বামপন্থীদের একমাত্র গর্ব করে বলার জিনিস হল তারা নাকি বছরের পর বছর স্বচ্ছতার সাথে SSC পরীক্ষা নিত। এছাড়া 34 বছর ধরে আর যা করেছে সবই অন্যায় কাজ। কিন্তু বছর বছর SSC পরীক্ষা নেওয়ার ব্যাপারটাও অর্ধ সত্য। আসল কথা হল SSC র মাধ্যমে স্কুল শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়া চালু হয়েছিল 1997 সালে। অথচ পশ্চিমবঙ্গে বামফ্রন্ট ক্ষমতায় ছিল 1977 সাল থেকে। 1977-97 এই কুড়ি বছরে বামেরা স্কুল শিক্ষক, কলেজ শিক্ষক ও সরকারী দপ্তরে নন গেজেটেড সমস্ত পদে একমাত্র বাম পার্টিকর্মী ছাড়া কাউকে চাকরি দিত না। এসব অনাচার চলত একদম প্রকাশ্যে বুক বাজিয়ে। বিরোধী দলের সমর্থক হরে তো কথাই নেই, এমন কি নিরপেক্ষ অরাজনৈতিক লোকজনকেও মুখের উপর বলে দিত বাম দলে নাম লেখাও নি, বাম পার্টির ঝান্ডা নিয়ে ঘোর নি। তাই তোমার চাকরি হবে না।
এইভাবে বামেরা 1977-97 এই দীর্ঘ কুড়ি বছরে কত মেধাবী ছাত্রছাত্রীর ভবিষ্যত ধ্বংস করে দিয়েছে তার কোন হিসেব নেই। এমন কি সিপিএমের মেম্বার হলেও সরকারী চাকরি হতো না। চাকরি হতো নেতাদের বাড়ী সব সদস্যের, তাঁদের সব আত্মীয়দের এবং পাঁড় সিপিএমদের। ঘটিদের সরকারী চাকরি থেকে অনেক সময় বঞ্চিত করা হতো। সরকারী চাকরি তে অগ্রাধিকার পেতেন বাঙালরা। এক একজন হোমরাচোমরা সিপিএম নেতার বউ, ছেলেমেয়ে, ভাইপো, ভাইঝি, ভাগ্নে ভাগ্নি ইত্যাদি সব আত্মীয় হাসতে হাসতে সরকারী চাকরি পেতেন। সেই সময় যোগ্যতার কোন দাম ছিল না। যাঁরা পার্টির নেতাদের কাছে মেরুদন্ড বিকিয়ে দিতেন একমাত্র তাঁরাই সরকারী চাকরি পেতেন।
এই করে করে স্কুলে স্কুলে দেখা গেল বেশীর ভাগ স্কুল শিক্ষক অযোগ্য, কলেজের বেশীরভাগ লেকচারার অযোগ্য, সরকারী দপ্তরের কর্মীরা অকর্মণ্য, দূর্নীতিগ্রস্ত, ফাঁকিবাজ। বাম সরকারের পক্ষে ক্রমে ক্রমে প্রশাসন চালানো অসম্ভব হয়ে উঠছিল। কারণ সব জায়গায় অযোগ্য পার্টিকর্মী। কোথাও যোগ্য লোক নেই। জ্যোতি বসু প্রকাশ্যেই বলতেন, কাকে কাজ করতে বলব ? চেয়ার টেবিলগুলোকে ? আবার তিনিই শিক্ষক, অধ্যপক ও সরকারী কর্মচারীদের সংগঠনের মিটিং এ গিয়ে বলতেন, কাজ করুন আর না করুন, বামফ্রন্টকে চোখের মনির মতো রক্ষা করুন। দপ্তরের কাজ নয়, শিক্ষকতা নয়, আপনাদের আসল কাজ হল বামফ্রন্টকে বাঁচিয়ে রাখা। আমরা আপনাদের চাকরি দিয়েছি। তাই আপনাদের কর্তব্য হল আমাদের দেখা।
কিন্তু এক সময় বাম সরকারের বোধদয় হয়। তারা বুঝতে পারে রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থার মেরুদন্ড ভেঙ্গে দিয়েছে অযোগ্য শিক্ষকেরা। যাঁরা নিজেরাই কিছু জানেন না তাঁরা আবার ছাত্রছাত্রীদের কি শেখাবেন ! এর ফলে জনগণের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছিল। এটা বুঝে বাম সরকার ঠিক করে এবার থেকে SSC র মাধ্যমে একটু স্বচ্ছভাবে শিক্ষক নিয়োগ করতে হবে। তাহলে সরকারের ভাবমূর্তি কিছুটা হলেও কলঙ্কমুক্ত হবে। 1995-96 নাগাদ যখন খবর আসে যে এবার থেকে SSC চালু হয়ে যাবে তখন পার্টির নেতারা শেষবারের মতো মরণ কামড় দেন। তখন যে যার বউ, ছেলেমেয়ে, আত্মীয় স্বজন যাকে পারল শিক্ষকের চাকরিতে ঢুকিয়ে দিল। কারণ সেটাই ছিল দূর্নীতি করার শেষ সুযোগ। তারা জানত এবার থেকে ছুটকো চুরি চামারি করা সম্ভব হলেও বুক বাজিয়ে ডাকাতির সুযোগ বন্ধ হয়ে গেল।
কাজেই বুঝতেই পারছেন যে বামেরা নিজেদের যে কৃতিত্বটির কথা বলে তার তলায় কতটা কলঙ্ক আর পচা পাঁক রয়েছে। প্রকৃত সত্য জানুন আর ওদের মুখের উপর সেটা বলে দিন।
বামাখ্যাপা