পশ্চিমবঙ্গের বাঙ্গালীরা নিজেদের গর্বের সঙ্গে ভারতীয় বলতে পারছি তার কৃতিত্ব একজনকেই যায় তার নাম ভারত কেশরী ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী

আমরা পশ্চিমবঙ্গবাসী সবরকম ঐতিহ্যে আমরা বাঙালি এতে দ্বিমত এর কোনো অবকাশই নেই আবার আমরা বাঙালি হওয়ার সাথে সাথে যে ভারতীয় তাতেও কোন সন্দেহ নেই । এই যে আমরা অর্থাৎ পশ্চিমবঙ্গের বাঙ্গালীরা নিজেদের গর্বের সঙ্গে ভারতীয় বলতে পারছি তার কৃতিত্ব একজনকেই যায় তার নাম ভারত কেশরী ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী। আজ সেই শ্যামাপ্রসাদের বাংলা ভোটমুখী। ভারতের সব রাজ্যেই ভোট গ্রহণ হয় কিন্তু রাজ্য যেটাই হোক সেটা ভারতের জনগণের ভোট তথা ভারতের অবিভক্ত রাজ্যের ভোট। তাই বাংলা তথা ভারতের এই অবিভক্ত রাজ্যের গণতন্ত্রের উৎসব উদযাপনের সময়ে কোথাও যেন সেই মানুষটির নিয়ম-নীতি আদর্শকে ভুলে যাচ্ছি যার জন্য আজ আমরা গর্ব করে বলতে পারি যে বাংলা ভারতের অখন্ড অংশ। আমরা ক্রমশই সেই বাংলার বীর পুরুষ শ্যামাপ্রসাদ কে এবং তার বলিদানকে যেন তুচ্ছ করে ফেলেছি। 2014 সাল থেকে সর্বভারতীয় একটি রাজনৈতিক দল কোন ক্রমশই যেন শক্তিশালী হয়ে উঠছে, একের পর এক রাজ্য এবং ভোট অপ্রতিরুদ্ধভাবে জয় করেই চলেছে। এই ভারত তথা গোটা বিশ্বের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দলটির নাম ভারতীয় জনতা পার্টির এটিকে ইংরেজিতে ছোট করে BJP বলা হয়। একাত্ম মানববাদের চিন্তা ধারা নিয়ে তৈরি হয়েছিল ভারতীয় জনসংঘ, সেই সালটা ছিল 1952। এই দলটির মুখ্য কাজ ছিল তুষ্টিকরনের বিরোধিতা এবং ব্যক্তি পুজোর সঙ্গে সঙ্গে পরিবারতন্ত্রের বিরুদ্ধে গর্জে ওঠা আর এই নিয়ম নীতি আদর্শের সঙ্গে প্রতিষ্ঠিত হওয়া ভারতীয় জনসংঘের সংস্থাপক আর কেউ নন তিনি হলেন শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী। এই ভারতীয় জনসংঘ বা BJS বা জনসংঘ পরবর্তী সময়ে অর্থাৎ 6 এপ্রিল 1980 সালের বোম্বে অধিবেশনে নামান্তর এবং দলের চিহ্নেরও পরিবর্তন হয়। এই দলটির নতুন নাম হয় ভারতীয় জনতা পার্টি এবং দলটির সাংকেতিক চিহ্ন জ্বলন্ত প্রদীপ কে সরিয়ে রাখা হয় পদ্মফুল কে এবং এই বিজেপি তার প্রতিষ্ঠাতা শ্যামাপ্রসাদের নিয়ম নীতি আদর্শ কে মেনে এই দলটির পরিভাষা এটাই রেখেছে যে,,,,,,,,,,,,,,,,”ব্যক্তির চেয়ে বড় দল”,,,,” দলের চেয়ে বড় দেশ” যদি এটিকে আমি ইংরেজিতে বলি তাহলে “the nation fast”
“the party next “
and
“the shelf last”.

আমরা বিভিন্ন জায়গায় একটি পরিচিত বাক্যকে পড়ে থাকি, সেটা হল আপনার কর্মই আপনার পরিচয়। তাহলে আমরা এটা মনে করতে পারি যে আজকে যে দলটা সারা ভারতে ছড়িয়ে পড়লো রাষ্ট্রবাদী চিন্তাধারার সঙ্গে ,,,,,,,, আজকে যে দলটার প্রধানমন্ত্রী শুধু ভারতেই নয় তিনি আজকের দিনে একজন বিশ্বের নেতা, তাহলে সত্যিই এই বর্তমান বিজেপির সংস্থাপক শ্যামাপ্রসাদ কেমন ব্যক্তিত্বের ছিলেন তা আপনারা আন্দাজ করতেই পারছেন ।

শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী কে গভীর ভাবে জানতে হলে আমাদের একটু ইতিহাসের দিকে তাকিয়ে দেখতে হবে। সময়টা হচ্ছে চতুর্দশ শতাব্দীর, সেইসময়ের ফুলিয়ার মুখোপাধ্যায় বংশ,,,, সংক্ষেপে লোকে বলতো ফুলের মুখুটি। এই বংশের প্রথম কীর্তিমান পুরুষ কৃত্তিবাস ওঝা ওরফে উপাধ্যায়,,,,, তিনি বাংলা ও বাঙালির প্রাণের কবি। এই কৃত্তিবাস ওঝাই তার শ্রেষ্ঠ মহাকাব্য রামায়ণের মন্দাকিনীর ধারাকে বাংলার বুকে প্রথম প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এই মহাকাব্যের ভাবরসে নিমজ্জিত হয়ে বাঙালি খুঁজে পেল জীবনের আদর্শ কে খুঁজে পেল প্রাণপুরুষ ভক্তবৎসল মর্যাদা পুরুষোত্তম প্রভু শ্রী রামচন্দ্র কে। সমগ্র ভারতের সঙ্গে বাংলার সাংস্কৃতিক ঐক্য হল দৃঢ়তর।

প্রায় 400 বছর পর অর্থাৎ 1800 শতাব্দীতে এই বংশের আরেক শাখায় জন্ম নিল আরেক কীর্তিমান পুরুষ যার নাম “ভারতচন্দ্র রায়গুণাকর” যিনি ছিলেন মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রের সভাসদ এবং মধ্যযুগের বাংলার শ্রেষ্ঠ কবি ””’অন্নদামঙ্গলের””’ লেখক। ভারতচন্দ্রের খ্যাতি আজও বাংলার বুকে অম্লান। তার বুদ্ধিদীপ্ত শ্লেষ, শব্দের ঝংকার, এবং চরিত্রের তীর্যকতা এনে ভারতচন্দ্র যেন আধুনিক সাহিত্যের আগমনী ঝংকার এনে দিলেন বাঙালির মনে। এই মুখোপাধ্যায় বংশের অধঃস্তন পুরুষ বিশ্বনাথ মুখোপাধ্যায় বাস করতেন জিরাটে। কিছুদিন বাদে গঙ্গায় স্নান করার সময় জাহাজের মাস্তুল ভেঙে পড়ে তার মাথায় এবং তার মৃত্যু হয়। অগাধ জলে পড়লো তার নাবালক ছেলে মেয়েরা। বড় ছেলে দুর্গা প্রসাদ এর মাত্র 17 বছর বয়স এবং তার আরও 2,,,,,3 বছর হিসেবে ছোট তার আরও চার ভাইবোন।।।। কোন আত্মীয়-স্বজনও নেই যে তাদের সাহায্য করবে। এই অবস্থায় তাদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেন তাদের ঘরের কাজের লোক,,,, সেই কাজের লোকটি সামান্য একজন নারী ছিলেন,,, কিন্তু কী অসামান্য তার অবদান ছিল সেই সময়ে। তখন বাড়ির কাজের লোকের সম্পর্ক শুধু কাজের ছিলনা ছিল ভালোবাসার। তারা কেউ মাসি ,,,,,তো কেউ পিসি,,,,, তো কেউ আবার আদরের ঠানদী ছিল।।।। এই রকম কঠোর পরিস্থিতিতে মানুষের মতো মানুষ হতে হবে এই বলে দৃঢ়সংকল্প নিলেন দুর্গাপ্রসাদ,তাই তার সংকল্পকে বাস্তবায়িত করার জন্য সবাই মিলে চলে এলেন কলকাতায় অর্থাৎ সভ্যতার তীর্থভূমিতে।।। শেষ পর্যন্ত মানুষ তাঁরা হলেন ,,,,,বড় ছেলে দুর্গাপ্রসাদ যুক্তপ্রদেশে(USA) চাকরি পান,,,, মেজ হরিপ্রসাদ ফিরে গিয়েছিলেন সেই জিরাটে,,,,, সেজ গঙ্গাপ্রসাদ ডাক্তার হয়েছিলেন এবং ছোট রাধিকাপ্রসাদ হয়েছিলেন ইঞ্জিনিয়ার ।এই গঙ্গাপ্রসাদ এর ছেলেই হলেন বাংলার রেনেসাঁর দৃপ্ত পুরুষ স্যার আশুতোষ মুখার্জী আর এই বাংলার বাঘ তথা স্যার আশুতোষ এর ভারতের নবজাগরণের শেষ প্রতীক ভারত কেশরী শ্যামাপ্রসাদ, যার শ্রেষ্ঠ স্বপ্ন অখন্ড ভারত। হ্যাঁ স্যার আশুতোষ এর ছেলে আর কেউ নন তিনি আমাদের শ্যামাপ্রসাদ। যার অখণ্ড ভারতবর্ষের চিন্তাধারার জন্য আজ আমরা বাঙালিরা নিজেদের গর্বের সঙ্গে ভারতীয় বলতে পারছি।

গঙ্গাকে বুঝতে গেলে যেমন শুধু পুণ্যতীর্থ সাগর সঙ্গমের নয় তার গতিপথকেও জানা প্রয়োজন,,, ঠিক তেমনি শ্যামাপ্রসাদ কে বুঝতে গেলে কিছু পরিমাণে গঙ্গাপ্রসাদ এবং খুবই গভীর ভাবে স্যার আশুতোষ কে বোঝা প্রয়োজন,,,, কারণ এরা গঙ্গাকে পরিণতির দিকে নিয়ে যাওয়ার প্রবাহমান ধারা,,,,, আর শ্যামাপ্রসাদ মোহনার বুকে সাগরের গর্জন।

ভারতবর্ষের সেদিনের প্রভাতো ছিল রক্তাক্ত আর আজ পবিত্র বাংলার প্রতিটা দিন যার রাতের চেয়েও বেশি অন্ধকার এবং চারিদিকে বাংলা মা যেন আবার রক্ত শয্যায় শুয়ে আছে গভীর অন্ধকারের মধ্যে। তাই রবীন্দ্রনাথের ভাষায় বলতে গেলে মনে পড়ে যায় সেই সুপ্রভাত কবিতার কিছু অংশ ,,,,,,,,,,,,,,,,,,
ভৈরব তুমি কি বেশে এসেছ! ললাটে শ্বসিছে নাগিনী;
রুদ্রবীনায় এই কি বাজিলো সুপ্রভাতের রাগিনী? মুগ্ধ কোকিল কই ডাকে ডালে কই ফোটে ফুল বনের আড়ালে

বহুকাল পরে হঠাৎ যেন রে অমানিশা গেল ফাটিয়া

তোমার খড়্গ আধার মহিষে দুখানা করিল কাটিয়া।

বর্তমানে শ্যামাপ্রসাদের বাংলা অন্ধকারময় এবং ভোট মুখি।।। আমরা যদি কাউকে দোষারোপ না করে এটা মেনে নিই যে প্রদীপের তলা সবসময়ই অন্ধকার থাকে, তাহলে এবার সময় এসেছে সেই প্রদীপের তলাকে উজ্জ্বল আলোকময় করার।।। গণতন্ত্রের এই উৎসবে যদি আমরা ইতিহাসকে জেনে এবং বর্তমান কি বুঝে সৃজনশীল এবং অখন্ডতার কথা মনে করে শ্যামাপ্রসাদের আদর্শকে মাথায় রেখে যদি নিজের অধিকার নিজের প্রয়োগ করতে পারি তাহলে বাংলার আকাশে এমন সূর্যোদয় ঘটাতে পারবে যেখানে প্রদীপের তলা থেকে আকাশের তলা পর্যন্ত উজ্জ্বল আলোকে ভরে উঠবে।

ত্রম্বক চ্যাটার্জী
কুলট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.