“ঐটি আমার গ্রাম, আমার স্বর্গপুরী,
ঐখানেতে হৃদয় আমার গেছে চুরি।“
লিখেছিলেন কবি যতীন্দ্রমোহন বাগচি। দীর্ঘকাল ধরে সম্পন্ন হিন্দুদের প্রাণের আরাম, মনের আনন্দ ও আত্মার শান্তি ছিল পূর্ব বাংলার নানা স্থানে।
গত শতকের চারের দশক থেকে কেন, কীভাবে ওপার বাংলা থেকে হিন্দুরা চলে আসতে বাধ্য হন, অনেকে তার প্রামান্য আলেখ্য লিখে গিয়েছেন। ওই বাংলায় লালিত হয়ে এপার বাংলায় যাঁরা চলে এসেছিলেন, সেই তালিকা অতি দীর্ঘ।
পূর্ব বাংলার হিন্দুদের এই গণপ্রস্থান আজ অতি প্রবীনদের কাছে কাছে স্মৃতিমেদুরতা। আমাদের মত ষাটোর্দ্ধদের কাছে আবেগ। আগ্রহীদের কাছে চর্চার বিষয়। বিষয়টি নিয়ে বেশ কিছুকাল ধরে চর্চা করেছি। বড় লেখা আছে। বন্ধু বিদ্যুৎ বসুর আগ্রহে তালিকাটা সংকলন করলাম। এই তালিকা অনেক দীর্ঘ করা সম্ভব। —২৮/৩/২১।
- নবীনচন্দ্র সেন (১০ ফেব্রুয়ারি, ১৮৪৭ – ২৩ জানুয়ারি, ১৯০৯)। চট্টগ্রাম জেলার রাউজান থানার অন্তর্গত পশ্চিম গুজরার (নোয়াপাড়া) প্রাচীন জমিদার পরিবারে তাঁর জন্ম।
- জগদীশ চন্দ্র বসু। ১৮৫৮ সালের ৩০ নভেম্বর মুন্সিগঞ্জে জন্ম। বিক্রমপুরের রাঢ়িখাল
গ্রামে তাঁদের প্রকৃত বাসস্থান ছিল। পিতা ব্রাহ্ম ধর্মাবলম্বী ভগবান চন্দ্র বসু ফরিদপুরের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন। - নড়াইলের কৃতি সন্তান রায়বাহাদুর যদুনাথ মজুমদার (২৩ অক্টোবর, ১৮৫৯-২৪ অক্টোবর, ১৯৩২)। বর্তমান নড়াইল জেলার লোহাগড়ায় জন্ম। পিতা প্রসন্নকুমার মজুমদার যশোরের দেওয়ানি আদালতে চাকরি করতেন। যদুনাথ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে এম.এ পাস করেন। প্রথম জীবনে তিনি কিছুকাল শিক্ষকতা করেন। ১৮৮৩ সালে ডা. যোগেন্দ্রনাথ স্মার্তশিরোমণির সাথে যৌথভাবে ইউনাইটেড ইন্ডিয়া নামক একটি ইংরেজি সাপ্তাহিক সংবাদপত্র সম্পাদনা করেন। একই সাথে তিনি নিজ পত্রিকাসহ স্টেটসম্যান, হিন্দু পেট্রিয়ট ও অমৃতবাজার পত্রিকায় নিয়মিত প্রবন্ধ লিখতে থাকেন। পরে ট্রিবিউন পত্রিকার সম্পাদক হয়ে তিনি লাহোর চলে যান।
*আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় (২ আগস্ট, ১৮৬১ – ১৬ জুন, ১৯৪৪)। খুলনা জেলার পাইকগাছা উপজেলার রাডুলি গ্রামে জন্ম।
- উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর জন্ম ১২৭০ বঙ্গাব্দের ২৭ বৈশাখ (১৮৬৩ সালের ১২ মে) ময়মনসিংহ
জেলার বর্তমান কিশোরগঞ্জ জেলার কটিয়াদি উপজেলার মসূয়া গ্রামে। - রজনীকান্ত সেন (১৮৬৫ -১৯১০), জন্ম তখনকার পূর্ববঙ্গের পাবনা জেলার ভাঙাবাড়ি গ্রামে।
- দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদার (১৫ এপ্রিল,১৮৭৭ – ৩০ মার্চ, ১৯৫৬)। জন্ম ঢাকা জেলার সাভারের অন্তর্গত উলাইল গ্রামে।
- প্রফুল্ল সরকার (১৮৮৪- ১৯৪৪)। আনন্দবাজার পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা।
- বিশিষ্ট লেখক জগদীশ গুপ্ত (জুন, ১৮৮৬ – ১৫ এপ্রিল, ১৯৫৭)। পৈতৃকনিবাস ফরিদপুর জেলার খোর্দ মেঘচারমি গ্রামে। পিতা কৈলাশচন্দ্র গুপ্ত কুষ্টিয়া আদালতের বিশিষ্ট আইনজীবী ছিলেন।
- লীলা নাগ (অক্টোবর ২, ১৯০০ – জুন ১১, ১৯৭০)।
বিয়ের পরে নাম হয় লীলা রায়। - প্রেমেন্দ্র মিত্র (৪ সেপ্টেম্বর,১৯০৪ – ৩ মে, ১৯৮৮)।
জন্ম মুন্সিগঞ্জ জেলার টঙ্গিবাড়ি উপজেলার সোনার গ্রামে। ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দের নভেম্বর মাসে ঢাকা থেকে কলকাতায় গোবিন্দ ঘোষাল লেনের একটি মেসে চলে আসেন। - ডাঃ নীহাররঞ্জন গুপ্ত (৬ জুন, ১৯১১ – ২০ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮৬)। জন্ম পৈতৃক বাড়ি নড়াইল জেলার লোহাগড়া উপজেলার ইতনা গ্রামে। মতান্তরে বাবার কর্মস্থল কলকাতায় জন্ম।
- পান্নালাল ঘোষ (২৪ জুলাই ১৯১১-২০ এপ্রিল ১৯৬০) বরিশালে সালে জন্মগ্রহণ করেন।
- সাগরময় ঘোষ (২২শে জুন, ১৯১২- ১৯ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৯)
- নরেন্দ্রনাথ মিত্র (৩০ জানুয়ারি, ১৯১৬ -১৪ সেপ্টেম্বর, ১৯৭৫)। জন্ম ফরিদপুরে। ফরিদপুরের রাজেন্দ্র কলেজ থেকে আই-এ। বি-এ পাশ করেন বঙ্গবাসী কলেজ থেকে।
- মোহিনী চৌধুরী। ১৯২০-র ৫ সেপ্টেম্বর জন্ম
ফরিদপুরের কোটালিপাড়ার ডহরপাড়া গ্রামে । (‘মুক্তির মন্দির সোপান তলে’ গানটার লেখক। সুরকার কৃষ্ণচন্দ্র দে। এক সময় পুজোর আকাশে ঝড় তুলল ‘পৃথিবী আমারে চায়’ গানটি। কণ্ঠ দিয়েছেন পড়শি সত্য চৌধুরী। লিখে গিয়েছেন আমি দুরন্ত বৈশাখী ঝড়, জেগে আছি কারাগারে, নাই অবসর বাজায়োনা বীণাখানি, ভেঙেছে হাল ছিঁড়েছে পাল, আজি কাশ্মীর হতে কন্যাকুমারী-র পাশাপাশি কী মিষ্টি দেখ মিষ্টি কী মিষ্টি এ সকাল, কেন এ হৃদয় চঞ্চল হল -র মতো গান)। - অমর পাল (১৯২২ সালের ১৯ মে— ২০ এপ্রিল ২০১৯)।
- প্রফুল্ল রায় (১১ সেপ্টেম্বর, ১৯৩৪- )। ঢাকা জেলায়, বিক্রমপুরের আটপাড়া গ্রামে খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহন করেন, স্বাধীনতার পর ১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দে ভারতে চলে আসেন।
- দেবেশ রায় (১৭ ডিসেম্বর ১৯৩৬ – ২০২০)। জন্ম পাবনা জেলার বাগমারা গ্রামে। তাঁর শৈশবের কয়েকটি বছর কাটে উত্তাল যমুনার পারে। দেশভাগের কিছু আগে, ১৯৪৩ সালে, তিনি তাঁর পরিবারের সঙ্গে পূর্ববঙ্গ ছেড়ে জলপাইগুড়ি চলে যান।
- অরুণ সেন (১৯৩৬-২০২০), বিশিষ্ট অধ্যাপক, প্রাবন্ধিক, গবেষক অরুণ সেন। নিজেকে বলতেন উভচর। তাঁর দুই পা ছিল বাংলার দুই চরে। দুই-ই তাঁর স্বদেশ। আসল বাড়ি বাংলাদেশের ফরিদপুর, বেড়ে ওঠা উত্তর ও মধ্য কলকাতায়।
‘* মাখনলাল নট্ট (১৯৩৭-২০১৪)। ১৯৩৭ সালে বরিশালে জন্ম, দেশভাগের পর কলকাতায় আসা।
- চুনী গোস্বামী (১৫ জানুয়ারি ১৯৩৮- ৩০ এপ্রিল ২০২০)। কিশোরগঞ্জে জন্ম। আসল নাম সুবিমল গোস্বামী।
- সোমেন্দ্রনাথ মিত্র (১৯৪১- ৩০ জুলাই ২০২০) প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি। জন্ম অধুনা বাংলাদেশের যশোহরে। ছোটবেলায় কলকাতায় চলে আসা।
- আরতি দাস থেকে মিস শেফালি (জন্ম ১৯৪৪)। দেশভাগের পর কলকাতায় এসে আহিরিটোলায় বড় হতে-হতে এক অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান বাড়ির পরিচারিকা। সেখান থেকে ক্যাবারে নর্তকী।
- নির্মলেন্দু প্রকাশ গুণ চৌধুরী (২১ জুন ১৯৪৫- )।কবি ও চিত্রশিল্পী। জন্ম কাশবন, বারহাট্টা, নেত্রকোণায়। তাঁর ছেলেবেলা কাটে সেখানে।
- অমিয়ভূষণ মজুমদার (২২ মার্চ ১৯১৮ – ৮ জুলাই ২০০১) ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, প্রাবন্ধিক ও নাট্যকার। পাবনার এক জমিদার পরিবারে তাঁর জন্ম।
- অতুলপ্রসাদ সেন (২০ অক্টোবর, ১৮৭১- ২৬ আগস্ট, ১৯৩৪)। পারিবারিক ভিটা দক্ষিণ বিক্রমপুরের মাগর-ফরিদপুর গ্রামে। তিনি ঢাকায় তাঁর মাতুলালয়ে জন্মগ্রহণ করেন।
- অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত (১৯শে সেপ্টেম্বর, ১৯০৩ – ২৯শে জানুয়ারি, ১৯৭৬)। পিতার কর্মস্থল নোয়াখালি শহরে তাঁর জন্ম হয়। পরিবারের আদি নিবাস ছিল বর্তমান মাদারিপুর জেলায়। বাবা রাজকুমার সেনগুপ্ত নোয়াখালি আদালতের আইনজীবী ছিলেন।
- সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় (৭ সেপ্টেম্বর ১৯৩৪- ২৩ অক্টোবর ২০১২)। জন্ম অধুনা বাংলাদেশের ফরিদপুরে। মাত্র চার বছর বয়সে তিনি কলকাতায় চলে আসেন।
- নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় (২ আগস্ট, ১৯১৮ – ৬ নভেম্বর, ১৯৭০)। জন্ম বাংলাদেশের দিনাজপুরে। শিক্ষাজীবন দিনাজপুর, ফরিদপুর, বরিশাল ও কলকাতায়।
- মহাশ্বেতা দেবী (১৪ জানুয়ারি, ১৯২৬- ২৮ জুলাই, ২০১৬)। ঢাকায় জন্ম। তিনি সাঁওতালসহ অন্যান্য আদিবাসীর ওপর কাজ এবং লেখার জন্য বিখ্যাত। তাঁর লেখা শতাধিক বইয়ের মধ্যে হাজার চুরাশির মা অন্যতম। তিনি ১৯৯৭ সালে রামন ম্যাগসেসে পুরস্কার, ২০০৬ সালে পদ্মবিভূষণ পুরস্কার, জ্ঞানপীঠ পুরস্কার ছাড়াও সাহিত্যে অবদানের জন্য ২০০৭ সালে সার্ক সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন।
- অতীন বন্দ্যোপাধ্যায় (১৯৩৪- ১৯ জানুয়ারি, ২০১৯)। জন্ম ১৯৩৪ সালে অধুনা ঢাকায়।
- অরুণ মিত্র (২ নভেম্বর, ১৯০৯ – ২২ অগস্ট, ২০০০)। রবীন্দ্রোত্তর বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রথিতযশা কবি ও ফরাসি ভাষা ও সাহিত্যের খ্যাতনামা অধ্যাপক ও অনুবাদক। যশোর জেলায় জন্ম।
- নরেন্দ্রনাথ মিত্র (৩০ জানুয়ারি, ১৯১৬- ১৪ সেপ্টেম্বর, ১৯৭৫)। জন্ম ১৬ মাঘ, ১৩২৩ বঙ্গাব্দে ফরিদপুরে,ভাঙা উপজেলার সদরদি গ্রামে।
- সুকান্ত ভট্টাচার্য ( ১৫ আগস্ট ১৯২৬ – ১৩ মে ১৯৪৭)। ফরিদপুর, কোটালিপাড়ায় পৈত্রিক নিবাস।
- শুভ্রা মুখার্জি (১৯৪০- ২০১৫)। প্রয়াত প্রাক্তন রাষ্ট্রপতির স্ত্রী। জন্ম যশোরে ( নড়াইল জেলায়)।
অগ্নিযুগের বিপ্লবীরা
বিপিনচন্দ্র পাল (৭ নভেম্বর ১৮৫৮ – ২০ মে ১৯৩২)।
জন্ম হবিগঞ্জ জেলার পইল গ্রামে।
বাঘা যতীন/ যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় (ডিসেম্বর ১৮৭৯-১০ সেপ্টেম্বর ১৯১৫, বয়স ৩৫)। জন্ম কুমারখালী থানা, কয়াগ্রাম, অধুনা কুষ্টিয়া জেলা)। ঝিনাইদহ জেলায় পৈতৃক বাড়িতে তার ছেলেবেলা কাটে। মৃত্যু হয় বালেশ্বর বুড়ি বালামের উপকণ্ঠে লড়াইয়ে।
হেমচন্দ্র ঘোষ (জন্ম ২৪ অক্টোবর ১৮৮৪ – মৃত্যু ৩১ অক্টোবর ১৯৮০)। মুক্তিসংঘের (বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স) প্রতিষ্ঠাতা। জন্ম বানারীপাড়ার গাভা গ্রাম ঢাকা।
উল্লাসকর দত্তর জন্ম তদানিন্তন ব্রাহ্মণবাড়ীয়ার
সরাইল উপজেলার কালিকচ্ছ গ্রামে। ১৮৮৫-র ১৬ এপ্রিল। প্রেসিডেন্সি কলেজ এবং লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষিবিদ্যায় স্নাতক। ইংরেজ অধ্যাপক রাসেল বাঙালিদের সম্পর্কে কটূক্তি করায় উল্লাসকর তাকে মারেন। এর জন্য উল্লাসকরকে কলেজ হতে বহিষ্কার করা হয়। এই সময় থেকে তাঁর জীবনে পরিবর্তন আসে। রূপকথার মত জীবন। শেষদিকে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন।
শ্রীশ পাল (আনুমানিক ১৮৮৭ – ১৩ এপ্রিল, ১৯৩৯)। জন্ম ঢাকার মালিবাগে। বন্ধুর মুখোশে প্রফুল্ল চাকীকে ধরিয়ে দিয়েছিল পুলিশ অফিসার নন্দলাল ব্যানার্জী। নন্দলাল ব্যানার্জীকে হত্যা করেন শ্রীশ।
প্রফুল্ল চাকীর জন্ম ১৮৮৮ খ্রিষ্টাব্দের ১০ ডিসেম্বর বগুড়া জেলার বিহার গ্রামে।
ত্রৈলোক্য মহারাজ (৪ মে, ১৮৮৯ -৮ আগস্ট, ১৯৭০)
কিশোরগঞ্জ জেলার কুলিয়ারচর থানার কাপাসাটিয়া গ্রামে ১২৯৬ বঙ্গাব্দের ২১ বৈশাখ ত্রৈলোক্যনাথ চক্রবর্তী জন্ম।
হরিদাস দত্তের (১ লা নভেম্বর ১৮৯০- ২৯ শে ফেব্রুয়ারি ১৯৭৬) জন্ম ঢাকা জেলায়। ঐতিহাসিক রডা অস্ত্র লুন্ঠনের মূল নায়ক।
অম্বিকা চক্রবর্তী (১৮৯২- ৬ মার্চ, ১৯৬২)। জন্ম চট্টগ্রামে।
চিত্তপ্রিয় রায়চৌধুরী (৬ ডিসেম্বর ১৮৯৪-৯ সেপ্টেম্বর ১৯১৫ , বয়স ২১)। জন্ম খালিয়া, রাজৈর উপজেলা, মাদারিপুর। মৃত্যুবালেশ্বরের যুদ্ধে।
সূর্য সেন (২২ মার্চ, ১৮৯৪ – ১২ জানুয়ারি, ১৯৩৪)। জন্ম চট্টগ্রামের রাউজান থানার নোয়াপাড়ায়।
পূর্ণচন্দ্র দাস (১ জুন, ১৮৯৯ – ৪ মে, ১৯৫৬)। বালেশ্বরের ট্রেঞ্চযুদ্ধে বাঘা যতীনের চারজন পার্শ্বচর তারই দলের (মাদারিপুর সমিতি) কর্মী ছিলেন। বাঘা যতীনের এই চারজন পার্শ্বচর ছিলেন চিত্তপ্রিয় রায়চৌধুরী, যতীশ পাল, মনোরঞ্জন সেনগুপ্ত এবং নীরেন্দ্রনাথ দাশগুপ্ত। ১৯১৩ সালে ফরিদপুর ষড়যন্ত্র মামলায় পূর্ণচন্দ্র গ্রেপ্তার হন এবং কিছুদিন পর মুক্তি পান। কিন্তু ১৯১৪ সনে ভারত-রক্ষা আইনে ধৃত হয়ে ১৯২০ সাল পর্যন্ত জেলে আটক থাকেন। পরে তিনি নেতাজী সুভাষচন্দ্রের নবগঠিত ফরওয়ার্ড ব্লকের সঙ্গে যুক্ত হন এবং ১৯৪০ সালে পুনরায় গ্রেপ্তার হয়ে ১৯৪৬ সালে মুক্তি পান। তাঁর স্মৃতিতেই পূর্ণ দাস রোড।
গনেশ ঘোষ (২২ জুন, ১৯০০ – ২২ ডিসেম্বর, ১৯৯২)। জন্ম যশোরের নিকটবর্তী বিনোদপুরে।
অনন্ত সিং। ১৯০৩ সালের, ১লা ডিসেম্বর চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
নিকুঞ্জ সেনের জন্ম ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দের ১ লা অক্টোবর অধুনা বাংলাদেশের ঢাকার কামারখাড়ায়। পড়াশোনা সেখানেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি.এ. পাশ করে কলকাতায় আসেন এম.এ পড়তে।
রাইটার্স বিল্ডিং অভিযানের সমস্ত পরিকল্পনা ও প্রস্তুতিতে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। এই অভিযানের সময় তিনি ধরা পড়েন নি। আত্মগোপন করেন। পরে ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে গ্রেপ্তার হয়ে ৭ বৎসর কারারুদ্ধ থাকেন। ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দের ২ রা জুলাই মারা যান।
সত্যেন সেন (১৯০৭ – ৫ জানুয়ারি ১৯৮১)। জন্ম মুন্সিগঞ্জ জেলার টঙ্গিবাড়ি উপজেলার সোনার গ্রামে।
বিনয় বসু (১১ সেপ্টেম্বর, ১৯০৮-১৩ ডিসেম্বর ১৯৩০)। জন্ম মুন্সিগঞ্জ জেলার রোহিতভোগ গ্রামে।
বিপ্লবী দীনেশ গুপ্ত (৬ ডিসেম্বর, ১৯১১- ৭ জুলাই, ১৯৩১)। জন্ম বাংলা ১৩১৮ সালের ২০ অগ্রহায়ণ তদনীন্তন ঢাকা জেলার অধুনা বাংলাদেশে মুন্সিগঞ্জ জেলার যশোলঙে।
লোকনাথ বল (৮ মার্চ ১৯০৮ – ৪ সেপ্টেম্বর ১৯৬৪)। জন্ম চট্টগ্রাম জেলার ধরলা গ্রামে। চট্টগ্রামে অস্ত্রাগার লুন্ঠনের অন্যতম সেনানী।
বাদল গুপ্ত (১৯১২- ৮ ডিসেম্বর, ১৯৩০)। আসল নাম সুধীর গুপ্ত জন্ম ঢাকার বিক্রমপুর এলাকার পুর্ব শিমুলিয়া গ্রামে, যা বর্তমানে বাংলাদেশের মুন্সীগঞ্জ জেলার অন্তর্গত।
ভবানীপ্রসাদ ভট্টাচার্য (২৩ আগস্ট, ১৯১৪-৩ ফেব্রুয়ারি, ১৯৩৫, রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগার)ì জন্ম ঢাকা জেলার জয়দেবপুরে জন্মগ্রহণ করেন।
লেবং রেস কোর্স গ্রাউন্ডে তারা ৮ মে ১৯৩৪ তারিখে অ্যাান্ডারসনকে গুলি করেন। দুর্ভাগ্যবশত গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয় এবং তিন জন ধরা পড়েন। বিচারে সঙ্গী সুকুমার ঘোষের ১৪ বছর কারাদন্ড হয় ও দুঃখপ্রকাশ করায় অপরজনের অল্প শাস্তি এবং ভবানীপ্রসাদের মৃত্যুদণ্ড হয়। তাঁর নামেই কলকাতার ভবানী ভবন।
শান্তি ঘোষ (২২ নভেম্বর, ১৯১৬-মৃত্যু২৭ মার্চ, ১৯৮৯)। জন্ম ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলায়।
সুবোধ চৌধুরী (১৯১৪ – ২৬ আগস্ট, ১৯৭০)। ১১ বছর বয়সে চলে যান চট্টগ্রামে মামার বাড়িতে। ষোল বছর তিনি জেলে ছিলেন। আন্দামানে সেলুলার জেলে ছিলেন। জেলে এবং মূল ভূখণ্ডে আন্দোলনের ফলে গণেশ ঘোষ, অনন্ত সিংহ প্রমুখের সঙ্গে সুবোধ চৌধুরীকেও ১৯৩৮ সালে আলিপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে ফিরিয়ে আনা হয়। শেষে ঢাকা সেন্ট্রাল জেল থেকে মুক্তি পান ১৯৪৬ সালের ৩১শে আগস্ট।।
উজ্জ্বলা মজুমদার (২১ নভেম্বর, ১৯১৪ – ২৫ এপ্রিল, ১৯৯২)। ঢাকার এক নামকরা জমিদার পরিবারে জন্ম। বাবা সুরেশচন্দ্র মজুমদার। তিনিও বিপ্লবীদের সাথে জড়িত ছিলেন। কলকাতা থেকে অস্ত্র নিয়ে যাওয়ার জন্যে তিনি উজ্জ্বলার সাহায্য নেন। উজ্জ্বলা নিজের কোমরে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে বিপ্লবীদের পৌঁছে দিয়েছিলেন মাত্র চোদ্দ বছর বয়েসেই। তার বাড়িতে বিভিন্ন বিপ্লবীরা নিয়মিত আসতেন।
সুনীতি চৌধুরী (২২ মে, ১৯১৭-১২ জানুয়ারি, ১৯৮৮)। কুমিল্লার ফয়জুন্নেসা বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রী ছিলেন। কুমিল্লার জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মি. স্টিভেন্সকে ১৯৩১ সালে ১৪ ডিসেম্বর হত্যা করেন। বিচারে শান্তি ও সুনীতি চৌধুরীর দ্বীপান্তর দণ্ড হয়।
নির্মল সেন। ১৯৩০ সালের ৩ আগস্ট গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়া উপজেলার দিঘিরপাড় গ্রামে জন্ম। … তাঁর বাবা কোটালীপাড়া ইউনিয়ন ইনস্টিটিউশনের গণিত শিক্ষক ছিলেন। ১৯৪৬ সালে ভারত বিভাগের ঠিক আগে পুরো পরিবার বাংলাদেশ থেকে ভারতে চলে গেলেও তিনি সেখানেই থেকে যান।
লালমোহন সেন (? – ১৯৪৬)। স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন ব্যক্তিত্ব ও অগ্নিযুগের শহীদ বিপ্লবী। আন্দামান সেলুলার জেল ও বিভিন্ন জেলে ১৬ বছর আবদ্ধ থেকে ১৯৪৬ সালে মুক্তি পান।
ফণিভূষণ নন্দী, জন্ম চট্টগ্রামের ডেঙ্গাপাড়ায়।চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার আক্রমণ মামলায় অনন্ত সিং, লোকনাথ বল, গণেশ ঘোষ, লালমোহন সেন, সুবোধ চৌধুরী, ফণিভূষণ নন্দী, আনন্দ গুপ্ত, ফকির সেন, সহায়রাম দাস, বনবীর দাসগুপ্ত, সুবোধ দে এবং সুখেন্দু দস্তিদারের যাবজ্জীবন দ্বীপান্তর দণ্ড হয়। আনন্দ গুপ্ত, ফকির সেন, সহায়রাম দাস, বনবীর দাসগুপ্ত, সুবোধ রায় (ঝুংকু) এবং সুখেন্দু দস্তিদারের যাবজ্জীবন দ্বীপান্তর দণ্ড হয়। এঁদের প্রায় সবারই জন্ম পূর্ব বাংলায়।
এটা দীর্ঘ তালিকার অংশমাত্র। আবার আবেদন করি, কেন পূর্বপুরুষদের ভিটে ছেড়ে চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে কোটি কোটি হিন্দুকে এপার বাংলায় চলে আসতে হয়েছিল, অনুগ্রহ করে তার প্রামান্য বইগুলো পড়ুন। দ্বিজাতিতত্বের ওপর ভিত্তি করে দেশভাগের যে মাশুল হিন্দুদের দিতে হয়েছে, কীভাবে তা পূরণ করা সম্ভব বা আর মাশুল যেন দিতে না হয় সতর্ক থাকুন। সচেতন হন।
শেষে আবার কবির ভাষায় বলি,
“তুমি যাবে ভাই যাবে মোর সাথে
আমাদের ছোটো গাঁয়
গাছের শাখায় লতায় পাতায়
উদাসী বনের বায়?”
—অশোক সেনগুপ্ত। ।