দ্বিতীয় দফার পরে রাজ্যে তৃতীয় দফার ভোটগ্রহণের দিন মঙ্গলবারও দুই সমাবেশে থাকছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এর আগে দ্বিতীয় দফার ভোটের দিনেও জোড়া সভা করেছিলেন তিনি। প্রথমটি দক্ষিণ ২৪ পরগনার মথুরাপুরে এবং দ্বিতীয়টি হাওড়ার উলুবেড়িয়ায়। এর পরে গত শনিবারও ২টি সমাবেশ করেছেন। একটি হুগলির তারকেশ্বর ও অন্যটি দক্ষিণ ২৪ পরগনার সোনারপুরে। মঙ্গলবার তাঁর সমাবেশ কোচবিহার ও হাওড়ায়।
বাংলায় প্রথম দফার ভোটগ্রহণের দিন অবশ্য রাজ্যে ছিলেন না মোদী। সে দিন তিনি ছিলেন পড়শি দেশ বাংলাদেশে। যদিও প্রধানমন্ত্রীর সে দেশে কর্মসূচি নিয়ে অভিযোগ তোলে তৃণমূল। বাংলাদেশের ৫০তম স্বাধীনতা দিবস ও বঙ্গবন্ধু মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে গত ২৬-২৭ মার্চ বাংলাদেশ সফরে ছিলেন মোদী। দ্বিতীয় দিন ওড়াকান্দিতে মতুয়াদের তীর্থস্থানে যান মোদী। সঙ্গে ছিলেন বনগাঁর বিজেপি সাংসদ তথা ঠাকুরবাড়ির প্রতিনিধি শান্তনু ঠাকুর। মোদীর ওই সফর বাংলার নির্বাচনে প্রভাব ফেলেছে বলে নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দেয় তৃণমূল। তাতে বলা হয়, ‘মতুয়াদের তীর্থস্থান দর্শনে প্রধানমন্ত্রীর একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল পশ্চিমবঙ্গের ভোট এবং এক বিশেষ সম্প্রদায়ের ভোটারদের উপর প্রভাব বিস্তার করা’। তৃণমূলের বক্তব্য, একটি রাষ্ট্রের প্রধান হিসাবে যে সমস্ত সুযোগসুবিধা মোদী পেয়ে থাকেন, তার অপব্যবহার করে বিদেশ থেকে পশ্চিমবঙ্গের ভোট প্রক্রিয়া ও ভোটারদের প্রভাবিত করেছেন তিনি। সেখান থেকেই পরোক্ষে দলের প্রচারও করেছেন। যা নির্বাচনী বিধিভঙ্গেরই শামিল।
দ্বিতীয় দফার ভোটের দিন মোদীর প্রচার নিয়েও অভিযোগ তোলে তৃণমূল। বৃহস্পতিবার নন্দীগ্রামে ভোটপর্ব চলাকালীন হাওড়ার উলুবেড়িয়ায় ভোট প্রচারে গিয়ে মোদী বলেন, ‘‘দিদি অন্য কেন্দ্র থেকে আপনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন বলে যে গু়ঞ্জন শোনা যাচ্ছে, তা কি সত্যি? আপনি প্রথমে ওখানে (নন্দীগ্রাম) গেলেন, সেখানকার মানুষ আপনাকে জবাব দিয়েছে। আপনি যদি অন্য কেন্দ্র থেকে লড়তে চান, তা হলেও বাংলা প্রস্তুত।’’ এর পাশাপাশি মথুরাপুরের সভা থেকে মোদী বলেন, ‘‘রাজ্য যা চাইছে সেটাই করে দিয়েছে নন্দীগ্রাম।’’ তৃণমূলের বক্তব্য ছিল, একটি এলাকায় ভোটপর্ব চলাকালীন দেশের প্রধানমন্ত্রী অন্যত্র প্রচারে গিয়ে সেই প্রসঙ্গ তুলেছেন। ভোট চলাকালীন প্রধানমন্ত্রী নন্দীগ্রামের মানুষকে বার্তা দিতে চেয়েছেন, তাঁদের প্রতি মমতার আস্থা নেই। ভবিষ্যতে এই রকম কিছু যাতে না ঘটে তার জন্য নির্বাচন কমিশনের সতর্ক থাকা উচিত বলেও দাবি তোলে তৃণমূল।
নীলবাড়ির লড়াইয়ে উত্তরবঙ্গের উপরে অনেকটাই নির্ভর করছে বিজেপি। গত লোকসভা নির্বাচনের ফলের নিরিখে উত্তরে অনেক আসনেই এগিয়ে রয়েছে গেরুয়া শিবির। এর মধ্যে আবার কোচবিহারের উপরে বেশি জোর দিচ্ছে বিজেপি। দিনহাটায় কোচবিহারের সাংসদ নিশীথ প্রামাণিককে প্রার্থীও করেছে তারা। তার আগেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ কোচবিহারে সমাবেশ করেছেন। এ বার সেখানে মোদী। সেই সঙ্গে হাওড়া জেলাকেও যে বিজেপি গুরুত্ব দিচ্ছে তার প্রমাণ একই সপ্তাহে পর পর দু’বার মোদীর সফর। বৃহস্পতিবার উলুবেড়িয়ার পর মঙ্গলবার ডুমুরজলা। প্রসঙ্গত গত ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর ডুমুরজলাতেই সভা করার কথা ছিল অমিতের। কিন্তু দিল্লিতে ইজরায়েল দূতাবাসের কাছে বিস্ফোরণের জন্য সেই সমাবেশ বাতিল হয়ে যায়। তবে তিনি ভার্চুয়াল মাধ্যমে ভাষণ দিয়েছিলেন। অমিতের পরিবর্তে ডুমুরজলায় এসেছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি।