পরমাণুবাদেরজনকমহর্ষি_কণাদ—

বৈশেষিক দর্শনকার কণাদ ঋষি খ্রীঃ পূঃ ১২শ শতাব্দীতে বৰ্ত্তমান ছিলেন। তিনি তণ্ডুলকণা ভক্ষণ করিতেন বলিয়া তাঁহার নাম কণাদ হইয়াছিল বলিয়া মনে হয়। তাঁহার প্রকৃত নাম উলুক বলিয়।

তাঁহার প্রণীত দর্শন ‘ঔলুক্যদর্শন’ নামে খ্যাত। তিনি প্রভাসক্ষেত্রে বাস করিতেন এবং তাঁহার গুরুর নাম সোমশৰ্ম্মা ছিল। কনাদের মতে ভাব-পদার্থ—দ্রব্য, গুণ, কৰ্ম্ম, সামান্য, বিশেষ ও সমবায়—এই ছয়টি পদার্থ সম্বন্ধে তত্ত্বজ্ঞান লাভ করিতে পরিলেই মুক্তি লাভ হয়। কণাদ পরমাণু-বাদী ছিলেন।

তাঁহার মতে—অদৃষ্ট কারণ বিশেষ দ্বারা পরমাণুর সংযোগ বিয়োগের দ্বারাই জগতের উৎপত্তি। তেজঃ ও আলো একই মূল পদার্থের বিভিন্ন অবস্থা মাত্র। ইহা তিনিই প্রথম আবিস্কার করেন। বর্ত্তমান সময়ে ইউরোপে পরমাণুবাদ সৰ্ব্বত্র গৃহীত। এই পরমাণুবাদ আমাদের দেশেই সৰ্ব্ব প্রথমে আবিষ্কৃত হইয়াছে। মহর্ষি কণাদই ইহার আবিষ্কৰ্ত্তা। মহর্ষি কণাদের জড়পদার্থের জ্ঞান সম্বন্ধে সমধিক দৃষ্টি ছিল।

সেই জন্যই তিনি পরমাণুবাদ স্থাপন করেন। মেঘ, বিদ্যুৎ, বজ্রাঘাত, ভূমিকম্প, করকা, হিমশীলা, বৃক্ষের রস সঞ্চার, চুম্বক ও চুম্বকার্ষণ, গতি, জড়ের সংযোগ ও বিয়োগাদি গুণ ইত্যাদি বিবিধ বিষয়ে তাঁহার চিন্তা ধারা ধাবিত হইয়াছিল।

◾জীবনের কঠোরতাকেই ঋষিদের আধ্যাত্মিক উন্নতির মূলসূত্র হিসাবে বিবেচনা করেছেন। ইনি বিশেষ নামক একটি সুক্ষ্ম পদার্থ স্বীকার করে নিয়েছিলেন। তাঁর মতে পদার্থ মূলত ১০ প্রকার। এর মধ্যে ছয়টি ভাল পদার্থ বাকি চারটি অভাব পদার্থ। ছয়টি পদার্থ হল- দ্রব্য, গুণ, কর্ম, সামান্য বিশেষ ও সমব্যয়। অপর চারটি অভাব পদার্থ হল- প্রাগভাব, ধ্বংসাভাব, অন্যেনাভাব ও অত্যন্তাভাব।

ইনি প্রথম পরমাণু সম্পর্কে বক্তব্য প্রদান করেছিলেন। তাঁর মতে একমাত্র পরমাণুই সতস্বরূপ নিত্যপদার্থ এবং সমস্ত জড় পদার্থই পরমাণুর সংযােগে উৎপন্ন হয়েছে। বিশেষ বিশেষ প্রকার পরমাণুতে বিশেষ নামে পদার্থ আছে। তারই শক্তিতে ভিন্ন ভিন্ন রূপ পরমাণু ভিন্ন হিসাবে চিহ্নিত হয়। ইনি প্রথম তেজ ও আলােকে একই বস্তুর বিভিন্ন অবস্থা হিসাবে চিহ্নিত করেন।

ভারতীয় আস্তিক ষড়দর্শনের মধ্যে অনাতম দর্শন হলাে বৈশেষিক দর্শন। এই দর্শনের ‘পদার্থতত্ত্ব’ বা ‘বিশ্বতত্ত্বের জ্ঞান প্রাচীনকালে যে কোন ছাত্রের জন্য অপরিহার্য বলে মনে করা হতাে। বিশ্বতত্ত্বের আলােচনাই বৈশেষিক দর্শনের প্রধান আলােচনা।

বিশেষ দ্রষ্টব্য: কখনোই বলা উচিত নয়, নিউটন স্যার এই সূত্র চুরি করেছেন। তিনি এসকল সূত্রের প্রতিষ্ঠিত ব্যাখা করেছেন। উপরের ছবিগুলোর অর্থ এটাই, ঋষি কণাদ তার বিখ্যাত গ্রন্থে এই তিন সুত্র নিউটন স্যারের অনেক অাগেই দিয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.