দেশজুড়ে অক্সিজেনের জন্য হাহাকার পড়ে গিয়েছে। রাজধানী দিল্লি থেকে উত্তর প্রদেশের নয়ডা, মধ্যপ্রদেশ-কোনও হাসপাতালেই অক্সিজেন নেই। ফলে নিরুপায় হয়েই রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি করতে পারছে না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। দিল্লির রোহিণীর সরোজ হাসপাতাল, শান্তি মুকুন্দ হাসপাতাল, নয়ডার কৈলাশ হাসপাতাল, মধ্যপ্রদেশের ভোপালের নির্বাণা মাল্টিস্পেশালিটি হাসপাতাল-কোথাও অক্সিজেন নেই। দিল্লিতে অক্সিজেন সঙ্কট প্রসঙ্গে দিল্লির উপ-মুখ্যমন্ত্রী মণীশ সিসোদিয়া জানিয়েছেন, “এই মুহূর্তে দিল্লির বহু হাসপাতালে অক্সিজেনের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। কোনও কোনও হাসপাতালে অক্সিজেন একেবারেই নেই। বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে মেসেজ ও ই-মেইল পাচ্ছি আমরা।” অক্সিজেন সঙ্কটের কারণে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক নির্দেশ দিয়েছে, অক্সিজেন নিয়ে যাওয়া গাড়িকে যেন কোথাও আটকানো না হয়। দেশজুড়ে অক্সিজেন সরবরাহ নিয়ে এদিন উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কীভাবে অক্সিজেন সরবরাহের ক্ষেত্রে দ্রুততা আসে সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বৈঠকে। সামগ্রিক বিষয়ে আধিকারিকরা প্রধানমন্ত্রীকে অবগত করেছেন।
ঊর্ধ্বমুখী করোনাভাইরাস সংক্রমণের জেরে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে অক্সিজেনের আকাল দেখা দিয়েছে। সেই পরিস্থিতিতে কোনও বিধিনিষেধ ছাড়াই অক্সিজেনের জোগান সুনিশ্চিত করার জন্য সব রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিকে নির্দেশ দিল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। কেন্দ্রের তরফে জানানো হয়েছে, বিভিন্ন রাজ্যের মধ্যে অক্সিজেন নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে কোনও বিধিনিষেধ চাপানো যাবে না। যে গাড়িগুলিতে অক্সিজেন নিয়ে যাওয়া হবে, সেগুলি যাতে কোনওরকম বিধিনিষেধ ছাড়াই বিভিন্ন রাজ্যের মধ্যে চলাচল করতে পারে, সেই নির্দেশ দিতে হবে। তাছাড়া যে রাজ্য বা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে কারখানা অবস্থিত, শুধু সেখানকার হাসপাতালে অক্সিজেন দিতে হবে – এমন বিধিনিষেধ জারি করা যাবে না। সময় সংক্রান্ত কোনও বিধিনিষেধ ছাড়াই অক্সিজেন ভরতি গাড়ির চলাচল নিশ্চিত করতে হবে। কোনও বিধিনিষেধ ছাড়া আন্তঃশহর অক্সিজেন গাড়ির চলাচল সুনিশ্চিত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।এদিনই অক্সিজেন সরবরাহ ও টিকাকরণের জন্য কেন্দ্রকে একটি নির্দিষ্ট ‘জাতীয় পরিকল্পনা’ নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। পাশাপাশি অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের ক্ষেত্রেও কেন্দ্রকে একটি নির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিতে বলেছে দেশের শীর্ষ আদালত। এই বিষয়ে কেন্দ্রকে নোটিসও দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা এদিন সুপ্রিম কোর্টে বলেন, “দেশে এই মুহূর্তে অক্সিজেনের ভীষণ প্রয়োজন।” এরপরই সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি এস এ বোবাদের নেতৃত্বাধীন তিন-সদস্যের বেঞ্চ সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতাকে অক্সিজেন সরবরাহ ও টিকাকরণ নিয়ে জাতীয় পরিকল্পনা নেওয়ার নির্দেশ দেন। প্রধান বিচারপতি বলেন, প্রাথমিকভাবে আমাদের মাথায় চারটি বিষয় রয়েছে-অক্সিজেন সরবরাহ, প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ এবং টিকাকরণ। আমরা জাতীয় পরিকল্পনা দেখতে চাই। কোথাও কোথাও হাসপাতালে রোগী রাখার জন্য কোনও শয্যা নেই। যেমন মধ্যপ্রদেশের সেহোরে জেলা হাসপাতালের একটি বেডও খালি নেই। একজন চিকিৎসক জানিয়েছেন, “বুধবার রাতের পর থেকে একটিও বেড খালি নেই। তাই রোগী ভর্তি করতে পারছি না আমরা। অক্সিজেনেরও অভাব রয়েছে। জেলার সমস্ত নাগরিকদের কাছে আমরা অনুরোধ করছি বাড়িতেই থাকুন।” অক্সিজেনের অভাব রয়েছে ভোপালের নির্বাণা মাল্টিস্পেশালিটি হাসপাতালে। হাপসাতালের একজন কর্মী জানিয়েছেন, “বিগত ৩ দিন ধরে অক্সিজেন সঙ্কটের মধ্যে রয়েছি আমরা। তাই রোগীদের অন্য হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে।” দিল্লির শান্তি মুকুন্দ হাসপাতালের সিইও সুনীল সাগর জানিয়েছেন, “আমাদের কাছে অক্সিজেন নেই….যে সমস্ত রোগীদের ছুটি দেওয়া যেতে পারে, সেই সমস্ত রোগীদের ছুটি দেওয়ার জন্য চিকিৎসকদের বলেছি আমরা। আমাদের যা অক্সিজেন রয়েছে, তা মাত্র দুই ঘন্টার জন্য চলবে।” উত্তর প্রদেশের নয়ডার কৈলাশ হাসপাতালের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, মাত্র কয়েক ঘন্টার মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে অক্সিজেন। গ্রুপ মেডিক্যাল ডিরেক্টর ডাঃ রীতু বোহরা জানিয়েছেন, “গৌতম বুদ্ধ নগরে আমাদের ৪টি হাসপাতাল রয়েছে, প্রত্যেকটি হাসপাতালের একই অবস্থা, কোথাও অক্সিজেন নেই। আমাদের বলা হয়েছে, পরবর্তী ৩৬ দিনের মধ্যে অক্সিজেন পেয়ে যাব আমরা। আমরা রোগীদের ভর্তি প্রক্রিয়া বন্ধ রেখেছি।”কোভিডের বাড়বাড়ন্তে চিন্তা বাড়ছে ভারতে, আরও চিন্তা বাড়াচ্ছে অক্সিজেন সঙ্কট! সর্বকালীন রেকর্ড গড়ে বুধবার সারাদিনেই ভারতে ৩.১৪-লক্ষের গণ্ডি ছাড়িয়ে গিয়েছে দৈনিক করোনা-সংক্রমণ। এই সময়ে ভারতে মৃত্যু হয়েছে ২,১০৪ জনের। বৃহস্পতিবার সকালে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রক জানিয়েছে, বুধবার সারাদিনে ভারতে নতুন করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন মোট ৩,১৪,৮৩৫ জন, বিগত ২৪ ঘন্টায় সমগ্র দেশে করোনায় মৃত্যু হয়েছে ২,১০৪ জনের। ভারতে সক্রিয় করোনা-রোগীর সংখ্যা বাড়তে বাড়তে ২২.৯১-লক্ষের (১৪.৩৮ শতাংশ) গণ্ডি ছাড়িয়ে গিয়েছে। সংক্রমণ বৃদ্ধির মধ্যেই সুস্থতা স্বস্তি অবশ্য দিচ্ছে, বুধবার সারা দিনে ভারতে করোনা-মুক্ত হয়েছেন ১ লক্ষ ৭৮ হাজার ৮৪১ জন। ফলে বৃহস্পতিবার সকাল আটটা পর্যন্ত ভারতে মোট সুস্থ হয়েছেন ১,৩৪,৫৪,৮৮০ জন করোনা-রোগী, শতাংশের নিরিখে সুস্থতার হার ৮৪.৪৬ শতাংশ। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বিগত ২৪ ঘণ্টায় ভারতে নতুন করে ৩,১৪,৮৩৫ জন কোভিড-১৯ ভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার পর মোট করোনা-আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হল ১,৫৯,৩০,৯৬৫। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রক বুলেটিনে জানিয়েছে, বিগত ২৪ ঘন্টায় ২,১০৪ জনের মৃত্যুর পর ভারতে কোভিড-১৯ ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা বেড়ে হল ১,৮৪,৬৫৭ জন। বৃহস্পতিবার সকাল আটটা পর্যন্ত ভারতে সক্রিয় করোনা রোগীর সংখ্যা ২২ লক্ষ ৯১ হাজার ৪২৮ জন (১৪.৩৮ শতাংশ), বিগত ২৪ ঘন্টার মধ্যে একধাক্কায় বেড়েছে ১,৩৩,৮৯০ জন। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রক জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার সকাল আটটা পর্যন্ত ভারতে মোট ১৩ কোটি ২৩ লক্ষ ৩০ হাজার ৬৪৪ জনকে করোনা-টিকা দেওয়া হয়েছে, তাঁদের মধ্যে ২২,১১,৩৩৪ জনকে বিগত ২৪ ঘন্টায় কোভিড টিকা দেওয়া হয়েছে।
2021-04-22