করোনা রুখতে গ্রাম দেশকে পথ দেখাবে, পঞ্চায়েতরাজ দিবসে বার্তা মোদীর

“২০২১-র করোনা সংক্রমণ গ্রামে পৌঁছতে দেয়নি গ্রামের মানুষ। এবারও করোনা সংক্রমণ রুখতে গ্রামই দেশকে পথ দেখাবে।”

পঞ্চায়েতরাজ দিবসে এভাবেই করোনা সংক্রমণ রুখতে গ্রামের মানুষ বিশেষ করে পঞ্চায়েত ব্যবস্থা প্রশংসা করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। শনিবার পঞ্চায়েতরাজ দিবস উপলক্ষ্যে ভার্চুয়াল বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী এই কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী দেশে এই মুহূর্তে বাড়তে থাকা করোনা সংক্রমণের ভয়াবহ দিকটিকে কিভাবে গ্রামের মানুষের মাধ্যমে রুখে দেওয়া যায় সেটা জানান।

তিনি বলেন, “গতবার করোনা সংক্রমণ আপনারা গ্রামে প্রবেশ করতে দেননি। আমার বিশ্বাস এবার আপনারা ঠিক একইভাবে গ্রামে করোনা সংক্রমণ প্রবেশ করতে দেবেন না। তবে আপনারা টিকা নেবেন। এখন ৪৫ বছরের বেশি যাদের বয়স তাদের টিকা দেওয়া হচ্ছে। এর পর ১ মে থেকে ১৮ বছর যারা পার করেছেন তাদের টিকা দেওয়া হবে। ডজের সব রাজ্যে এই টিকা দেওয়ার কাজ চলছে। এছাড়া করোনা রুখতে যে সব নির্দেশিকা জারি করা হবে সেগুলো মানবেন। তাহলেই আপনারা করোনা রোধে দেশকে পথ দেখতে পারবেন। এই কাজে পঞ্চায়েত ব্যবস্থায় একটা বড় ভূমিকা আছে, সেটা পঞ্চায়েত সদস্যরা পালন করবেন বলেই আমার আশা।”

প্রধানমন্ত্রী এদিন বলেন, “৫ কোটি মানুষকে পঞ্চায়েতরাজ ব্যবস্থায় যুক্ত করা হল। পাঞ্চায়েতিরাজ দিবসের এই দিনটিকে গ্রামীণ ভারতের বিকাশের জন্য উল্লেখযোগ্য দিন হিসেবে উদযাপন করা হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচন হয়ে গেছ।, কোথাও কোথাও হবে।তাই ননতুন প্রতিনিধিদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি । গ্রামের বিকাশ, স্বাভিমানের জন্য বিভিন্ন যোজনা করা হয়েছে। সম্পত্তি কার্ড, কাজের বরাত দেওয়া হয়েছে গ্রামে । এর ফলে গ্রামের বিকাশ গতি পেয়েছে। মানুষের কাজের সুবিধা হয়েছে।”

এর পর প্রধানমন্ত্রী করোনার প্রসঙ্গ টেনে বলেন, “এক বছর আগে এই দিনে পুরো দেশ করোনার বিরুদ্ধে লড়ছিল। করোনাকে গ্রামে প্রবেশ করতে না দেওয়ার জন্য আপনাদের বড় ভূমিকা ছিল। এবার সেই ভূমিকা আপনারা শৃঙ্খলার সঙ্গে পালন করবেন বলে আমি মনে করি। তাই আপনারা এই করোনা সংক্রমণ রাখার কাজে সফলতা পাবেন বলেও আমি বিশ্বাস করি।”

করোনা পরিস্থিতিতে কেন্দ্রের তরফে যে বিনা পয়সায় রেশন দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে সেই প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ” এই সময় যাতে করোও বাড়িতে কেউ অভুক্ত না থাকে তাই দেশের সব গরিবদের মুক্ত রেশন দেওয়া হবে। দেশের ৮০ কোটি মানুষকে এই রেশনের আওতায় আনা হয়েছে । কেন্দ্র এর জন্য ২৬ হাজার কোটি টাকা খরচ করবে। সবার ঘরে খাবার সময়ে পৌঁছে যাবে। আমাদের এই কাজে গ্রাম পঞ্চায়েতের ভূমিকা আছে। পঞ্চায়েতের প্রতিনিধিদের কাজ নানুষের চাহিদা পূরণ করা। দেশকে আত্মনির্ভর করা।”

গ্রামের বিকাশে মহাত্মা গান্ধীর প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “মহাত্মা গান্ধী গ্রাম বিকাশের কথা বলে গেছেন। তবে আত্মনির্ভর হতে গিয়ে নিজের সীমায় আটকে যাবেন না। গ্রামের বিকাশে নতুন নতুন পথ খুঁজে নিতে হবে আপনাদের। ৫ হাজার গ্রামে ৪ লক্ষ মানুষকে সম্পত্তি কার্ড দেওয়া হয়েছে। এর ফলে গ্রামের মানুষের আত্মনির্ভরতা বেড়েছে। জমি নিয়ে বিবাদ কমেছে। গরিব, দলিতদের শোষণ কমেছে। জমি নিয়ে গ্রামে মামলা কমে গেছে। যারা বাড়ির দলিল পেয়েছেন তারা ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিতে পারছেন। সব পঞ্চায়েত সদস্যদের বলছি গরিবের সুরক্ষা, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা করুন। ব্যাংকে বলছি যাদের প্রপার্টি কার্ড আছে তাদের ঋণের ব্যবস্থা করুন। এই কাজে সহযোগিতা করবে পঞ্চায়েত সদস্যরা। আজ দেশ সব নীতিতে গ্রামকে এগিয়ে নিয়ে চলা হচ্ছে। আমাদের লক্ষ্য আধুনিক গ্রাম তৈরী, বিকাশ, গ্রামকে শুদ্ধ জল দেওয়া, অপটিক্যাল ফাইবারে জুড়ে দেওয়া ও কাজ করা । কেন্দ্র যে ভাবে গ্রামের বিকাশের জন্য কাজ করছে, বাড়ি দিচ্ছে তাতে পঞ্চায়েত সদস্যদের ভূমিকা বড়। এভাবে চললে দেশ এমনিতেই এগিয়ে যাবে। ছোট ছোট প্রয়োজনে গ্রামের মানুষদের যাতে সরকারের কাছে যেতে না হয় তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। গ্রামের হাতে কেন্দ্র যে পরিমাণ টাকা দিচ্ছে সেটা আগে কখনও দেওয়া হয়নি । গ্রামের বিকাশে এতো পয়সা যেখানে খরচ হচ্ছে সেখানে নজর দিতে হবে যাতে উন্নয়নের কাজ সঠিকভাবে হয়। দেশের সব পঞ্চায়েত প্রধানকে বলছি , দ্রুত অনলাইন ব্যবস্থায় জুড়ে যান। ৭৫ বছরের স্বাধীন দেশ। সঠিক সময় উন্নয়ন করতেই হবে। গ্রামে স্বাস্থ্য, বিশুদ্ধ জল পৌঁছে দিতেবী হবে। জমিতে রাসায়নিক সার ব্যবহার না করার দিকে নজর দিতে হবে। গ্রামের কোনও মেয়ে যাতে পড়াশুনা ছেড়ে না দেয়, সেদিকে নজর দিতে হবে। অন্তদয় মিশনে কাজ করতে হবে। করোনা জয়ে দেশের মধ্যে নেতৃত্বের জায়গায় থাকবে গ্রাম, গ্রাম করোনা জয় করবেই। দেশের উন্নয়নে পথ দেখাবেই । আমার এই ভরসা আছে। গ্রামকে করোনা মুক্ত রাখুন, এটাই চাই।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.