কোভিড বিধি মানার ক্ষেত্রে সামান্য গা-ছাড়া মনোভাব দেখা দিলে দেশে যে কোনও সময়ে করোনার তৃতীয় ঢেউ আসতে পারে বলে সাবধান করে দিলেন নীতি আয়োগের সদস্য (স্বাস্থ্য) বিনোদ পল। আজ তিনি বলেন, কোভিড বিধি মানা ছাড়াও ভবিষ্যতে সংক্রমণ রুখতে একমাত্র ভরসা হতে পারে প্রতিষেধক। কিন্তু সমস্ত দেশবাসীকে টিকাকরণের আওতায় আনতে যে সময়ের প্রয়োজন, তার আগেই সংক্রমণের তৃতীয় ঢেউ আসার আশঙ্কা করছেন তিনি।
তৃতীয় ঢেউ নিয়ে ইতিমধ্যেই সতর্ক করেছেন বিশেষজ্ঞরা। ওই সময়ে করোনাভাইরাসের চরিত্রগত কতটা পরিবর্তন হবে, কোন স্ট্রেনটি চরিত্র পাল্টে সংক্রমণ ছড়ানোর প্রশ্নে প্রধান ভূমিকা নেবে, তা এখনই বলতে পারছেন না তাঁরা। এ দেশে সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের ভয়াবহতার নেপথ্যে ভাইরাসের ডেল্টা স্ট্রেন (বি.১.৬১৭.২)-কে দায়ী করেছে জিনোম সিকোয়েন্সের দায়িত্বে থাকা ইন্ডিয়ান সার্স-কোভ-২ জেনেটিক্স কনসর্টিয়াম (ইনসাকগ) এবং ন্যাশনাল সেন্টার ফর ডিজ়িজ় কন্ট্রোল (এনসিডিসি)। ডেল্টা স্ট্রেন প্রথম ভারতে খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল। এটিকে পরবর্তী সময়ে ‘উদ্বেগজনক প্রজাতি’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ব্রিটেনের কেন্টে যে প্রজাতির (আলফা) ভাইরাস পাওয়া গিয়েছিল, সংক্রমণের প্রশ্নে তার চেয়ে অন্তত ৫০ গুণ বেশি শক্তিশালী ডেল্টা। সেই কারণে এ যাত্রায় দেশের একটি বড় অংশে খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পেরেছিল স্ট্রেনটি। গবেষণায় বলা হয়েছে, ডেল্টা স্ট্রেনটি প্রথম পাওয়া গিয়েছিল মহারাষ্ট্রের অমরাবতী এলাকায়। সেখান থেকে তা ছড়িয়ে পড়ে পশ্চিমবঙ্গ, অন্ধ্রপ্রদেশ, দিল্লি, গুজরাত, তেলঙ্গানার মতো রাজ্যগুলিতে। দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময়ে যে রাজ্যগুলিতে ডেল্টা স্ট্রেনের উপস্থিতি মিলেছে, সেখানে সংক্রমণের ছবিটি ছিল সবচেয়ে আশঙ্কাজনক। তবে ডেল্টা স্ট্রেনের কারণে মৃত্যুহার বেড়ে যাওয়ার তেমন কোনও প্রমাণ মেলেনি। ‘ল্যানসেট’ পত্রিকায় প্রকাশিত সাম্প্রতিক একটি গবেষণার দাবি, ফাইজ়ারের টিকার দু’টি ডোজ়ের মধ্যে ব্যবধান বেশি হলে ডেল্টা স্ট্রেনের বিরুদ্ধে তা কম কার্যকরী হচ্ছে।
মার্চ থেকে মে— প্রায় দু’মাস করোনাভাইরাস তাণ্ডব চালানোর পরে গোটা দেশেই সংক্রমণের সূচক নামতে শুরু করেছে। তবে করোনার কোনও স্ট্রেন চরিত্র পাল্টে যাতে সংক্রমণের তৃতীয় ঢেউ তুলতে না-পারে, সেই লক্ষ্যে দেশের বড় সংখ্যক মানুষকে দ্রুত প্রতিষেধকের আওতায় আনতে চাইছে কেন্দ্র। সঙ্গে জোর দেওয়া হয়েছে কোভিড সতর্কতাবিধি মেনে চলার বিষয়টিতেও। বিনোদ পলের কথায়, ‘‘দেশের মানুষকে প্রতিষেধক দিতে হলে আমাদের সময় প্রয়োজন। সেই সময়ই আমাদের হতে অল্প রয়েছে।’’ স্বাস্থ্য মন্ত্রকের ব্যাখ্যা, সরকার এ বছরের মধ্যেই সকলকে টিকার আওতায় আনার পরিকল্পনা নিয়েছে। কিন্তু সমস্যা হল, ফি-দিন টিকাদানের যা হার, তাতে লক্ষ্যমাত্রা ছোঁয়া সম্ভব নয়। অথচ ব্রিটেনে ইতিমধ্যেই তৃতীয় ঢেউ শুরুর ইঙ্গিত মিলছে। ভারতেও তৃতীয় ঢেউ যে কোনও দিন শুরু হয়ে যেতে পারে। ফলে হাতে যে সময় কম, তা স্পষ্ট।
এই পরিস্থিতিতে দেশে টিকাকরণ অভিযানের গতিপ্রকৃতি পর্যালোচনা করতে আজ বৈঠকে বসেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কেন্দ্র ও রাজ্যের হাতে কী পরিমাণ প্রতিষেধক রয়েছে, কত প্রতিষেধক জুন-জুলাই মাসে রাজ্যগুলির কাছে যেতে পারে— বৈঠকে তা জানানো হয় প্রধানমন্ত্রীকে। বিদেশ থেকে কত টিকা আসতে পারে, টিকাকরণ অভিযানকে কী ভাবে আরও প্রযুক্তিবান্ধব করে তোলা হয়েছে, সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয় বৈঠকে। টিকা যাতে নষ্ট না-হয়, সেই বিষয়টিতে বিশেষ জোর দেন প্রধানমন্ত্রী। সূত্রের মতে, রাজ্যগুলি যাতে চাহিদা মতো প্রতিষেধক পায় এবং দ্বিতীয় ডোজ় পেতে যাতে মানুষের সমস্যা না-হয়, সে দিকে বিশেষ ভাবে নজর দিতে স্বাস্থ্যকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।