শেষের সে দিন বুঝি পায়ে পায়ে এগিয়ে আসছে। দুর্যোগ থেকে বাঁচতে এখনই সুন্দরবনকে বাঁচাতে হবে। এ ছাড়া কিন্তু আর কোনও উপায় নেই। ইয়াসের পর সামাজিক মাধ্যমে এ রকমই আহ্বাণ জানালেন বহু মানুষ। অধ্যাপিকা রোহিনী ধর্ম্মপাল ফেসবুকে লিখেছেন, ”প্রশ্ন তোলো আমফানের পর ম্যানগ্রোভ অরণ্য পুনর্নির্মাণের যে প্রকল্পের কথা উঠেছিল, তা কতদূর? উপকূলবর্ত্তী অরণ্যকে পুঁজিবাদী স্বার্থে দিনের পর দিন, অনবরত ধ্বংস করার কারণে নিয়মিত প্রচণ্ডবেগে ঝড় আসার পরে শত শত ত্রাণ শিবির করেও আখেরে লাভ নেই। ওটাকে খুব বেশী হলে চমক বলা যেতে পারে, সমাধান নয়। সুন্দরবনকে বাঁচানো হোক। বাসিন্দাদের ধীরপদ্ধতিতে রিহ্যাবিটিলেট করা হোক।”
জনৈকা তপারতির পর্যবেক্ষণ ফেসবুকে ভাগ করেছেন অধ্যাপিকা দীপান্বিতা গাঙ্গুলি এবং সুরকার-গীতিকার-শিল্পী উপালি চট্টোপাধ্যায়। এতে লেখা, ”কলকাতার কোনও পোক্ত ভিত নেই। জেলি কাদা। ৬.৫ রিখটার স্কেল এর বেশি তীব্রতায় ভূমিকম্প হলেই শহর মাটির নিচে চলে যাবে। ১৯৪১ এর ভূমিকম্প এবং পরে সুনামিতে আন্দামানের রস আইল্যান্ড যেমন জলের নিচে চলে গেছে, ঠিক সেভাবেই সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ না থাকলে সমুদ্র ঢুকে কলকাতা শহরকে শেষ করে দেবে। সুন্দরবন অত্যন্ত ডেলিকেট একটা সিস্টেম। তাকে আরো গভীর হতে দিতে হবে। ঠিক যেমন তার বায়োস্ফিয়ার, তেমনই। কংক্রিটের বাঁধ ইকো সিস্টেমের জন্য উপকারী না। সুন্দরবনকে স্পর্শ করা যাবে না। মানুষ যত কম থাকে সেখানে, মানুষের জন্য ততই ভালো। প্রকৃতিতে মানুষের বসবাস স্বাভাবিক। কংক্রিটের জঙ্গল স্বাভাবিক না। মানুষের তৈরি কোনও কিছুই প্রকৃতির জন্য উপকারী না। সহাবস্থান চাই। আমরা খুব দ্রুত সিক্সথ মাস এক্সটিংকশনের দিকে এগিয়ে চলেছি। আরো বেশ কিছু মহামারী আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। এদের মধ্যে সবথেকে বড় হল লোভ। গত আড়াইশো বছরের লোভ। কঠিন আইন ছাড়া আর কোন উপায় নেই। মানচিত্র দেখুন। আমাদের ফুসফুস সুন্দরবন। অক্সিজেন সিলিন্ডার এর ভরসায় থাকা শহরকে সেটা বুঝতে হবে। আমি আগেও লিখেছি। কলকাতার মানুষের দায় সুন্দরবনকে রক্ষা করা।”
অরূপ মারিক লিখেছেন, ”সুন্দরবনের মানুষ নাকি ম্যানগ্রোভ কেটে ইটভাটার জ্বালানি হিসেবে ইউজ করছে।“ মধুছন্দা ভট্টাচার্য লিখেছেন, ”সুন্দরবনে প্রতি বছর এই দুর্ভোগের প্রধান কারন নির্বিচারে ম্যানগ্রোভ ধ্বংস। প্রতি বছর প্রচুর পরিমাণে ম্যানগ্রোভ রোপন এবং তার তদারকিও প্রয়োজন। দিনের পর দিন শুধু ট্যুরিস্ট স্পট বাড়ছে জঙ্গল ধ্বংস করে।“
গৌতম মাজি লিখেছেন, ”আয়লার দু আড়াই বছর সপ্তাহে একদিন যাওয়ার অভ্যেস ছিল আমার পরিচিতদের দ্বারা তৈরি করা এনজিও-র জন্য কয়েকটি প্রোগ্রামের সুপেরভিশন করার জন্য। আজ সেই এনজিও অনেক ভালো কাজ করছে। বিগত সরকারে উদ্যোগে কান্তিবাবুর অনুপ্রেরণায় অনেক ভালো ভালো কাজের প্রোগ্রাম ছিল।তারপর সরকার পরিবর্তনের ফলে সব বিশ বাঁও জলে। ম্যানগ্রফ নতুন করে রোপন করা হচ্ছেনা হয়নি। এই সরকারের ভাষা ভাষা উদ্যোগে কোনো কাজ হবে না সুন্দরবনে। কয়েকটি এনজিও অনেক কাজ করছে কিন্তু সরকারের অনেক ক্ষমতা, সে রাজ্য বা কেন্দ্র যাইহোক এদের বলিষ্ট বা আন্তরিক পদক্ষেপ সুন্দরবনকে রক্ষা করতে পারে। মেলা খেলা ক্লাবকে মৌলবী পন্ডিত দের পোষা সব শেষ করে দিচ্ছে। তবে ভোট তো কিনতে পারছে।মানুষ আজকের জন্য বাঁচুক কাল কিহবে এসব আর ভাবে না। যাক সরকারের আমার বিনীত অনুরোধ সব জায়গায় কোনস্ট্রাক্টিভ কিছু যা আগামী প্রজন্মের ভালো হবে। আসলে ওরাই আমাদের ভবিষ্যৎ।”
মনু শ্রেয়া মুখার্জি লিখেছেন, ”আরো আরো গাছ লাগাও। এতেই সুন্দরবন কেনো সারা পৃথিবীর এই দূর্যোগ ঠেকাতে পারবে। একটু ভেবে দেখো। যারা মাফিয়া আছে তারা ভেড়ি বানানোর জন্য বিঘা বিঘা জঙ্গল সাফ করছে ওদেরকেও তাড়াতে হবে।জল জঙ্গলে ঘেরা রহস্যময় সুন্দরবন গড়তে হবে।
নদীর চরে বরং প্রচুর সুন্দরী, গরাণ, গেঁও গাছ লাগাতে হবে। কংক্রীটের বাঁধ আরো ক্ষতি করবে।“
সরব নেটানাগরিকরা