ধোলাইয়ের কাঞ্চন ছড়ায় বনবাসী আশ্রমের আবাসিক স্কুল থেকে অপহৃত আরএসএস প্রচারকদের হত্যা নিশ্চিত করল ত্রিপুরা পুলিশ

ধোলাইয়ের কাঞ্চন ছড়ায় বনবাসী আশ্রমের আবাসিক স্কুল থেকে অপহৃত আরএসএস প্রচারকদের হত্যা নিশ্চিত করল ত্রিপুরা পুলিশ। 2018 সালে বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকার গঠনের পর পুরনো ফাইলে নতুন করে খোলা হয় এবং তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়। শনিবার তদন্ত রিপোর্ট জমা পড়ে, বেরিয়ে আছে নতুন তথ্য। বাংলাদেশ গোপন আস্তানায় নিয়ে গিয়ে চারজনকে হত্যা করা হয় ও একই চিতায় পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। পুলিশ সেই গণ চিতার এলাকাটি চিহ্নিত করতে পেরেছে পরিযায়ী জুনিয়রদের সঙ্গে কথা বলে।

এই ঘটনায় আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত আগামী 6 ই আগস্ট সারাদেশে আরএসএসের সব শাখায় শোক পালনের নির্দেশ দিয়েছে। মোহন ভাগবত উদ্ধৃতি …..দিয়ে বলেছেন উত্তর-পূর্ব ভারতে খ্রিস্টান মিশনারীদের মদৎপুষ্ট সন্ত্রাসী বাহিনী এই হত্যালীলা সমৃদ্ধ করেছে। প্রসঙ্গত হাজার 1999 সালের 6 ই আগস্ট সকালে কাঞ্চন ছড়ার বনবাসী কল্যাণ আশ্রমের আবাসিক স্কুলে নারিকেল, মুড়ি, চিনি দিয়ে সকালের প্রাতরাশ সার ছিলেন চার প্রচারক এদের মধ্যে একজনের বয়স সত্তরের বেশি। প্রচারক হলেন ক্ষেত্রীয় কার্যনির্বাহী শ্যামল কান্তি সেনগুপ্ত, দক্ষিণ আসামের প্রদাধিকারী দিনেন্দ্রনাথ দে, আগরতলা বিভাগের সুভাময় দত্ত, এবং ধোলাই জেলার জেলা প্রচারক শুভঙ্কর চক্রবর্তী। NLFT র জঙ্গিরা বন্দুকের মুখে ছাত্রদের সামনে জোর করে তাদের তুলে নিয়ে যায়। ঘটনার পর মনু থানায় 41-1999 মামলা দায়ের করা হয়। একদিকে পুলিশের তল্লাশির পাশাপাশি আরএসএস এর তরফ থেকে অপহরণকারীদের সঙ্গে যোগসূত্র তৈরি করার চেষ্টা চলে । যোগসূত্র তৈরিও হয় কিন্তু একসময় তা বিচ্ছিন্ন হয়। খবর আছে জঙ্গি ডেরায় চারজন কে খুন করা হয়েছে। এই ধরনের খবর প্রচারিত হয় অর্থসমর্থিত ও অসমর্থিত সূত্রের ভিত্তিতে।

ত্রিপুরা পুলিশের তদন্তে এবার জানা গেছে অপহরণকারীরা চারজনকে বাংলাদেশের গাজলুম রিজার্ভ ফরেস্ট এলাকায় নিয়ে যায়। যে জায়গাটিতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল তার নাম আফরান ছড়া। যেহেতু তিনজনের বয়স অনেক বেশি এবং অনেকটাই অসুস্থ ছিলেন। তাই তাঁদেরকে কাঁধে করে বয়ে নিয়ে গিয়েছিল গ্রামবাসীরা। শুধু শুভঙ্কর চক্রবর্তী এন এল এফ টি জঙ্গিদের সঙ্গে হেঁটে হেঁটে যায়। ত্রিপুরা পুলিশের তদন্তকারী অফিসার আফরান ছড়ায় গণ চিতা বানানো হয়েছিল যেখানে সেই এলাকাটির একটি মানচিত্র বানিয়েছেন তথ্য প্রদর্শী কিংবা অন্যান্য সাক্ষীদের কথাবার্তা ভিত্তিতে। জঙ্গিরা বর্জন বাসা বিওপি ও শের বিওপির মাঝামাঝি জালা বস্তি দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকে ওয়াদপ ছড়ার ওপর দিয়ে। আট কিলোমিটার রাস্তায় সাধের মানিক ছড়া অসুর ছড়া পার হলেই আফরান ছড়া। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে প্রায় দশ কিলোমিটার দূরে এই জায়গাটিতে পায়ে হেঁটে পৌঁছতে আট থেকে দশ ঘণ্টা সময় লেগে যায়। এক সময় আফরান ছড়া পথে সাতছড়িতে NLFT এর ডেরা ছিল। ডিএসপি রাজেশ বর্ধনের নেতৃত্বে তদন্তকারী দল একটি জায়গায় এসে অপহরণকারীদের গতিবিধি পুরো বিবরণ দিতে পারেনি। অপহরণের পর জঙ্গলের এই ডেরা ওই ডেরায় লুকিয়ে থাকার পর, এদের দেও ফরেস্টের গভীর জঙ্গলে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু এই পথে তিনজনকে নিয়ে যেতে দেখেছে সংশ্লিষ্ট সাক্ষীরা, চার জনকে দেখে নি। তবে জালা বস্তি থেকে আফরান ছড়ায় যাওয়ার পথে চারজনকেই দেখেছিল সংশ্লিষ্ট লোকজন। নারায়ণ পাল সহ আরও লোকজন পুলিশকে সাক্ষ দিতে গিয়ে বলেছেন ধোলাইয়ের পুষ্পরাণ পাড়া, পুশিহম পাড়া, সাতরাই হয়ে দেও ফরেস্টে যায়। এরা তখন তিনজনকেই নিয়ে গিয়েছিল। তবে বর্তমান ছানুর বাসিন্দা অরুণ কুমার চাকমা ছান্ন ক্ষেত্রীয় ছড়া পিড়ালচ ত্রিপুরা এন এল এফ টি আত্মসমর্পণকারী সদস্য সাতরাল জলাতিয়া প্রলুফ আফরান ছড়ার প্রত্যক্ষদর্শী এরা সেখানে চারজন আরএসএস কর্মীকে দেখেছিল এবং পরে তাদের দাহ করতে দেখেছে। তদন্তকারীরা ধোলাই উত্তর ত্রিপুরার নানান জায়গায় ঘুরে তাদের সাক্ষ্য নিয়েছেন। আগে অন্য একটি অপরাধের সাথে জড়িত বিশ্বমোহন এই তদন্তে পুলিশকে জানায় সে যখন এন এল এফ টি অন্য একটি দলের সঙ্গে দেও ফরেস্ট থেকে ফিরছিল তখন জানতে পারেন চার আরএসএস কর্মীকে চিকন মনিপালে রাখা হয়েছে। এই গ্রামে থাকা অবস্থায় চারজনের একজন অসুস্থ হয়ে পড়ে তার জন্য মনু ও মাছমাড়া থেকে ওষুধও আনা হয়েছিল। সেই সময় অসুস্থ লোকটিকে কোম্পানি পাড়ার দিকে একটি দূর ঘরে করে রাখা হয়। তবে ঘরটি ঠিক কোথায় ছিল সে জানে না। সে সময়কার এন এল এফ টি কমান্ডের বর্তমানে আত্মসমর্পণকারী আটারণ হেলালের সঙ্গে কথা বলে তদন্তকারী অফিসাররা। তারা জানতে পারে শ্যামলকান্তি বাদে বাকি তিনজন কে দেউড়ি ফরেস্টের দিকে নিয়ে গিয়েছিল জঙ্গীরা। এন এল এফ টি জঙ্গি জয়ন্ত দেববর্মা ও আরেক জঙ্গী বুলেট এক মাস পর শ্যামল কান্তিকে দেওরণ ফরেস্টের দিকে নিয়ে যায়। সেখান থেকে বাংলাদেশে নিয়ে যাওয়ার পথে 10 থেকে 12 জন জঙ্গি দল কে নেতৃত্ব দিয়েছিল চেলা সাচ নাদিয়া। নাম দিলিরাম রিয়াং গুরু ( হরফে জালেম ফা) প্রত্যক্ষদর্শী হিসাবে সে জানিয়েছে চার অপরিচিত কে যেখানে দাহ করা হয়েছে সেটি কিলার ধারার একটি ছড়ার পাশে তখন শীতকাল ছিল ত্রিপুরী জাতিগোষ্ঠীর আরো কয়েকটি পরিবার তখন জুমের কাজে ছিল। সে এও জানিয়েছে চার আরএসএস কর্মীকে হত্যা ও দাহ করার কাজটি যে দলটি করেছে তার নেতৃত্বে ছিল দীপক দেববর্মা হরফে সন্ন্যাসী। সেই সময় কাশকুল নিজাম ফরেস্ট সেই ছিল এবিলিটি কমান্ডেড।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.