১০ বছর আগে ধোনির বিশ্বকাপ জয়ের সরণি

২৫ জুন, ১৯৮৩ থেকে ২ এপ্রিল, ২০১১৷ ২৭ বছর ৯ মাস ৭ দিন পর দ্বিতীয়বার ওয়ান ডে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয় ভারত৷ কপিল দেবের পর মহেন্দ্র সিং ধোনির হাতে ওঠে বিশ্বকাপ৷ শ্রীলঙ্কান পেসার নুয়ান কুলশেকারাকে ধোনির ছক্কা হাঁকানোর সঙ্গে সঙ্গে স্বপ্ন সত্যি হয় ১২৫ কোটির ভারতবাসীর৷ ধোনিদের এই বিশ্বচ্যাম্পিয়নের পিছনে ছিল দীর্ঘ দেড় মাসের কঠিন লড়াই৷ ১৯ ফেব্রুয়ারি থেকে ২ এপ্রিল, কেমন ছিল ভারতের বিশ্বকাপ জয়ের সরণি? ১০ বছর পর কলকাতা২৪x৭-এ ফিরে দেখা ধোনির বিশ্বকাপ জয়৷

প্রথম ম্যাচ: ভারত-বাংলাদেশ (১৯ ফেব্রুয়ারি)

বিশ্বকাপ জিতে মহেন্দ্র সিং ধোনি কিংবদন্তি কপিল দেবকে ছুঁয়েছিলেন ফাইনালে৷ কিন্তু উদ্বোধনী ম্যাচেই ১৭৫ রানের বিধ্বংসী ইনিংস খেলে কপিলের ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ স্কোর ছুঁয়েছিলেন বীরেন্দ্র সেহওয়াগ৷ বীরুর ব্যাটে বিশ্বকাপে স্বপ্নের শুরু করেছিল ভারত৷ বাংলাদেশ বোলারদের পিটিয়ে মাত্র চার উইকেট হারিয়ে ৩৭০ রান তুলেছিল ভারত৷ সেহওয়াদের দুরন্ত সেঞ্চুরি ছাড়াও ৮৩ বলে সেঞ্চুরি করেছিলেন ভারতের তরুণ তুর্কি বিরাট কোহলি৷ রান তাড়া করতে নেমে ৯ উইকেটে ২৮৩ রান তুলেছিল বাংলাদেশ৷ ৮৭ রানে ম্যাচ জিতে বিশ্বকাপে পথ চলা শুরু করেছিল ধোনি অ্যান্ড কোং৷

দ্বিতীয় ম্যাচ: ভারত-ইংল্যান্ড (২৭ ফেব্রুয়ারি)

প্রথম ম্যাচে সেহওয়াগ ও দ্বিতীয় ম্যাচে জ্বলে উঠেছিলেন সচিন তেন্ডুলকর৷ লিটল মাস্টারের ১২০ রানের ইনিংসে ভর করে স্কোরবোর্ডে ৩৩৮ রান তুলেছিল ভারত৷ রান তাড়া করতে নেমে দারুণ শুরু করেছিল ইংল্যান্ড৷ অ্যান্ড স্ট্রসের ১৫৮ ও ইয়ান বেলের ৬৯ রানের ভর করে ৪২.৩ ওভারে মাত্র ২ উইকেট হারিয়ে ২৮১ রান তুলে ফেলেছিল ইংরেজরা৷ কিন্তু তারপর নিয়মিত উইকেট হারিয়ে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৮ উইকেটে ৩৩৮ রান তুলেছিল ইংল্যান্ড৷ ফলে ম্যাচ টাই হয়ে যায়৷

তৃতীয় ম্যাচ: ভারত-আয়ারল্যান্ড (৬ মার্চ)

এই ম্যাচে বল হাতে ভেলকি দেখিয়েছিলেন যুবরাজ সিং৷ ১০ ওভারে মাত্র ৩১ রান দিয়ে পাঁচ আইরিশ ব্যাটসম্যানকে ড্রেসিংরুমে ফিরিয়েছিলেন যুবরাজ৷ ২০৭ রানে অল-আউট হয়ে যায় আয়ারল্যান্ড৷ জবাবে ৪৬ ওভারে পাঁচ উইকেট হারিয়ে ম্যাচ জিতে নেয় ভারত৷ বল হাতে পাঁচ উইকেট নেওয়ার পর অপরাজিত হাফ-সেঞ্চুরি করে ম্যাচের সেরা হয়েছিলেন যুবি৷

চতুর্থ ম্যাচ: ভারত-নেদারল্যান্ডস (৯ মার্চ)

আইরিশের পর ডাচদের বিরুদ্ধেও ‘ভারি’ পড়েছিলেন যুবরাজ৷ এই ম্যাচেও ব্যাট-বলে প্রতিপক্ষকে শেষ করে দিয়েছিলেন যুবি৷ প্রথমে ব্যাটিং করে মাত্র ১৮৯ রানে শেষ হয়ে গিয়েছিল নেদারল্যান্ডস৷ জবাবে ৩৬.৩ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে ম্যাচ জিতে নেয় ভারত৷

পঞ্চম ম্যাচ: ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা (১২ মার্চ)

টুর্নামেন্টে একটি ম্যাচ হেরেছিল ভারত৷ প্রোটিয়াদের স্বপ্নের শুরু করেও শেষরক্ষা হয়নি ধোনিদের৷ সচিনের দুরন্ত ১১১ রানের দৌলতে ৩৯.৩ ওভারে মাত্র এক উইকেট হারিয়ে ২৬৭ রান তুলেছিল ভারত৷ কিন্তু তারপর ডেল স্টেইনের গতিতে উড়ে যায় ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা৷ ২৯৬ রানে শেষ হয়ে ভারত৷ শেষ ৯ উইকেটে মাত্র ২৯ রান তুলেছিল টিম ইন্ডিয়া৷ জবাবে সাত উইকেট হারিয়ে ম্যাচ জিতেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা৷

ষষ্ঠ ম্যাচ: ভারত-ওয়েস্ট ইন্ডিজ (২০ মার্চ)

যুবরাজের সেঞ্চুরি (১১৩) এবং কোহলির হাফ-সেঞ্চুরির (৫৯) ফলে ক্যারিবিয়ানদের বিরুদ্ধে ২৬৮ রান তুলেছিল ভারত৷ কিন্তু ভারতীয় বোলারদের সামনে ১৮৮ রানে গুটিয়ে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ৷ ৮০ রানে ম্যাচ জিতে নেয় টিম ধোনি৷

কোয়ার্টার ফাইনাল: ভারত-অস্ট্রেলিয়া (২৪ মার্চ)

আমদাবাদে শেষ আটের লড়াইয়ে অজিদের হারিয়ে সেমিফাইনালে পৌঁছেছিল ভারত৷ তিনবারের চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া প্রথমে ব্যাটিং করে ৬ উইকেটে ২৬০ রান তুলেছিল৷ দুরন্ত সেঞ্চুরি (১০৪) করেছিলেন ক্যাপ্টেন রিকি পন্টিং৷ ৪৭.৪ ওভারে মাত্র পাঁচ উইকেট হারিয়ে ম্যাচ জিতে নেয় ভারত৷ টিম ইন্ডিয়ার জয়ে ব্যাট হাতে বড় ভূমিকা নেন সুরেশ রায়না ও যুবরাজ সিং৷

সেমিফাইনাল: ভারত-পাকিস্তান (৩০ মার্চ)

বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে জয়ের ধারা অব্যাহত রাখে ভারত৷ মোহালিতে টস জিতে প্রথমে ব্যাটিং নিয়ে সচিন তেন্ডুলকর অনবদ্য ৮৫ রানের দৌলতে পাকিস্তানের সামনে ২৬১ রানের টার্গেট দিয়েছিল ভারত৷ ১১৫ বলের ইনিংসে ১১টি বাউন্ডারি হাঁকিয়েছিলেন সচিন৷ রান তাড়া করতে নেমে ২৩১ রানে অল-আউট হয়ে যায় ভারত৷ ম্যাচের সেরা হন লিটল মাস্টার৷

ফাইনাল: ভারত-শ্রীলঙ্কা (২ এপ্রিল)

প্রথমে ব্যাটিং করে মাহেলা জয়বর্ধনের ৮৮ বলে দুরন্ত ১০৩, কুমার সঙ্গকারার ৪৮, তিলকরত্নে দিলশানের ৩৩ রানে ভর করে ২৭৪ রান তুলেছিল শ্রীলঙ্কা৷ বিশ্বসেরা হওয়ার জন্য ভারতের সামনে ছিল ২৭৫ রানের কঠিন টার্গেট৷ গৌতম গম্ভীর ও ক্যাপ্টেনের দুরন্ত ব্যাটিংয়ে ১০ বল বাকি থাকতেই ম্যাচ জিতে নেয় ভারত৷ ৯৭ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলে গম্ভীর৷ আর ৭৯ বলে ৯১ রানে অপরাজিত থেকে ভারতকে বিশ্বকাপ এনে দেন ধোনি৷ ম্যাচের সেরা হয়েছিলেন ভারত অধিনায়ক৷ আর ‘ম্যান অফ দ্য টুর্নামেন্ট’ হয়েছিলেন যুবরাজ৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.