বিধানসভা নির্বাচনে ভরাডুবির পর আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কায় আত্মগোপন করেছেন স্থানীয় বিজেপি নেতারা। তাই ভোট পরবর্তী রাজনৈতিক হিংসায় পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরে নিহত এক মহিলার দেহ ৩ দিন ধরে পড়ে রয়েছে হাসপাতালের মর্গে।
জামালপুরের নবগ্রাম এলাকায় রাজনৈতিক সংঘর্ষে নিহত কাকলি ক্ষেত্রপাল (৪৭) নামে ওই মহিলা স্থানীয় বিজেপি কর্মী আশিস ক্ষেত্রপালের মা। ভোট পরবর্তী সংঘর্ষে গ্রেফতারির ভয়ে আশিস-সহ পরিবারের অন্য সদস্যেরা গা ঢাকা দেওয়ায় তাঁর দেহ বর্ধমান হাসপাতালের মর্গে পড়ে রয়েছে। নেতাদের এমন আচরণে হতাশ বিজেপি-র নিচুতলার কর্মী-সমর্থকদের একাংশ।
সোমবার সকালে নবগ্রামের ওড়িশাপাড়ায় সংঘর্ষের ঘটনার বিজেপি-র মহিলা সমর্থক কাকলির পাশাপাশি তৃণমূলের দুই কর্মী সাজু শা ওরফে শাজাহান (৩৮) এবং বিভাস বাগের মৃত্যু হয়েছিল। জখম হন তৃণমূলের মিঠু রহমান এবং কাকলির স্বামী অনিল এবং দেওর মানু ওরফে রূপো ক্ষেত্রপাল।
জামালপুর হাসপাতালে কর্মীদের কথায় জানা গিয়েছে, কাকলির দেহ সোমবার দুপুর থেকে কয়েক ঘণ্টা জামালপুর হাসপাতালে ছিল। কিন্তু তাঁর পরিবারের কেউ হাসপাতালে ছিলেন না । পরে পুলিশ দেহ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। এরপর ময়নাতদন্তের জন্য বর্ধমান হাসপাতাল পুলিশ মর্গে পাঠায়। এসডিপিও (বর্ধমান দক্ষিণ ) আমিনুল ইসলাম খান জানিয়েছেন, থানা, হাসপাতাল বা মর্গ কোথাওই দেখা মেলেনি পরিবারের সদস্য বা বিজেপি নেতাদের। পুলিশ সূত্রের খবর, কাকলির দেহের শেষকৃত্য করার জন্য, হুগলির বাসিন্দা তাঁর মেয়ে ও জামাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে।
তবে ঘটনার কথা জানার পরে সোমবারই জামালপুরের তৃণমূলের নেতারা নবগ্রামে হাজির হয়েছিলেন। পরে নিহত দুই তৃণমূল কর্মীর বাড়িতেও তাঁরা যান। এমনকি, ময়নাতদন্ত শেষে নিহতদের বাড়িতে দেহ ফেরার পর শেষকৃত্যেও তৃণমূলের নেতারা হাজির ছিলেন।
এই বিষয়ে জেলা বিজেপি সভাপতি অভিজিৎ তার সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। জামালপুর বিধানসভার বিজেপি আহ্বায়ক জিতেন কাল বুধবার সকালে বলেন, ‘‘আমি কোথাও যাইনি। নিহতের পরিবারের পাশে গিয়ে দাঁড়ানোর জন্য আমি মণ্ডল সভাপতিদের বারবার বলেছি। কিন্তু তারা না গেলে কী আর করার আছে!’’ সেই সঙ্গে তিনি জানান জামালপুরের সিপিএম নেতা সমর ঘোষ তাঁকে ফোন করে জানিয়েছিলেন, তাঁরা মর্গ থেকে কাকলির দেহ আনতে যাবেন। তবে সিপিএম নেতারা বুধবার দেহ আনতে গেছেন কি না, তা তিনি জানেন না।
জামালপুর বিধানসভায় পরাজিত বিজেপি প্রার্থী বলরাম ব্যাপারী জানান, নিহতের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর জন্যে তিনি এলাকার মণ্ডল সভাপতি তপন বাছারকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি গিয়েছিলেন কি না, তা তিনি জানেন না। সিপিএম নেতা সমর বুধবার দুপুরে দাবি করেন, “নিহত কাকলি ক্ষেত্রপাল সিপিএমের প্রাথমিক সদস্য ছিলেন। আমরা তাঁর দেহ বর্ধমানের মর্গ থেকে বাড়িতে আনানোর চেষ্টা চালাচ্ছি।’’