উষসী সেনগুপ্তকে হেনস্থার ঘটনায় সাসপেন্ড এক পুলিশ অফিসার, দু’জনকে শো-কজ

রাতের শহরে হেনস্থার ঘটনায় পুলিশি গাফিলতির অভিযোগ তুলেছিলেন প্রাক্তন মিস ইন্ডিয়া ইউনিভার্স উষসী সেনগুপ্ত। তাঁর অভিযোগ ছিল, ময়দান থানার পুলিশের কাছে তিনি সাহায্য চাইলে, সেই থানায় বিষয় নয় বলে এড়িয়ে যাওয়া হয়। সে দিন রাতেই ময়দান, ভবানীপুর ও চারু মার্কেট থানায় বারে বারে হয়রানি শিকার হতে হয় তাঁকে। তাঁর অভিযোগ খতিয়ে দেখে বুধবার সন্ধেয় বরখাস্ত করা হয় চারু মার্কেট থানার সাব ইনস্পেক্টর পীযুষ কুমার বলকে। পাশাপাশি, শো-কজ করা হয় ময়দান থানার সহকারী সাব ইনস্পেক্টর পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও ভবানীপুর থানার সাব ইনস্পেক্টর মেনন মজুমদারকে।

উষসী সেনগুপ্তকে হেনস্থার ঘটনায় ইতিমধ্যেই সাত জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ধৃতেরা হল— শেখ রাহিত, ফারদিন খান, শেখ সাবির আলি, শেখ গনি, শেখ ইমরান আলি, শেখ ওয়াসিম, আতিফ খান। চারু মার্কেট থানার পুলিশ জানিয়েছে, উষসীর অভিযোগ পাওয়ার পরেই ওই এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখা হয়। তার পরেই সাত জনকে পাকড়াও করে পুলিশ। ধৃতরা প্রায় সকলেই যাদবপুর এলাকার বাসিন্দা। বয়স ২০ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে।

ঊষসীর অভিযোগের ভিত্তিতে সেই রাতে পুলিশের কোনও গাফিলতি ছিল কি না তা খতিয়ে দেখতে গঠিত হয় তদন্ত কমিটি। চারু মার্কেট থানায় ঊষসী ও তাঁর উবারের চালকের যে বয়ান রেকর্ড করা হয়েছিল, তা শুনে এবং ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

সোমবার মাঝরাতে কাজ সেরে বাড়ি ফেরার সময় একদল যুবকের কাছে হেনস্থা হওয়ার অভিযোগ জানিয়েছিলেন প্রাক্তন মিস ইন্ডিয়া ইউনিভার্স, মডেল-অভিনেত্রী উষসী সেনগুপ্ত। তাঁর অভিযোগ ছিল এক সহকর্মীকে নিয়ে যে উবারে চেপে তিনি বাড়ি ফিরছিলেন সেটিকে ধাক্কা মারে জনা কয়েক বাইক আরোহী। চালককে গাড়ি থেকে টেনে হিঁচড়ে নামিয়ে বেধড়ক মারধর করে তারা, পাশাপাশি অসভ্যতা করে তাঁর সঙ্গেও। হাত থেকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা হয় মোবাইল। উষসী অভিযোগ করেন, ময়দান থানার পুলিশের কাছে তিনি সাহায্য চাইলে, সেই থানায় বিষয় নয় বলে এড়িয়ে যাওয়া হয়। সে দিন রাতেই ময়দান, ভবানীপুর ও চারু মার্কেট থানায় বারে বারে হয়রানি শিকার হতে হয় বলেও অভিযোগ করেন উষসী।

উষসীর অভিযোগ ছিল, এলগিন রোডের কাছে যে ছেলেগুলো তাঁর উবার চালককে মারধর করেছিল, তাঁকেও হেনস্থা করেছিল, তাদের কারো মাথাতেই হেলমেট ছিল না। এমনকি পুলিশকে ধাক্কা মেরে তারা সরিয়ে দেয়। পুলিশ চলে গেলে ফের তাঁদের গাড়িকে অনুসরণ করা শুরু করে। উষসীর দাবি, ময়দান পুলিশ তখনই কড়া ব্যবস্থা নিলে ফের ওই যুবকরা উবারকে অনুসরণ করে অসভ্যতা করার সুযোগ পেত না।

১৭ সেকেন্ডের একটি ভিডিও করেছিলেন উষসী, যাতে দেখা গিয়েছিল কয়েকজন যুবক উবারের কাঁচের জানলায় ধাক্কা মারছে। অভিনেত্রীর কথায়, “একজনেরও মাথায় হেলমেট ছিল না। বাইক থেকে নেমে তারা আমার সঙ্গে অসভ্যতা করা শুরু করে। আমাকে ভিডিও তুলতে বাধা দেয়।”

গোটা ঘটনাতেই পুলিশের ভূমিকা নিয়ে অভিযোগ তুলেছেন উষসী। তাঁর দাবি, মঙ্গলবার সকালে চারু মার্কেট থানাতে অভিযোগ লেখাতে গিয়েও তাঁকে হেনস্থা হতে হয়। চারু মার্কেট থানার পুলিশ জানিয়ে দেয় এই কেস ভবানীপুর থানার এক্তিয়ারে পড়ে। সুতরাং ব্যবস্থা নেবেন তাঁরাই। ফেসবুকে উষসী লিখেছেন,  ‘‘অনেক তর্কাতর্কির পর চারু মার্কেট থানা একটি এফআইআর নেয়। কিন্তু উবার চালক আলাদা অভিযোগ দায়ের করতে চাইলে পুলিশ মানা করে দেয়। পুলিশের দাবি ছিল, একই অভিযোগে দু’টো এফআইআর নেওয়া আইন বিরুদ্ধ।’’

ফেসবুক পোস্টে দীর্ঘ বিবৃতি দিয়ে সোমবার রাতের ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন উষসী। সেই সঙ্গে প্রশ্ন তোলেন রাতের শহরে মহিলাদের নিরাপত্তা নিয়েও। পুলিশি গাফিলতির অভিযোগও উঠে আসে তাঁর ফেসবুক পোস্টে। এর পরেই নিজেদের টুইটার হ্যান্ডেলে পোস্ট করে কলকাতা পুলিশ জানায়, সমস্ত অভিযোগ গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে। অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে তদন্ত শুরু হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.