অধিকাংশ ভাল কাজ হল নিমপাতার মতন উপকারী, কিন্তু বেজায় তেতো; অবুঝ ডায়াবেটিক নিমপাতা ছেড়ে আরো বেশি মিষ্টির দিকে ধাবমান হয় – ইরিডিয়াম প্রজেক্ট

ইরিডিয়াম প্রজেক্টের নাম শুনেছেন? অধিকাংশ মানুষই শোনেন নি। মোট ৭৭ টা স্যাটেলাইটের একটি কনস্টেলেশন, যা দিয়ে পৃথিবীর প্রত্যেকটি স্কয়ার-ইঞ্চ স্যাটেলাইট কমিউনিকেশনের আওতায় চলে এসেছিল ২০০২ সালে। ইরিডিয়াম এর অ্যাটমিক নাম্বার ৭৭, সেই থেকে এই নাম। প্রজেক্টের কাজ শুরু হয় ১৯৯৮ তে। মটোরোলার ব্লু আইড প্রজেক্ট ছিল এই ইরিডিয়াম। কয়েকশ পেটেন্ট, আর কয়েক হাজার ইঞ্জিনিয়ার এর অক্লান্ত পরিশ্রমের ফল। আর তবুও খুব কম লোকই এর নাম শুনেছেন। এটাও জেনে রাখুন, মটোরোলা এই প্রজেক্ট শেষ করতে গিয়ে প্রায় দেউলিয়া হয়ে যেতে বসেছিল।

এদিকে অ্যাপল কম্পিউটার্স এর আইফোন এর নাম শোনেননি এরকম লোক প্রায় পাওয়াই যাবে না। মানছি অ্যাপল মাস মার্কেট কোম্পানি কিন্তু সেটাই কথা নয়। অ্যাপল জানে কি করে মার্কেটে সেনসেশন তৈরি করতে হয়। ভাল জিনিস বানানোই যথেষ্ট নয়, মিষ্টি করে লোকের মাথা খাওয়াটাও দরকার। তাই দরকার নিখুঁত মার্কেট কমিউনিকেশন আর ফিডব্যাক, এবং সেই ফিডব্যাক শুনে তৈরি করতে হয় সূপাচ্য মিডিয়া কনটেন্ট, বানাতে হয় এপিক কিছু ন্যারেটিভ। নইলে বাজারে শক্ত জমি দখলের লড়াইতে হেরে যেতে হয়। হেরো হয়ে যেতে হয়, হেরো!

ভালো কাজ করব, আর নিজের প্রচার করব না এই নীতি থিওরীর দিক থেকে ভাল হতে পারে, কিন্তু টিঁকে থাকার লড়াইতে কোন সাহায্য করে না। তাই আরএসএস এর লক্ষাধিক ছেলের নিশব্দ নিবেদন ফিকে হয়ে যায় রেড ভলান্টিয়ার্সদের দুর্দান্ত প্যাকেজিং করা প্রপাগান্ডার কাছে। এখন ভারতের রাজনৈতিক লড়াইটা হচ্ছে ডোল পলিটিক্স এর, ফ্রীবির, দুটাকার চালের সাথে আত্মনির্ভর হবার, ক্রাচ ও হুইলচেয়ার ছেড়ে নিজের পায়ে চলার লড়াই। কেন্দ্রীয় সরকারের ভালো প্রকল্পগুলোর কোন মার্কেটিং নেই, নেই কোন প্রচার। বেশ কিছু প্রকল্পে জনগণের আপাত অসুবিধে হতে পারে এবং হচ্ছেও। সেই ব্যাপারটাকে এনক্যাশ করার জন্য শকুনের অভাব নেই, আর তারা সেটা ভালভাবেই কাজে লাগাচ্ছে। তাদের ন্যারেটিভ এর দাঁত বেশ লম্বা। কিন্তু সরকার বা দলের দিক থেকে ভালোর ব্যাপারটা যে কি, সেটা বুঝিয়ে বলার কোন চেষ্টা আছে কি? না, একেবারেই নেই, থাকলেও চোখে পড়েনি।

অধিকাংশ ভাল কাজ হল নিমপাতার মতন। উপকারী, কিন্তু বেজায় তেতো। অবুঝ ডায়াবেটিক নিমপাতা ছেড়ে আরো বেশি মিষ্টির দিকে ধাবমান হয়। যে জোর করে খাওয়ানোর চেষ্টা করে সে পড়ে বিষদৃষ্টিতে। ডায়াবেটিক মানুষটি তখনই নিমপাতা খেতে স্বেচ্ছায় রাজি হবে, যখন সেটা তার মগজকে “বিক্রি” করা হবে। তাই ভাল কাজ “আপনিই লোকে বুঝে নেবে” এসব বক্তিমের দিন আর নেই। সব “বিক্রিই” খারাপ নয়, ভালো আইডিয়া বিক্রি তো নয়ই। এখনও সময় আছে, নিজেদের কথা সাজিয়ে গুছিয়ে শোনান, লোকে শুনে কি বলল সেটা বুঝে নিয়ে নিজের কথা আরো সহজ করুন, যেন আরো বেশি লোক শুনতে পায়, তার ব্যবস্থা করুন। পরিষ্কার, সহজ কিন্তু কার্য্যকর ন্যারেটিভ তৈরি করুন। “প্রো” দের কাজে লাগান, এটা কিছু অ্যামেচার ফেসবুকারদের কাজ নয়। নইলে ২০২৪ এ নিম গাছের তলায় একা বসে থাকতে হবে আর ডায়াবেটিকরা ফ্রী মিষ্টির দোকানে লাইন লাগাবে।

শান্তনু সোম

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.