বাংলা সিনেমার তুখোড় গল্প বলিয়ে অরবিন্দ মুখোপাধ্যায় জন্মে ছিলেন আজ থেকে ঠিক একশ বছর আগে ১৯১৯ সালের ১৮ জুন। দিনের ঠিক কোন সময় তিনি পৃথিবীর প্রথম আলো দেখার সুযোগ পেয়েছিলেন সে তথ্য জানা না থাকলেও তাঁর জন্মসালটি যে ছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তির এক বছর পরেই সে তথ্যটি নির্ভুল। ম্যাট্রিক পাশ করে তিনি যে বছর শান্তিনিকেতনে পড়তে যান ঠিক সেই বছরই শুরু হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। ১৯৪২ সালে শান্তিনিকেতন ছেড়ে ডাক্তারি পড়তে যান বাঁকুড়া মেডিকেল কলেজে। সে বছরই ভারত জুড়ে চলছে বৃটিশদের বিরুদ্ধে ”ভারত ছাড়” আন্দোলন। ১৯৪৫ সালে অগ্রজ ড. বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়ের (বনফুল) উৎসাহে চলচ্চিত্রে শিল্পে যোগ দেন যে সময় সারা ভারত উত্তাল স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষায়। নিজের পরিচালনায় প্রথম ছবি ১৯৫৯ সালে, বনফুলের গল্প নিয়ে ‘কিছুক্ষণ’।
প্রবল অস্থির সময় অরবিন্দ মুখোপাধ্যায়ের জন্ম ও বেড়ে ওঠা। কিন্তু ওনার ছবি অস্থিরতা মুক্ত। দীনতা বা ভাঙনের কথা উনি শোনাতে চাননি, বরং ক্রমাগত ধ্বস্ত হওয়া মধ্যবিত্তের জীবনে উনি আনতে চেয়েছেন কিছুক্ষণের আরাম। নায়িকার ভূমিকায়, পিতাপুত্র, অজস্র ধন্যবাদ, নতুন জীবন, ধন্যি মেয়ে, মৌচাক, বর্ণচোরা, মন্ত্রমুগ্ধ, হুলুস্থুলু, কেনারাম বেচারাম সব ছবির মধ্যেই একটি সাধারণ বার্তা রয়েছে– মধ্যবিত্তের আপাত বিবর্ণ যাপনেও রয়েছে অজস্র রঙিন অবসর, রয়েছে অনেক কৌতুকাবহ মুহূর্ত। ‘ক্ল্যাসিক’ চলচ্চিত্র বানানোর চেষ্টা করেননি বলেই অরবিন্দ মুখোপাধ্যায়ের কোনও ভান ছিল না। সিনেমা যে একটি বিনোদন মাধ্যম এবং গল্পের টানেই যে দর্শক হলমুখী হন এই সরল সত্যের প্রতি অনুগত থেকে তিনি ছবি বানিয়েছেন আজীবন। কোনও আন্তর্জাতিক পুরস্কার না পেলেও তিনি পুরস্কৃত হয়েছেন দর্শকের আনুকুল্যে। কিন্তু তার জন্য নির্মাণের ক্ষেত্রে কোনও অপরিচ্ছন্নতাকে প্রশ্রয় দেননি বরং অভিনবত্বে চমকে দিয়েছেন অনেককেই। যেমন নিশিপদ্ম বা অমরপ্রেম দেখে এ কথা বিশ্বাস করা কঠিন ছিল যে মূল কাহিনীতে (বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়) উত্তমকুমার বা রাজেশ খান্নার অভিনীত চরিত্রটিই ছিল না। সেটি সিনেমাতে নিয়ে এসেছিলেন নিশিপদ্ম’র পরিচালক, অমরপ্রেম’র চিত্রনাট্যকার অরবিন্দ মুখোপাধ্যায়।
বাংলা চলচ্চিত্র তাঁর কাছে ঋণী থাকবে দু’জন অসাধারণ অভিনেতাকে আবিষ্কার করার জন্য। রবি ঘোষ ও খরাজ মুখোপাধ্যায়– দুই প্রজন্মের অন্যতম দুই সেরা অভিনেতা চলচ্চিত্রে প্রবেশ করেছেন অরবিন্দ মুখোপাধ্যায়ের হাত ধরে। শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায়কে নায়ক, জয়া ভাদুড়ী (বচ্চন), দেবশ্রী রায়কে নায়িকা করার কৃতিত্বও অরবিন্দ মুখোপাধ্যায়ের। তাঁর পরিচালিত চলচ্চিত্রের গান ‘হিট’ করবে এটি প্রায় স্বতঃসিদ্ধ নিয়মে পরিণত করে দিয়েছিলেন এই জনপ্রিয় সিনেমার পরিচালক।
আজ বিকেল পাঁচটায় নন্দন ও পরিচালকের পুত্রদ্বয় অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় ও সর্বজিৎ মুখোপাধ্যায়ের যৌথ উদ্যোগে দেখানো হল অরবিন্দ মুখোপাধ্যায় পরিচালিত অগ্নীশ্বর। কাহিনী বনফুল, শ্রেষ্ঠাংশে উত্তম কুমার, মাধবী মুখোপাধ্যায়, অসিতবরণ।