কর্ণাটক: সাগরেদ নওয়াজের রহস‍্যজনক মৃত্যুর পর ভগবানের অভিশাপের ভয়ে মন্দিরে প্রস্রাব করা এবং প্রনামী বাক্সে কনডম রাখার কথা স্বীকার করল রহিম ও তৌফিক

ম‍্যাঙ্গালুরুর একটি মন্দিরের হুন্ডিতে (অনুদানের বাক্সে) কনডম পাওয়া যাওয়ার ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অপরাধে আজ দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মন্দিরটি হ’ল স্থানীয় ম‍্যাঙ্গুলুরু দেবতা কোরাগাজ্জার, যিনি ভগবান শিবের অবতার হিসাবে পূজিত হন। গ্রেপ্তার হওয়া অভিযুক্ত রহিম(৩২) এবং তৌফিক (৩৫) দুজনেই হলেন মঙ্গোলোরের জোকাট্টা এলাকার​ বাসিন্দা।

স্থানীয় সাংবাদিক চিরু ভাট “টুইটার থ্রেড”-এ পুরো ঘটনাটি বর্ণনা করেছেন।

এক সাংবাদিক​ সম্মেলনে পুলিশ কমিশনার এন.শশী কুমার জানিয়েছিলেন যে, গত তিন মাস ধরে প্রনামী বাক্সে আপত্তিকর দ্রব্য ফেলে রাখার​ অভিযোগে ইতিমধ্যেই পাঁচটি কেস ফাইল করা হয়েছে উল্লার,কাদরী এবং পান্ডবেশ্বর থানায়। তারপরেই আবার কোরাগাজ্জা কেট্টি মন্দিরের দানবাক্সে একটি কনডমসহ আপত্তিজনক জিনিস ফেলে দেওয়ার ঘটনায় চাঞ্চল্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এই ন‍্যাক্কারজনক ঘটনায় জড়িত কালপ্রিটদের পুলিশ এখনও পর্যন্ত সনাক্ত করতে বা ধরতে পারেনি। তল্লাশি চলছে।

এর কিছুদিন পর হঠাৎ, রহিম এবং তৌফিক নামের দু’জন পুরোহিতদের কাছে​ ক্ষমা চাওয়ার জন্য মন্দিরে যায়। প্রথমে পুরোহিতরা ভেবেছিলেন যে তারা দুজনেই হয়তো মজা করছেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা মন্দিরে নিজেদের জঘন্য অপরাধের​কথা স্বীকার করে স্থানীয় মানুষের কাছে আত্মসমর্পণ করে এবং স্থানীয় জনতা অভিযুক্তদের​ পুলিশের হাতে তুলে দেয়।

এই ঘটনার জড়িত থাকা আরেকজন অপরাধী নওয়াজ’ই সেদিন প্রনামী বাক্সে কনডম রেখে আসে এবং এই ঘটনার কিছুদিন পরেই রহস‍্যজনকভাবে তার মৃত্যু হয়। নওয়াজের এই অস্বাভাবিক মৃত্যুর পর রহিম ও তৌফিক দু’জনেই ভীষণ ভয় পেয়ে যায় এবং নিজেদের অপকর্মের কথা স্বীকার করে আত্মসমর্পণ করার সিদ্ধান্ত নেয়। জেরায় তারা জানায় যে, এই দুষ্কর্ম করার পর থেকেই নওয়াজ পাগলের​ মতো আচরণ করতে শুরু করেছিল। তারপর শুরু হয় রক্ত ​​বমি এবং আমাশয় এবং শেষে দেওয়ালে নিজের মাথা ঠুকে নওয়াজ মারা যায়। তার বলা শেষ কথা ছিল— ভগবান কোরাগাজ্জা অপরাধীদের উপর ভীষণ রেগে গেছেন।

নওয়াজের মৃত্যুর পরে তৌফিকের শরীরও খারাপ হতে শুরু করে এবং তারও রক্তবমি শুরু হয়। এরপর দুজনে ভীষণ ভয় পেয়ে যায় এবং নিজেদের অপরাধ স্বীকার করে ক্ষমা চাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় কারন তাদের মনে হয়েছিল যে একমাত্র দোষ স্বীকার করে ক্ষমা চাইলেই তারা রক্ষা পাবে, প্রানে বাঁচবে।

পুলিশ কমিশনার জানিয়েছেন যে— “অভিযুক্ত রহিম ও তৌফিক নিজেদের অপরাধের কথা স্বীকার করে ক্ষমা চাওয়ার জন্য কোরাগাজ্জা কাট্টে মন্দিরের ইয়েমকেরে মাঠে একজন পুরোহিতের কাছে যায়। ‘নিমোৎসব’ চলাকালীন তাদের ডেকে আনা হয়েছিল যেখানে তারা নিজেদের এই জঘন্য কৃতকর্মের কথা স্বীকার করে নেয়”।

“আরেক অভিযুক্ত নওয়াজ ছিল এই দুই আসামির বন্ধু। সে দেড় বছর আগে দুবাই থেকে ফিরে আসে এবং গত কয়েক মাস ধরে, বিভিন্ন শারীরিক সমস্যায় ভোগার পর কিছুদিন আগে তার মৃত্যু হয়। সম্প্রতি, ভক্তরা কাদ্রি মন্দির থেকে কুত্থার কোরাগাজ্জা কাট্টে পর্যন্ত একটি শোভাযাত্রার আয়োজন করেছিল। পরে, তৌফিকও নওয়াজের মতোই​ শারীরিক সমস্যায় ভুগতে থাকে এবং তারা ভয়ে স্বীকারোক্তির সিদ্ধান্ত নেয়। নওয়াজ, রহিম ও তৌফিকই আসলে কোরাগাজ্জা কাট্টে মন্দিরের প্রনামী বাক্সে আপত্তিজনক জিনিস রেখে আসতো”— বলে পুলিশ কমিশনার এদিন স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেন।

তিনি আরও বলেন— “এই কাজের পেছনে আসল উদ্দেশ্য কি ছিল তা এখনও জানা যায়নি। আমরা তদন্ত করছি। প্রাথমিক তদন্তে​ জানা গেছে যে তারা এখনও পর্যন্ত তিনটি জায়গায় এইধরণের কাজ করেছে এবং একই রকমের পদ্ধতিতে কাজগুলি হয়েছে। হাতেলেখা জিনিসগুলো আমাদের যাচাই করে দেখতে হবে। অভিযুক্ত দু’জনই স্ব-ইচ্ছায় স্বীকারোক্তি দেওয়ার জন্য পুরোহিতের সাথে যোগাযোগ করেছিল”।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.