শিক্ষাই নেয়নি কেন্দ্র, করোনার প্রথম ঢেউয়ের পর দেশে কমেছে আইসিইউ, অক্সিজেন যুক্ত শয্যার সংখ্যা

গত ৪ দিন ধরে ভারতে দৈনিক করোনা সংক্রমণ ৪ লক্ষের বেশি। দৈনিক মৃত্যুও ৪ হাজার পেরিয়েছে। প্রতি দিন হাসপাতালে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। আর সেই সঙ্গে বাড়ছে আইসিইউ ও অক্সিজেন যুক্ত শয্যার চাহিদা। শয্যার অভাবে অনেক রোগীকে ভর্তি নিতে পারছে না হাসপাতালগুলি, এমন খবর পাওয়া যাচ্ছে প্রায়ই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দ্রুত সমস্যার সমাধান করতে না পারলে দেশের স্বাস্থ্য পরিষেবা ভেঙে পড়তে পারে। কিন্তু কেন এই সমস্যা? সরকারি তথ্যই বলছে, করোনার প্রথম তরঙ্গের পরে দেশে আইসিইউ ও অক্সিজেন যুক্ত শয্যার সংখ্যা যা ছিল, দ্বিতীয় তরঙ্গের আগে তা অনেকটাই কমেছে। তার ফলেই এই সমস্যায় পড়তে হচ্ছে রোগীদের।

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, গত বছর ২২ সেপ্টেম্বর ভারতে অক্সিজেন যুক্ত শয্যার সংখ্যা ছিল ২ লক্ষ ৪৭ হাজার ৯৭২। চলতি বছর ২৮ জানুয়ারি তা কমে হয়েছে ১ লক্ষ ৫৭ হাজার ৩৪৪। অর্থাৎ অক্সিজেন যুক্ত শয্যা ৩৬.৫৪ শতাংশ কমেছে। গত বছর ২২ সেপ্টেম্বর ভারতে আইসিইউ শয্যার সংখ্যা ছিল ৬৬ হাজার ৬৩৮। চলতি বছর ২৮ জানুয়ারি তা কমে হয়েছে ৩৬ হাজার ৮। অর্থাৎ আইসিইউ শয্যা ৪৬ শতাংশ কমেছে। তথ্য বলছে, এই সময়ের মধ্যে কমেছে ভেন্টিলেটরের সংখ্যাও। গত বছর ২২ সেপ্টেম্বর ভারতে ভেন্টিলেটরের সংখ্যা ছিল ৩৩ হাজার ২৪। চলতি বছর ২৮ জানুয়ারি তা কমে হয়েছে ২৩ হাজার ৬১৮। অর্থাৎ ভেন্টিলেটরের সংখ্যা ২৮ শতাংশ কমেছে।

রাজ্য ভিত্তিক পরিসংখ্যান দেখলে দেখা যাচ্ছে ছোট রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলি করোনার প্রথম ও দ্বিতীয় তরঙ্গের মাঝের সময়ে নিজেদের চিকিৎসা পরিষেবা উন্নত করার বা এক রাখার চেষ্টা করেছে। কিন্তু মহারাষ্ট্র, উত্তরপ্রদেশ, দিল্লির ক্ষেত্রে এই সময়ের মধ্যে চিকিৎসা পরিষেবায় ঢিলেমি লক্ষ্য করা গেছে। আইসিইউ শয্যা, অক্সিজেন যুক্ত শয্যা, ভেন্টিলেটর সব কিছুই কমেছে। তার ফলেই এই সমস্যার মধ্যে পড়তে হচ্ছে।

কিন্তু কেন এ ভাবে পরিষেবা কমল? গত বছর করোনার প্রথম তরঙ্গ আসার পরে দেশ জুড়ে চিকিৎসা পরিষেবা উন্নত করার কাজ শুরু হয়। শুধুমাত্র হাসপাতালে নয়, একাধিক সরকারি অফিস, ট্রেন, সেনাবাহিনীর ক্যাম্প, এমনকি বেসরকারি অফিসকেও হাসপাতালে পরিণত করে করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা হয়। তার ফলেই কয়েক মাসের মধ্যে ভারতে আইসিইউ, অক্সিজেন যুক্ত শয্যা ও ভেন্টিলেটরের সংখ্যা এতটা বাড়ে। কিন্তু সংক্রমণ কমতেই সেই সব পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়। তার ফলেই বর্তমানে এই ঘাটতি দেখা যাচ্ছে।


তবে কি সরকারের কাছে কোনও তথ্য ছিল না যে করোনার দ্বিতীয় তরঙ্গ আসতে চলেছে। কেন্দ্রের কোভিড বিশেষজ্ঞ কমিটি থেকে শুরু করে চিকিৎসক মহল আগে থেকেই এই তরঙ্গের ইঙ্গিত দিয়েছিল। কিন্তু তার পরেও বিষয়টিকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়নি বলে কেন্দ্রে বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে বার বার। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বার বার বলেছেন, করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে গোটা দুনিয়ার সামনে উদাহরণ হয়ে থাকবে ভারত। অন্য দিকে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধন বলেছেন, করোনা এ বার ফেরার পথে। আমরা করোনাকে হারিয়ে দিয়েছি। এই সব মন্তব্য থেকেই পরিষ্কার, সরকার ভেবেছিল ভারতে সংক্রমণ আর বাড়বে না।

এই প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারের মুখ্য বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা কে বিজয়রাঘবন সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘‘প্রথম তরঙ্গের সময় দেশের চিকিৎসা পরিষেবা উন্নত করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ করেছিল কেন্দ্রীয় সরকার। কিন্তু সংক্রমণ কমতে শুরু করায় সেই কাজে ঢিলেমি দেখা যায়। তার জন্যই এই অবস্থা।’’

দ্বিতীয় তরঙ্গের ধাক্কা কি মোকাবিলা করা সম্ভব হবে। এই প্রশ্নের জবাবে বিজয়রাঘবন বলেন, ‘‘ভারতে যে হারে সংক্রমণ বাড়ছে ও বর্তমানে যে পরিষেবা রয়েছে তাতে সংক্রমণের মোকাবিলা করা খুব কঠিন।’’ পুরো দমে চেষ্টা করলেও অনেক সময় লাগবে বলেই জানিয়েছেন তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.