গত বছর সেপ্টেম্বরে একদিনেই করোনা আক্রান্তদের সংখ্যা ছাড়িয়েছিল ৯০ হাজার। অতিমহামারী সেদিন সব রেকর্ড ভেঙে দিয়েছিল। করোনা সংক্রমণের নিরিখে বিশ্বের দুই নম্বর স্থানে চলে এসেছিল ভারত। সেই ভয়ঙ্কর দিনের স্মৃতি ফিরছে আবারও। দৈনিক সংক্রমণ বাড়তে বাড়তে নিয়ন্ত্রণের সব সীমা পেরিয়ে যাচ্ছে। ৮১ হাজার থেকে এক ধাক্কায় দেশে দৈনিক করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৮৯ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। একদিনে মৃত্যুও সাড়ে চারশোরও বেশি। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, এমন চলতে থাকলে দৈনিক সংক্রমণ একদিন লাখ ছাড়িয়ে যাবে।
গত মাস মাসে প্রথম কোভিড অ্যাকটিভ কেসের হার পাঁচ শতাংশে পৌঁছেছে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের হিসেব বলছে, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ভাইরাস সক্রিয় রোগী ধরা পড়েছে ৩০ হাজারের বেশি। সব মিলিয়ে দেশে এখন করোনা অ্যাকটিভ রোগীর সংখ্যা ৬ লাখ। অথচ মাস দুয়েক আগেই কোভিড অ্যাকটিভ রোগী তিন লাখের নীচে নেমে গিয়েছিল।
স্বাস্থ্যমন্ত্রকের সমীক্ষা বলছে, কোভিড সংক্রমণের হার ফেব্রুয়ারিতে ছিল ১.৩৫ শতাংশ, মার্চের ১৫ থেকে ২১ তারিখের মধ্যে বেড়ে হয়েছে ১.৭৮ শতাংশ। কোভিড পজিটিভ রোগীর সংখ্যা বাড়ছে কলকাতাতেও। সংক্রমণের হার বেড়ে হয়েছে ৩.০৫ শতাংশ। বাংলাতেও গতকাল সর্বোচ্চ সংক্রমণ ধরা পড়েছিল, একদিনে সংক্রমিত হয়েছেন ১৭৩৩ জন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রক জানাচ্ছে, মহারাষ্ট্র সহ আট রাজ্যে সংক্রমণের হার বেশি। পাঞ্জাব, মধ্যপ্রদেশ, দিল্লি, তামিলনাড়ু, ছত্তীসগড়, কর্নাটক, হরিয়ানা, রাজস্থানে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ধাক্কা দিয়েছে। এই আট রাজ্য থেকে সর্বাধিক ৮৪% সংক্রমণের খবর মিলেছে। এদের মধ্যে সংক্রমণের হার সবচেয়ে বেশি মহারাষ্ট্রে। দৈনিক সংক্রমণ ৪৭ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। পুণেতে একদিনেই সংক্রমিত হয়েছেন ৯ হাজারের বেশি। বিপজ্জনক করোনা পরিস্থিতি দেখে পুণেতে রাত্রিকালীন কার্ফু জারি করা হয়েছে। সন্ধে ৬ টা থেকে ভোর ৬টা অবধি জরুরি পরিষেবা ছাড়া সিনেমা হল, রেস্তোরাঁ, থিয়েটার, অডিটোরিয়াম, শপিং মল সবই বন্ধ থাকবে। মহারাষ্ট্রের স্বাস্থ্য দফতর জানাচ্ছে, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ সামাল দিতে অক্ষরে অক্ষরে মানতে হবে করোনা সংক্রান্ত সমস্ত নিয়ম কানুন। রাজ্যবাসী এবং রাজ্যের সমস্ত প্রতিষ্ঠানকে এ ব্যাপারে সতর্ক করে মহারাষ্ট্র সরকার জানিয়েছে, নিয়ম ভাঙলে আর্থিক ক্ষতিপূরণ তো দিতে হবেই। পাশাপাশি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হতে পারে অফিস, বাজার, সিনেমাহল, শপিং মলের মতো জনসমাগমের জায়গা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না এলে রাজ্যে ফের লকডাউন চালু হতে পারে বলেও ঘোষণা করেছে উদ্ধব ঠাকরে সরকার।
করোনার নতুন স্ট্রেন নিয়ে আতঙ্ক বেড়েছে এর মধ্যেই। কেন্দ্রের সমীক্ষা বলছে, নতুন আক্রান্তদের ৮১ শতাংশের শরীরেই ব্রিটেন স্ট্রেন ধরা পড়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকা ও ব্রাজিলের সুপার স্প্রেডার স্ট্রেনও ছড়াচ্ছে। সুরক্ষার জন্য আগামী ৩১ এপ্রিল অবধি আন্তর্জাতিক বিমান ওঠানামায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ডিজিসিএ। দেশে এখনই লকডাউন চালু হবে না বলেই জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক ও স্বাস্থ্যমন্ত্রক করোনা পরিস্থিতি বিচার করে স্থানীয় স্তরে লকডাউন চালু করতে পারে। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল জানিয়ে দিয়েছেন, রাজধানীতে লকডাউন চালু করার কোনও পরিকল্পনা নেই তাঁর। বরং দিল্লিতে লকডাউন জারি হলে তার প্রভাব পড়বে সারা দেশেই।