বাঙলার অধিকাংশ সন্তান আজ প্রবাসী : তা সে মেধাবী ছাত্র হোক কি দিনমজুর ! লাখটাকার কাজ করুক কি দৈনিক পাঁচশো টাকার মজুরীতে ( হ্যাঁ ! দিল্লি বা গুজরাটে দিনমজুরী ঐরকমই ; তাই তো ওরা কাজ করতে যায় !)
অনেকেই আর ফিরে আসে না; কেউ ওখানেই বিয়ে করে নেয়; বিশেষত যারা বাড়িঘর করে নেয়, তাদের তো রাস্তা পুরোপুরি বন্ধ : তারা অধিকাংশই বাঙ্গালায় ভোটার লিস্ট থেকে নাম কাটিয়ে দিল্লি কিম্বা গুজরাট ক ব্যাঙ্গালুরুতে নাম ওঠায়। বাড়িতে রয়ে যায় বিধবা মা/একাকি বাবা /ভাগ্য ভালো হলে এক বৃদ্ধবৃদ্ধা দম্পতি : রাজ্যের মফস্বলের সব শহরগুলিতে সর্বত্রই এক ছবি : এই বৃদ্ধ দম্পতিদের অধিকাংশ বাম আমলে ছেলেমেয়ে মানুষ করেছেন – আর চোখ বন্ধ করে বলা যায় এদের অধিকাংশই বামপন্থী।
তাই আজ বিরাট বড়ো বড়ো দালানবাড়িতে একা শুকনো মুখ নিয়ে যখন আপনাদের বসে থাকতে দেখি; দেখি একা একা বাজার করতে, দেখি ব্যাঙ্কের লাইনে একাকী, দেখি গভীররাতে হাসপাতালে যেতে ভরসা বাড়ির কাজের লোক/ড্রাইভার; দেখি বাড়িতে কাজ করতে আসা লেবার/মিস্ত্রির হাতে খুন হয়ে যাওয়া : তখন করুণা হয়। কিন্তু শুধুমাত্র করুণাই।
কারন এই সর্বনাশা বামপন্থাকে পশ্চিমবঙ্গে সাড়ে তিন দশক টিকিয়ে রেখেছিলেন আপনারাই। এখন তার ফল ভোগ করছেন : যদি সত্তরের দশকে নিজেদের যৌবনকালে কম্পিউটারের বিরোধিতা না করতেন, দায়িত্ব নিয়ে ইংরেজীটা তুলে না দিতেন ; তাহলে হায়দ্রাবাদ বা ব্যাঙ্গালুরুর পরিবর্তে আপনার ছেলে/মেয়ে হয়তো কলকাতা/শিলিগুড়ি/দুর্গাপুরে কাজ করতো – তা না করে নিজেরা দায়িত্ব নিয়ে বনধের কালচারকে সমর্থন করে বন্ধ করিয়েছেন একের পর এক কারখানা – ধ্বংস করেছেন শুধু রাজ্যের ভবিষ্যৎ নয়; নিজের ভবিষ্যৎটাও।
আজ সেই প্রজন্মের কাছে একটা প্রায়শ্চিত্তের সুযোগ – যাতে বর্তমান প্রজন্মের অভিভাবকদের সন্তনরা এই বাঙলাতেই কাজ করে খেতে পারে; আপনাদের বাড়ির আশপাশগুলো আরো খালি না হয়ে যায় – তার জন্য জাতীয়তাবাদী সরকারকে ভোটটা দেওয়ার কথা ভেবে দেখতেই পারেন। নিজেদের ছেলেমেয়েরা আর ফিরবে না; কিন্তু যাতে নতুন করে আর কেউ বাইরে না যায় কাজ করতে; সেটা সুনিশ্চিত করুতেই পারেন।
আপনার ছেলে/মেয়ে চেন্নাই/ফরিদাবাদে কাজ করে বলে গর্ব আপনি করতেই পারেন ; বাঙ্গালায় সাম্প্রদায়িক বিজেপিকে চার দশক রুখে এসেছি বলে গর্ববোধ করতেই পারেন : কিন্তু গভীর রাতে বুকে ব্যাথা উঠলে পাশে নিজের কাউকে পাবেন না ! সকালে উঠে বাজার করতে যেতে ইচ্ছে না হলেও যেতেই হবে। সেই হতাশা/দুর্ভাগ্য থেকে কেউ বাঁচাতে পারবে না।
সিদ্ধান্ত আপনার !
শেষ বয়সে প্রায়শ্চিত্ত করবেন ?
না ! একাকীত্বের গৌরববোধ অনুভব করবেন ?