নন্দীগ্রাম আর মমতা
ব্যক্তিগতভাবে রাজনৈতিক বিচারধারায় তফাৎ থাকলেও, সিপিআইএম এর বিরুদ্ধে মমতা বন্দোপাধ্যায়ের লড়াইকে চিরকাল সম্মান করতাম। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় না থাকলে সিপিআইএম এর মতন রক্তখেকো হার্মাদদের ক্ষমতাচ্যুত করা সম্ভব হতো না। কিন্তু তিনি আজ যাদের জন্য ‘মুখ্যমন্ত্রী’ মমতা বন্দোপাধ্যায় হতে পেরেছেন তাদেরকে অস্বীকার করছেন শুধুমাত্র মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়ের ভোট বাড়িয়ে নন্দীগ্রামে জেতার জন্য – যেটা বাংলার মানুষের কাছে দুঃখের বিষয়।
ওনার কথা যদি 30 সেকেন্ডের জন্য সত্যি ধরে নিই। তাহলে স্বাভাবিকভাবেই কিছু প্রশ্ন ওঠা বাঞ্ছনীয়।
তৎকালীন পুলিশ প্রশাসন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে চলতো। পুলিশ কিভাবে বিরোধী দল (অধিকারী পরিবার)- এর কথায় গুলি চালায় ? যদি চালিয়েও থাকে, তার দায় তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকারের পুলিশমন্ত্রীকে নিতে হবে।
শুধু বাংলা বা ভারতে নয়, গোটা পৃথিবীর মিডিয়া সেদিন কভার করেছিল নন্দীগ্রামের ঘটনা। তাহলে সেই ভিডিও ফুটেজগুলো, প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান সবই মিথ্যে ছিলো? যেসব গুলিবিদ্ধ লাশগুলোর ওপর দাঁড়িয়ে রাজনীতি করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতায় এসেছিলেন সেগুলো সবই মিথ্যে!!! ভূমি উচ্ছেদ কমিটির অসহায় মানুষদের আন্দোলন আজকে আপনার কাছে রাজনীতির গুটি হয়ে গেলো ? আর আজ আপনি লক্ষণ শেঠদের হয়ে দালালি করছেন ?
নন্দীগ্রাম প্রসঙ্গে বিনয় কোনারের সেই উক্তিটি মনে আছে ? “চারিদিক দিয়ে ঘিরে লাইফ হেল করে দেবো…” তারপর বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য এর সেই উক্তি মনে আছে ? “They’ve been paid back by their own coin…” নিজের ভুল বুঝে তিনি পরে মিডিয়ায় স্বীকারোক্তি দিয়েছিলেন ” গুলি চালানো ঠিক হয়নি…” , “আমাদের সবচেয়ে বড়ো ভুল ছিল সিঙ্গুর,নন্দীগ্রাম“…. ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার ভয়েই এই স্বীকারোক্তি করেছিলেন তিনি।
আপনার পাশে সেদিন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব (সুষমা স্বরাজ, রাজনাথ সিং) না থাকলে আপনি নন্দীগ্রামে ঢুকতে পারতেন না মাননীয়া। যে তৃণমূলের নেতারা আজ নন্দীগ্রামে দাঁড়িয়ে বাতেলা মারে, লক্ষণ শেঠের ভয়ে তারা সকালবেলা নারকেল গাছে উঠে বসে থাকতো। শুভেন্দু অধিকারী এসে তাদের বাড়ি পৌঁছে দিত। ক্ষমতা হারাবার ভয়ে আজ সব ভুলে গেছেন মাননীয়া?
আপনাকে একটা নির্দিষ্ট পয়েন্টে আসতে হবে। সেদিন অধিকারী পরিবার ভুল হলে আপনার গোটা আন্দোলনটা ভুল ছিলো, যার জোরে আপনি মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন! আর যদি আপনি ঠিক হন, তাহলে সেদিন শুভেন্দু অধিকারীও ঠিক ছিল। শুধুমাত্র ইগোর জন্য শুভেন্দু অধিকারীর পাশাপাশি নিজের লড়াইকে আজ সবার কাছে ছোট করলেন। আদি তৃণমূল কর্মীরা যারা আপনাকে দেখে রাজনীতি শিখেছেন, তারাই আপনাকে ক্ষমা করবে না।
21শে আপনি যদি ক্ষমতায় ফিরে আসেন, মনে রাখবেন নিজের আদর্শ ও নিজের লড়াইকে বাজারি দরে বিক্রি করে ক্ষমতায় ফিরলেন। আর যদি ক্ষমতায় না আসেন তাহলে জেনে রাখবেন আপনার ইগো, আপনার ব্যক্তি আক্রমণ এবং মিথ্যে কথাই আপনার পতনের কারণ।
Source What’s App