পাণিহাটি গঙ্গাতীরে স্থাপে ভক্তি ভরে – প্রথম পর্ব

প্রথম পর্ব

পাণিহাটি সম গ্রাম নাহি গঙ্গাতীরে,
বড় বড় সমাজ সব পতাকা মন্দির।।

হম , পাণিহাটি , শ্রীচৈতন্যদেবের আশীর্বাদ প্রাপ্ত , শ্রী নিত্যানন্দপ্রভুর প্রেম ধন্য পানিহাটি।

পানিহাটির ইতিহাস সুপ্রাচীন। বিপ্রদাস পিপলাইয়ের ‘মনসামঙ্গল’, জয়ানন্দের ‘চৈতন্যমঙ্গল’, বৃন্দাবন দাসের ‘চৈতন্য ভাগবত’, কৃষ্ণদাস কবিরাজের ‘শ্রীচৈতন্য চরিতামৃত’-র মতো পুরোনো সাহিত্যে পানিহাটির নাম পাওয়া যায়। তবে এই জায়গার নামটি কীভাবে এল, তা নিয়ে ধন্দ আছে বিস্তর। কেউ বলেন, পানিহাটির আদি নাম ‘পণ্যহট্ট’। যেহেতু এই জায়গা খুব প্রাচীন কাল থেকেই ব্যবসা বাণিজ্যের এক জমজমাট কেন্দ্র ছিল, তাই ‘পণ্যহট্ট’ নামটি খুব বেশি অসমীচীন ঠেকে না। বর্ধমানের কাটোয়া, দাঁইহাট, কালনা, হুগলির, চুঁচুড়া, ফরাসডাঙা, সপ্তগ্রাম, মেদিনীপুরের তাম্রলিপ্ত – এইসব জায়গা থেকে বড়ো বড়ো মহাজনি নৌকো এসে ভিড়ত পানিহাটির আমদানি ঘাটে। অনেকে মনে করেন, যশোরের বিখ্যাত পেনেটি ধানের সরবরাহ এখান থেকে করা হত বলে, ‘পেনেটি’ থেকেই ‘পানিহাটি’ নামটা এসেছে। আরেকটা মত হল, ‘পণ্যহট্ট’ নয়, পানিহাটির নাম এসেছে ‘পুণ্যহট্ট’ থেকে।

খুব প্রাচীন কাল থেকেই পানিহাটি ঈশ্বরানুরাগী মানুষজনের কাছে পুণ্যভূমি। গৌড়ের রাজা বল্লাল সেনের আমলে এই অঞ্চল ছিল তান্ত্রিক উপাসনার একটি কেন্দ্র। তারপর শৈব সাধক নাথপন্থীদের সাধন-ভজনের জন্যও প্রসিদ্ধ ছিল এই জায়গা।

উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার বেড়াচাঁপা, তার কাছে চন্দ্রকেতুগড় … সেখানকার রাজার নাম ছিল চন্দ্রকেতু
। সে যে কবেকার রাজা ছিল , সে নিয়ে অবশ্য নানা মুনির নানা ! এক সুবিশাল এলাকাজুড়ে তাঁর রাজ্যপাল ছড়ানো ছিল। তিনি একজন প্রকৃত সনাতনী রাজা ছিলেন । আপন ধর্ম , আপন ভূমি বাঁচানোর জন্য তিনি নিজের সমস্ত কিছুকে হারিয়ে ছিলেন। সমগ্র চন্দ্রকেতুগড় জুড়ে , পানিহাটি জুড়ে , বেড়াচাঁপা জুড়ে তথা সমগ্র বঙ্গজুড়ে সেই কিংবদন্তি আজ গুমড়ে গুমড়ে কেঁদে বেড়ায়। কি ছিল সেই কিংবদন্তি ঘটনা ?

গোরাচাঁদ নামে এক পীরের সঙ্গে রাজা চন্দ্রকেতু লড়াই হয়েছিল। সেকেলে অর্থাৎ, এই যখন ভারত তথা বঙ্গে বিদেশী সাম্রাজ্যবাদী বেধর্মীদের আক্রমণ হচ্ছে, তখন তাদের গুপ্তচর হয়ে আসত এই সব পীর , ফকির রা। তারা এসে কোনো এলাকার শাসককে বুঝিয়ে সুজিয়ে সেখানে আস্তানা গাড়ত। তারপর খুঁজে দেখত সেখানে কি দুর্বলতা আছে। সেই সংবাদ যেত ম্লেচ্ছ শাসকদের কাছে। সেই ফাঁক দিয়ে ঢুকে ম্লেচ্ছরা দেশিয়রাজ্য। আক্রমণ করত। তাছাড়া , কেরামতি দেখিয়ে লোক জনকে বুদ্ধু বানাতে সেসব ফকিররা ওস্তাদ হতো। সেসব করে , খানকা খুলে লোকজনকে ধর্মান্তরিত করত। যে যত ধর্মান্তরিত করত সে তত বড় পীর , গাজী উপাধি পেতে। রাজা চন্দ্রকেতু সুশাসক , সুবিবেচক এবং সমসাময়িক সময়কার পরিস্থিতি নিয়ে জ্ঞানী ছিলেন। তাঁর শাসন এলাকায় ফকিরের কারসাজি চলল না। ফলে তাঁর রাজ্য সেই গোরাচাঁদ নামক পীর ফকির আক্রমণ করল।

রাজার ছিল এক সুবৃহৎ বাগদী , চন্ডাল ইত্যাদি জনজাতি দ্বারা গঠিত শক্তিশালী সৈন্যবাহিনী। তাদের কাছে পীর এঁটে উঠল না। রাজা চন্দ্রকেতুর জয় হল। কিন্তু শয়তান ,শত্রু তো নিজের লোকই হয়। রাজার কোনো এক পার্ষদ ছিল তাই। সেই হানল অন্তর্ঘাত। যুদ্ধজয়ের পর সাদা পায়রার বদলে কালো পায়রা উড়িয়ে দেওয়া হয়। কালোর অর্থ ছিল রাজা পরাজিত হয়েছেন। এখন রাজা পরাজিত হলে বিধর্মীর হাতে তো আর রাজপরিবার, রাণী , এবং অন্যান্য কুলনারীগণ আপন সম্মান বর্জন করবেন না। ফলত কি হল ?

রানী এবং রাজপরিবারের সকলে, এমনকি কোলে শিশুপুত্র-সহ , পরিচারিকাদি নিয়ে জলে ডুবে আপন প্রাণ বিসর্জন করলেন । এদিকে বিজয়ী রাজা প্রাসাদে ফিরে দেখলেন নিষ্প্রদীপ জনপুরী । এখনো আমাদের মধ্যে তেমনি অন্তর্ঘাত হয় তাই না ? আমরা সেই অন্তর্ঘাতের শিকার হই !

যাক, এই চন্দ্রকেতু রাজা পাণিহাটিতে গড়েছিলেন অপূর্ব এক দোলমঞ্চ। প্রতি বৎসর খড়দহে দোল , ফাগ উৎসব শেষ হলে এই মঞ্চে পঞ্চম দোল অনুষ্ঠিত হতো।শাস্ত্র অনুসারে বৈষ্ণবীয় উৎসবের শেষ উৎসব হোলি বা দোল উৎসব। ফাল্গুনী পূর্ণিমায় উদ্‌যাপিত এই উৎসবের উল্লেখ মেলে বিভিন্ন পুরাণে।

বৈষ্ণব কবি গোবিন্দদাসের রচনায় তার নানা উল্লেখ মেলে।

‘‘খেলত ফাগু বৃন্দাবন-চান্দ।।
ঋতুপতি মনমথ মনমথ ছান্দ।
সুন্দরীগণ কর মণ্ডলি মাঝ।
রঙ্গিনি প্রেম তরঙ্গিনী সাজ।।
আগু ফাগু দেই নাগরি-নয়নে।
অবসরে নাগর চুম্বয়ে বয়নে।।’’

চৈতন্যচরিতামৃত-এ শ্রী কবিরাজ গোস্বামী লিখছেন,

চৌদ্দশত সাত শকে, মাস যে ফাল্গুন।

পূর্ণমাসীর সন্ধ্যাকালে হৈল শুভক্ষণ।।

অকলঙ্ক গৌরাঙ্গ দিলা দরশন।

সকলঙ্ক চন্দ্রে আর কিবা প্রয়োজন।।

এত জানি, চন্দ্রে রাহু করিল গ্রহণ।

‘কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরিনামে’ ভাসে ত্রিভুবন।

সেই পঞ্চম দোলের দিন মদন মোহনের মূর্তি এনে বসানো হতো হেথায়। সে মূর্তি প্রায় কুড়ি হাত উচ্চ। বহুদূর থেকে দৃশ্যমান হতেন মদনমোহন। আজ আর তার চিন্হ মাত্র নেই। শেষবার দোলমঞ্চ সংস্কার করা হয়েছিল ১৯৩৪ সালে। এছাড়াও পশ্চিমবঙ্গের বহু পরিবারে আজও এই প্রথা মানা হয়। যেমন – উত্তর ২৪ পরগনার ভাটপাড়ায় দোলের দিন নয়, পঞ্চম দোলের দিন মধ্য ভাটপাড়া অঞ্চলে অমরকৃষ্ণ পাঠশালার কাছে বসে পঞ্চম দোলের মেলা। নারায়ণপুরে দোলের ঠিক সাত দিন বাদে হয় জয়চণ্ডীর সপ্তম দোলের বহু প্রাচীন মেলাটি। বীরভূমের হেতমপুর রাজবাড়ীর পঞ্চম দোল , হরিশচন্দ্রপুর জমিদার বাড়ির পঞ্চম দোল, শ্রী শ্রী ব্রহ্ম হরিদাস ঠাকুর আশ্রম কেঁড়াগাছির পঞ্চম দোল সুুুবিখ্যাত।

পাণিহাটির নিকটেই ভবানীগড়ে ছিল রাজা চন্দ্রকেতুর প্রতিষ্ঠা করা মা ভবানীর মন্দির । রাজা চন্দ্রকেতু প্রায়শই গঙ্গা স্নানের জন্য পাণিহাটিতে আসতেন। বেড়াচাঁপা, দেগঙ্গা , পাণিহাটি যাতায়াতের একটি সুন্দর রাস্তা তিনি নির্মাণ করিয়েছিলেন।

রাজা চন্দ্রকেতু ছিলেন মা ভবানীর উপাসক। সেই ভবানী মূর্তি ছিল আসলে মা তারার মূর্তি। কিছু সেই তারা মূর্তি বিসর্জিত হয়ে জলমগ্ন ছিল তারা পুকুরে। দেউলিয়ার তারা মায়ের সে মন্দির আজ কালগর্ভে বিলীন হয়ে গিয়েছে। পাণিহাটির বিখ্যাত জমিদার ত্রাণ মুখোপাধ্যায় একরাত্রিতে স্বপ্নাদিষ্ট হয়ে মূর্তিটি পুকুর থেকে তুলে নতুন মন্দির নির্মাণ করে দেবীকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করলেন।

একসময়ে পানিহাটির মূল উৎসব পঞ্চম দোল হলেও ,গত বছর পাঁচশত বৎসর ধরে পাণিহাটির প্রসিদ্ধি বিখ্যাত বৈষ্ণব উৎসব #দণ্ডমহোৎসবের জন্য। সেই প্রদীপ প্রজ্বলনের পূর্বে সলতে পাকাবার কাহিনীটিও আকর্ষণীয়। সেখানে সর্বত্র জুড়ে আছেন ভগবান মদনমোহন আর দুই রাজার রাজা মহারাজা …..শ্রী চৈতন্য দেব এবং নিত্যানন্দ মহাপ্রভু।

কি সেই ঘটনা , যার জন্য বার বার শ্রীরামকৃষ্ণদেবও পাণিহাটিতে ছুটে আসতেন ? রাঘব কে ছিলেন ? সেই বটবৃক্ষ তল আজও অক্ষয় হয়ে আছে কেন ?

চন্দ্রকেতু রাজার পুরোহিতের নাম ছিল গঙ্গাপ্রসাদ চতুর্বেদী। নিত্যদিন পূজা শেষে যে দক্ষিণা এবং উপহার প্রাপ্ত হত তা নৌকা করে পাণিহাটি ভদ্রাসনের মাঝেমধ্যে তিনি নিয়ে আসতেন। পুরোহিত মহাশয়ের সঙ্গে থাকতেন সহকারি কয়েকজন। এমনই একদিন চতুর্বেদী মহাশয় বাড়ির পথে নৌকাযোগে চলেছেন। নৌকার পাটাতনের নীচে রয়েছে দক্ষিণা উপহারাদি। পুরোহিত মহাশয় সমসাময়িক অবস্থা নিয়ে তাঁর সঙ্গীদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করছেন। গোধূলি বেলা, পশ্চিম দিগন্তে কে যেন অনেক আবির ছড়িয়ে দিয়েছে। হঠাৎ তিনি দেখলেন, সেই গোধূলির আলোয়, পথের মাঝে , নদীর তীরে দুই ভারী মিষ্টি বালক বালিকা দাঁড়িয়ে হাতের ইঙ্গিত করে নৌকা ভেড়াতে অনুরোধ করছে। ভারী সুন্দর সেই যুগল রূপ।

মাঝিরা পুরোহিত মহাশয়ের মুখের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালে, তিনি নৌকা তীরে ভেড়াতে সম্মত হলেন। গোধূলির নিভে আসা আলোকে, পাড়ে গিয়ে নৌকা লাগলো। বালক-বালিকা দুটি ভারী করুণ কন্ঠে অনুরোধ করল , তাদের নৌকায় তুলে নিতে। এবারও পুরোহিত চতুর্বেদী সম্মতি দিলেন। তারা নৌকায় উঠলে আবার নৌকা চলতে লাগল। চতুর্বেদী আবার গল্প করতে করতে অন্যমনস্ক গেলন। পথে বুঝি নৌকা দুই ঘাটে ভিড়ে ছিল, অনেক যাত্রী নেমে যেতে নৌকা হালকা হয়ে গেছে।

সন্ধ্যা নেমে গেছে। গাঁ ঘরে সন্ধ্যা পড়ছে শঙ্খ শব্দে, দীপের আলোকে , তুলসী তলায়। নৌকা এসে ভিড়ল পাণিহাটির ঘাটে। ঘাট আগে থেকেই প্রস্তুত ছিল। চতুর্বেদী মহাশয়ের শুভাকাঙ্ক্ষীরা ঘিরে ধরলেন তাঁকে। আত্মীয়-পরিজনের আপ্যায়নে, আতিশয্যে পথশ্রমে ক্লান্তিতে, অবসন্ন চতুর্বেদী নৈশকালীন আহারেরর পরই শয্যা নিলেন । মধ্যরাত্রে স্বপ্নে দেখা পেলেন সেই বালক-বালিকা দুটির । সত্যিই তো কচি ছেলেমেয়ে দুটি যে কোথায় নেমে গিয়েছিল, পুরোহিত মশায় আর খোঁজ নেননি । স্বপ্নে সেই বালক-বালিকা দুটি চতুর্বেদীকে বললেন, ” আমরা জলের মধ্যে থেকে যাব নাকি পুরুত ঠাকুর? আমাদের তুলে এনে প্রতিষ্ঠা করো তোমার ভবন মন্দিরে!”

স্বপ্নের মধ্যে চতুর্বেদী চিৎকার করে উঠলেন , “কে তোমরা?”

বালক-বালিকা দুটি তখন বললেন, ” আমাদের চিনতে পারলে না ? আমরা তাঁরাই গো , নিত্য যাঁদের পূজা কর, আশির্বাদ চাও। ” এই বলে প্রকাশিত হলো মদনমোহন যুগল মূর্তি।

চতুর্বেদী স্বপ্ন মাঝে চিৎকার করে উঠে বললেন, ” তোমরা কোথায় আছো গো ? “

দূর কোন গ্রহ থেকে যেন শব্দ ভেসে এল, ” দেগঙ্গার চাটুজ্জের পুকুরের জলের মধ্যে আমাদের খুঁজে নিও….”

পরেরদিন প্রাতঃকালে সূর্য উদয় হতে না হতেই গঙ্গাপ্রসাদ চতুর্বেদী প্রস্তুত হয়ে দেগঙ্গার চাটুজ্জে পুকুরে পৌঁছলেন। পুকুরে নিজেই ডুব দিলেন, হাতে পেলেন মদনমোহন যুগল মূর্তিকে। বুকের মধ্যে আঁকড়ে ধরে নিয়ে এসে যুগলকে প্রতিষ্ঠা করলেন তাঁর পাণিহাটির গৃহে।

বৃন্দাবন দাস চৈতন্যভাগবত গ্রন্থে লিখেছেন-

প্রভু বলে রাঘবের আলোয়ে আসিয়া
পাসরিনু সব দুঃখ রাঘব দেখিয়া
গঙ্গায় মজ্জন কৈলে যে সন্তোষ হয়
সেই সুখ পাইলাম রাঘব আলয়।

এই গঙ্গাপ্রসাদ চতুর্বেদীর প্রপৌত্ররূপে, বৈষ্ণব চূড়ামণি শ্রীচৈতন্যদেবের অন্তরঙ্গ, মহাপণ্ডিত রাঘবের জন্ম হলো পাণিহাটির গৃহে। তাঁর নামেই পাণিহাটির রাঘব ভবন। তিনি কেবল শ্রী চৈতন্যলীলার প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন তা নয়, মহাপ্রভুর অন্যতম পার্ষদ শ্রী নিত্যানন্দের এবং চৈতন্য অনুগামীদের সখ্যের অধিকারীও হয়েছিলেন। ১৫১৫ খ্রিস্টাব্দে নীলাচল থেকে গৌড় যাবার পথে শ্রীচৈতন্যদেব রাঘবের পাণিহাটির ভবনটিতে ত্রিরাত্রি বাস করেছিলেন । সেই হতে রাঘব ভবন বৈষ্ণবদের কাছে এক মহা তীর্থস্থান। শ্রীচৈতন্যদেবের আকর্ষণে শত মানুষ তাঁর শরণাপন্ন হয়েছিলেন।

ক্রমশঃ

© দুর্গেশনন্দিনী

তথ্যঋণ স্বীকার : ১. Panihati heritage : panihati chida utsav

২. চৈতন্যময় পানিহাটি: রসিক রং

৩. মিথ পঞ্চদশ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.