আসুন আজ আমরা সমাজের সবচেয়ে আলোকিত, উজ্জ্বল এবং আলতো করে তুলে রাখা এলিট, মহৎ মানুষ ইত্যাদি ট্যাগ লাগানো মানুষগুলির দিকে ভাল করে তাকাই।

চিকিৎসা আর চিকিৎসক এর সংজ্ঞা আজ বদলে গেছে। কেবল এবং কেবলমাত্র মেডিকেল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া নামক এই ভয়ানক উঁচু প্রতিষ্ঠানটির থেকে সার্টিফিকেট/রেজিস্ট্রেশনপ্রাপ্ত উচ্চ মেধাসম্পন্ন মানুষদেরকেই ডাক্তার বা চিকিৎসক বলি। বেশ বেশ…. খুব ভাল।

হাতুড়ে, হোমিওপ্যাথি, নেচারোপ্যাথি, আয়ুর্বেদ ইত্যাদি সব আব্বুলিশ, বুজরুকি।

আমরা ঐ পচাদের কথা বলব না, ওরা ভাল না (😛😛😛 সেটা পরে একদিন বলা যাবে) ইত্যাদি।

তা আমাদের সমাজের যেমন এই ঘোরতর রূপ ছিল না এক সময়, তেমন চিকিৎসারও এই প্রকার মেরুকরণ ছিল না। যে কোনো অসুস্থ মানুষ চিকিৎসকের কাছে গেলে ওনারা সুস্থ মানুষ থেকে অসুস্থ হওয়ার পর্বটি পর্যবেক্ষন করতেন এবং তা নিবারণে সচেষ্ট হতেন। এই অংশকে বলা হতো প্রগনোসিস prognostic approach। কারণ অনুসন্ধান করে তা নিবারণই হল সেই অধ্যায়।
আর একটি হল ডায়গনস্টিক(diagnosis) এপ্রোচ। অর্থাৎ রোগ/অবস্থাটি সম্পর্কে একটি পূর্বর্নিধারিত তালিকাভুক্ত অবস্থানরূপে বিষয়টি আইডেটিফাই করা। হাঁ, যা রোগ সিলেবাসে/লিস্টে আছে, তার মধ্যেই তাকে শনাক্ত করতে হবে। হ্যাঁ, যেমন করুণা, ২০১৯ সালে এন্ট্রি পেলেন, আরো কত যে বাকি আছে, নো বডি নোজ!!! ☠️☠️

নব্য ভারতীয় গণতন্ত্রে, এই নির্নায়ক সংস্থা, যারা ডাক্তারদের চুলের মুঠি প্রথম দিন থেকে শেষ দিন অব্দি ধরে থাকেন (রেজিস্ট্রেশন) তারা সিলেবাস, প্র‍্যাকটিস, প্রেসকিপশন সব কিছু ঠিক কি কি ভাবে হবে সব হ্যাঁ, একদম সঅঅঅঅঅঅঅঅব ঠিক করে দেন। না হলেই চুলের মুঠি ধরে টান দেবেন।

তারা বলে দিলেন প্রোগনোসিস দরকার নেই। ব্যস শুধু ডায়গনোসিস। স্টার আনন্দে বেশ কয়েক বছর আগে ডাক্তারদের আলোচনায় এক বয়স্ক ডাক্তারবাবু বলছেন, ওনার ৮০র দশকের এক অভিজ্ঞতার কথা। কলকাতার এক বড় হাসপাতালের ইমার্জেন্সিতে দুটি ছেলে একজন বয়স্ক মানুষকে নিয়ে এসেছেন। বয়স্ক ভদ্রলোক পড়ে গিয়ে মাথায় চোট পেয়ে অজ্ঞান হয়ে গেছেন। উনি শুধু মাত্র কিছুক্ষণ পর্যবেক্ষণ করে বলেছিলেন, আপনি বাড়ি চলে যান, কিছু হয়নি। বাস্তবিক কিছু হয়ওনি। এটি বলেই উনি (স্টুডিওতে থাকা ডাক্তারবাবু) বলছেন আজকের দিনে আমি কথাটা বলতেই পারব না। আমাকে সিটি স্ক্যান লিখতেই হবে। সেটাই প্রোটোকল।

হ্যাঁ ডাক্তারবাবুরা এই সব টেনেটেনে ঝুঁটি বাঁধার ফাঁকে ফাঁকেই এই সব বলছেন। আমি আপনি শুনতে পাচ্ছিনা।

হাওড়ার বিখ্যাত ডাক্তার শীতল ঘোষ। পাশের বাড়ির ছোটো মেয়েটি খুব বায়না করেছে, জেঠু তোমায় আসতেই হবে। মেয়েটির বিয়ে। জেঠু অত রাশভারি মানুষ। কোথাও যান না সচারচর। কিন্ত আবদার রাখতে উনি গেলেন বিয়ে বাড়ি। বর বাবাজীবনকে আশীর্বাদ করলেন। কিন্ত তাকে দেখে ভুরু কুঁচকে গেল ওনার।
মেয়েটির (কনে সাজে যে বসে আছে সে) কাছে গিয়ে বললেন, মা তুই এই বিয়ে করিস না। বজ্রপাতের মত অবস্থা বিয়েবাড়িতে। ওনার বক্তব্য বর এর আয়ু ফুরিয়ে এসেছে। বিয়ে থেমে যায়। পরবর্তীতে ছেলেটিকে বাঁচানোর অনেক চেষ্টা করা হয়, কিন্ত বাঁচানো যায় না।
পরে উনি বলেছিলেন, বর এর কপালে আঁকা চন্দন ভেজা ছিল। তার শরীরের এই ঘর্মাক্ত অবস্থাই তার অন্ত্রের শেষ অবস্থাকে ব্যক্ত করছিল।

এই রকম সব মনীষী ছিলেন৷ জহরলাল নেহেরুর কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য বিলাতের বহু ডাক্তার এসে দিল্লীতে চেষ্টা করে যাচ্ছেন। শেষে কলকাতা থেকে গেলেন বিধান চন্দ্র রায়। উনি গিয়ে সবাইকে যখন ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে বলছেন জহরলাল কুন্ঠিত হয়ে গেছিলেন। তখন বিধান রায় বলেছিলেন, তুমি কিন্ত আমার সামনে একজন রুগী মাত্র, মোটেও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নও। হ্যাঁ, পাতি ডুস দিয়ে উনি ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে সে যাত্রায় উদ্ধার করেছিলেন। ফেরার সময় বিলাতী ডাক্তারদের বলেছিলেন, ইউ মাস্ট চেঞ্জ ইওর কারিক্যুলাম, বি এডভান্সড।

হাঁ, কারিক্যুলাম চেঞ্জ হয়েছে। তবে একদম উল্টো দিকে। আর ডাক্তারদের সবরকমের স্বাধীনতা হরণ করে, চুলের মুঠি ধরে তাদের প্রোটোকলের নামে বন্দী করা হয়েছে।
প্রোগনোসিসের মাধ্যমে ন্যাচারাল হিলিং বাই চেঞ্জিং লাইফ স্টাইলটা তো জাস্ট উড়েই গেছে প্রোটোকলের ঠেলায়।

যেমন সুগার আসলে পৃথিবীর বিভিন্ন জনজাতির খাদ্যাভাসের উপর রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বিভিন্ন হয়।
কিন্তু না, সব ভুল। এখন মনোলিথিক সিংগল স্ট্রাকচার৷ সারা ভারতের সব ধরনের খাদ্যাভাস, বয়স এবং ভিন্ন বায়োলজিকাল ডোমেনের লোকেদের জন্য শর্করার মাত্রা (স্বাভাবিক বলে ধরা হয় যা) এক এবং তা বছর বছর কমেও এসেছে। পড়ুন, খুঁজুন সেই ইতিহাস।

সুগার হলো অগ্ন্যাশয় বা প্যানক্রিয়াস এর সমস্যা। রক্তে সঠিক সময়ে স্বাভাবিক মাত্রায় ইনসুলিন প্রদানের অক্ষমতা।

সমাধান
না আপনার অগ্ন্যাশয়কে নিরাময় করা চিকিৎসকের কাজ নয় (পড়ুন প্রোটোকল)। আপনি নিয়মিত নকল বা আর্টিফিশিয়াল ইনস্যুলিন নিন। হয়ে গেল, নিয়মিত নিতে নিতে এই নকল বা ইন্ডাসাট্রিয়াল হরমোন আপনার রেটিনা, লিভার ইত্যাদির কি ক্ষতি করছে কেউ জানে না। তার জন্য নতুন করে ডাক্তার, ডায়গনোসিস, মেডিসিন। রিপিট রিপিট আর রিপিট।

এদিকে আয়ুর্বেদ, ন্যাচারোপ্যাথ, আপনার সুপার হলে জাস্ট সব ধরনের কার্বোহাইড্রেট বন্ধ করে, ফল সবজি ইত্যাদির ব্যালেন্সড একটি খাদ্য তালিকা দিয়ে আবার আপনার অগ্ন্যাশয়কে সুস্থ করে তুলছে। কিন্তু তা এপ্রুভড নয়, ওটা বিজ্ঞান নয়৷ এটাই বলবে মেডিকেল সায়েন্সের হোতারা।

অন্যদিকে এলোপ্যাথির ডাক্তাররা অনেকেই সব বোঝেন (না বুঝলে কি চলে! তারা কিন্ত মেধাবী একটি শ্রেনী)। অনেকে অনেক জার্নালের তলায় চাপা পড়েও চেষ্টা করেন। অনেক সময় মুখে বলেন, কিন্ত লিখতে পারেন না। পারবেন কি করে! চুলের মুঠি ধরা আছে তো।

আজ এই প্রোটোকল এর দড়ি ডাক্তারদের গলায় পরানো আছে। একটু এদিক ওদিক হলেই সোজা টান।

এই রকম একটা আতঙ্কময় পরিবেশে ডাক্তাদের চুপ থাকাটা আমার কাছে স্বাভাবিক।
তাই ডাঃ কুণাল সরকার বাচ্চাদের মাঠে খেলতে যেতে বারণ করেন। আবার মাস্ক পরতে বলেন নির্দ্বিধায়! মানুষও অন্ধভাবে ওনাকে অনুকরণ করেন। উনি কি জানেন না টানা ৩০ মিনিট মাস্ক পরে থাকলে শরীরে অক্সিজেন লেভেল কতটা কমে! আমার দৃঢ বিশ্বাস উনি সবচেয়ে ভাল জানেন।

ওনার পাশেই ডাঃ গৌতম দাসের মত ডাক্তার আছেন যিনি লাইন বাই লাইন ভ্যাকseen এ কি কি আছে পড়েছেন এবং তার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন করেছেন। এর অজানা ভয়ঙ্কর পরিণতি আর সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেছেন। দড়ি, মানে রেজিস্ট্রেশনের তোয়াক্কা না করে আমাদের সকলকে অবগত করেছেন।

হ্যাঁ, নিরানন্দ এই সব দেখায়না।

আসুন, গলায় টেনে দড়ি পরানো, প্রোটোকল আর রেজিস্ট্রেশন দুই হাতে ধরে থাকা, এই মানুষগুলির দিকে আঙুল না তুলে আমরা নিজেরা ভাবি, পড়ি, জানি। আর ঠিক করি আমরা নিরানন্দ দেখে মরব নাকি নিজেদের পূর্বজদের জ্ঞান (ন্যাচারোপ্যাথি) নিয়ে নিয়মিত চর্চা করব।

ন্যাচারোপ্যাথির বইগুলি কিন্ত এখনও বাজারে পাওয়া যায়। বিশুদ্ধ জ্ঞান চর্চা বরাবরই ফ্রি৷

ডিসটরটেড, ডিজাইন্ড লাইজ আর অলওয়েজ গ্লোরিফাইড।

Kanchan Banerjee
Courtesy Abhijan Parui

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.