গরিবের পার্টির সাতকাহন – ৩৪ বছরের কালরাত্রি

এখনো কিছু এমন মানুষ আছেন , যারা শ্বেতশুভ্র পোশাক পরিহিত বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য্যের , ক্যামেরার সামনে গুছিয়ে কথা বলার ভিডিও পোস্ট করে বলেন – উই মিস ইউ অথবা বুদ্ধবাবু নাকি শিক্ষিত মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন I কেউ আবার বলেন , বুদ্ধবাবুর মুখ চেয়েই নাকি বিদেশ থেকে স্বদেশে ফিরেছিলেন I

সিপিএমের সব থেকে বড় সাফল্য বোধহয় , বিপুল সংখ্যক বাঙালির মস্তিষ্ক প্রক্ষালন করে , মাথায় ঢুকিয়ে দেওয়া –

ক ) রাজনৈতিক বিরোধী মানেই শ্রেণী শত্রু , যাদের খুন করলে দল পাশে থাকবে , এবং শ্রেণীশত্রু নিকেশ করা দলের প্রতি আনুগত্যের মাপকাঠি I
খ) পার্টি যাই করুক , সেটাই ঠিক – ইংরাজি তুলে দিলে ও ঠিক , কম্পিউটারের বিরোধিতা করলেও ঠিক , মানুষ খুন করলেও ঠিক I
গ) পার্টির স্বার্থ বিঘ্নিত হয় অথবা যে সব ব্যক্তি মাথা নুইয়ে দলের দাসানুদাস হয়না , তাদের চরম অপমান করা দলের পবিত্র কর্তব্য I
ঘ) এই একটি দল , যারা বাঙালিকে শিখিয়েছে , সরকারে থেকে কি করে বন্ধ ডেকে রাজ্য অচল করে দিতে হয় , বিদ্যালয় প্রাঙ্গন থেকে সরকারি অফিস – যে কাজের জন্য প্রতি মাসে মাইনে নেবে , সেই কাজ না করে দিনের পর দিন পার্টির কাজে নিজেকে নিয়োজিত করার নামই বিপ্লব I

বামফ্রন্টের ৩৪ বছরের অমাবস্যায় দুজন মুখ্যমন্ত্রীকে বাংলার মানুষ দেখেছে – জ্যোতি বসু এবং বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য I

এবারে সেই গরিবের পার্টির মহান একমেবাদ্বিতীয়ম অবিসংবাদিত নেতা – শ্রীল শ্রীযুক্ত পূজ্যপাদ বঙ্গেশ্বর শ্রী শ্রী জ্যোতি বাবুর কথায় আসা যাক :

১৯৭২ সালে সল্টলেকে কংগ্রেসের সর্বভারতীয় অধিবেশনের প্রাক্কালে এ বাড়িটি গড়া হয়েছিল। যার নাম ছিল ‘পর্ণকুটির’। পরে ওই বাড়িতে ইন্দিরা গান্ধীর থাকার ব্যবস্থা করা হয়। সল্ট লেকের এই বাড়িটিই ” ইন্দিরা ভবন ” নামে পরিচিত এবং জ্যোতি বসু ১৯৮৯ সাল থেকে ওই বাড়িতে থাকতে শুরু করেন। জীবনের শেষ ২০ বছর ইন্দিরা ভবনেই কাটিয়েছিলেন I

নরেন্দ্র মোদির বিদেশভ্রমন নিয়ে যারা প্রশ্ন তোলেন , এতো ঘুরে কি লাভ হলো , তাদের জ্যোতি বসুর ভ্রমণ বৃত্তান্ত আগে থেকে জানা থাকলে হয়তো খাতা কলম নিয়ে হিসেব করতে বসতেন , কে বেশি ঘুরেছে , দেশের প্রধানমন্ত্রী নাকি রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী I

জ্যোতি বসুর ভ্রমণ বৃত্তান্ত :-

১৯৭৭ : যুগোস্লাভিয়া ও ব্রিটেন ভ্রমণ।

১৯৭৯ :রোম, বেলগ্রেড, ওয়ারশ ও জেনিভা ভ্রমণ।

১৯৮০ :লন্ডন, মস্কো ও হাঙ্গেরি সফর।

১৯৮১ :লন্ডন, জেনিভা, প্যারিস ভ্রমণ।

১৯৮৩ :সোভিয়েত ইউনিয়ন সফর। বুদাপেস্ট, প্যারিস, আমস্টারডাম ও লন্ডন যাত্রা।

১৯৮৪ :চীন ও হংকং যাত্রা করেন মে মাসে। ইংল্যান্ড এবং পরে কানাডা ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফর।

১৯৮৫ : ইংল্যান্ড ও জার্মান ভ্রমণও সোবিয়েত ইউনিয়ন সফর।

১৯৮৭ : ব্রিটেন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফর। বিনিয়োগ অানার জন্য ইউরোপ, অামেরিকা যান।

১৯৮৮ :জাপান, চীন, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড ভ্রমণ।

১৯৮৯ :ইংল্যান্ড , অস্ট্রিয়া, ফ্রান্স ও পশ্চিম জার্মানি সফর।

১৯৯১ : ইংল্যান্ড, সুইডেন ও জার্মানি সফর।

১৯৯২ :ইংল্যান্ড, হামবুর্গ, রোম ও ফ্লোরেন্স ভ্রমণ।

১৯৯৩ :ইংল্যান্ড ও কিউবা ভ্রমণ।

১৯৯৪ :ইংল্যান্ড ও সুইৎজারল্যান্ড ভ্রমণ।

১৯৯৫ : ইংল্যান্ড ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যাত্রা।

১৯৯৭ : ইংল্যান্ড ও দক্ষিণ অাফ্রিকা ভ্রমণ।

Source :

http://spordha.com/এক-নজরে-কমরেড-জ্যোতি-বসু/

ভোজন রসিক জনদরদী গরিবের দুঃখে কাতর মহান নেতার রসনাতৃপ্তির একটি অকিঞ্চিতকর নমুনা :-

উত্তরবঙ্গের একটি বিখ্যাত মাছের নাম – বোরোলি I
কোচবিহারের মহারানি ইন্দিরা দেবী যখন কলকাতা বা মুম্বইয়ে থাকতেন, তখন তাঁর জন্য বিমানে বোরোলি মাছ পাঠানো হত রাজ পরিবারের তরফে। রাজ-আমল পেরিয়ে বাম আমলেও প্রশাসকের পছন্দের মেনুতে পাকাপাকি ঠাঁই মিলেছিল বোরোলির। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী প্রয়াত জ্যোতি বসু তাঁর আপ্ত সহায়ক জয়কৃষ্ণ ঘোষকে বোরোলির স্বাদ চেখে দেখার পরামর্শ দিয়েছিলেন।

রাজ্যের প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু উত্তরবঙ্গে এলেই বোরোলি মাছের রকমারি পদ থাকত তাঁর জন্যে সাজানো ডাইনিং টেবিলে। মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময়ে জ্যোতি বসু একটা সময়ে ফি বছর পুজোর ছুটি কাটাতেন হলংয়ে। সেখানে প্রায় রোজকার মেনুর অপরিকার্য আইটেম ছিল বোরোলি।

জ্যোতি বাবুর রোজনামচার পাশাপাশি , গরিবের পার্টি ক্ষমতায় থাকাকালীন , বঙ্গের গরীবগুর্বো মানুষদের অবস্থা :

২০০৪ সালে পশ্চিম মেদিনীপুর (এখন ঝাড়গ্রাম) জেলার ঝাড়খণ্ড সংলগ্ন, শবর-মুন্ডা (মুড়া) অধ্যুষিত অখ্যাত গ্রাম আমলাশোলে পাঁচ জন মানুষের অনাহারে মৃত্যু হয়েছিল I

রাজনীতিতে অসৌজন্যের অনুপ্রবেশ এ রাজ্যে নতুন কিছু নয়৷ নেতাজিকে ‘তোজোর কুকুর’ কিংবা রবীন্দ্রনাথকে ‘বুর্জোয়া কবি’-বলার মধ্যে দিয়ে সূচনা হয়েছিল এই প্রবণতার৷ এরপর বারবার দলমত নির্বিশেষে সৌজন্যর গণ্ডী টপকেছেন একাধিক নেতা-নেত্রী৷ চোখে দেখতে না পাওয়ায় ছয়ের- দশকে কংগ্রেস নেতা অতুল্য ঘোষকে ‘কানা অতুল্য’ বলে কটাক্ষ করত সিপিএম৷ আপাদমস্তক সাধারণ জীবনযাপন করা প্রফুল্ল সেনের বিরুদ্ধে স্টিফেন হাউস কেনার অভিযোগ তুলতেও পিছপা হয়নি তারা৷ পরবর্তীকালে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম মুখে আনতেও দ্বি‍ধাবোধ করতেন তত্কালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু৷ ‘উনি’ বা ‘ও’-ছাড়া কখনওই মমতাকে নাম ধরে সম্বোধন করার প্রয়োজনীয়তা বোধ করেননি জ্যোতি বাবু৷ সিপিএমের প্রয়াত রাজ্য সম্পাদক অনিল বিশ্বাস মমতাকে বলেছিলেন, ‘যমের অরুচি’ I
যদিও, পরে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছিলেন অনিল বিশ্বাস৷ জ্যোতি বাবুর পর মুখ্যমন্ত্রীর আসনে বসা বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য তখন চরম অসৌজন্যের প্রদর্শন করেছিলেন, যখন ক্ষমতার দম্ভে তিনি বলেছিলেন,‘আমরা ২৩৫, ওরা ৩০’
যদিও, যাবতীয় সৌজন্যের সীমানা ছাড়িয়ে প্রতিপক্ষকে আক্রমণের যে লজ্জাজনক নজির প্রাক্তন সিপিএম নেতা অনিল বসু স্থাপন করেছিলেন, তাঁর জুড়ি মেলা ভার৷ মমতাকে আক্রমণে অনিল বসুকে কড়া টক্কর দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন তাঁর সতীর্থ সুশান্ত ঘোষ৷

নন্দীগ্রাম পর্বে মেধা পাটকরদের হুমকি দিয়ে প্রয়াত বিনয় কোঙার বলেছিলেন, ‘চারপাশ থেকে ঘিরে ফেলে লাইফ হেল করে দেব৷’ এবং, ‘ওরা নন্দীগ্রামে গেলে মানুষ পাছা দেখাবে৷’ কম যান না সিপিএমের অনিল বসু এবং আনিসুর রহমান-ও৷ তাঁরা দু’জনেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্পর্কে সাধারণত ছাপার অযোগ্য মন্তব্য করেছিলেন৷

বেশ কয়েক বছর আগে আশুতোষ কলেজের অধ্যক্ষ শুভঙ্কর চক্রবর্তী মেয়েদের সালোয়ার কামিজ পরার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন৷ পরে অবশ্য তাঁকে ঢোক গিলতে হয়৷

সাংবাদিক বৈঠকে মেজাজ হারিয়ে রাজ্যের ক্ষমতাসীন তৃণমূল-কংগ্রেস সর্ম্পক নিয়ে অশালীন মন্ত্যব করে বির্তকে জড়িয়েছিলেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক ও বামফ্রন্ট সভাপতি বিমান বসু।

সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে একটা পর্যায়ে তাকে প্রশ্ন করা হয় তৃণমূল ও কংগ্রেসের সর্ম্পক নিয়ে। এই সময় তিনি মেজাজ হারিয়ে অশালীন অঙ্গভঙ্গি করেন।

তিনি বলেন, কংগ্রেস-তৃণমূল সর্ম্পক শাড়ির ওপরে, নাকি শাড়ির তলায় থাকবে তা আমি জানব কী করে?

জ্যোতি বসুর পরে , মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য , দশ বছর মুখ্যমন্ত্রী থাকালীন চারটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা :

১) দিনহাটায় ফরওয়ার্ড ব্লকের লোকজনদের পুলিশের গুলিতে মৃত্যু I

২) নন্দীগ্রামে ১৪ জন মানুষের পুলিশের গুলিতে মৃত্যু I

৩) সিঙ্গুরে চাষিদের জমি কেড়ে নিতে পুলিশ পাঠানো এবং অকথ্য অত্যাচার I

৪) নেতাইগ্রামে সিপিএম ক্যাডারদের গুলিতে ৯ জন নিরীহ গ্রামবাসীর মৃত্যু I

দে হ্যাভ পেইড বাই দেয়ার ওন কয়েন্স’‌ (‌ওরা নিজেদের জালেই ফেঁসেছে)‌। স্মরনীয় এই উক্তিটি করেছিলেন তৎকালিন বামফ্রন্ট সরকারের মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য।

জ্যোতি বাবু মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন ১৯৭৭ থেকে ২০০১ পর্যন্ত , এই ২৫ বছর সময়ে কেমন ছিল বাংলার অবস্থা ?

১৯৯৫ সালের ইন্ডিয়া টুডে ( #India #Today ) পত্রিকায় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের কিয়দংশ এখানে দিলাম :

” Last year, against a backlog of 52 lakh applicants, over 12,000 got jobs through the employment exchange. Moreover, an estimated 55,000 industrial units are closed across the state, a few for the past 15 years. “

আপনারা ক্ষমতায় এসেছিলেন ১৯৭৭ সালে , এবং ১৯৯৫ সালে , ৫৫,০০০ কলকারখানা বন্ধ , শুধু তাই নয় , ১৯৯৫ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী , ৫২ লক্ষ্য নথিভুক্ত বেকারদের মধ্যে চাকরি পেয়েছিলো মাত্র ১২০০০ I

Source :

https://www.indiatoday.in/magazine/living/story/19950331-despite-govts-promises-of-a-better-future-west-bengal-records-highest-suicides-cases-807068-1995-03-31

বামপন্থীদের অতীত ইতিহাসের দিকে তাকালেই বোঝা যায় , ছবিটা স্পষ্ট হয়ে ওঠে :

বুদ্ধবাবু নিজেই বিধানসভায় দাঁড়িয়ে বিবৃতি দিয়েছিলেন , ৭৭ থেকে ৯৭ পর্যন্ত তাদের জামানায় ২৮, ০০০ মানুষ খুন হয়েছিলেন I

” In 1997, Buddhadeb Bhattacharjee, in a reply to an Assembly question, stated that between 1977 (when they came to power) and 1996, 28,000 political murders were committed. “

https://www.mainstreamweekly.net/article2234.html

১৯৮৪ –‌র লোকসভা নির্বাচনে সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় জীবনে প্রথম ও শেষবার হারেন। মমতা ব্যানার্জির বিরোধিতার চেয়েও সঞ্জীব ও তীর্থঙ্কর নামে দুটি ছাত্রের অস্বাভাবিক মৃত্যুর আদালতে সিবিআই তদন্তের দাবির বিরোধিতা করেই ডেকে আনেন তাঁর পরাজয়।

Source :

https://aajkaal.in/news/editorial/post-edit-tii0

বাম জামানার রক্তাক্ত নৃশংস ইতিহাস , সেই সাক্ষী বহন করে :

সাইবাড়ি ( ১৯৭০ )
কাশিপুর – বরানগর ( ১৯৭১ )
মরিচঝাঁপি ( ১৯৭৯ )
বিজন সেতু ( ১৯৮২ )
বানতলা ( ১৯৯০ )
ধর্মতলা ( ১৯৯৩ )
সুচপুর ( ২০০০ )
ছোট আঙ্গারিয়া ( ২০০১)
সিঙ্গুর ( ২০০৬ )
নন্দীগ্রাম ( ২০০৭ )
বাসন্তী ( ২০০৮ )
নেতাইগ্রাম ( ২০১১)

জ্যোতি বাবুর সময় ৫৫,০০০ কলকারখানা বন্ধ , এবং ৯৬’ সাল পর্যন্ত ২৮,০০০ মানুষ খুন , বুদ্ধবাবুর জামানায় , দশ বছরে চারটি নৃশংস অত্যাচারের ঘটনা I

যদি সাদা ধুতি পাঞ্জাবি পরে ক্যামেরার সামনে গুছিয়ে কথা বলতে পারলেই শিক্ষিত হওয়া যেত , তাহলে বিজয় মাল্য , নীরব মোদী , ললিত মোদী – এরা সবাই শিক্ষিত , কারণ এদের ভালো পোশাকের অভাব নেই আর এরা গুছিয়ে কথা বলতেও পটু I

Video link :

https://youtu.be/t190BVQJkCo

https://youtu.be/-CdVUGf5gsw

https://youtu.be/Ek549Hab5aE

!! সংগৃহিত !!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.