করে নিচ্ছে মিশনারিরা।
খ্রিস্ট ধর্মের “রাজধানী” ভ্যাটিকানের বিরুদ্ধে ইতিপূর্বে যৌন কেলেঙ্কারির অভিযোগ উঠেছে। ভারতে মিশনারির বিরুদ্ধে সাধ্বী প্রাচী,রামদেব-সহ অনেক সুধীজনই প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
অনুবাদ : সুজিত চক্রবর্তী