অনেকে ভাবেন পর্যাপ্ত পরিমাণে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করলেই ছাপ্পা ভোট আটকানো সম্ভব। পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা থাকা জরুরী এতে সন্দেহ নেই। কিন্তু বুথের নিরাপত্তার দায়িত্বে প্রচুর কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকলেও ছাপ্পা পড়তে পারে।
আমি নিজে নির্বাচনের কাজ করতে গিয়ে বুঝেছি পুরোপরি ফ্রি এন্ড ফেয়ার নির্বাচন করতে হলে বুথে সমস্ত রাজনৈতিক দলের এজেন্ডদের উপস্থিত থাকা একান্ত আবশ্যক। ঐ এজেন্টদের অবশ্যই বুথের আশেপাশির স্থানীয় মানুষ হতে হবে এবং ভোটদাতাদের প্রায় সবাইকে মোটামুটি চিনতে হবে। তবেই ভোটদাতাদের তাঁরা সনাক্ত করতে পারবেন।
ভোটের সময় নিয়ম হল ভোটদাতা ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করবেন নিরাপত্তা রক্ষীদের ভোটার কার্ড দেখিয়ে। এর পরে তিনি ভোটার কার্ডটি প্রথম পোলিং অফিসারকে দেবেন। প্রথম পোলিং অফিসার দেখবেন ঐ বুথের ভোটারদের লিস্টে ঐ ভোটদাতার নাম আছে কিনা। যদি নাম থেকে থাকে তবে তিনি উচ্চস্বরে ঐ ভোটদাতার নাম ডাকবেন। সামনে বসে থাকা এজেন্টরা নিশ্চিত করবেন যে ভোটার কার্ডে যাঁর নাম আছে এবং যিনি ভোট দিতে এসেছেন তিনি একই ব্যক্তি কিনা।
এমনিতে প্রথম পোলিং অফিসারের উচিত সচিত্র ভোটার কার্ড টির ছবি দেখে ভোটদাতাকে সনাক্ত করা। কিন্তু ভোটার কার্ডে যে ছবি থাকে তা অনেক সময় কুড়ি পঁচিশ বছরের পুরোন হয়ে থাকে। তার উপরে ছবিগুলি অনেক সময়েই খুব একটা পরিস্কার থাকে না। তাই রামের ভোটার কার্ড নিয়ে এসে শ্যাম ভোট দিয়ে যেতেও পারেন। ভোট কর্মীরা অনেক সময় ভুয়ো ভোটারকে চিনতে নাও পারেন। ভুয়ো ভোটার বলতেই পারেন কুড়ি বছর আমি এই রকমই দেখতে ছিলাম। এই ভোটার কার্ডটি আমারই। তখন তাঁকে ভোট দানে বাধা দেওয়া মুশকিল হয়ে যায়।
কিন্তু ভোট কেন্দ্রে একাধিক রাজনৈতিক দলের স্থানীয় এজেন্ট থাকলে রামের ভোটার কার্ড নিয়ে এসে শ্যামের পক্ষে ভোট দিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে না। এই কারণে শাসক দল প্রধান বিরোধী দলের এজেন্টকে আক্রমণ করে, তাকে মেরে ধরে বুথ থেকে তাড়িয়ে দেয়। অনেক সময় তাকে হুমকি দেয় যে এজেন্ট যেন ভোটের দিন বুথে না থাকে। থাকলে পরে তাকে দেখে নেওয়া হবে। কাজেই স্বচ্ছভাবে ভোট করাতে হলে প্রতিটি বুথে যাতে একাধিক রাজনৈতিক দলের এজেন্ট থাকে সেটা নিশ্চিত করা খুবই জরুরী। শুধু কেন্দ্রীয় বাহিনী আছে- এতেই সন্তুষ্ট হলে চলবে না।
ব্যামাখ্যাপা