১.১৪ সাংবিধানিক বৈষম্য
যদি কোনোভাবে আপনার কাছে এই তাত্ত্বিক ব্যাখ্যাটি পরিষ্কার না লাগে বা গ্রহণযোগ্য না লাগে, তবে আপনি ব্যবহারিক আঙ্গিকটিও ভালো ভাবে দেখতে পারেন। একটি স্বাধীন জাতির প্রথম নিদর্শনটি হল যে তাদের একটি নিজস্ব রাষ্ট্র থাকবে এবং সে অপর দেশগুলি কর্তৃকও একটি জাতি বলে স্বীকৃত হবে। এর রাষ্ট্রকে তার আকাঙ্ক্ষা, নীতি, আদর্শ এবং সংস্কৃতি অনুসারে এর আভ্যন্তরীণ বিষয়গুলি পরিচালনা করতে হবে, বহির্বিশ্বের সম্মুখে জাতির প্রতিনিধিত্ব করতে হবে, জাতির ভাবমূর্তি প্রচার করতে হবে, এর সদস্যদের হিতসাধন করতে হবে এবং এভাবে তার জাতীয় সংস্কৃতির গৌরব সমগ্র বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে হবে। এরূপ একটি রাষ্ট্র তার তরুণ এবং বৃদ্ধ প্রজন্মের মধ্যে জাতীয় মর্যাদা, জাতীয় অহংকার সঞ্চারিত করবে, এটি এমন একটি রাষ্ট্র হবে যা কোনো সংখ্যালঘু, বহিরাগত বা অ–জাতীয় কোনো ব্যক্তিকে জাতির মর্যাদা দেবে না। তবে ১৯৪৭ এর পরের ভারতে এই বৈশিষ্ট্যগুলির কোনোটিই হিন্দুদের পক্ষে উপকারী প্রমাণিত হয়নি।
অন্যান্য দেশের কথা ভুলে যান, ভারতীয় রাষ্ট্র এখনও হিন্দুদের একটি জাতি হিসাবে স্বীকৃতি দেয়নি। যেহেতু ভারতের সরকারী শক্তি নিজে কখনও এ জাতীয় উদ্যোগ গ্রহণ করেনি, তাই অন্যান্য দেশের পক্ষে হিন্দুদের একটি জাতি হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।
দ্বিতীয়ত, ভারতীয় সংবিধানে বহু ক্ষেত্রে সংখ্যালঘুদের চেয়ে হিন্দুদের কম অধিকার দেওয়া হয়েছে। সংবিধানের ৩০ নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, সংখ্যালঘুরা তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি ও মূল্যবোধ অনুসারে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনার সবচেয়ে মূল্যবান অধিকার পেয়েছে, তবে হিন্দুরা তাদের সেই অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এই বৈষম্যের অর্থ হ‘ল ভারতীয় রাষ্ট্র হিন্দু সংস্কৃতির প্রচারের থেকে ভিনজাতীয় সংস্কৃতির অনুশীলনের ক্ষেত্রে বেশি উদার। বিশ্বের কোনও স্বাধীন জাতির সংবিধানে আপনি এরকম বিকৃত আর কোনো বিধান খুঁজে পাবেন না।
আমাদের সংবিধানের অনুচ্ছেদ নং ২৫ দ্বারা বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী ব্যক্তিদের তাঁদের নিজস্ব ধর্মপালনের যে অধিকার অর্পণ করা হয়েছে, তার অর্থ এই দাঁড়ায় যে – যে কোনো ব্যবহারিক ক্ষেত্রে বহিরাগত ধর্ম বা হিন্দু–বিরোধী ধর্মের মানুষের হিন্দুধর্মের যে কোনো অনুগামীকে ধর্মান্তরিত করার অধিকার রয়েছে, তাতে তিনি নিজস্ব ধর্মীয় বিশ্বাসগত দিক দিয়ে একজন সংখ্যালঘু হলেও, তাঁর সে অধিকার আছে।
৫১ নং অনুচ্ছেদে হিন্দু সংস্কৃতি, ভারতীয় জাতীয় সংস্কৃতি হিসাবে স্বীকৃত হয়নি। পরিবর্তে, স্পষ্টভাবেই বলা হয়েছে যে ভারতীয় সংস্কৃতি হ‘ল একটি জগাখিচুড়ি সংমিশ্রিত সংস্কৃতি। এর অর্থ হ‘ল ইসলামিক সংস্কৃতিটিকেও আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি হিসাবে বিবেচনা করতে হবে এবং ঔরঙ্গজেব ও টিপু সুলতানের মত জাতির শত্রুদেরও আমাদের নিষ্ঠা ও শ্রদ্ধার চোখে দেখতে হবে।
ভারতের যে কোনও রাজ্যে অ–হিন্দু সম্প্রদায় সংখ্যাগতভাবে অধিক প্রাধান্যযুক্ত, সেখানে রাজ্য সরকার ভারতীয় সংবিধানের অধীনে কিছু বিশেষ অধিকার প্রদান করেছে। আমি নিশ্চিত আপনারা সকলে জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ৩৭০ অনুচ্ছেদ সম্পর্কে জানেন। অনুরূপে নাগাল্যান্ডের জন্য অনুচ্ছেদ ৩৭১ ক এবং মিজোরামের জন্য অনুচ্ছেদ ৩৭১৬ জারি হয়েছে যাতে বলা হয়েছে যে ভারতীয় সংসদের দ্বারা যে আইনগুলি প্রণীত হবে, সেগুলি যদি তাদের নিজস্ব রাজ্য–আইনসভা অনুমোদন না করে তবে তা উপরোক্ত রাজ্যগুলিতে প্রযোজ্য হবে না। অর্থাৎ, একটি রাজ্যের একটি বৃহত্তর স্বায়ত্ত্বশাসন থাকবে যেখানে আইনসভায় সংখ্যালঘুদের প্রাধান্য থাকবে এবং যেখানে সরকারও সংখ্যালঘুদের হাতে থাকবে। তবে, হিন্দুদের প্রাধান্য রয়েছে এমন কোনো রাজ্যে কিন্তু এ জাতীয় কোনও স্বায়ত্ত্বশাসন নেই।
অন্যান্য বিষয় ছেড়ে দিন, এমনকি ভারতীয় সংবিধানের প্রস্তাবনার মধ্যে কোনও হিন্দুত্ববাদী ধারণা নেই । এতে হিন্দু নীতি এবং মতবাদের উপর ভিত্তি করে কোনও নীতির উল্লেখ নেই। আমাদের প্রস্তাবনা ন্যায়বিচার, সাম্যতা, ভ্রাতৃত্ব এবং উদারতাকে তার লক্ষ্য হিসাবে বিবেচনা করে। এই ধারণাগুলি নিজ নিজ ক্ষেত্রে ভাল, কিন্তু এর পশ্চাতে কীসের অনুপ্রেরণা রয়েছে?
এগুলির সবকটি সরাসরি ফরাসি বিপ্লব থেকে ধার করা পাশ্চাত্য ধারণা। স্বামী বিবেকানন্দ আমাদের বারংবার মনে করিয়েছেন যে ভারতের জাতীয় মতবাদ হল হিন্দু জাতি অর্থাৎ – ধর্ম এবং আধ্যাত্মিকতা, ত্যাগ ও সেবা, সহিষ্ণুতা ও সম্প্রীতি, সত্য বেদ, ধর্মচরণ (সত্য কথা বলা ও ধর্ম মেনে চলা ) – এইগুলিই আমাদের জাতির ভিত্তিপ্রস্তর। তবে বর্তমান ভারতীয় সংবিধানে এগুলির একটি ধারণাও অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
১.১৫ হিন্দু–বিরোধী নীতি এবং আইন
আসুন আমরা সংবিধান থেকে রাষ্ট্রের আইন ও রাজ্যের নীতিগুলির দিকে লক্ষ্য করি। ভারতের প্রায় সমস্ত রাজ্যেই সংখ্যালঘু অর্থ নিগম হিসাবে সর্বজনীন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারও এখন ৫০০ কোটি টাকা প্রাথমিক মূলধন হিসেবে সরবরাহ করে অনুরূপ উদ্যোগ গ্রহণের প্রস্তাব দিচ্ছে। ৪ এই নিগমগুলি একটি নির্দিষ্ট পরিমাণের চেয়ে কম আয়যুক্ত মানুষদের ঋণপ্রদান করে এবং তাদের নিজস্ব ব্যবসা শুরু করতে সাহায্য করে। তবে একটি শর্ত আছে। একজন ব্যক্তি যদি হিন্দু না হন, তবেই তিনি এই ঋণ পাওয়ার অধিকারী হবেন। আপনি হয়ত একজন শিক্ষিত অথচ নিঃস্ব হিন্দু, আপনি হয়ত একজন অনাহারী হিন্দু যিনি আজ সামান্য কিছু অর্থ রোজগারের জন্য প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করে চলেছেন – তবুও আপনি এই অর্থসাহায্য পাবেন না। তবে যদি আপনি ইসলাম বা খ্রিস্ট ধর্মে রূপান্তরিত হয়ে যান, তবে আপনি অবশ্যই ঋণ পাবেন। ৫
সংবিধানের ৩২ নং অনুচ্ছেদে বিচারব্যবস্থার মাধ্যমে সকল নাগরিকের মৌলিক অধিকার সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেছে। তবে কেন্দ্রীয় সরকার এবং তাদের কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিতে একাধিক রাজ্য সরকার, যারা হিন্দু নয় তাদের অধিকার রক্ষার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করার উদ্দেশ্যে সংখ্যালঘু কমিশন আইন পাস করিয়েছে । এই আইনগুলির অনুসরণে যে কমিশনগুলি গঠিত হয়েছে সেগুলি বিদেশী ধর্মের অনুসারীদের প্রতিনিধিত্বকে সমর্থন করে, তবে কোনো ব্যক্তি যিনি সনাতন ধর্মের উপাসক এবং তিনি নিজেকে হিন্দু বলে পরিচয় দিয়ে স্বচ্ছন্দ বোধ করেন, তাঁকে কখনই সমর্থন করে না। স্পষ্টত প্রকট হয় যে, হিন্দুদের সামাজিক সমস্যাগুলির সমাধানের কোনো দরকার নেই এবং এমনকি তাদের সমষ্টিগত সাম্প্রদায়িক অধিকার সংরক্ষণেরও কোনো প্রয়োজন নেই।
কেরালার মোপলাস নামে পরিচিত একটি মুসলিম দল সম্পর্কে আপনি নিশ্চয়ই অবগত আছেন। স্বাধীনতা আন্দোলনে এই লোকদের একমাত্র অবদান এই ছিল যে তারা ১৯২১ সালের খিলাফত আন্দোলনের সময় তারা মালাবারে হিন্দুদের উপর নির্মম হত্যাকাণ্ড চালিয়েছিল। তারা হাজার হাজার হিন্দুর বাড়িঘর লুঠ করে এবং হিন্দু গ্রামগুলি পুড়িয়ে দেয়, তারা হিন্দু মহিলাদের ধর্ষণ করে এবং হিন্দু মন্দিরগুলি সব ধ্বংস করে দেয় । তবে কী জানেন ? এখনও সেই জীবিত মোপলাদের ভারত সরকার ‘স্বাধীনতা সংগ্রামী‘ হিসাবে সম্মানিত করে এবং সেই ভিত্তিতে তাদের মাসিক পেনশন দেয়! মোপলারা অন্য কোন উপলক্ষে ব্রিটিশদের সাথে লড়াই করেছিল বলে জানা যায় না।
বিশ্বের কোন একটিও এমন স্বাধীন জাতি আছে কি, যাদের নিজস্ব সংসদে দাঁড়িয়ে নিজের জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার অধিকার নেই? তবে ভারতে যখন ‘বন্দে মাতরম’ গানটিকে আমরা আমাদের জাতীয় সংগীত হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছি, তখন তা সংসদে গাইতে দেওয়া হয়নি কারণ কিছু মুসলিম সদস্য এতে আপত্তি করেছিলেন!
প্রতিটি স্বাধীন রাষ্ট্র বা রাজ্য, তা সে যত ছোট বা যত দুর্বলই হোক না কেন, সে সর্বদা বিদেশী অনুপ্রবেশ থেকে তার আন্তর্জাতিক সীমানাগুলিকে রক্ষা করে অথবা অন্ততপক্ষে রক্ষার চেষ্টাটুকু করে। কিন্তু ভারতে, কেন্দ্রীয় সরকার এবং কিছু কিছু রাজ্য সরকার
যেমন – আসাম, পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, দিল্লী ইত্যাদির রাজ্য সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে লক্ষ লক্ষ বাংলাদেশী মুসলমানকে আমাদের দেশে অনুপ্রবেশের অনুমতি দিচ্ছে। এমনকি, তাঁরা এই অনুপ্রবেশের ঘটনাগুলিকে উপেক্ষা করছেন, তাদের পরোক্ষ মদত জোগাচ্ছেন এবং রক্ষা করছেন এবং তাদের রেশন কার্ডের অন্তর্ভুক্ত করে, নির্বাচকের জায়গায় নাম নথিবদ্ধ করে তাঁরা এই সব মানুষকে নাগরিকত্বের পূর্ণ সুবিধা পাইয়ে দিতে চান।
পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আই এস আই আই পুরো ভারতকে কার্যত নিজস্ব একটি বিস্তৃত জালের মধ্যে রেখেছে। শত্রুদেশের গোয়েন্দা কার্যক্রমগুলি আমাদের ভূখণ্ডে ব্যাপকভাবে অনুপ্রবেশ করছে। আমাদের নিজস্ব গোয়েন্দা–বিভাগগুলি প্রতিটি আক্রান্ত রাজ্যকে উদ্বেগ সহকারে এটি জানিয়েছে, কিন্তু ভারতীয় সরকার নিষ্ক্রিয় থেকে আমাদের সুরক্ষার প্রশ্নটিকে বিপদের সামনে এনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। কারণ? কারণটি হ‘ল এই অন্তর্জালটি আসলে মুসলমানদের সমন্বয়ে গঠিত। এই বছরের গোড়ার দিকে যখন আমাদের গোয়েন্দা সংস্থা বোম্বাই থেকে পাটনাতে একজন অফিসারকে পাঠালেন, আই আই এস–এর একজন সক্রিয় এজেন্ট, মৌলভীকে গ্রেপ্তার করার জন্য, বিহারের মুখ্যমন্ত্রী লালু প্রসাদ যাদব নিজেই এই গ্রেপ্তারিকে আটকানোর জন্য হস্তক্ষেপ করেছিলেন। উত্তরপ্রদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতিও খুব একটা আলাদা নয়। ৬
গত কয়েক বছর ধরে, পাঞ্জাব ও জম্মুতে বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে যেখানে কিছু যাত্রীকে আলাদা করে বাস থেকে টেনে টেনে নিয়ে গিয়ে তাদের রাস্তার ধারে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল। আপনি অবশ্যই মনে রাখবেন যে এই প্রতিটি ঘটনায় যেভাবে কসাইয়ের মত মানুষগুলোকে মারা হয়েছিল, মানুষদের কুকুরের মতো হত্যা করা হয়েছিল – সেই সমস্ত ক্ষেত্রে মৃত ব্যক্তিরা ছিলেন কেবল হিন্দু, হ্যাঁ, কেবলই হিন্দু। এবং তারা হিন্দু বলেই তাদের হত্যা করা হয়েছিল। তাহলে আপনি কি এখনো মনে করেন যে আপনি স্বাধীন?
আমাদের দেশের একটি প্রদেশ – কাশ্মীর উপত্যকার সমগ্র হিন্দু জনগোষ্ঠী গত পাঁচ বছর ধরে অস্থায়ী তাঁবুতে বসে ধুঁকছে। মুসলমানদের অমানবিক নিষ্ঠুরতা ও সন্ত্রাসের জন্য এই লোকগুলিকে তাদের আত্মার টান, ঘরবাড়ি, সম্পত্তি এবং জীবিকা ছেড়ে চলে আসতে হয়েছিল। তারা পূর্বপুরুষদের বাসভূমি ছেড়ে পালিয়ে এসে শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছিল। তারা সেই স্থান ত্যাগ করার পর মুসলিমরা তাদের বাড়ি লুঠ করে এবং তাদের বাড়ি পুড়িয়ে দেয়। এই পাঁচ বছরে আমাদের দেশে তিনজন প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন, কিন্তু তাঁদের মধ্যে কারো একদিনের জন্যও সময় হয়নি এই শিবিরগুলোয় এসে একবার ঘুরে যেতে? নাকি তাদের সেই ন্যূনতম সৌজন্যবোধটুকু ছিল না? কেন? কারণ সেই ভুক্তভোগীরা ছিলেন হিন্দু। ভারত সরকার আজ অবধি স্পষ্ট করে কিছু বলেননি যে এই লোকদের তাদের বাড়িঘর এবং সম্পত্তি প্রত্যর্পণের জন্য তাঁরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
প্রায় এক লাখ হিন্দু যাদের মধ্যে মূলতঃ ছিল সহজধারী ও শিখরা – তারা ১৯৪৭ এর বিভাজনোত্তর হত্যালীলা চলাকালীন সময় পাকিস্তান থেকে পালিয়ে এসে জম্মু ও কাশ্মীরে আশ্রয় নিয়েছিল । তবু, তারা আজ অবধি দেশের নাগরিকত্ব পায়নি। তাদের ভারতীয় শাসনব্যবস্থায় ও পঞ্চায়েত ব্যবস্থার ক্ষেত্রে ভোট দেওয়ার কোনো অধিকার নেই, ঋণ নেওয়ার কোনো অধিকার নেই, তাদের সন্তানদের সরকারি প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করার কোনো অধিকার নেই এবং এমনকি, তাদের সন্তানদের এদেশের চিকিৎসা ও কারিগরি প্রশিক্ষণের মহাবিদ্যালয়গুলিতেও ভর্তি করানোর কোনো অধিকার নেই। কেন ? কারণ তারা হিন্দু। ৫০,০০০ চকমা–বৌদ্ধ–শরণার্থী যারা পূর্ব পাকিস্তান থেকে পালিয়ে অরুণাচল প্রদেশে বাস করার জন্য এসেছিল, তাদের অবস্থাও একই ।
দেশের রাজধানী শহরগুলিতে এখনও ঔরঙ্গজেব, সিকান্দার লোদি, ফিরোজ তুঘলক প্রমুখ ব্যক্তির স্মরণে নানা রাস্তা রয়েছে। যতদূর সম্ভব কল্পনা যায় ততদূর পর্যন্ত এমন কোনো অত্যাচার নেই, যেগুলি এই বর্বররা আমাদের জাতীয় সমাজ ও সংস্কৃতির উপর করেনি; তারা আমাদের ধ্বংস করার জন্য প্রচেষ্টার কোনো খামতি রাখেনি। তারা আমাদের জাতির সবচেয়ে খারাপ শত্রু প্রতিপন্ন হয়েছে। এমনকি তাদের নাম শুনলেও আমাদের মনে বিদ্রোহের আগুন জ্বলে ওঠে। কিন্তু তাও ভারতের কিছু কিছু রাজ্য এখনো তাদের গৌরবান্বিত করে চলেছে।
মুসলমানরা আরএসএসের মাদ্রাজের অফিসে একটি শক্তিশালী বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ভবনটিকে ধ্বংস করে দিয়েছিল এবং তাতে সাত জন মারাও গিয়েছিল। তবে ভারত সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের মন্ত্রী রাজেশ পাইলট বলেছিলেন যে ঘটনাটি সিবিআই তদন্ত জারি করার অনুমতি দেবার মত এতও গুরুত্বপূর্ণ নয়। কেন ? কারণ আর এস এস একটি হিন্দু সংগঠন।
যে সমস্ত লোক প্রকাশ্যে হিন্দুবিরোধী কার্যকলাপে লিপ্ত হয়, সংখ্যালঘুদেরকে দেশবিরোধী কার্য করতে প্ররোচনা দেয় এবং দৃপ্তভাবে নিজেদের একটি মর্যাদাপূর্ণ সংস্কৃতির প্রতিনিধি হিসাবে ঘোষণা করে এবং বলে যে তাদের জন্য ভারতীয় আদালত থেকে জারি করা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা খাটবে না। দিল্লির জামে মসজিদের ইমান আবদুল্লাহ বুখারীর গ্রেপ্তারি পরোয়ানা বহু আগেই উত্তরপ্রদেশ, বিহার ও কেরালার আদালত কর্তৃক জারি করা হয়েছে, কিন্তু ভারতের সশস্ত্র পুলিশ বাহিনী তাকে হেফাজতে নেওয়ার মতো সাহস পায় না। উল্টোদিকে, যে কোনও হিন্দু পবিত্র ব্যক্তিই হোন, তা সে শঙ্করাচার্য স্বরূপানন্দজীই হোন বা অন্য যে কেউ – তাঁদের যেকোনো সময় সামান্যতম অভিযোগেও গ্রেপ্তার করা যায়।
অযোধ্যা, মথুরা, কাশী, উজ্জয়িনী, দ্বারকা, দেবগিরি, পাটান, কাংগ্রা, থানেশ্বর বা অন্য কোথাও হিন্দুদের শত শত পবিত্র স্থানগুলি আজও বিদেশী আক্রমণকারীদের বিজয় নিশান হিসাবে পদদলিত হচ্ছে। আমরা এগুলিকে মুক্ত করতে পারিনি। এমনকি তাদের মুক্ত করার ক্ষেত্রে আমাদের অধিকারটিকে অবধি ভারত সরকার স্বীকার করেনি। কিন্তু বিপরীতে, ভারতীয় সংসদ এখন এমন একটি আইন পাশ করিয়েছে যাতে বলা হয় যে এই স্থানগুলি যদি আমরা স্বাধীন করার চেষ্টা করি, তাহলে তাকে গুরুতর শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হবে।
সংস্কৃত হিন্দুদের পবিত্র ভাষা। কিন্তু এটিকে ধীরে ধীরে কিন্তু নিয়ম অনুসরণ করে একঘরে করে দেওয়া হচ্ছে। দেশের রাজ্য সরকারগুলি এটিকে বিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রম থেকে বাদ দিয়ে দিয়েছে। কিন্তু, উল্টোদিকে উর্দু মূলত মুসলমানদের ভাষা, এটি একটি বিদেশী লিপিতে লিখিত, উর্দু পাকিস্তানের সরকারী ভাষা এবং এই ভাষাই মুসলিম বিচ্ছিন্নতাবাদকে দেশভাগের দিকে চালিত করেছিল – তাকেই আজ চরমভাবে উৎসাহ প্রদান করা হচ্ছে। আজ এটিকে কিছু কিছু রাজ্যের সরকারি ভাষা হিসাবে স্বীকার করা হচ্ছে তো পরশু একে পরীক্ষা দেওয়ার মাধ্যম হিসাবে ঘোষণা করা হচ্ছে। আবার পরদিন এটা দূরদর্শনেরও ভাষা হয়ে যাচ্ছে। এইরকম চলতেই থাকে ..।
আজ যদি কেউ ভারতে এমন একটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে চায় যেখানে ইসলাম বা খ্রিস্টান ধর্মতত্ত্বের পৃথকভাবে শিক্ষা দেওয়া হয়, তবে কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য সরকারগুলি তাদের অনুদান দেবে এবং এমনও হতে পারে যে তারা বিদ্যালয়টির সম্পূর্ণ ব্যয়ভার বহন করতে উদ্যোগী হতে পারে। তবে আপনি যদি এমন একটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে চান যেখানে আপনি আপনার শিশুদের হিন্দু ধর্ম ও সংস্কৃতি সম্পর্কে শিক্ষা দান করতে চান, তাদেরকে ভগবদ্গীতা পড়াতে চান বা দেবী সরস্বতী আবাহনের মন্ত্র শেখাতে চান – তবে আপনার বিদ্যালয়ের ব্যয়ভার বহন করতে হবে কল্যাণ আশ্রমকে বা উপজাতি সমাজের বন্ধুদের অথবা অন্য কোনো স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে। কেন? কারণ এই দেশের সরকার এ জাতীয় বিদ্যালয়ের ব্যয় কিছুতেই বহন করবে না।
১.১৬ ভারতের বিচারালয় সমূহ
আমাদের বিচারালয়গুলির দিকে দৃষ্টিপাত করুন – ভারতীয় সরকার বিশ্ব হিন্দু পরিষদ ও জামাত–ই–ইসলামি–এর উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করল। আদালতের প্রথম নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্ত যথাযথ হলেও দ্বিতীয়ক্ষেত্রে সেটি নাকি সম্পূর্ণ বেআইনি ! ভারত ও তার বহির্ভূত হিংস্র মুসলিম সন্ত্রাসবাদীরা সশস্ত্রভাবে মারাত্মক অস্ত্র সহকারে হজরতবল মসজিদে আত্মগোপন করেছিল। এইসময় আমাদের বিচারালয়গুলি ভারতীয় সৈন্যদের বলে, “ সাবধান ! ওদের গুলি কোরো না। ওদের বিরিয়ানি আর মাংস পাঠাও। ওদের জল পাঠাও, ওদের ওষুধ পাঠাও”। ধর্মনিরপেক্ষতা যা এক অর্থে একটি হিন্দু–বিরোধী শব্দ, অথচ সংবিধানে তা কোনোভাবে সংজ্ঞায়িত নেই। কিন্তু এদেশের সর্বোচ্চ আদালত এই বিচার ধার্য করেছে যে, যে দল ধর্মনিরপেক্ষতাকে সমর্থন করবে না, তাদের রাজ্য সরকারের মারফত কার্যকলাপ চালিয়ে যাওয়ার কোনো অধিকারই নেই। মুখ্য নির্বাচন কমিশনার আসামের নির্বাচনী তালিকার নিখুঁত সংশোধনের আদেশ জারি করেছেন যাতে বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারীদের সেই তালিকা থেকে বহিষ্কার করা যায়, কিন্তু আদালতগুলি ঘোষণা করে যে এইরূপ করা আইনসঙ্গত হবে না। ৭
১.১৭ গণমাধ্যম
আমাদের জাতীয় গণমাধ্যম –দূরদর্শন বা ডিডি–র দিকে লক্ষ্য রাখুন। এটি একজন জাতীয় বীরকে টিপু সুলতানের মত খলনায়কের আসনে বসিয়ে উপস্থাপন করে যিনি কিনা প্রায় ৮০০০ হিন্দু মন্দির ধ্বংস করেছিলেন, ব্যাপক সংখ্যায় হিন্দুদের হত্যা করেছিলেন, সুন্নত ও গোমাংস খাইয়ে জোর করে তাদের ধর্মান্তরিত করেছিলেন। দূরদর্শন বেশ কয়েক মাস ধরে একটি ধারাবাহিক দেখানো হয়েছে যার নাম – “ টিপু সুলতানের তলোয়ার”, যদিও তাঁর এই তলোয়ারে তাঁর হিন্দুদের নিঃশেষ করে দেওয়া ও হিন্দু সমাজকে উৎখাত করার স্পষ্ট বার্তাটি উৎকীর্ণ করা আছে ! এই তলোয়ারটি বর্তমানেও মহীশূরের জাদুঘরে সকলের জন্য সংরক্ষণ করে রাখা আছে। আমির খসরু, যিনি হিন্দুদের ও ভগবান শিবকে অতীব জঘন্য ভাষায় অপমান করেছিলেন– যা আমি হয়ত মহিলা শ্রোতা থাকতে পারে বলে এই স্থানে আর দ্বিতীয়বার উচ্চারণ করতে পারব না। তাঁকেও দূরদর্শন একজন সুফি সন্ত এবং একজন মহান জাতীয় বীর হিসেবে উপস্থাপিত করেছে। দূরদর্শনের ‘ফিরদৌস’ অনুষ্ঠানে কাশ্মীরের সন্ত্রাসবাদী মুসলিমদের উদারমনস্ক, সহনশীল ও ভদ্র মানুষ বলে উপস্থাপন করা হয়েছিল, যেখানে প্রকৃতপক্ষে হিন্দুরা তাদের নৃশংসতার শিকার হলেও তাদের অত্যন্ত নীচ ও দুষ্ট প্রবৃত্তিসম্পন্ন মানুষ হিসেবে প্রতিপন্ন করা হয়েছিল।
ভারতের বড় বড় সংবাদপত্র ও সাময়িক পত্রগুলিতে, বর্তমানের চালচিত্রটি হল এরকম যে আপনি হিন্দু ধর্মের নামে যা তা বলে যান যেমন আপনি হিন্দু ধর্ম, হিন্দু সংস্কৃতি এবং হিন্দু সমাজের সম্পর্কে যে কোনো রকম কুৎসা রটান না কেন এবং তা যতই সম্পূর্ণ অযৌক্তিক বা আপত্তিকরই হোক না কেন, আপনার প্রতিবেদনটি কাগজে অবশ্যই প্রকাশিত হবে। কিন্তু আপনি মহম্মদ বা ইসলাম সম্পর্কে কিছুমাত্র লিখুন, তা সে তথ্যসমৃদ্ধ হোক, যুক্তিপূর্ণ হোক বা মার্জিত ভাষায় লিখিত সত্য প্রতিবেদন হোক এবং কোনো নির্ভরযোগ্য উৎস থেকে লিখে থাকুন না কেন, তথাপি আপনার কোনো সংবাদপত্র বা কোনো সাময়িক পত্রিকায় কোনো স্থান হবে না। যেন কঠোর ইসলামীয় সেন্সরশিপের নীতিগুলি দেশে পরিচালিত হচ্ছে।
১.১৮ একটি রাজ্য–হীন রাষ্ট্র
যখন ইজরায়েলের বিদেশ মন্ত্রী ১৯৯১–৯২ সালের ভারত সফরে এসেছিলেন এবং পি এল ও মুখ্য ইয়াসের আরাফাত শ্রী এল কে আদবানির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন তখন তিনি এই সভার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ করেছিলেন। হায়দ্রাবাদে একটি জনসভায় পি.এল.ও প্রতিনিধি ভারত সরকারকে রীতিমতো শাসিয়েছিলেন যাতে তারা ইজরায়েলের সঙ্গে খুব বেশি সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন না করে। ১৯৯২ এর ডিসেম্বরে যখন রামের জন্মভূমি অযোধ্যার উপর তৈরী মসজিদ ভেঙ্গে ফেলা হয়, ইরান সরকার বস্তুত ভারত সরকারকে আদেশ করেছিল পুনরায় মসজিদ নির্মাণের। গতবছর নামিবিয়ার প্রধান বিচারপতি জনাব ইসমাইল আহমেদকে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে আইনের সাম্মানিক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদানের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়। তিনি নিজের ডিগ্রিটি গ্রহণ করে সন্তুষ্ট ছিলেন না, তিনি নিজের বক্তৃতার মাধ্যমে রামের জন্মভূমির উপর গঠিত মসজিদের কাঠামো ভেঙ্গে দেওয়ার জন্য হিন্দুদের কড়া সমালোচনা করেছিলেন। ভারতের উপ–রাষ্ট্রপতি, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং আরও অনেক সম্মানীয় ব্যক্তিত্বরা সেখানে উপস্থিত ছিলেন এবং পাথরের মত নিশ্চুপ হয়ে তাঁর বক্তব্য শুনছিলেন।
এরূপ আর কত উদাহরণ আমি দেব? একবার নিজে ভেবে দেখুন দয়া করে : এসব কি একটি স্বতন্ত্র জাতির নিদর্শন? একটি স্বাধীন দেশে কি এমনি ঘটনাও ঘটে? হিন্দুরা এখনও একটি স্বাধীন জাতি নয়। আমরা এখনো অনাথ, অসহায় ও পরাধীন। আমাদের এখনো নিজস্ব কোনো রাষ্ট্র নেই যা আমাদের স্বার্থে কাজ করবে।
আমরা দেখতে পাই যে হিন্দু আদর্শ ও তত্ত্বটির উপর ভিত্তি করে বর্তমান ভারতীয় সংবিধান তৈরী হয়নি। এর বিষয়বস্তু গঠন করা হয়েছে হিন্দু আদর্শ, সংস্কৃতি ও সামাজিক ঐতিহ্যকে অবজ্ঞা করার উদ্দেশ্যে। একটি দেশের সংবিধানের প্রস্তাবনা সর্বদা সেই দেশের জাতীয় পরিচয়, জাতীয় আদর্শ ও লক্ষ্য, সংস্কৃতি এবং দেশটি যে সকল মঙ্গল কর্মের উদ্দেশ্যে গঠিত হয়েছে, তাকে তুলে ধরে। মনে হচ্ছে যেন, বর্তমান ভারতীয় সংবিধান উচ্চস্বরে ঘোষণা করছে যে এই ভারতবর্ষ হিন্দু জাতি, হিন্দু ধর্ম, হিন্দু সংস্কৃতি বা সমাজ – কোনটিরও প্রতিনিধিত্ব করে না। এই সংবিধানে ধর্ম, আধ্যাত্মিকতা অথবা আত্মত্যাগ, কর্ম, সত্য, সৌহার্দ্য বা সহনশীলতার কোনো স্থান নেই। চিন্তাভাবনার কোনো বিস্তার না করেও কি আপনি ভারতীয় সংবিধানকে হিন্দু তথা হিন্দু রাষ্ট্রের বলে গণ্য করতে পারেন? একটি সংবিধান যা হিন্দুদের আদর্শকে অবজ্ঞা করে, যা এই জাতিটিকে তার সংখ্যালঘুদের তুলনায় কম প্রাধান্য দেয়, হিন্দুদের একটি জাতি হিসেবে অস্বীকার করে, সেটি কখনোই আমাদের সংবিধান হতে পারে না। আমার মতে, যাঁরা ভারতীয় সংবিধানকে আপন বলে মনে করেন তাঁরা যত বড় নেতা হোন না কেন, হিন্দু রাষ্ট্রের ভাবাদর্শকে তাঁরা কখনোই হৃদয়ঙ্গম করতে পারেননি।
স্পষ্টতই, মূল গলদটি রয়েছে বর্তমান হিন্দুদের দৃষ্টিভঙ্গিতে। কারণ, দুর্ঘটনাক্রমে এদেশে জন্মানোর জন্য আমরা নেহরুবাদীদের বা ধর্মনিরপেক্ষ মানুষদের হিন্দু বলে অনুমান করছি, আমাদের মাতৃভূমির শাসনব্যবস্থা তাঁদের হাতে তুলে দিয়েছি, আমরা কল্পনা করছি যে আমরা স্ব–শাসনের অবস্থায় আছি, আমরা ভাবছি যে এদেশের বিধি–ব্যবস্থা আমাদের হাতেই আছে। আগেই বলেছি, সত্যিটা হল ধর্মনিরপক্ষে রাষ্ট্র ও তার সংবিধান কেবল একটি কাল্পনিক ও কৃত্রিম ‘ভারতীয়’ জাতিকে বর্ণনা করেছে যা মূলত হিন্দু জাতি অপেক্ষা ভিন্ন এবং এটি হিন্দু–বিরুদ্ধ মতবাদের উপর প্রতিষ্ঠিত।
১.১৯ একটি স্বচ্ছ রাষ্ট্রীয় দৃষ্টিভঙ্গি প্রয়োজন
আমাদের হিন্দুদের এখন একমাত্র কাজ হচ্ছে, গান্ধী ও নেহরুর আত্মঘাতী বিকল্প রাষ্ট্রীয় দৃষ্টিভঙ্গির কঠোর দমনপীড়ন থেকে নিজেদের মুক্ত করে ও জাতীয় চেতনাবোধকে জাগিয়ে তোলা। আমাদের একটি স্বচ্ছ জাতীয় দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তুলতে হবে। এমন দৃষ্টিভঙ্গি যা আমাদের দেখাবে –
ক) আমরা হিন্দুরা একটি জাতি, কোনো ধর্মীয় সম্প্রদায় নই। আমাদের মননে দৃঢ় বিশ্বাস গড়ে তুলতে হবে যে আমাদের জাতীয় পরিচয় হিন্দু। আমরা নিজেদের জাতীয়তাবাদ হিসেবে হিন্দু পরিচয় ঘোষণা করব এবং আর অন্য কোন নাম আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না।
খ) আমাদের জাতির মৌলিক বৈশিষ্ট্য হল সনাতন ধর্ম। এর শাক্ত, শৈব, বৌদ্ধ প্রভৃতি অনেক রূপ আছে। এই ধর্মই আমাদের জাতীয় পরিচিতি প্রদান করে। আমরা ভিন্ন কোনো মতবাদকে নিজেদের ঐতিহ্য রূপে গ্রহণ করব না। বৈদেশিক কোনো ধর্মকে আমরা নিজেদের ধর্ম বলে স্বীকার করতে পারিনা।
গ) অবিভক্ত ভারতবর্ষ আমাদের মাতৃভূমি। যদিও এর অনেক অংশ বর্তমানে পৃথক হয়ে গেছে, কিন্তু এই বন্টন আমরা স্বীকার করিনা। আমাদের উদ্দেশ্য হল, যত সময়ই লাগুক না কেন আমরা আমাদের সকল পৈতৃক ভূমিকে আমাদের মাতৃভূমির অন্তর্ভুক্ত করা।
ঘ) হিন্দু সংস্কৃতি আমাদের জাতীয় সংস্কৃতি, হিন্দু সমাজ আমাদের জাতীয় সমাজ, হিন্দু শিল্প, হিন্দু সাহিত্য, ইতিহাস আমাদের জাতীয় সাহিত্য–ইতিহাস। কোনো মুসলিম বা ব্রিটিশ যুগ আমাদের ইতিহাস হতে পারে না। আমাদের ইতিহাস কেবলমাত্র হিন্দুদের মুসলিম অনুপ্রবেশকারী ও ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে ক্রমাগত সংগ্রাম। এবং এই সংগ্রাম এখনও চলছে।
ঙ) মানুষ বৈদেশিক ধর্মগুলিকে আপন করে নিয়েছে যারা আমাদের দেশে সংখ্যালঘুসম্প্রদায়, আমাদের রাষ্ট্রের অংশ নয়। আমরা এই ভিনদেশীয় মতবাদগুলিকে আমাদের শত্রু জ্ঞান করি। আমাদের উদ্দেশ্য হল এই মারণ আদর্শের নেশা ছুটিয়ে দিয়ে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়গুলিকে আমাদের রাষ্ট্রে ফিরিয়ে আনা।
চ) সংস্কৃত আমাদের জাতীয় মাতৃভাষা এবং এর অন্যান্য শাখা–প্রশাখা ও অপত্যগুলিও আমাদের জাতীয় মাতৃভাষা।
ছ) আমরা এখনও একটি পরাধীন জাতি। নেহরুবাদী ধর্মনিরপেক্ষ মানুষ আমদের স্বজাতীয় নয়। তাঁদের শাসনব্যবস্থা আমাদের শাসনব্যবস্থা নয়। আমাদের মাতৃভূমিকে তাঁদের অধিকার থেকে মুক্ত করে আমাদের স্বাতন্ত্র্য অর্জন করতে হবে।
এখনো পর্যন্ত হিন্দুদের মধ্যে গুরুতরভাবে জাতীয় চেতনা বা জাতীয় দৃষ্টিভঙ্গির অত্যন্ত স্বচ্ছতার অভাব আছে। এর মূল কারণ হল আমরা আমাদের বৌদ্ধিক জাগরণ ঘটাতে ব্যর্থ হয়েছি। আমাদের অবশ্যই পঠন–পাঠনের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। সত্য জানতে হলে, জাতীয় সমস্যাগুলো বুঝতে হলে, ঘটনাবলীর প্রকৃত মর্মার্থ বুঝতে হলে আমাদের নিবিড় পাঠাভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। বিদেশী ধর্ম বিশেষত কোরান, হাদিস, বাইবেল পড়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভারতীয় ইতিহাসকে গভীরভাবে অধ্যয়ন করা ও সনাতন ধর্মীয় সাহিত্য চর্চাও আমাদের অবশ্যই করতে হবে।
এই মহান কাজটি সম্ভব হচ্ছে দিল্লির কিছু পণ্ডিত যেমন–রাম স্বরূপ, সীতারাম গোয়েল, অরুণ সুরি এবং আরও অন্যান্যদের নির্দেশের জন্য। অত্যন্ত উচ্চমানের পুস্তকগুলি এই সমস্ত পণ্ডিতদের দ্বারা প্রকাশিত হচ্ছে ভয়েস অফ ইন্ডিয়ার পৃষ্ঠপোষকতায়। এই বইগুলি আমাদের জাতীয় চেতনাবোধকে অবশ্যই জাগিয়ে তুলবে। সকলের কাছে আমার বিনীত অনুরোধ, এই বইগুলো আপনাদের সকলের পড়া শুরু করা উচিত যাতে আপনাদের জাতীয় দৃষ্টিভঙ্গি স্বচ্ছ হতে পারে। আমি নিশ্চিতরূপে বলতে পারি, আপনি যদি একবার এই গভীর গবেষণালব্ধ ও সম্পূর্ণ তথ্য–সম্বলিত বইগুলি পড়েন, আপনার মনে হবে কেউ যেন আপনার চোখের সামনে থেকে পর্দা সরিয়ে দিয়েছে।
১.২০ হিন্দুদের জাতীয় লক্ষ্য
সবশেষে, আমার বক্তব্যের সারমর্ম হিসেবে বলতে পারি, এখন আমাদের হিন্দুদের একটি কাজ অবশিষ্ট আছে : আমাদের স্বাতন্ত্র্য রক্ষা করতে হবে। যাঁরা বলেন আমাদের হিন্দু রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতেই হবে, তাঁরা আসলে ভুল শব্দ চয়ন করেন; সঠিক কথা হল–হিন্দু জাতির নিজস্ব স্বাতন্ত্র্য অর্জন করতে হবে। স্বাধীনতার একটি নয়া যুদ্ধ শুরু করতে হবে, হিন্দু জাতিকে দাসত্বের শৃঙ্খল ভেঙ্গে প্রকৃত স্বাধীনতা অর্জন করতে হবে। এটাই আমাদের প্রথম জাতীয় উদ্দেশ্য।
স্বাধীনতা অর্জনের পর আমাদের নিজস্ব জাতীয় রাষ্ট্রের স্থাপন করতে হবে – একটি হিন্দু জাতীয়–রাষ্ট্র। বর্তমান সংবিধানকে পরিত্যাগ করতে হবে এবং নিজস্ব সংবিধান রচনা করতে হবে: তারপর প্রায় সমস্ত আইন ও নীতির পরিবর্তন করে সেই জায়গায় নতুন আইন, নীতি আনতে হবে যা আমাদের জাতির স্বার্থ ও আদর্শকে রক্ষা করবে।
পুরো পৃথিবী এখন জাতি–রাষ্ট্রের ধারণাটিকে গ্রহণ করেছে। প্রতিটি জাতির নিজস্ব নিজেদের ঐতিহ্যবাহী ভূমিতে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার অধিকার আছে, এর প্রতিটি প্রদেশ দেশের আকাঙ্ক্ষাটিকে উপস্থাপিত করবে। এখন এমনকি ছোট ছোট জাতিগুলির নিজস্ব রাষ্ট্র আছে। কিন্তু ভাগ্যের কী পরিহাস ! পৃথিবীর জনসংখ্যার এক–ষষ্ঠমাংশ হওয়ার পরও, সবচেয়ে পুরাতন ও বৃহত্তম জনজাতিগুলির একটি হওয়া সত্ত্বেও আমরা এখনো হিন্দুরা জাতি–রাষ্ট্র স্থাপন করতে পারিনি। বর্তমানে ভারত রাষ্ট্র একটি জাতি–বিরুদ্ধ, হিন্দু–বিরুদ্ধ দেশ। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত আমরা প্রত্যেকেই একে নিজেদের বলে ভুল করছি।
তাই স্বাধীনতা পাকাপাকিভাবে অর্জন করার পর হিন্দুদের দ্বিতীয় জাতীয় উদ্দেশ্য হল ভারতে একটি হিন্দু রাজ্যের নির্মাণ, যেটি হবে আমাদের জাতি–রাষ্ট্র; এমন একটি রাজ্য যা হিন্দু আদর্শের ভাবাদর্শ দ্বারা নির্মিত হবে, এটির সমস্ত ক্রিয়াকলাপ হিন্দু মূল্যবোধ অনুসারে হবে; যেটি সর্বতোভাবে হিন্দুদের পুনরুত্থানের উদ্দেশ্যে কাজ করবে। যে শুধুমাত্র ভারতেই নয়, পুরো পৃথিবীতে হিন্দুদের স্বার্থকে রক্ষা করবে; হিন্দু সংস্কৃতিকে বিদেশের মঞ্চে তুলে ধরবে, হিন্দু তত্ত্বকে পৃথিবীর বুকে প্রসারিত ও প্রচারিত করবে যা আমাদের আগামী প্রজন্মের মধ্যে হিন্দুত্ব নিয়ে গর্ব ও আত্মসম্মান তৈরী করবে; যে রাজ্য বিভাজন, বিদ্বেষ, উঁচু–নীচু এবং আমরা–তোমরা, জাত–বিচারের মনোভাব হিন্দুত্বের মধ্যে আনবে না; যা হিন্দু সমাজে বৃহত্তর রূপে সংযোগ, সৌহার্দ্য এবং যৌথ মনোভাবনার উপর কাজ করবে; যেটি শুধুমাত্র সনাতন ধর্মকে উচ্চ স্থানেই রাখবে না বরং এর মূল্যবোধকে রক্ষা করবে; এর গরিমা বিশ্ব দরবারে স্থাপন করবে ও অনুপ্রেরণার উৎস করে তুলবে; যা হিন্দু কলা ও সাহিত্যকে উন্নত করবে যা কোনো লুণ্ঠনকারীর সংস্কৃতির দাসত্বকে নিজেদের ঐতিহ্য বলবে না এবং হিন্দুদের সম্মান রক্ষাকে নিজের পরম কর্তব্য বলে মনে করবে।
এমন একটি রাষ্ট্র আমাদের মাতৃভূমিতে নির্মাণ করতে হবে। স্বামী বিবেকানন্দ অক্লান্তভাবে আমাদের মনে করিয়েছেন যে সনাতন ধর্মের মহিমা আমাদের অনুপ্রেরণা ও আত্মবিশ্বাস প্রদান করে যে আমরা হিন্দুরা পৃথিবীর কোনো জাতির তুলনায় কোনো অংশে কম নয়। এমনটাই আমাদের নিজেদের চেষ্টা, নিজেদের জাতি–রাষ্ট্রের দ্বারা মহান হিন্দু রাষ্ট্রের স্থাপনের মাধ্যমে প্রমাণ করতে হবে।
বন্ধুগণ, আমার মতে এটাই হিন্দু রাষ্ট্রের সঠিক সত্য ও সঠিক ধারণা; বন্ধুগণ আগামী দিনগুলিতে আমাদের পবিত্র কর্তব্য পালন করার সময় এসে গেছে।
বন্দে মাতরম্ ।
(ক্রমশঃ)
পাদটীকা
৪ সেই প্রস্তাব কার্যকরী হয়েছে।
৫ হিন্দুরা কেবল ‘সংখ্যালঘু সম্প্রদায়’–কে আরো সমৃদ্ধ করে তোলার জন্য কর দিতে বাধ্য হয়।
৬ ১৯৯৪ সালের নভেম্বরের লখনৌ–এর নওড়া মহাবিদ্যালয়ে ঘটে চলা পরপর ঘটনাগুলি প্রমাণ করে যে, ভারতীয় সরকার আদতে স্বদেশে বহিরাগত গোয়েন্দাদের কার্যক্রমে ইন্ধন জোগায়। যখন আই এস আই এর একজন বলিষ্ঠ দূত আবু বাকরকে কলেজ হোস্টেল থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, যেটাকে তিনি গত আট বছর ধরে সারা ভারতব্যাপী সন্ত্রাস ও বিধ্বংসী কার্যকলাপ পরিচালনা করার জন্য গোপন ডেরা হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন, তখন ভারত সরকার অতি সত্বর এতে হস্তক্ষেপ করে এবং তাকে পালিয়ে যেতে দেয়। ভারত সরকার এই গ্রেপ্তারের জন্য মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষের কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করেন তাঁকে আশ্বস্ত করেন যে ভবিষ্যতে তাঁর প্রতিষ্ঠানে এরূপ কোনো গ্রেপ্তারির ঘটনা ঘটবে না। তাঁরা উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করেছিলেন এবং ভারতীয় গোয়েন্দা বিভাগের যে আধিকারিকেরা ও উত্তরপ্রদেশের পুলিশেরা এই কার্যে যুক্ত ছিলেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কঠিন ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
৭ সম্প্রতি এরকম আরো কিছু বিচার সামনে এসেছে যেখানে এই একই রকম বিধিব্যবস্থা লক্ষ্য করা যায়। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল – অযোধ্যাকাণ্ডে ও পরিচয়পত্র সংক্রান্ত প্রশ্নে সর্বোচ্চ ন্যায়ালয়ের বিচার।
আভাস চ্যাটার্জী