কোভিডের থেকে রক্ষাকবচ হিসেবে দেশের ৩ শতাংশ মানুষেরও সম্পূর্ণ টিকাকরণ (দু’টি ডোজ়) হয়নি এখনও। অথচ এরই মধ্যে লাফিয়ে-লাফিয়ে কমছে টিকাকরণের হার। এত দিন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের কর্তারা দাবি করছিলেন, প্রতিষেধকের অভাব নেই। রাজ্যে-রাজ্যে লকডাউন কিংবা বিধিনিষেধের কারণেই টিকাকরণ কম হচ্ছে। কিন্তু তার হার যে কমছে এবং প্রতিষেধকের অভাবই যে তার অন্যতম কারণ, সে কথা বৃহস্পতিবার কার্যত মেনে নিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
এ দিন এ বিষয়ে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ, টিকাকরণের গতি কমলে চলবে না। রাজ্য স্তরে লকডাউন সত্ত্বেও তা চালিয়ে যেতে হবে। কোভিড রোগীর সংখ্যা দ্রুত বাড়তে থাকায় স্বাস্থ্যকর্মীর অভাব দেখা দিয়েছে। সেই সূত্রে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ, টিকাকরণের কাজে নিযুক্ত স্বাস্থ্যকর্মীদের অন্যত্র সরানো চলবে না।
আজ প্রধানমন্ত্রী কোভিড মোকাবিলার বিষয়ে কেন্দ্রের শীর্ষ আমলাদের সঙ্গে বৈঠক করেন।প্রতিষেধকের অভাবের প্রেক্ষিতে আগামী কয়েক মাসে টিকার উৎপাদন কী ভাবে বাড়ানো হবে, তার রূপরেখা নিয়েও বৈঠকে পর্যালোচনা হয়।
এরই মধ্যে সুপ্রিম কোর্ট কেন্দ্রকে বলেছে, তৃতীয় ঢেউয়ে বড়দের পাশাপাশি আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা ছোটদেরও। সে ক্ষেত্রে তাদের কাউকে হাসপাতালে যেতে হলে, প্রতিষেধক দিতে হবে বাবা-মাকেও। তাই তার জন্য পরিকল্পনা মাফিক বন্দোবস্ত করা জরুরি। অনেকের প্রশ্ন, যেখানে ১৮ থেকে ৪৪ বছর বয়সিরাই টিকা পেতে নাজেহাল, সেখানে দ্রুত ওই প্রতিষেধকের ব্যবস্থা কোথা থেকে করবে মোদী সরকার?
কংগ্রেসের অভিযোগ, ঠিক সময়ে মোদী সরকার কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ সামলানোর প্রস্তুতি নেয়নি। এখন প্রধানমন্ত্রীর ভাবমূর্তি বাঁচানোর জন্য এ সব লোক দেখানো বৈঠক হচ্ছে। ঠিক সময়ে প্রস্তুতি নিলে অক্সিজেন, আইসিইউ বেডের অভাবে এত মানুষের মৃত্যু হত না। যথেষ্ট টিকাকরণ হয়ে থাকলেও সংক্রমণের হার কম থাকত। কংগ্রেস মুখপাত্র সুপ্রিয়া শ্রীনতে বলেন, “দেশের মানুষ যখন অতিমারির সঙ্গে লড়ছেন, তখন প্রধানমন্ত্রী ১৩,৪৫০ কোটি টাকার বাড়িতে গৃহপ্রবেশের
প্রস্তুতি নিচ্ছেন।”
তাৎপর্যপূর্ণ হল, প্রধানমন্ত্রী এত দিন মূলত একাই আমলাদের সঙ্গে বৈঠক করতেন। আজ কোভিড পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠকে রাজনাথ সিংহ, অমিত শাহ, নির্মলা সীতারামন, হর্ষ বর্ধন, পীযূষ গয়াল, মনসুখ মাণ্ডভিয়ার মতো মন্ত্রীরাও হাজির ছিলেন। মোদী সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ডাক্তার-নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী ও ফ্রন্টলাইন ওয়ার্কার বাদে কেন্দ্র শুধুমাত্র ৪৫ বছরের বেশি বয়সিদেরই টিকাকরণের দায়িত্ব নেবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বুধবার পর্যন্ত এই গোষ্ঠীরও মাত্র ৩.১৪ কোটি মানুষকে দু’ডোজ় প্রতিষেধক দেওয়া হয়েছে। যা দেশের জনসংখ্যার ৩ শতাংশেরও কম। প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে অবশ্য আমলাদের দাবি, ৪৫ বছরের বেশি বয়সিদের মধ্যে প্রায় ৩১ শতাংশকে অন্তত এক ডোজ় টিকা দেওয়া হয়েছে।
গত ১ মে থেকে ১৮-৪৪ বছর বয়সিদের জন্য প্রতিষেধকের ছাড়পত্র দেওয়া হলেও সিংহভাগ রাজ্যই এখনও প্রতিষেধকের অভাবে ৪৫-অনূর্ধ্বদের টিকাকরণ শুরু করতে পারেনি। স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, ৪৫ বছরের বেশি বয়সি ও স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য টিকার অভাব নেই। ১৭.৭ কোটি টিকার ডোজ় রাজ্যগুলিকে পাঠানো হয়েছে। রাজ্যগুলির কাছে এখনও ৮৯ লক্ষ টিকা রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের পর্যালোচনার তথ্য অনুযায়ী, দেশের ১২টি রাজ্যে এখন ১ লক্ষের বেশি কোভিডের অ্যাক্টিভ কেস রয়েছে। যে সব রাজ্যে ১০০ জনের কোভিড পরীক্ষা হলে, ১০ জনের রিপোর্ট পজিটিভ আসছে এবং আইসিইউ বা অক্সিজেন-সহ বেডের ৬০ শতাংশই ভর্তি, সেখানে সার্বিক লকডাউন জারির পরামর্শও দেওয়া হয়েছে।