জুনিয়র ডাক্তারদের সব দাবিই মানলেন মমতা, উঠল ধর্মঘট

অবশেষে উঠল ধর্মঘট। সোমবার নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক ছিল ডাক্তারদের প্রতিনিধি দলের। এই বৈঠকের পর মিটিংয়ের খসড়া নিয়ে এনআরএস-এ যান ডাক্তাররা। সেখানেই বাকিদের সঙ্গে জিবি মিটিং করেন তাঁরা। তারপরই সিদ্ধান্ত নেন ধর্মঘট তুলে নেওয়ার। নবান্ন থেকে এনআরএস-এ জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতিনিধি দল আসার পরেই উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েন অপেক্ষারত বাকি আন্দোলনকারীরা। কাঁধে তুলে কয়েকজন ডাক্তারকে নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালের ভিতর। ‘আমরা কারা……লক্ষ্মী ছেলে’ স্লোগানে মুখরিত হয় হাসপাতাল চত্বর।

এ দিনের বৈঠকে নবান্নে হাজির ছিলেন মেডিক্যাল এবং ডেন্টাল কলেজের ৩১ জনের প্রতিনিধি দল। ১২ দফা দাবি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলেন তাঁরা। বৈঠকের পর ডাক্তারদের প্রতিনিধি দল জানিয়েছেন, ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে। বলেন, বৈঠক ফলপ্রসূ হয়েছে। আমরা খুশি। মুখ্যমন্ত্রীও বলেন, এই বৈঠক সদর্থক হয়েছে। এরপরেই জুনিয়র ডাক্তারদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “লক্ষ্মী ছেলেরা, আমার ছোট ভাই-বোনেরা, প্লিজ তাড়াতাড়ি কাজে যোগ দাও।”

এক সপ্তাহ পরে উঠল জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলন। এ দিন সন্ধ্যায় প্রেস বিবৃতি দিয়ে ডাক্তারদের তরফে বলা হয়, “মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন যে আগামী দিনে কোনও ডাক্তার আক্রান্ত হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা আন্দোলন তুলে নিচ্ছি। যত দ্রুত সম্ভব আমরা কাজে ফিরব। আজ রাত থেকেই স্বাভাবিক হবে পরিষেবা।” কিন্তু পাশাপাশি এও বলা হয়, “মুখ্যমন্ত্রী তিনদিন সময় চেয়েছেন। সাময়িক ভাবে আমরা আন্দোলন প্রত্যাহার করে নিচ্ছি।” ডাক্তাররা বারবার এ দিন একটা কথাই স্পষ্ট ভাবে বুঝিয়ে দিয়েছেন, ডাক্তারদের কোনওমতেই আক্রমণ করা যায় না। সোমবার নবান্নের বৈঠকেও এই কথা বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। আগামী দিনে ডাক্তাররা আক্রান্ত হলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও আশ্বাস দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।

গত মঙ্গলবার থেকে টানা ৭ দিন ধরে বন্ধ ছিল রাজ্যের বিভিন্ন সরকারি মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালের আউটডোর। ডাক্তারদের নিরাপত্তার দাবিতে গর্জে ওঠে রাজ্য। প্রশাসনকে ডাক্তারদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতেই হবে, এই দাবিতে বিক্ষোভ অবস্থান শুরু করেন জুনিয়র ডাক্তাররা। পাশে দাঁড়ান সিনিয়র ডাক্তাররাও। বাংলা জুড়ে বইতে শুরু করে গণ ইস্তফার ঝড়।

ঘটনার সূত্রপাত ১০ জুন সোমবার। রোগী মৃত্যুকে কেন্দ্র করে উত্তাল হয়ে ওঠে এনআরএস হাসপাতাল চত্বর। সেদিন মৃত্যু হয়েছিল ৮৫ বছরের সাহিদ মহম্মদের। চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ আনে রোগীর পরিবার। রণক্ষেত্র হয়ে ওঠে হাসপাতাল। ইন্টার্ন-জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে রোগীর পরিবারের তুমুল মারপিটের চোটে ধুন্ধুমার হয় হাসপাতালে। দু’পক্ষের সংঘর্ষে ইটের আঘাতে মাথা ফাটে এনআরএস-এর ইন্টার্ন পরিবহ মুখোপাধ্যায়ের। খুলিতে গুরুতর চোট পান তিনি। বছর ছাব্বিশের এই তরুণের ফ্রন্টাল লোব ভাঙে। মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে আপাতত তিনি অনেকটাই সুস্থ বলে হাসপাতাল সূত্রে খবর। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও এ দিন সন্ধ্যায় ইনস্টিটিউট অফ নিউরো সায়েন্সে গিয়েছেন পরিবহকে দেখতে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.