কোনও রাজনৈতিক বিষয়ে সরাসরি মুখ খোলা আরএসএসের সংস্কৃতি নয়। বিজেপি-র সঙ্গে প্রতি মুহূর্তে সমন্বয় রেখে চললেও কৌশলগত ভাবে আরএসএস তা মোটামুটি ভাবে এড়িয়েই চলে। কিন্তু বাংলায় রাজনৈতিক হিংসার ঘটনা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এ বার তীব্র সমালোচনা করলেন সঙ্ঘ প্রধান মোহন ভাগবত। যা তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।
নাগপুরে এক অনুষ্ঠানে সঙ্ঘ প্রধান বলেন, “ভোটে হার জিত রয়েছে। কিন্তু হেরে গিয়ে কেউ যদি অন্যের উপর রাগ দেখানো শুরু করে, অমর্যাদাকর ব্যবহার করে, তা হলে তাতে দেশেরই ক্ষতি”। এ কথা বলেই ভাগবত বলেন, “বাংলায় কী চলছে? ভোটের পর এরকম হয়? গুণ্ডাতন্ত্র সক্রিয় হয়ে উঠলে তো রাজ্য সরকারকেই ব্যবস্থা নিতে হবে”।
কোনও সুনির্দিষ্ট ঘটনার কথা উল্লেখ না করলেও সঙ্ঘ প্রধান এর পর বলেন, “কোথাও যদি কোনও খুনের ঘটনা হয়, সেখানে যদি মানুষ বিক্ষোভ দেখান, তা হলেই বলে দেওয়া হচ্ছে,-ওরা বহিরাগত। বাইরে থেকে আসা মানুষরা অশান্তি পাকাচ্ছে। তাদের ঢুকতে দেব না! এ গুলো কী ধরনের কথা!” মমতার নাম মুখে না আনলেও বাংলার মুখ্যমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে ভাগবত বলেন, “ক্ষমতার মোহ, ভোটে হারার যন্ত্রণা মানুষকে এতো নীচে নামাতে পারে? এই ইগো না ছাড়লে মানুষই সবক শিখিয়ে দেবে।”
তৃণমূল মুখপাত্রদের বক্তব্য, বিজেপি ইচ্ছাকৃত ভাবে বাংলায় গণ্ডগোল পাকাতে চাইছে। আরএসএস তথা সঙ্ঘ পরিবার এর থেকে বিচ্ছিন্ন নয়। বাংলাকে অশান্ত করে তার রাজনৈতিক ফায়দা নিতে চাইছে গেরুয়া শিবির। সঙ্ঘ পরিবারের স্বয়ং সেবকরা যে বাংলার গ্রামে গ্রামে মিথ্যা খবর ছড়িয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন, সে ব্যাপারে গোয়েন্দা তথ্য রয়েছে নবান্নেও। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও সে কথা স্পষ্টতই জানিয়েছেন।
এই সব রাজনৈতিক চাপানউতোরের বাইরে এক বৃহৎ ছবিও রয়েছে। তা হল, বাংলায় শুধু রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলই গেরুয়া শিবিরের লক্ষ্য নয়, বাংলায় তাদের প্রভাব আরও বাড়াতে চাইছে সঙ্ঘ পরিবারও। বস্তুত সেই কারণে সঙ্ঘ পরিবার বহুদিন ধরেই সক্রিয়। প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়কে নাগপুরে আরএসএসের সদর দফতরে নিমন্ত্রণ করে নিয়ে যাওয়ার নেপথ্যেও সঙ্ঘের সেই কৌশল ছিল। তার পর বাংলায় স্বয়ংসেবকদের সংখ্যা এক লাফে অনেকটাই বেড়ে যায়। সূত্রের খবর, লোকসভা ভোটে বাংলায় বিজেপি-র সাফল্যের পর সঙ্ঘ নেতারাও উৎসাহ পেয়েছেন। এবং এ বার পরিকল্পনামাফিক বাংলায় তাদের প্রভাব বাড়াতে চাইছে আরএসএস। সঙ্ঘ প্রধানের মুখে সরাসরি মমতার সমালোচনাকেও সেই প্রেক্ষাপটেই দেখা যেতে পারে।