মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হুঁশিয়ারি বিন্দুমাত্র টলাতে পারল না আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তারদের। বরং আরও জেদ ধরে বসলেন এনআরএস হাসপাতালের জুনিয়র ডাক্তার ও ইন্টার্নরা। তাঁদের পাল্টা দাবি, মুখ্যমন্ত্রীকেই নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে। কারণ, মুখ্যমন্ত্রী ডাক্তারদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা না করে রাজনীতি করছেন। উনি ক্ষমা না চাইলে আন্দোলন প্রত্যাহারের প্রশ্ন নেই।
এনআরএস-এ ডাক্তার নিগ্রহের ঘটনাকে কেন্দ্র করে গোটা রাজ্যে সরকারি হাসপাতালগুলিতে জুনিয়র ডাক্তারদের ধর্মঘট যখন সংক্রমণের মতো ছড়িয়ে পড়েছে, তখন বিষ্যুদবার এসপার ওসপার করার পথ নেন মুখ্যমন্ত্রী। নবান্ন যাওয়ার আগে দুপুরে সটান চলে যান এসএসকেএম হাসপাতালের ইমার্জেন্সিতে। তার পর মাইক হাতে নিয়ে দৃশ্যত ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, চার ঘন্টার মধ্যে কাজে যোগ না দিলে জুনিয়র ডাক্তারদের হস্টেল ছাড়তে হবে। তাঁর আরও অভিযোগ, এটা শুধু ডাক্তারদের আন্দোলন নয়, বিজেপি-সিপিএম-বহিরাগতরাও ঢুকে পড়েছে।
মুখ্যমন্ত্রীর এই কথাতেই যেন আগুনে ঘি পড়ে এ দিন। এনআরএস হাসপাতালের আন্দোলনকারী জুনিয়ার ডাক্তাররা তাঁর এই হুঁশিয়ারি শুনে বৈঠকে বসেন। তার পর জানিয়ে দেন, মুখ্যমন্ত্রী যে দোষারোপ করছেন তা মেনে নেওয়া যায় না। স্পষ্ট করে কী বক্তব্য তাঁদের ?
জেনারেল বডি-র মিটিংয়ের পর জুনিয়র ডাক্তাররা বলেন-
এক- মুখ্যমন্ত্রী সমস্যার সমাধানের কথা না বলে ডাক্তারদের উপর রাজনৈতিক লেবেল সাঁটাতে চাইছেন। বলছেন আরবান নকশাল, সিপিএম, বিজেপি। কিন্তু আমাদের সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই।
দুই- মুখ্যমন্ত্রী বলছেন উনি ফোনে কথা বলেছেন। কিন্তু বিষমদে মারা গেলে উনি ঘটনাস্থলে যেতে পারেন, কলকাতার পুলিশ কমিশনারের বাড়িতে সিবিআই হানা দিলে উনি ধর্নায় বসতে পারেন, আর হাসপাতালে এসে ডাক্তারদের দুর্দশার হাল দেখতে পারেন না! মঙ্গলবার কলেজস্ট্রিটে বিদ্যাসাগরের মূর্তি উন্মোচন করতে এলেন, আর আধ কিলোমিটার দূরে এনআরএস-এ আসতে পারলেন না!
তিন, মুখ্যমন্ত্রী বলছেন রোগীরা পরিষেবা পাচ্ছে না। বাস্তব হল, আমরা মন থেকে পরিষেবা দিতে চাই। কিন্তু সরকারি হাসপাতালে সেই পরিকাঠামো নেই। রোগীরা সেই কারণেই ঠিক মতো চিকিৎসা পাচ্ছেন না।
চার, মুখ্যমন্ত্রী বলছেন উনি সব করে দিয়েছেন। দু টাকা দিয়ে রোগীরা চিকিৎসা পাচ্ছেন। কিন্তু অধিকাংশ সরকারি হাসপাতালে আধুনিক রক্ত পরীক্ষার ব্যবস্থা নেই, সিটি স্ক্যান মেশিন খারাপ, এমআরআই মেশিন নেই। থাকলেও তা রোগীর সংখ্যার তুলনায় অপর্যাপ্ত। তাতে পরিষেবা না পেয়ে ডাক্তারদের উপরেই রাগ এসে পড়ছে।
পাঁচ, যে গুণ্ডারা বাইরে থেকে হামলা চালালো তাদের ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রী নীরব। আর ডাক্তাররা হয়ে গেলেন বহিরাগত। যে ভাবে পরিবহ মুখোপাধ্যায়কে মারা হয়েছে তাতে জামিন অযোগ্য অ্যাটেম্পট টু মার্ডার কেসের মামলা হওয়া উচিত। তা হয়েছে কি? শুধু কলকাতা নয়, জেলায় জেলায় নিত্য দিন ডাক্তাররা যে ভাবে মার খাচ্ছেন তা রুখতে সরকার কী ব্যবস্থা করেছে?
জুনিয়র ডাক্তারদের এই বক্তব্যে পরিষ্কার যে সরকারের সঙ্গে তাঁরা সংঘাতে যেতে প্রস্তুত। অন্যদিকে নবান্নের একাধিক সূত্রের মতে, সরকারও পিছু হটতে রাজি নয়। জুনিয়র ডাক্তাররা অনড় থাকলে নবান্ন আরও কঠোর ব্যবস্থা নিতে পারে। এমনকী জুনিয়র ডাক্তারদের সাসপেন্ড করার পথে হাঁটতে পারে সরকার।