অসমের অন্যতম পাহাড়ি জেলা কারবি আংলঙের নাগাল্যান্ড সীমান্তবর্তী মিসিবাইলং এলাকায় আসাম রাইফেলস ও রাজ্য পুলিশের যৌথ বাহিনীর সঙ্গে সংঘটিত তুমুল সংঘর্ষে ধরাশায়ী হয়েছে ‘ডিমাসা ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি’ (ডিএনএলএ) জঙ্গি সংগঠনের আট সশস্ত্র ক্যাডার। যৌথ বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত হয়েছে জঙ্গি সংগঠনটির মুখ্য সেনাধ্যক্ষ মুসরাং ডিমাসা। ঘটনা আজ রবিবার ভোররাতে সংঘটিত হয়েছে।
গতকাল শনিবার রাতে পুলিশের কাছে খবর ছিল, পশ্চিম কারবি আংলং জেলার ধনশিরির অসম-নাগাল্যান্ড সীমান্তবর্তী মিসিবাইলং এলাকার গভীর জঙ্গলে আত্মগোপন করে আছে ডিমাসা ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মির বেশ কয়কজন সশস্ত্র ক্যাডার। নির্ভরযোগ্য সূত্রে এই খবর পেয়ে কারবি আংলং জেলার নবনিযুক্ত পুলিশ সুপার পুষ্পরাজ সিঙের নির্দেশে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার প্রকাশ সনোয়ালের নেতৃত্বে পুলিশ ও আসাম রাইফেলসের যৌথ বাহিনী মিসিবাইলুঙের গভীর জঙ্গলে অভিযানে নামেন।
অভিযান চলাকালে আজ ভোররাতে পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর ডিএনএলএ জঙ্গিরা অতর্কিতে গুলি বর্ষণ শুরু করে। জবাবি হামলায় উভয়পক্ষের মুখোমুখি সংঘর্ষ শুরু হয়। প্রায় এক থেকে দেড় ঘণ্টা গুলির লড়াইয়ে ডিএনএলএ জঙ্গি সংগঠনের মুখ্য সেনাধ্যক্ষ মুসরাং ডিমাসা সহ মোট আট জঙ্গি ধরাশায়ী হয়েছে।
এই খবর লেখা পর্যন্ত সাত জঙ্গির নাম হাতে এসেছে। নিহত জঙ্গিরা যথাক্রমে মুসরাং ডিমাসা (ডিএনএলএ-র মুখ্য সেনাধ্যক্ষ), অমরজিৎ ডিমাসা, নিকেন, জিংডাও, প্রীতম, তামিল ডিমাসা ওরফে প্রেম থাওসেন এবং বাবুল হোজাই। এর মধ্যে বাবুল হোজাইয়ের বাড়ি ডিমা হাসাও জেলার হারাঙ্গাজাওয়ে। তাছাড়া নিহত জঙ্গিদের মধ্যে দুজন কালাচান্দ ও মাইবাঙের বলে জানা গিয়েছে।
ডিমাসা ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি জঙ্গি সংগঠনের মুখ্য সেনাধ্যক্ষ মুসরাং ডিমাসা হচ্ছে ভেঙে দেওয়া ডিএইচডি জঙ্গি সংগঠনের প্রাক্তন সদস্য। ডিএইচডি জঙ্গি সংগঠন অস্ত্র সংবরণ করে জাতীয় জীবনের মূলস্রোতে ফিরে এসেছে। এর পর ডিএইচডি জঙ্গি সংগঠনকে ভেঙে দেওয়া হয়। মূল সংগঠন ভেঙে যাওয়ার পর মুসরাং ডিএনএলএ জঙ্গি সংগঠনে যোগ দেয়।
এদিকে ঘটনস্থল থেকে নিহত জঙ্গি সংগঠনের সদস্যদের ব্যবহৃত চারটি একে ৪৭ রাইফেল, চারটি পয়েন্ট (.) ৩২ পিস্তল ও বেশ কিছু আপত্তিজনক নথিপত্র উদ্ধার করেছে যৌথ বাহিনীর অভিযানকারী দল।
পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে গুলির লড়াইয়ে ডিএনএলএ-র মুখ্য সেনাধ্যক্ষ সহ আট ক্যাডার নিহত হওয়ায় কার্যত এবার জঙ্গি সংগঠনটির কোমর সম্পূর্ণ ভেঙে দেওয়া হয়েছে। প্রসঙ্গত, গত ১৯ মে ধনশিরির দাউজিফাং গ্রামের পূজারি সঞ্জয় রংহাংকে ডিএনএলএ জঙ্গিরা তাঁর বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে খুন করেছিল। তার পর থেকেই পুলিশ কারবি পাহাড়ে ডিএনএলএ জঙ্গি সংগঠনের বিরুদ্ধে তীব্র অভিযান শুরু করে। যার ফলস্বরূপ আজ এই বিরাট সাফল্য অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে অসম পুলিশ।
এদিকে এদিন সকাল ৭.৪০ মিনিটে অসম পুলিশের আইন-শৃঙ্খলা শাখার অতিরিক্ত সঞ্চালক-প্ৰধান জিপি সিং প্রথমে টুইট করে এই খবরের সত্যতা স্বীকার করে জানিয়েছিলেন, আজ ভোরে কারবি আংলঙের ধনশিরি অঞ্চলে অসম পুলিশ এবং আসাম রাইফেলসের অভিযানে ছয় ডিএনএলএ জঙ্গি নিহত হয়েছে। পরবর্তীতে বিস্তৃত খবরে আট জঙ্গির ধরাশায়ী হওয়ার তথ্য পাওয়া গিয়েছে।
উল্লেখ্য, নাগাল্যান্ড থেকে ডিএনএলএ জঙ্গি ক্যাডাররা রাজ্যের দুই পাহাড়ি জেলা কারবি আংলং এবং ডিমা হাসাওয়ের অসম-নাগাল্যান্ড সীমান্ত এলাকার গ্রামগুলিতে ত্রাস সৃষ্টি করে রেখেছিল। নাগাল্যান্ডে বসে অপহরণ তোলাবাজির মতো অপকর্ম চালাতো জঙ্গি সংগঠনটির শীর্ষ নেতারা। ডিমা হাসাও জেলার বিভিন্ন স্থানে ব্যবসায়ী ঠিকাদারদের কাছেও অর্থ দাবি করেছিল ডিএনএলএ জঙ্গিরা।
কিছুদিন আগে নাগাল্যান্ডে গ্রেফতার হয়েছিল ডিএনএলএ জঙ্গি সংগঠনের শীর্ষ নেতা এলভিন হোজাই। এলভিন হোজাই হারাঙ্গাজাওয়ের বাসিন্দা সন্তোষ হোজাইকে অপহরণ ও হত্যার সঙ্গে জড়িত। বর্তমানে এলভিন হোজাই সিআইডির হেফাজতে রয়েছে। তাছাড়া এর আগেও ডিএনএলএ-র অনেক ক্যাডারকে কারবি আংলং পুলিশ ও ডিমা হাসাও পুলিশ গ্রেফতার করেছে।
আজ যৌথ বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে ডিএনএলএ জঙ্গি সংগঠনের এই আট ক্যাডার ধরাশায়ী হওয়ায় সংগঠনটির কোনও অস্তিত্ব রইল না বলে মনে করছেন কারবি আংলং জেলার পুলিশ সুপার পুষ্পরাজ সিং। তিনি বলেন, পুলিশ এবং নিরাপত্তা বাহিনীর এখনও অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তাঁর সন্দেহ, আজকের অভিযানে আরও কিছু জঙ্গি সদস্য নিহত বা আহত হয়ে জঙ্গলের কোথাও না-কোথাও পড়ে রয়েছে।
2021-05-23