ঘটি-বাটি বেচে জল কিনছেন তামিলনাড়ুর মানুষ, হ্রদ ভরানোর উদ্যোগ নিল সরকার

জলের দরে জিনিসপত্র কেনার প্রবাদ বহু পুরনো। কিন্তু জিনিসপত্র বেচে চড়া দামে কিনতে হবে জল, কেউ কখনও ভাবতে পেরেছিল! ঠিক সেটাই হচ্ছে এখন তামিলনাড়ুতে। চরম গ্রীষ্ম, বৃষ্টি নেই। শুকিয়ে এসেছে সমস্ত জলের উৎস। সারা রাজ্যে হাহাকার একটু জলের জন্য।

এই অবস্থায়, প্রায় ৭০০-৮০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে এক একটি ৫০০ লিটারের জলের ট্যাঙ্ক। তবে টাকা দিলেও অপেক্ষা করতে হচ্ছে কম করে এক মাস। সরকারি জল সরবরাহ ব্যবস্থা প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে। সেই কারণেই বাইরে থেকে জলের ট্যাঙ্ক অর্ডার করতে হচ্ছে বাসিন্দাদের। চেন্নাইয়ের এক বাসিন্দা জানাচ্ছেন, জলের ট্যাঙ্কের অর্ডার দিয়েছিলেন গত ১৭ মে। এক মাসের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও জলের ট্যাঙ্ক এসে পৌঁছয়নি বাড়িতে। জলের জন্য অন্তত ১০ বার শহরের জল সরবরাহ কেন্দ্রে ঘুরে এসেছেন তিনি, তদ্বির করে এসেছেন জলের জন্য। কিন্তু জলের দেখা নেই!

যাঁদের এত দাম দিয়ে জল কেনার ক্ষমতা আছে, তাঁদের তবু এক রকম। কিন্তু যে সমস্ত গরিব মানুষের তা নেই, তাঁদের অবস্থা আরও খারাপ। জলের খরচ জোগাতে ঘরের জিনিস বিক্রি করে ফেলতে হচ্ছে তাঁদের। পাড়ার কুয়ো থেকে লটারি করে জল সরবরাহ করা হচ্ছে।

জলের জন্য রাজ্যের একাধিক তথ্য প্রযুক্তি দপ্তর কর্মীদের বাড়ি থেকে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছে। অফিস প্রায় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। শহরের একাধিক গেস্ট হাউস, হোটেল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এই জলসংকটের কারণে। জল বাঁচাতে কাগজের থালায় খাওয়া দাওয়া করছেন শহরের বাসিন্দারা।

 তবে এত উদ্বেগের মধ্যেও একটি সুখবর রয়েছে চেন্নাইবাসীর জন্য৷ জানা গিয়েছে গত কয়েক দিনে ৮৫ একরের পারুথাপাট্টু লেক জলপূর্ণ হয়ে উঠতে চলেছে৷

জানা গিয়েছে, এই তীব্র জলকষ্টের কথা ভেবেই চেন্নাইয়ের আভাদি পুরসভা হ্রদগুলি সংস্কারে উদ্যোগী হয়েছে৷ ২৮ কোটি টাকার একটি প্রকল্প নেওয়া হয় পারুথাপাট্টু লেকের খনন কাজে৷ গভীরতা বাড়িয়ে হ্রদটিকে আগের মতো করার চেষ্টা চলেছে৷ ৫০০ জন শ্রমিক খননে হাত লাগায়৷ ১২ ফুট গভীর এবং ৩ কিলোমিটার দীর্ঘ এলাকা জুড়ে খোঁড়া হয় হ্রদের মাটি৷

প্রথম ধাপের কাজ শেষ৷ আগামী সপ্তাহ থেকে হ্রদে জলসরবরাহের কাজ হবে৷ এর জন্য পাম্পিং ব্যবস্থা এবং পুনর্ব্যবহারযোগ্য উপায়ে জল আনার ব্যবস্থা হয়েছে৷ পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, এই হ্রদের জল আর বিনামূল্যে ব্যবহার করতে পারবে না আশপাশের শিল্পাঞ্চলগুলি৷

এই প্রকল্পের উদ্যোক্তা হলেন তামিলনাডুর সংস্কৃতি মন্ত্রী কে পান্ডিয়ারাজন৷ তিনি প্রায় আড়ালে থেকেই আভাদি পুরসভাকে দিয়ে এই কাজটি করিয়ে নিয়েছেন৷ প্রকল্প প্রায় শেষের পথে এসেছে, এখন তিনি সংবাদমাধ্যমের সামনে মুখ খুলেছেন৷ তিনি বলছেন, “এখানে অন্তত ১৫টি লেক আছে৷ আপাতত পারুথাপাট্টু লেকে সংস্কার করে জলসংরক্ষণের কাজ করা হয়েছে৷ বাকিগুলোতেও করা হবে৷ জলের জন্যই এই উদ্যোগ৷ আশা করি, সফল হবো আমরা।”

তবে এই লেক যদিও এখনই জল-সমস্যা মেটাতে পারবে না চেন্নাইয়ে৷ কারণ লেকের জল কোনও মতেই মানুষের পান করার মতো নয়৷ শুদ্ধ জল সরবরাহ করতে সময় লাগবে খানিকটা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.