হিন্দোল তুমি বল, মদন মিত্র এখন ঠিক কি অবস্থায় আছেন ? এখনও কি অসুস্থ বোধ করছেন ? দিনভোর রানিং কমেন্ট্রি মদন মিত্রর ঘরে ফেরা নিয়ে, এ বি পি আনন্দের ।
প্রায় টানা দু ঘণ্টা কাল চলল এই আদিখ্যেতা । তত ক্ষণে প্রায় সব প্রেস শুরু করে দিয়েছে – মদন এখনও ঘরে ফেরে নাই । এ যেন সেলুলার জেল থেকে বিপ্লবীর প্রত্যাবর্তন ।
পরনে লাল ধুতি, লাল পাঞ্জাবি । চোখে রে ব্যান সান গ্লাস । মুখে প্রসেনজিৎ মার্কা হাসি । পি জি র ফ্লোরে দাঁড়িয়ে তখন এভারগ্রীন মদন মিত্র একটার পর একটা গান শোনাচ্ছেন প্রেসকে । মানে আমাদের । উত্তেজনায় থর থর করে বুম গুলো পর্যন্ত কাঁপছে । ৬.৫ রিখটার স্কেলে ।
ওদিকে সংবাদ পাঠিকারা প্রতিটি মিনিটে মিনিটে হাইপ তোলার জন্য প্রাণপণ চেঁচিয়ে যাচ্ছেন । হুট খোলা গাড়িতে ওঠা, স্টিয়ারিং-এ বসা, মাজারে যাওয়া, গুরুদ্বার পৌঁছানো, শেষে বাড়ির কাছে এসে অক্সিজেনের টান পড়া, রাস্তার মধ্যেই ইনহেলার নেওয়া ….. মিনিট টু মিনিট রুদ্ধশ্বাস বর্ণনা । সেসব দেখে টান টান উত্তেজনায় কাঁপছে তখন পুরো ভবানীপুরটা, হয়তো কালীঘাটও । কাঁপছে সেটের সামনে বসা বাঙালি দর্শক । সাংবাদিকরা ঘন ঘন প্রশ্ন ছুঁড়ে দিচ্ছেন – মদন’দা, ও মদনদা নাতির কাছে যাবেন না ?
মদনদা তখন কিছুটা দার্শনিক । রোম্যান্টিক গায়ক । …. এ দিন আমি কোন ঘরে গো খুলে দিল দ্বার…. । ওদিকে ঘরে ঘরে গৃহিণীরা তখন রান্না বন্ধ করে সেটের সামনে, কর্তারা হাফ দাড়ি কামিয়ে গোগ্রাসে গিলছে আর শুনছে – হিন্দোল তুমি বল, হিন্দোল, হিন্দোল তুমি বল – এই মুহূর্তে মদনদা ঠিক, ঠিক কি অবস্থায় ?
তারপর, বিকেল গড়াতেই মদনদা “ফিট” । সন্ধ্যে নামছে যে ! সন্ধ্যেটা মদনদার এমনিতেই ভীষণ, ভীষণ প্রিয় । ছুটলেন আলমবাজার, ছুটলেন কামারহাটি । তখন কোথায় ইনহেলার ! কোথায় অক্সিজেন ! পাঞ্জাবি বদলে তখন এ এক অন্য মদনদা, প্রেসের সামনে, মাস্ক বিহীন । গান ধরলেন – ও মন্ত্রী মশাই, ও ষড়যন্ত্রী মশাই …..থেমে থাক, থেমে থাক ।
থামলেন এবার সংবাদ পাঠিকা, সত্যিই । হিন্দোল অনেক খাটাখাটনির পর এবার একটু জিরোলো । নিউজ রুমে সাব এডিটরের ব্যস্ততা বাড়ল । মদনদা যা বলেছেন তার ডিটো মানে dictionary খুঁজে তন্ন তন্ন করে বার করা হল । স্ক্রোল শুরু হল – মন্ত্রী না হয়ে মদন মিত্রর ক্ষোভ । তা হয়তো না দেখেই মদন মিত্র অজান্তে বলে উঠলেন – ও লাভলি !!
সারা দিনের এই টানটান প্রেজেন্টেশন দেখে কে বলবে বাংলায় আফ্রিকান সোয়াইন ফিভার ঢুকছে আলিপুরদুয়ার দিয়ে । ব্ল্যাক ফাঙ্গাস থাবা বসাচ্ছে ক্রমাগত । প্রতিদিন করোনা মৃত্যু আটকে গেছে দেড়’শোতে । এ টি এম লুঠ হচ্ছে জালিয়াতির সাইবার প্রযুক্তিতে । বিহারের সাইবার শ্যুটার ধরা পড়ছে গোবরডাঙায় । হাজার হাজার মানুষ গ্রাম কিম্বা মফস্বল বাংলায় ইয়াস আর তৃণমূলের ভয়াবহ সন্ত্রাসে এখনও ঘরছাড়া । হিঙ্গেলগঞ্জ, গোসবা, পথরপ্রতিমায় মানুষ রাত জাগছেন ভিটে মাটি ছেড়ে । অভূক্ত থেকে ।
হিন্দোল, তুমি বল, প্লিজ বল, লোকগুলো কি এখনও খোলা আকাশের নীচে ? এখনও কি ভেসে যাওয়া বাড়ির অবশিষ্ট কিছু খুঁজছে জলের নীচে ? বল হিন্দোল, বল, যা সত্যি তাই বল ? জানতে চাইছে বাংলা, দেখতে চাইছে বাংলা ।
নব ঘুরিয়ে এই আওয়াজ কি আর শুনতে পাবেন ? কোন সংবাদ পাঠিকার গলায় ? এই চিৎকার শুনবেন ? আজ, এখন ?
আসলে এ সবই কল্পনা । মায়া ।বলবেন – এই দৃশ্যপট টি আর পি দেবে না চ্যানেলের ? তাইতো ? মদনদা দেবে ? মানতে হবে ? বিশ্বাস করিনা । কিছুতেই ।
যে ক্যামেরা হাঁটু জলে সাঁতার কাটাতে পারে, গায়ে ব্যাঙ বসিয়ে শ্যুটিং করাতে পারে, উরুগুয়ের ঝড়কে বালাসোরের ঝড় বলে চালাতে পারে সেই ক্যামেরা হিঙ্গেলগঞ্জে না পৌঁছে মদনদার ঘরে ফেরে নাই লাইভ টেলিকাস্ট করবে সেটাই স্বাভাবিক । খুব স্বাভাবিক ।
এই বাংলাই তো আমরা চেয়েছি, পেয়েওছি । তাই অবাক হব কেন ? কি বলেন ?
সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় ( ৯৮৩০৪২৬০৭৮ )