ইজরায়েলের “আয়রন ডোম” এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম : এটি কি এবং এর কর্মপদ্ধতি কী?
ইজরায়েল ও প্যালেস্তাইনের মধ্যে আঞ্চল-নিয়ন্ত্রণ নিয়ে চলা সংঘর্ষ হিংসার নুতন ঢেউকে জাগিয়ে তুলেছে এবং মধ্য এশিয়ার চিরজীবী রণক্ষেত্রে নিম্ন স্তরের যুদ্ধে পরিণত হয়েছে। পূর্ব জেরুসালেমের শেইখ জারা থেকে প্যালেস্তাইনবাসীদের উচ্ছেদ করার সিদ্ধান্ত ইজরায়েল ও প্যালেস্তাইনের মধ্যে নুতন করে উত্তেজনা বাড়িয়েছে যা বড় ধরনের হিংসা ও আক্রমণে পরিণত হয়েছে।
এরই মধ্যে ইসলামিক আতংকবাদী সংগঠনের প্রবেশ দুই পক্ষের লড়াইকে আরও ভয়ানক করে তুলেছে। এই আতংকবাদী সংগঠন ইজরায়েলের বিরুদ্ধে প্রচন্ড আক্রমণ শুরু করেছে। হামাস শত শত রকেট নিক্ষেপ করে ইজরায়েলের জনসাধারণের উপর আক্রমণ চালাচ্ছে। গাজা থেকে হামাসের এলোমেলো রকেট নিক্ষেপের ফলে প্রায় ৩০ জন ইজরায়েলি মানুষ মারা গেছেন। এর প্রত্যুত্তরে ইজরায়েল, সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকায় হামাসের প্রায় ১৪০ টি টার্গেট হিট করেছে । গাজার ভিতরও ইজরায়েল হামাসের বিরুদ্ধে আক্রমণ আরও তীব্র করেছে।
এটাও বলা হচ্ছে যে মঙ্গলবার ইজরায়েলের করা প্রতিশোধমূলক আক্রমণে গাজার কিছু উচ্চপদস্থ আতংকবাদী মারা গেছে। যদিও, হামাসের এখনো ইজরায়েলের উপর আক্রমণ থামানোর কোনো ইশারা নেই।
হামাসের কম দামী রকেটের পাল্টা ইজরায়েল তার অত্যাধুনিক এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম “Iron Dome” কে সক্রিয় করে তুলেছে রকেটের হাত থেকে তার জনসাধারণকে বাঁচাতে। ইজরায়েল ডিফেন্স ফোর্স “আয়রন ডোম” কে ডিপ্লয় করে তেল অভিভ এবং মধ্য ইজরায়েলর দিকে ছুটে আসা রকেট বৃষ্টিকে আকাশেই ধ্বংস করতে সক্ষম হয়েছে।
“আয়রন ডোম” কী ?
“আয়রন ডোম” আমেরিকার সাহায্যে রাফায়েল এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম এবং ইজরায়েল এরোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিস দ্বারা প্রস্তুত একটি আধুনিক এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম।
এটি ইজরায়েল দ্বারা প্রস্তুত করা হয়েছে অল্প দূরত্বের রকেট, আর্টিলারি সেল এবং মর্টার্স এগুলিকে ৭০ কিমি দূরত্বের মধ্য থেকে ছোড়া হলে সেগুলোকে চিহ্নিত করে ধ্বংস করার জন্য।
কিভাবে এই সিস্টেম কাজ করে?
সব আবহাওয়াতেই কাজ করতে পারে এই সিস্টেম নির্ভর করে একটি রাডার সিস্টেম এবং ধেয়ে আসা রোকেটগুলি বিপদযুক্ত কিনা তার বিশ্লেষণের উপর, তারপর এটি যথাযত প্রতিক্রিয়ায় মিসাইল উৎক্ষেপণ করে সেগুলিকে ধ্বংস করে। ইন্টারসেপ্টর মিসাইল সেই ধেয়ে আসা রোকেটগুলিকে ধ্বংস করে যেগুলির লক্ষ্য থাকে ইজরায়েলের সাধারণ জনবসতিপূর্ন এলাকা।
এটি তিনটি মূল উপাদান দ্বারা গঠিত- একটি ইন্টারসেপ্টর ব্যাটারি যেটি আকাশে রকেট ধ্বংস করে, একটি রাডার যেটি রকেটটিকে ট্র্যাক করে যেই মুহূর্তে ইজরায়েলের কোনো সীমান্তের কাছে রোকেটটিকে নিক্ষেপ করা হয় এবং একটি অত্যাধুনিক সফটওয়্যার যেটি রকেটের পথ এবং লক্ষ্যকে চিহ্নিত করে।
কতদিন ধরে ইজরায়েল এটিকে ব্যবহার করছে?
আয়রন ডোম ইজরায়েল ডিফেন্স ফোর্স অন্তর্ভুক্ত করা হয় মার্চ, ২০১১ তে এবং সেই মাসেই গাজা থেকে ধেয়ে আসা একটি গ্রাড রকেটকে চিহ্নিত করে ধ্বংস করে। ইজরায়েল তার এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম শুরু করেছিল ২০০৬ সালে লেবাননের হিজবুল্লার সাথে হওয়া যদ্ধের পর যখন ইজরায়েলের দিকে ধেয়ে আসা ৪০০০ রকেট ৪৪ জন মানুষের প্রাণ নিয়েছিল।
ইজরায়েল যখনই গাজা থেকে আসা রকেট ধ্বংসের জন্য তার তামির মিসাইল নিক্ষেপ করে তখন তার খরচ হয় প্রায় ৭০ লক্ষ টাকা।
এমনকি রকেট দ্বারা হওয়া ক্ষয়ক্ষতিও আয়রন ডোম থেকে একটা মিসাইল নিক্ষেপ করার থেকে সস্তা।
আয়রন ডোম – একটি কার্যকর এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম
আয়রন ডোম এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম বিশ্বের অন্যতম উন্নত বলে বিবেচিত হয় যার সফলতার হার ৯০ শতাংশেরও বেশি।
বিশেষজ্ঞদের মতে IDF এ আয়রন ডোমের অন্তর্ভুক্তি ইজরায়েলের বহু মানুষের জীবন বদলেছে সাম্প্রতিক ঘটা দ্বন্দ্গুলিতে, যেহেতু এটা বর্তমানে আরও বেশি নিশ্চয়তার সাথে গাজা থেকে ধেয়ে আসা রকেটগুলিকে ইন্টারসেপ্ট করতে পারে। সুতরাং দক্ষিণ ইজরায়েলের এলাকাগুলোতে অনেকটা স্বভাবিকত্ব ফিরে এসেছে কারণ এই এলাকাগুলোতেই সব থেকে বেশি রকেট হামলা হয়। অন্তর্ভুক্তির এক দশকে প্যালেস্টেইনের গাজা থেকে আসা হাজার হাজার রকেটকে এটি ইন্টারসেপ্ট করেছে।
যদিও হামাসের কিছু রকেট ইজরায়েলে পড়েছে এবং ক্ষয়ক্ষতি করেছে।
এরসাথে ইজরায়েল আয়রন ডোমকে তাদের নৌবাহিনীর সাথেও অন্তর্ভুক্তির পরিকল্পনা করছে।
আয়রন ডোম ছাড়াও ইজরায়েলের কাছে রয়েছে অ্যারো ২, অ্যারো ৩, ব্যারাক ৮, আয়রন বিম এবং ডেভিড সলিং অ্যান্টি মিসাইল সিস্টেম। আয়রন ডোম যেমন কম দূরত্বের রোকেটগুলি ধ্বংস করে নিজেদের মানুষকে বাঁচায় তেমনই অ্যারো সিস্টেম বেশি দূরত্বের মিসাইল গুলোকে আটকায়। অ্যারো ডিফেন্স সিস্টেম মূলত সিরিয়ার Scud মিসাইল এবং ইরানের Shihab মিসাইলকে আটকাতে ব্যবহার করা হয়।
ডেভিড সলিং এখনও নির্মানাধীন। এটি মূলত ব্যবহার করা হবে মধ্যম রেঞ্জের ক্ষেপণাস্ত্র এবং অত্যন্ত নির্ভুল মিসাইলের বিরুদ্ধে।
বাপ্পাদিত্য