করোনা আক্রান্ত হয়ে চলে গেলেন যৌনকর্মীদের সংগঠন দুর্বার মহিলা সমিতির প্রতিষ্ঠাতা চিকিৎসক স্মরজিৎ জানা। অন্তত ৬৫ হাজার যৌনকর্মীকে নতুন জীবন দিয়েছিলেন স্মরজিৎ জানা। যৌনকর্মীদের শিশুরা যাতে সুন্দর ভবিষ্যত পায় তা নিশ্চিত করতে কাজ করেছেন আজীবন। ২০২০ সাল থেকে নিরলস কাজ করে গিয়েছেন সোনাগাছি সহ-কলকাতার অন্যান্য যৌনপল্লিতে করোনা সচেতনতা গড়ার। স্মরজিৎবাবুর মৃত্যুতে এই রাজ্যে অজুত যৌনকর্মীরা কার্যত অভিভাবক হারালেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ও তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
মুখ্যমন্ত্রী ট্যুইটারে লেখেন, “স্মরজিৎ জানার মৃত্যুত আমি শোকাহত। যৌনকর্মীদের কোঅপারেটি গড়ে তুলে তিনি প্রত্যেক যৌনকর্মীকে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট করে দিয়েছিলেন এবং প্রান্তিক মহিলাদের নানা সামাজিক সুবিধের মধ্যে নিয়ে এসেছিলেন। তাঁর পরিবার ও অনুগামীদের জন্য সমবেদনা।”
১৯৯২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে স্মরজিৎ জানার প্রচেষ্টায় গড়ে ওঠে দুর্বার। প্রাথমিক ভাবে নিষিদ্ধপল্লিতে নাবালিকা পাচার, যৌনকর্মীদের অধিকার দাবিদাওয়া বুঝে নেওয়ার লড়াই শুরু তার হাত ধরেই। পাশাপাশি ছিল মারণ ব্যধি এইডস-এর বিরুদ্ধে লড়াই। যৌনকর্মীদের সঞ্চয়, নাগরিকত্বের নথির মতো বিষয়গুলিকে অগ্রাধিকার দিয়ে স্মরজিৎ জানা গোটা দেশের সামনে একটি নজির তৈরি করেছিলেন একথা বললে এতটুকুও অত্যুক্তি হবে না।
যৌনকর্মীদের সন্তানদের মূল স্রোতে নিয়ে আসার জন্য নানা সময়ে নানা অভিনব প্রকল্প নিয়েছেনিলেন স্মরজিৎ জানা ও তাঁর দলবল। ২০১৫ সালে বারুইপুর রামনগরে একটি ফুটবল অ্যাকাডেমি গড়ে তোলেন দুর্বার। সেখানে অনুর্ধ্ব ১৩-১৫ এর ছেলেমেয়েরা খেলার সুযোগ পেত। দুর্বারের তরফে তাঁর নেতৃত্বে ছেলেমেয়েদের স্বাবলম্বী করে তোলার জন্য সারা বছর নানা পরিকল্পনা করা হতো। সোনাগাছিতে সমবায় থেকে দুর্গাপুজো, এসবই শুরু তাঁর হাত ধরে।
মহামারি বিশেষজ্ঞ, জনস্বাস্থ্য আন্দোলনের শরিক স্মরজিৎ জানার খ্যাতি সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছিল। মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়. জন হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়, ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িয়ে থেকে কাজ করেছেন স্মরজিৎ জানা। ১৯ তম বিশ্ব এইডস সম্মেলনে স্মরজিৎ জানা চেয়ারপারসন হিসেবে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তাঁর মৃত্যু এক কথায় জনস্বাস্থ্য আন্দোলন, যৌনকর্মীদের অধিকার রক্ষার আন্দোলনের এক অপূরণীয় ক্ষতি।