দ্বিতীয় দফায় নন্দীগ্রাম লাইম লাইটের সমস্ত ফোকাস নিয়ে নিয়েছিল। আগামী শনিবার রাজ্যে চতুর্থ দফার ভোটগ্রহন। এই দফাতেও রয়েছে একাধিক নজরকাড়া আসন। একাধিক হেভিওয়েট প্রার্থী ভোটের ময়দানে মুখোমুখি হচ্ছেন বা লড়াই করছেন এই দফাতে। সবমিলিয়ে জমজমাট হতে চলেছে চতুর্থ দফার ভোটযুদ্ধ। এবার দেখে নিন কয়েকটি নজরকাড়া কেন্দ্র…
চণ্ডীতলা-
চতুর্থ দফার ভোটে সবচেয়ে কঠিন লড়াই হুগলির চণ্ডীতলায়। এই বিধানসভা আসনে এবার ত্রিমুখী লড়াই। একদিকে রয়েছেন বিজেপির তারকা প্রার্থী যশ দাসগুপ্ত (দেবাশিস)। অপরদিকে সংযুক্ত মোর্চার সমর্থনে সিপিএম প্রার্থী বর্ষীয়ান রাজনৈতিক মহম্মদ সেলিম। শাসকদলের তরফে আছেন এলাকার পরিচিত মুখ এবং জনপ্রিয় নেত্রী স্বাতী খন্দকর। চণ্ডীতলা এলাকায় খন্দকারদের দাপট কারোর অজানা নয়। কিন্তু একুশের ভোটে বিজেপি এবং সিপিএম দুই দলই হেভিওয়েট প্রার্থী দেওয়ায় লড়াই জমে গিয়েছে। টলিউডের জনপ্রিয় অভিনেতা যশ দাশগুপ্ত জোরদার প্রচার চালিয়েছেন। তাঁর হয়ে প্রচার করে গিয়েছেন মিঠুন চক্রবর্তী থেকে শুরু করে বিজেপির তাবর কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। মহম্মদ সেলিমও এলাকায় এলাকায় ঘুরে প্রচার করেছেন। ফলে কে জিতবেন সেটা জানতে অপেক্ষায় থাকবেন বঙ্গবাসী।
ডোমজুড়-
হাওড়ার ডোমজুর এবার সকলের নজরে। কারণ এই কেন্দ্রে এবারের বিজেপি প্রার্থী তৃণমূলেরই প্রাক্তন বিধায়ক তথা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূল এবার টিকিট দিয়েছে কল্যাণ ঘোষকে। অপরদিকে সিপিএম প্রার্থী উত্তম বেরা। তবে লড়াই মূলত তৃণমূল এবং বিজেপির মধ্যে। দল বদলে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় এখন বিজেপি প্রার্থী। তাই নজর থাকবে ডোমজুড়ের দিকে।
সিঙ্গুর-
মুখোমুখী হাইভোল্টেজ লড়াইয়ে এবার সিঙ্গুর আন্দোলনের দুই নেতা। সিঙ্গুরের বিদায়ী বিধায়ক তথা মাস্টারমশাই রবীন্দ্রনাথ ঘোষকে এবার টিকিট দেয়নি তৃণমূল। তিনি দল বদলে বিজেপিতে যান, এবং টিকিট পান। অপরদিকে সিঙ্গুরের পরিচিত মুখ তথা হরিপালের বিদায়ী বিধায়ক বেচারাম মান্নাকে এবার সিঙ্গুরে টিকিট দিয়েছেন তৃণমূলনেত্রী। অপরদিকে সিপিএম প্রার্থী সৃজন ভট্টচার্য ভোট প্রচারের প্রথম থেকেই নজর কাড়ছেন। তবে লড়াই মূলত রবীন্দ্রনাথবাবু এবং বেচারাম মান্নার মধ্যে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক মহল। বুধবারই সিঙ্গুরে বিশাল রোড শো করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। ফলে দেখার এবারও রবীন্দ্রনাথবাবু জিততে পারেন কিনা।
চুঁচুড়া-
তৃণমূলের বিদায়ী বিধায়ক অসিত মজুমদারের খাস তালুক চুঁচুড়া। কিন্তু এবারের লড়াইটা পাল্টে গিয়েছে। কারণ এই বিধানসভায় এবার বিজেপি প্রার্থী বিজেপি সাংসদ তথা মহিলা মোর্চার নেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায়। দুজনের লড়াই যে সমানে সমানে হবে সে কথা বলাই বাহুল্য। লড়াকু নেত্রী হিসেবে পরিচিত লকেট একা হাতেই জিতেছিলেন লোকসভায়। এবার টক্কর বিধানসভায়।
টালিগঞ্জ-
এক কথায় বলা যায় টালিগঞ্জে এবার তারকা লড়াই। এই বিধানসভা কেন্দ্রে বরাবরই জিতে আসছেন তৃণমূল নেতা তথা রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। কিন্তু এবার তাঁকে টক্কর দিতে বিজেপি সেখানে পাঠিয়েছে আসানসোলের সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়কে। তিনি নিজেও সংস্কৃতি জগতের তারকা। একাধারে বলিউডের নামকরা গায়ক অন্যদিকে বিজেপির দুবারের সাংসদ এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। ফলে লড়াইটা হবে জোরদার।
বেহালা পূর্ব এবং পশ্চিম
বেহালা পূর্বে এবার তৃণমূল প্রার্থী শোভন পত্নী রত্না চট্টোপাধ্যায়। আর তাঁর বিরুদ্ধে বিজেপি দাঁড় করিয়েছে টলিউডের জনপ্রিয় নায়িকা পায়েল সরকারকে। দুজনেই এবার প্রথম বিধানসভা ভোটে লড়ছেন। কিন্তু রত্নাদেবী দীর্ঘদিন ধরেই এলাকায় সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। ফলে তিনি জেতার ব্যাপারে আশাবাদী। অপরদিকে গ্ল্যামার্স কুইন পায়েলও এলাকা চষে ফেলেছেন। বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতারাও তাঁর হয়ে প্রচার করে গিয়েছেন। ফলে কাঁটার টক্কর হবে এটা বলাই বাহুল্য। বামেদের হয়ে এই কেন্দ্রে লড়াইয়ে রয়েছেন শমিতা হর চৌধুরী। অপরদিকে বেহালা পশ্চিমে এবার পোড় খাওয়া রাজনৈতিক তথা তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় দীর্ঘদিনের বিধায়ক। তিনি রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রীরও দায়িত্ব সামলেছেন। একুশের লড়াই তাঁর কাছে একটু কঠিনই। কারণ বিজেপি এবার তাঁর বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়েছে টলিউডের জনপ্রিয় অভিনেত্রী শ্রাবন্তি চট্টোপাধ্যায়। তিনিও জোরদার প্রচার চালিয়েছেন বেহালা পশ্চিমের আনাচে-কাঁনাচে। সকলেরই নজর থাকবে এই দুই নজরকাড়া কেন্দ্রের দিকে।
দিনহাটা-
গত লোকসভায় উত্তরবঙ্গে একটিও আসন পায়নি তৃণমূল। দলের অন্তর্দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যেই চলছে। এই পরিস্থিতিতে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েই লোকসভায় জিতেছিলেন নিশীথ প্রামানিক। তিনিই এবার দিনহাটার বিজেপি প্রার্থী। তাঁর বিরুদ্ধে মমতার তুরুপের তাস উদয়ন গুহ। ফলে কাঁটে কি টক্কর এবার দিনহাটায়।
এছাড়া নজর থাকবে হাওড়ার বালির দিকেও। এই কেন্দ্রেও বিজেপি প্রার্থী তৃণমূলের বিদায়ী বিধায়ক বৈশালী ডালমিয়া। তাঁর বিরুদ্ধে শাসকদলের প্রার্থী রানা চট্টোপাধ্যায়। নজর থাকবে চন্দননগরের দিকেও। এই বিধানসভায় তৃণমূল প্রার্থী রাজ্যের মন্ত্রী তথা সঙ্গীতশিল্পী ইন্দ্রনীল সেন। তাঁর বিরুদ্ধে এবার বিজেপি প্রার্থী দীপাঞ্জন গুহ। কসবা বিধানসভা কেন্দ্রে এবার সিপিএমের তুরুপের তাস শতরূপ ঘোষ। নবীন এই নেতা যুব সমাজের মধ্যে যথেষ্ট পরিচিত। অপরদিকে তৃণমূল প্রার্থী হলেন বর্ষীয়ান নেতা তথা প্রাক্তন মন্ত্রী জাভেদ খান। তিনিই এখানকার বিদায়ী বিধায়ক। ফলে লড়াই হবে সমানে সমানে। উত্তরবঙ্গেও কয়েকটি আসনে ভোট হবে চতুর্থ দফায়। এখানেও কয়েকটি নজরকাড়া কেন্দ্র হল নাটাবাড়ি, আলিপুরদুয়ার। নাটাবাড়িতে বিজেপি প্রার্থী তৃণমূল ত্যাগী মিহির গোস্বামী। তাঁর বিরুদ্ধে উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। ফলে লড়াই এবার জমজমাট।