প্রথমেই জেনে নেই এবারের বিধানসভা নির্বাচনে(২০২১) বিজেপি ও তৃণমূল কংগ্রেস শতকরা কত শতাংশ ভোট পেল? বিজেপি ভোট পেয়েছে শতকরা ৩৮ শতাংশ এবং তৃণমূল ভোট পেয়েছেন শতকরা ৪৮ শতাংশ। বিজেপির এই ৩৮ শতাংশ ভোটের মধ্যে প্রায় ৯৯•৯৯ ভাগ হিন্দু ভোটার, ০•০১ শতাংশ সংখ্যালঘু ভোট পেয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেসের এই ৪৮ শতাংশ ভোটের মধ্যে সংখ্যালঘু ভোট পেয়েছে ২৫ শতাংশ। কলকাতা শহরের সেক্যুলার হিন্দুদের ভোট পেয়েছে ১৫ শতাংশ। সাধারণ হিন্দুদের ভোট পেয়েছে ৮ শতাংশ। অর্থাৎ সবমিলিয়ে হিন্দুদের ভোট পেয়েছে ২৩ শতাংশ।
তাহলে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি হিন্দুদের ভোট বেশি পেয়েছে প্রায় ১৫ শতাংশ। এখানে তৃণমূল সংখ্যালঘু ভোটের কারণে আসন সংখ্যায় বিজেপির থেকে অনেক এগিয়ে গিয়েছে। সামগ্রিকভাবে ৪৮ শতাংশ ভোট পেয়েছে।
এই নির্বাচনে বিজেপি মোট ভোট পেয়েছে ২ কোটি ২৮ লাখ এবং তৃণমূল কংগ্রেস ভোট পেয়েছে ২ কটি ৮৭ লাখ। অর্থাৎ তৃণমূল বেশি ভোট পেয়েছে ৫৯ লাখ।
২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি আসন পেয়েছিল মাত্র ৩টি। কিন্তু ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির আসন পেয়েছে ৭৭ টি। অর্থাৎ ২০ গুণ বেশি। (উল্লেখ্য, পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা আসন ২৯৪টি)
২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির আসন সংখ্যা ছিল ২টি। কিন্তু ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি আসন পেয়েছে ১৮টি ( উল্লেখ্য, পশ্চিমবঙ্গে লোকসভা আসন ৪২টি)।
পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির এই উত্থানের কারণ কি?
প্রথমত, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অতিরিক্ত সংখ্যালঘু তোষণ। (একথাটি পশ্চিমবঙ্গের সাধারণ মানুষের মুখে সবসময় শোনা যায়)। হিন্দু ধর্মের ত্রেতা যুগের অবতার পুরুষ অর্থাৎ হিন্দুদের আরাধ্য দেবতা শ্রীরামচন্দ্র কে নিয়ে মিডিয়ায় তাঁর উল্টাপাল্টা মন্তব্য করা। (একবার তিনি গাড়িতে করে জনসভায় যাওয়ার পথে সাধারণ জনগণ জয় শ্রীরাম ধ্বনি দেওয়ায়, গাড়ি থেকে নেমে গালাগাল দিচ্ছে এরকম শব্দ উচ্চারণ করেন, তাতে সাধারণ জনগণ তাঁর উপর আরো ক্ষিপ্ত হয়, “জয় শ্রীরাম” কখনো কি গালিগালাজ হতে পারে?)। একবার স্কুলে সরস্বতী পূজা বন্ধ করে দেওয়া, যেটা পশ্চিমবঙ্গের হিন্দুরা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারেনি, তাছাড়া একবার রামনবমী অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া, এছাড়া বিভিন্ন দেবদেবী নিয়ে উল্টাপাল্টা মন্ত্র উচ্চারণ, যার কারণে সাধারণ মানুষের কাছে তিনি হাসির পাত্র হয়েছেন।
ভারতের তথা দক্ষিণ এশিয়ার সাধারণ জনগণের কাছে অলিখিতভাবে বিজেপি একটি জাতীয়তাবাদী সাম্প্রদায়িক দল। তাহলে পশ্চিম বঙ্গের হিন্দুরা এই সাম্প্রদায়িক বিজেপিকে ভোট দিল কেন?
এর কারণ ব্যাখ্যা করতে গেলে ভারতের আশেপাশের দেশের সংখ্যালঘুদের জীবন যাত্রা, তাদের ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং সামাজিক অবস্থান এটা চলে আসবে। প্রথমত আমি বলতে চাই, বর্তমান যুগ সোশ্যাল মিডিয়ার অর্থাৎ ইন্টারনেটের মাধ্যমে পৃথিবীর যেকোনও প্রান্তে যা কিছু ঘটে সাথে সাথে সেটা পৃথিবীব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে।
ভাষাগত মিলের কারণে এবং পাশাপাশি হওয়ায় পশ্চিমবঙ্গের সাথে বাংলাদেশের মানুষের একটা আত্মিক সম্পর্ক রয়েছে। যদিও এই দুই দেশের মানুষের মাঝে ধর্মীয় বৈপরীত্য রয়েছে। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, বাংলাদেশ মাঝে মাঝেই সংখ্যালঘুদের বাড়িতে হামলা, লুটপাট, ভাঙ্গচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। মাঝে মাঝে মন্দির ভাঙ্গচুরের ঘটনা ঘটে, মাঝে মাঝে মন্দিরের দামি কষ্টি পাথরের মূর্তি চুরি হয়ে যায়। যেটা মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে এবং এই ঘটনা দেশ-বিদেশের সব জায়গার মানুষ দেখে।
মন্দিরের একটা প্রতিমা ভাঙ্গচুর হলে পৃথিবীর যেকোনও প্রান্তে বসবাসরত হিন্দুদের অন্তরে আঘাত লাগে। আর এটা থেকেই মানুষের মনের মাঝে সাম্প্রদায়িকতা অর্থাৎ বিধর্মীদের প্রতি একটা বিদ্বেষপূর্ণ ধারণা সৃষ্টি হয়। আর পশ্চিমবঙ্গ বাংলাদেশের কাছে হওয়ায় ওখানকার সাধারণ মানুষের মধ্যে এটা নিয়ে আরো গভীর ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
পার্শ্ববর্তী পাকিস্তানে মাঝে মাঝে সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন, মন্দির ভাঙ্গচুরের ঘটনা, হিন্দু মেয়েদের জোর পূর্বক তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্মান্তরিতকরণ এবং ক্রমান্বয়ে পাকিস্তান হিন্দু শূন্য হয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে পাকিস্তানে হিন্দুদের সংখ্যা শতকরা ০•০১ শতাংশ। বাংলাদেশে বসবাসরত হিন্দুদের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে কমে যাচ্ছে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে হিন্দু জনসংখ্যা ছিল শতকরা ১৮ শতাংশ। বর্তমানে বাংলাদেশে হিন্দুদের সংখ্যা শতকরা মাত্র ৮ শতাংশ।
ভারতে জাতীয়তাবাদী দল বিজেপির উত্থানের ফলে সে দেশে বসবাসরত ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা উদ্বিগ্ন। সেখানেও কমবেশি সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা মাঝে মাঝে মিডিয়ায় আসে। আমার বক্তব্য সকল দেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা নিরাপদে থাকুক।
উপরোক্ত কারণে হিন্দুদের মাঝে হিন্দুত্ব বোধ ও হিন্দুত্ববাদী শক্তির জাগরণ ঘটছে। এসব কারণেই ভারতের সব জায়গায় জাতীয়তাবাদী দল বিজেপির নবজাগরণ ঘটছে। যে বিজেপির ১৯৮২ সালেও লোকসভায় মাত্র ২টি আসন ছিল। বর্তমানে অর্থাৎ ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি জোট ৫৪৩ আসনের মধ্যে ৩৪৫ আসন নিয়ে কেন্দ্রীয় ক্ষমতায় রয়েছে। বিজেপি একাই পেয়েছিল ৩০৩টি আসন। একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে লাগে ২৭২ আসন। অর্থাৎ জোট সঙ্গী না থাকলেও বিজেপি একাই সরকার গঠন করতে পারত।
একসময় কংগ্রেস ছিল ভারতের একমাত্র ও সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল। আজ একের পর এক পরাজয়ের মাধ্যমে কংগ্রেস এখন অস্তিত্ব সংকটে। এবারের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেস ০(শূন্য) আসন পেয়েছে।
আমার নিজস্ব মতামত, বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তান এই তিনটি দেশে যদি ধর্মীয় ভারসাম্য বজায় না থাকে অর্থাৎ সকল ধর্মের মানুষ পরমত সহিষ্ণুতা নিয়ে বসবাস করতে না পারে তাহলে ভবিষ্যতে আরো ধর্মীয় মেরুকরণের রাজনীতি হবে। আর এর ফল ভোগ করবে উক্ত দেশগুলোতে বসবাসরত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সাধারণ মানুষ। কেউ যদি মনে করে সংখ্যালঘুদের দেশ থেকে তাড়িয়ে দেব, তাহলে তার এটাও মনে রাখা উচিত পার্শ্ববর্তী দেশেও তার জাতভাই সংখ্যালঘু।
আমি অন্যের ধর্মকে ঠিক ততটা ভালোবাসি ও শ্রদ্ধা করি, অন্যরা আমার ধর্মকে ঠিক যতটা ভালোবাসে ও শ্রদ্ধা করে।
সংগৃহীত… প্রতিবেদনটি ফেসবুক থেকে সংগ্রহ করা। লেখকের নাম জানা যায়নি। সম্ভবত তিনি একজন অনাবাসী বাঙালি।