“ঈশ্বর যদি সর্বশক্তিমান হন, তাহলে তিনি কি এমন একটা পাথর বানাতে পারেন, যেটা তিনি নিজেই তুলতে পারবেন না?”- নাস্তিকদের ছুঁড়ে দেওয়া এই অকাট্য হেঁয়ালিটাকে আগে বুঝে নেওয়া যাক।
উত্তর যদি হ্যাঁ হয় তাহলে দাঁড়াচ্ছে, ঈশ্বর সেই পাথরকে নিজেই তুলতে পারবেন না। তাহলে আর সর্বশক্তিমান কিভাবে হলেন?
আবার উত্তর যদি না হয়, তাহলে দাঁড়াচ্ছে, ঈশ্বর ওইরকম পাথর তৈরি করতেই পারেন না। তাহলে আর সর্বশক্তিমান কি হল? একটা পাথরই যদি না বানাতে পারেন!
বোঝা গেল? উত্তর যাই হোক না কেন ‘ঈশ্বর সর্বশক্তিমান’- এটা ভুল প্রমাণিত হচ্ছে।
সনাতন ধর্মের অদ্বৈতবাদ কিন্তু এই হেঁয়ালির সমাধান সহজেই করে দিতে পারে।
এই মতবাদ আসলে সনাতন এক মহান দর্শন। সেখানে পরিস্কার ধারণা দেওয়া হয়েছে যে ঈশ্বর একটা আলাদা, পৃথক কোন অস্তিত্ব নয়। ব্যক্তি বিশেষ তো একেবারেই নয়।
এই মহাবিশ্বে যা কিছু অস্তিত্ববান, তা সবই ঈশ্বর।
তাই উত্তর হল- না, ঈশ্বর ওইরকম পাথর বানাতে পারবেন না। কারণ উপাদানই আপনি দিতে পারবেন না। এই মহাবিশ্বে যত পাথর বা পাথর বানাবার উপাদান আছে, তা সবই ঈশ্বরেরই অংশ মাত্র। সব পাথরই তো তিনি। সমগ্র দৃষ্টি গোচর ও দৃষ্টি বহির্ভূত মহাবিশ্বের সকল বস্তু, সকল শক্তিই তিনি। পৃথিবীর সেরা ভারোত্তোলক কি নিজেকে তুলতে পারবে? পারবে না। তাই বলে কি তার শ্রেষ্ঠত্ব ক্ষুন্ন হয়?
এতো গেল দার্শনিক উত্তর। এবার একটু বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিতে উত্তর খোঁজা যাক।
এই পাথর তোলাতুলির ব্যাপারটা তো নেহাতই পার্থিব অভিকর্ষজনিত ব্যাপার!
পুরো পৃথিবীটাই তো একটা বিরাট শিলাস্তুপ! (earth is a rocky planet), তাকে কে তুলে রেখেছে মহাশূন্যে?
আরে জানি জানি, সূর্যের মহাকর্ষ বল তুলে রেখেছে।
কিন্তু সূর্যকে কে তুলে ঝুলিয়ে রেখেছে মহাশূন্যে?
আরে জানি জানি, মিল্কিওয়ে ছায়াপথের কেন্দ্রে অবস্থিত স্যাগাটেরিয়াস-এ নামক সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাকহোলের বিরাট মহাকর্ষ বল, সূর্য সহ দশহাজার কোটি নক্ষত্রকে মহাশূন্যে ভাসিয়ে রেখে নিজের চারদিকে ঘোরাচ্ছে।
কিন্তু, স্যাগাটেরিয়াস-এ কে কে তুলে রেখেছে মহাশূন্যে?
আরে জানি জানি লোকাল গ্যালাক্টিক গ্রুপ বা স্থানীয় ছায়াপথ পুঞ্জের গ্যালাক্সিগুলো অভিকর্ষের টানে কাছাকাছি অবস্থান করছে।
এইরকম লোকাল গ্যালাক্সির দলগুলো নিয়ে আবার তৈরি হয়েছে ভার্গো সুপার-ক্লাস্টার, যেটা আবার ল্যানিয়াকেয়া মেগা সুপার-ক্লাস্টারের অংশ মাত্র।
আবার এই ল্যানিয়াকেয়া মেগা ক্লাস্টারের সব গ্যালাক্সিগুলো ছুটে চলেছে এক মহা শক্তিশালী কোনকিছুর দিকে। যার অভিকর্ষ অকল্পনীয়! সেটা যে কী, তা এখনো জানা যায় নি। বিজ্ঞানীরা তার নাম দিয়েছেন The great attractor.
কে সেই গ্রেট বা মহান আকর্ষক?
ঈশ্বর জানেন।
পাটকেল/ সম্বরন চট্টোপাধ্যায়