১০ই এপ্রিল পশ্চিমবঙ্গে ভোট আরও ৪৪টি আসনে। কোচবিহার ও আলিপুরদুয়ারের সবক’টি, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার ১১টি, হাওড়ার ৯ টি ও হুগলীর ১০টি আসনে নির্বাচনের সঙ্গে সঙ্গে ১০ই এপ্রিলেই শেষ হয়ে যাবে কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, হাওড়া, হুগলী ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার ইলেকশন।
কোচবিহার
২০১৯ এর লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল এবং মানুষের বর্তমান মতামতের ভিত্তিতে সিতাই ছাড়া, কোচবিহারের অন্য সবক’টি আসনে এবার বিজেপির নির্বাচনী সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। এমনকি শীতলকুচি বিধানসভা, যেখানে বিজেপির রাজ্য সভাপতি শ্রী দিলীপ ঘোষের গাড়িতে পাথর ও বোমাবাজি হামলা হয়েছে ৭ই এপ্রিল, সেখানেও বিজেপি-টিএমসি’র হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে শেষ হাসি গেরুয়া দলই হাসবে—এমনই বলছেন কোচবিহারের মানুষ। কোচবিহারের মোট ৯টি আসনের মধ্যে একমাত্র সিতাই ছিল কংগ্রেসের গড়। ২০১৬ সালের পর কংগ্রেসের ভোট চলে আসে তৃণমূল ও বিজেপিতে, কিন্তু তৃণমূলের ভোট সিতাইয়ে বিজেপির ভোটের চাইতে তাৎপর্যপূর্ণভাবে বেশি। তবে টিএমসি যদি সিতাইয়ে জেতেও, জয়ের মার্জিন থেকে বোঝা যাবে টিএমসি’র উপর সিতাইয়ের মানুষের আদত ভরসার কতখানি অবশিষ্ট আছে। দিনহাটায় তৃণমূলের উদয়ন গুহ এবার পরাস্ত হতে চলেছেন—বলছে কোচবিহার।
আলিপুরদুয়ার
আলিপুরদুয়ারকে বর্তমানে ‘বিজেপির গড়’ বলা যায়। এই জেলার ৫ টি বিধানসভা আসনই বিজেপির পক্ষে বিপুল ভোটদান করেছিল ২০১৯ এর লোকসভা নির্বাচন। ২০১৬’র বিধানসভায়ও আলিপুরদুয়ার প্রচুর ভোট দিয়েছিল বিজেপিকে। মাদারিহাটে ২০১৬তেও জিতেছিল ভারতীয় জনতা পার্টি।
দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা
দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার বাকি যে ১১ টি আসনে নির্বাচন হতে চলেছে আগামী ১০ই এপ্রিল, তার মধ্যে রয়েছে মেটিয়াবুরুজ, ভাঙ্গর, বজবজ, মহেশতলার মত আসন। এই আসনগুলির যে কোনোটিতেই শাসকদলের যে কোনো প্রকার নির্বাচনী ম্যানিপুলেশনকে আগে থেকে অনুমান করে বানচাল করতে পারা নির্বাচন কমিশনের কাছে বিশেষ চ্যালেঞ্জিং। এইসব আসনগুলিতে ডেমোগ্রাফি এমনভাবে পরিবর্তিত হয়েছে যে জায়গাগুলির আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সার্বিক অবস্থা শোচনীয়।
মেটিয়াবুরুজে যে সব ঘটনা অতীতে বা সাম্প্রতিক অতীতে ঘটেছে বা ঘটে চলেছে, তাতে মেটিয়াবুরুজকে কলকাতা শহরের ‘জিহাদী মুখ’ বলে বর্ণনা করলে অত্যুক্তি তো হয়ই না, এমনকি পলিটিক্যালি ইনকারেক্টও বোধ করি হয় না। মেটিয়াবুরুজের যথাযথ মূল্যায়ন প্রয়োজন। শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গের স্বার্থে নয়, গোটা দেশের নিরাপত্তার স্বার্থে।
ভাঙ্গরে রাডিকাল ইসলামিস্টরা ছাড়াও রয়েছে CPI(ML) অর্থাৎ আরবান নকশালদের প্রবল উপস্থিতি। ইসলামিস্ট-নকশালের মারাত্মক যুগলবন্দীই ভাঙ্গর থেকে তাড়িয়ে ছেড়েছে পাওয়ার গ্রিড কর্পোরেশনের এক বিরাট প্রজেক্টকে যা ভাঙ্গরের বিকাশের চিত্র বদলে দিতে পারত। কিন্তু ‘জমি, জীবিকা, পরিবেশ ও বাস্তুতন্ত্র রক্ষা কমিটি’র নামে আন্দোলন করে তা বানচাল করে দেওয়া হয়েছে ২০১৭ সালে। যে পদ্ধতিতে গত ৬০ বছর যাবৎ ক্রমশঃ পিছিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে পশ্চিমবঙ্গকে সেই একই পদ্ধতি আরেকবার প্রয়োগ করে ভাঙ্গর থেকে কার্যতঃ তাড়ানো হয়েছে পাওয়ার গ্রিডকে। নির্বাচনপূর্ব কালে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার যে সব জায়গা থেকে তাজা বোমা উদ্ধার করেছেন নিরাপত্তা কর্মীরা, ভাঙ্গর তার অন্যতম।
বজবজ, মহেশতলা ‘অভিষেক ব্যানার্জীর গড়’ বলে পরিচিত এবং জায়গাগুলি সম্বন্ধে অভিযোগ যে এগুলি বেআইনি অস্ত্রশস্ত্র ও বোমার ভাণ্ডার। বজবজের আভ্যন্তরীন এলাকাগুলিতে কেবলমাত্র বাজিপটকা নয়, আসল বোমাও তৈরি হয় প্রচুর। সমাজবিরোধী কাজের আখড়া এই বজবজ ও মহেশতলা। এইসব অঞ্চলে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কোনো মানুষের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ পর্যন্ত গ্রহন করে না পুলিশ।
বেহালা পূর্ব ও বেহালা পশ্চিমের মধ্যে দ্বিতীয়টি হতে পারে গেরুয়া পার্টির। বেহালা পশ্চিমের বর্তমান বিধায়ক তথা শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চ্যাটার্জীর বিরুদ্ধে জমা হয়েছে ক্ষোভ ও অপছন্দ। বেহালা আদতে কংগ্রেসের ও ২০১১ পরবর্তীকালে তৃণমূলের শক্ত ঘাঁটি যেখানে বিজেপির চোরাস্রোত শুরু হয় ২০১৪ সাল থেকে। কিন্তু তার কোনো নির্বাচনী প্রভাব এযাবৎ বেহালার রাজনীতিতে পড়ে নি। যদিও বেহালা পূর্ব হয়ত ভোট দেবে তৃণমূলের রত্না চ্যাটার্জীকে কারণ রত্না বেহালার লোকের জন্য কাজ করে চলেছেন বহুদিন যাবৎ। শোভন চ্যাটার্জীর সঙ্গে তাঁর বৈবাহিক সম্পর্কের অবনতির প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই জনসেবায় মন দেন রত্না। তবে হাওয়ায় ভাসছে গুজব—রত্না নিজেই চান বেহালায় জিতুক বিজেপি।
যাদবপুর বিধানসভা কেন্দ্রের এক বিরাট অংশের মানুষ আদতে পূর্ব পাকিস্তান তথা বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে আসা উদ্বাস্তু মানুষ। কিন্তু একই সঙ্গে তাঁদের এক বড় অংশ বাই ডিফল্ট কম্যুনিস্ট মনোভাবাপন্ন। যাদবপুরের বর্তমান বিধায়কও সিপিএমের সুজন চক্রবর্তী যাঁকে সম্প্রতি দেখা গিয়েছে দক্ষিনবঙ্গে রোহিঙ্গাদের বেআইনি অনুপ্রবেশের ইন-চার্জ মহম্মদ কামরুজ্জামানের সঙ্গে মুসলিম ইন্টেলেকচুয়াল ফোরামের মিটিং-এ। যাদবপুরের মত মূলতঃ উদ্বাস্তু-অধ্যুষিত এলাকার মানুষের পক্ষে মুসলিম-জোটসঙ্গী সিপিএম বা মুসলিম-তোষণকারী তৃণমূলকে পছন্দ না করা স্বাভাবিক ও যৌক্তিক। কিন্তু অভিজ্ঞতা বলে যৌক্তিকতা ও ইজম্’এর মধ্যে বিবাদ বাঁধলে কম্যুনিস্ট-মনোভাবাপন্ন মানুষেরা সবসময় যৌক্তিকতার পক্ষে দাঁড়াতে পারেন না। কম্যুনিস্ট-মনোভাবাপন্ন হওয়া সত্ত্বেও যাদবপুর যদি কৌশলগতভাবে বিজেপিকে নির্বাচন করে, তবে তা হবে যাদবপুরের নির্বাচকদের রাজনৈতিক পরিপক্কতার উৎসাহব্যঞ্জক একটি নির্দেশক। চোখ থাকবে যাদবপুরে।
কসবাতেও রয়েছে অনুপ্রবেশকারী ভোটারের উপস্থিতি। এলাকাটিতে বেড়েছে ড্রাগব্যবসার রমরমাও। সাম্প্রতিক অতীতে কসবার পঞ্চসায়রে কলকাতা পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে বাংলাদেশে বহুলব্যবহৃত ড্রাগ ইয়াবা। তৎসত্ত্বেও, জনমানসে বিরাট কোনো পরিবর্তন অমিত শাহের ৯ই এপ্রিলের প্রেস কনফারেন্সর কারণে না হলে কসবা আসনটি সিপিএমের হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল যেখানে টালিগঞ্জ হয়ত নির্বাচন করতে চলেছে বিজেপিকে।
সোনারপুর উত্তর ও সোনারপুর দক্ষিণের মধ্যে দ্বিতীয়টি বিজেপিকে আর প্রথমটি হয়ত নির্বাচন করবে তৃণমূলকে। তবে গত ৪ঠা এপ্রিল সোনারপুরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মিটিং এর পর সোনারপুরের নির্বাচনী মেজাজে এসেছে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন যা শেষ পর্যন্ত সোনারপুর উত্তরের নির্বাচনী জনমতকে বদলে দিতে পারে।
হাওড়া
হাওড়ার নয়টি বিধানসভার মধ্যে ৩’টিতে হতে চলেছে বিজেপি-তৃণমূল হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। বাকি ৬’টির মধ্যে বালি, শিবপুর, ডোমজুড় ও হাওড়া উত্তরে হয়ত জিতবে বিজেপি, আর পাঁচলা ও উলুবেড়িয়া পূর্ব থাকবে তৃণমূলের।
হুগলী
হুগলী জেলার দশটি বিধানসভার মধ্যে ৮/৯টিই জিততে পারে বিজেপি আর চণ্ডীতলায় হয়ত জিতবে তৃণমূল। তবে গত ৮ই এপ্রিল চণ্ডীতলায় যোগী আদিত্যনাথের মিটিং উক্ত কেন্দ্রের নির্বাচনী রায়ের ওপর কি প্রভাব ফেলে, নজর থাকবে সেদিকেও। চাঁপদানি বিধানসভার বর্তমান বিধায়ক কংগ্রেসের আব্দুল মান্নান। যদিও ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে চাঁপদানি বিধানসভা ক্ষেত্রে পরাস্ত হয়েছিল কংগ্রেস এবং বিজেপি ও তৃণমূল পেয়েছিল প্রায় সমান সংখ্যক ভোট, কিন্তু বিধানসভা নির্বাচনেও হাই প্রোফাইল কংগ্রেস প্রার্থী আব্দুল মান্নান হারবেন কি না, তা জানার জন্য অপেক্ষা করতে হবে ২রা মে পর্যন্ত। সামগ্রিকভাবে চতুর্থ দফার ভোটে বিজেপি হয়ত পেতে চলেছে ২৮ থেকে ৩৩ টি আসন।
Election Date | Constituency No. | Constituency Name | District |
10.04.2021 44 Assemblies | 1 | Mekliganj | Coochbehar 9 Assemblies Coochbehar Election Over |
2 | Mathabhanga | ||
3 | Coochbehar Uttar | ||
4 | Coochbehar Dakshin | ||
5 | Sitalkuchi | ||
6 | Sitai | ||
7 | Dinhata | ||
8 | Natabari | ||
9 | Tufanganj | ||
10 | Kumargram | Alipurduar 5 Assemblies Alipurduar Election over | |
11 | Kalchini | ||
12 | Alipurduar | ||
13 | Falakata | ||
14 | Madarihat | ||
147 | Sonarpur Dakshin | South 24 Parganas 11 Assemblies out of 31 Total South 24 Parganas Election Over | |
148 | Bhangore | ||
149 | Kasba | ||
150 | Jadavpur | ||
151 | Sonarpur Uttar | ||
152 | Tollygunge | ||
153 | Behala Purba | ||
154 | Behala Pashchim | ||
155 | Maheshtala | ||
156 | Budge Budge | ||
157 | Metiaburuz | ||
169 | Bally | Howrah 9 Assemblies out of 16 Total Howrah Election over | |
170 | Howrah Uttar | ||
171 | Howrah Madhya | ||
172 | Shibpur | ||
173 | Howrah Dakshin | ||
174 | Sankrail | ||
175 | Panchla | ||
176 | Uluberia Purba | ||
184 | Domjur | ||
185 | Uttarpara | Hooghly 10 Assemblies out of 18 Total Hooghly Election Over | |
186 | Sreerampur | ||
187 | Champdani | ||
188 | Singur | ||
189 | Chandannagore | ||
190 | Chunchura | ||
191 | Balagarh | ||
192 | Pandua | ||
193 | Saptagram | ||
194 | Chanditala |