পরীক্ষাগার

স্বামী রামদেব কোন ভুল কথা বলেননি। শুধু একটি মন্তব্যই হয়ত একটু অতিরঞ্জিত হয়ে গেছে, ‘আ্যলোপ্যাথি চিকিৎসার জেরেই লাখে লাখে মানুষ মারা গেছে’। লক্ষ মানুষের মৃত্যুর প্রশ্নই নেই, কারণ এবারে মৃত্যুর হার গতবারের চেয়েও কম, ১%’এরও নিচে। তবু সেই মৃত্যুটুকুও হওয়ার কথা নয়। তাও যে হচ্ছে তার কারণ ;১) ভুল চিকিৎসা ও ২) টীকা।

টীকার প্রথম ডোজ থেকেই নতুন strain বা variant তৈরি হয়েছে, এ কথা শুধু ফরাসি নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী ল্যুক মন্তেইনিয়ার একা বলেননি, দেশে বিদেশে বহু বিশেষজ্ঞরাই এই আশংকা প্রকাশ করেছেন সেই এপ্রিল মাস থেকে। গোদা বাংলায় বললে, দ্বিতীয় ঢেউ উঠেছে দেশে টীকাকরণ শুরু হওয়ার কারণে। যে কারণে এই ঢেউটি এই দেশের সীমানা উপচে বাংলাদেশে পা রাখতে পারেনি, বা নেপাল ও পাকিস্তানে থাবা বসাতে সক্ষম হয়নি। ফ্লাইট বন্ধ হয়েছে জানি, বাতাসকেও যে আন্তর্জাতিক হতে নিষেধ করা গেছে, তেমন কোন খবর আমার কাছে নেই।

  • কিন্তু প্রতিষেধক নেননি এমন অনেকেরই তো এবারে সংক্রমণ হয়েছে?

কারণ তাঁরা টীকা গ্রহণকারীদের সংস্পর্শে থেকেছেন। যাঁরা টীকা নিচ্ছেন, তাঁরা অজান্তেই বাহক হয়ে উঠছেন। আশেপাশে যাঁরা নেননি, তাঁদের মধ্যে ছড়িয়ে যাচ্ছে। যে কারণে ইওরোপের বৃদ্ধাশ্রমগুলিতে টীকা দেওয়ার পর এখন তাঁদের কুড়ি দিন থেকে এক মাস isolation’এ রাখা হচ্ছে। বেশি করে মাস্ক পরতে বলা হচ্ছে ও দুরত্ব বজায় রাখতে বাধ্য করা হচ্ছে। কিন্তু এমন কোন নীতি আমাদের দেশে নেওয়া হয়েছে বলে জানা যায়নি।

দ্বিতীয় ডোজের পর জটিল পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ও মৃত্যুর হার অস্বাভাবিক বেড়ে যাচ্ছে বলে বেশ উদ্বিগ্ন অনেক দেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রক। IMA’র প্রাক্তন প্রধান ডঃ কে কে আগরওয়াল পদ্মশ্রী বিজেতা এক স্বনামধন্য দরদী চিকিৎসক। তিনি গত এক বছর ধরে অনবরত ভিডিও করে দেশের মানুষকে আশ্বাস দিয়েছেন যে একমাত্র টীকাই পারে এই অদৃশ্য শত্রুকে পরাস্ত করতে। দৃষ্টান্তে স্থাপন করতে তিনি নিজেই দ্বিতীয় ডোজ নিলেন, গুরুতর অসুস্থ হলেন, চার দিন ICU’তে যমে মানুষে টানাটানি চলল, বাঁচলেন না। হৃষিকেশ AIIMS’এর (All India Institute of Medical Science) একশো জনের উপর স্বাস্থ্যকর্মী দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছিলেন। প্রত্যেকে মারা গেছেন। পশ্চিমবঙ্গের সিউড়িতে দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার পর দুজন প্রথম সারির ডাক্তারের মৃত্যুর খবর তো সবাই কাগজে পড়েছেন।

স্বামী রামদেব বলেছেন যে WHO বা CDC থেকে একটা করে ড্রাগ অনুমোদন করছেন, সেগুলো তখন ICMR প্রোটোকলে ঢুকছে, বিভিন্ন হাসপাতালে প্রয়োগ হচ্ছে, তারপর সেই মার্কিন কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন যে না, এগুলো কাজ করছে না, বরং ক্ষতি হচ্ছে। তখন আর একটা কোন স্টেরয়েডের নাম জানাচ্ছেন। হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন নিয়ে তাই হোল, রেমডিসিভির নিয়ে চরম হৈচৈ তুলে পরে নিষিদ্ধ হোল, প্লাজমা থেরাপির দারুণ সাফল্যের গল্প শুনিয়ে এখন প্রত্যাহার করা হোল, আর শুনছি ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের প্রধান কারণ চিকিৎসার সময়ে অতিরিক্ত স্টেরয়েডের ব্যবহার।

তাহলে কিসের ভিত্তিতে এই অন্ধকারে হাতড়ানো’কে ‘আধুনিক’ বিজ্ঞান বলা হয়, যার ইতিহাস সাকুল্যে দুশো বছরের? এবং অপরদিকে প্রায় দশ হাজার বছরের বিজ্ঞান আয়ুর্বেদ, যোগ ও অন্যান্য প্রাচীন চিকিৎসাপদ্ধতি’কে ‘জড়িবুটি’, ‘ঝাড়ফুঁক’, বা ‘অবৈজ্ঞানিক’ ব’লে কটাক্ষ করা হয়?

এই নিয়ে তর্ক চলবে, প্রয়োজনও আছে। কিন্তু আরও একটা বড় প্রশ্নের সামনে আমরা দাঁড়িয়েছি আজ। ভারত কি এখন ফার্মা লবির পরীক্ষাগার? ভারতীয়রা কি তবে কর্পোরেট এলীটদের গিনিপিগ? ‘দ্বিতীয় ঢেউয়ের’ গল্প অন্য দেশে নেই কেন? বিভিন্ন ওষুধ ও টীকার প্রভাব মানব দেহে কেমন হয় এই জনবহুল দরিদ্র দেশে, সেই প্রতিক্রিয়া দেখে নেওয়া হচ্ছে? পরখ হচ্ছে? সেই অনুযায়ী পরবর্তী উৎপাদন নীতি ধার্য করা হবে?

একটা চমৎকার ব্যানার দেখলাম বিদেশী প্রতিবাদীর হাতে। লেখা আছে; SWITCH OFF YOUR TV. TURN ON YOUR BRAIN. ‘টিভি বন্ধ করুন। মাথার ঘিলুটা চালু করুন’।

বিশেষজ্ঞ হতে হবে না। একটু কাণ্ডজ্ঞান থাকলেই অদৃশ্য জীবাণুর পিছনে অদৃশ্য শক্তির খেলাটি দেখা যাবে।

✒️- জয়দীপ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.